নারীস্বাধীনতা বিষয়ে লেখা দুটি ঐতিহাসিক চিঠির অংশবিশেষ । তরজমা : আলম খোরশেদ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০১৮, ১২:০১ পূর্বাহ্ণ, | ১৪৭৭ বার পঠিত
[১৭৭৬ সালে ফিলাডেলফিয়ায় টমাস জেফারসন, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন প্রমুখের সাথে বসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি জন অ্যাডামস্ যখন সে-দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা ও সংবিধান রচনা করছিলেন, তখন তাঁর পত্নী আবিগাইল অ্যাডামস তাঁকে লেখা একটি চিঠিতে নারীদের অধিকার বিষয়ে কিছু আব্দার করেছিলেন। এই চিঠির প্রত্যুত্তরে পত্নীকে যে-চিঠিটি লেখেন জন অ্যাডামস্, তাতে আবিগাইলের সনির্বন্ধ অনুরোধ রক্ষার অপারগতা জানিয়ে তিনি এক প্রকার ব্যাঙ্গের হাসিই হাসেন। আবিগাইল তাঁর দ্বিতীয় চিঠিতে স্বামীকে সেই শ্লেষের জবাব দেন কঠোর ভাষায়। এখানে সেই ঐতিহাসিক পত্র বিনিময়ের প্রাসঙ্গিক অংশের অনুবাদ প্রকাশিত হলো।]
প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামসের কাছে লেখা তাঁর পত্নী আবিগাইলের চিঠির অংশবিশেষ
৩১শে মার্চ, ১৭৭৬
আপনি দেশের জন্য নতুন যে-সংবিধানটি রচনা করতে যাচ্ছেন, আমি আশা করব তাতে আপনি নারীজাতির কথা মনে রাখবেন এবং আপনার পুরুষজাতির তুলনায় তাদের প্রতি আর একটু বেশী পক্ষপাত ও উদারতা দেখাবেন। ন্বামীদের হাতে অবাধ ক্ষমতা দেবেন না। মনে রাখবেন, সব পুরুষই সুযোগ পেলে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। যদি মেয়েদের প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ প্রদান ও সুবিচার না করা হয়, তাহলে আমরা বিদ্রোহ করতে বাধ্য হব এবং নিজেদেরকে সেই সংবিধান দ্বারা আবদ্ধ জ্ঞান করব না, যেখানে আমাদের প্রতিনিধিত্ব ও কণ্ঠস্বর নেই।
আপনার প্রজাতিটি যে প্রকৃতিগতভাবেই স্বৈরাচারী তা এমনই সুপ্রতিষ্ঠিত যে, সেখানে মতদ্বৈধের কোন অবকাশ নেই। তবে আপনারা যদি সুখী হতে চান, তাহলে স্বেচ্ছায় প্রভুপ্রতিম রুক্ষ উপাধিটি পরিত্যাগ করে, বন্ধুর মতো কোমল ও প্রিয়তোষ একটি আখ্যা নিন। কেন আপনারা আমাদেরকে নিষ্ঠুর ও অমর্যাদাজনকভাবে ব্যবহারের শক্তি কেড়ে নিচ্ছেন না, দুষ্ট ও উচ্ছৃঙ্খল এই প্রজাতির হাত থেকে? যে-সব প্রথা ও বিধান আমাদেরকে বয়স নির্বিশেষে আপনাদের যৌনসামগ্রীরূপে গণ্য করার কথা বলে, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকল পুরুষেরই সেইসব প্রথা ও বিধানকে ঘৃণা করা উচিত।…
আবিগাইল অ্যাডামসের কাছে লেখা জন অ্যাডামসের চিঠির অংশবিশেষ
তবে আপনার অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে, স্বৈরাচারী ক্ষমতা অন্যসব কঠিন বস্তুর মতোই নিতান্ত ভঙ্গুর, এবং আপনাদের যাবতীয় আপ্তবাক্য ও বিধিমালা সত্ত্বেও নিজেদেরকে শুধু মুক্ত করাই নয়, আপনাদেরকে পরাজিত করে আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া সব প্রাকৃতিক ও আইনি শেকলসমূহ, কোনপ্রকার শক্তিপ্রয়োগ করা ছাড়াই, পায়ের কাছে ছুঁড়ে ফেলার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে।…
১৪ই এপ্রিল, ১৭৭৬
তোমার প্রস্তাবিত সংবিধানের অস্বাভাবিক বিধানগুলোর কথা পড়ে আমি না হেসে পারলাম না। আমরা শুনেছি যে, আমাদের সরকারের বাঁধন সর্বত্র শিথিল হয়ে পড়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষানবিশেরা অবাধ্য হয়ে উঠেছে। স্বুল ও কলেজসমূহ উত্তাল হয়ে উঠেছে। আদিবাসীরা তাদের অভিভাবকদের অবজ্ঞা করছে, নিগ্রোরা তাদের প্রভুদের সাথে বেয়াদবি করছে। কিন্তু তোমার চিঠিটি এই প্রথমবারের মতো আমাদের জানান দিল যে, আরও একটি প্রজাতিও রয়েছে, যেটি বাকি সবগুলোর চেয়ে বৃহৎ ও বেশি ক্ষমতাধর, এবং এই প্রজাতিটিও যারপরনাই অসন্তুষ্ট হয়ে উঠেছে আমাদের ওপর।…
জন অ্যাডামসের কাছে লেখা আবিগাইলের চিঠির অংশবিশেষ
৭ই মে, ১৭৭৬
আমি এ-কথা বলতে পারছি না যে, আপনি মেয়েদের প্রতি খুব উদার, কেননা আপনি যেখানে পুরুষের জন্য শান্তি ও শুভেচ্ছা কামনা করছেন এবং পরাধীন সব জাতিকে মুক্ত করছেন, সেখানে পত্নীদের ওপর আপনাদের সর্বাত্মক কর্তৃত্ব অটুট রাখতে আপনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তবে আপনার অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে, স্বৈরাচারী ক্ষমতা অন্যসব কঠিন বস্তুর মতোই নিতান্ত ভঙ্গুর, এবং আপনাদের যাবতীয় আপ্তবাক্য ও বিধিমালা সত্ত্বেও নিজেদেরকে শুধু মুক্ত করাই নয়, আপনাদেরকে পরাজিত করে আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া সব প্রাকৃতিক ও আইনি শেকলসমূহ, কোনপ্রকার শক্তিপ্রয়োগ করা ছাড়াই, পায়ের কাছে ছুঁড়ে ফেলার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে।…