এই বাড়ি শুধু মানুষের নয় । অর্ক চট্টোপাধ্যায়
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০১৮, ৮:৩২ অপরাহ্ণ, | ১৭৯৭ বার পঠিত
অসহায় পায়রাছানার ভয়ের ভেতর তোমার প্রাচীন মুখ জেগে উঠলে বুঝি, এই বাড়ি শুধু মানুষের নয়। ওরা ভাবে, একাকিত্ব কেনা যায়, বেচা যায়। যায় কি? না বোধ হয়। এত বড় হয়নি বাজার। এ বাড়ি শুধু মানুষের নয়। আগেও ছিল না, এখনো নেই। ভবিষ্যৎ বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। পায়রার বাসা বাইরের বারান্দায়। না, তাড়ানো যায়নি। এই বাড়ি শুধু মানুষের নয়।
জন্মের দাগ লেগে গেছে আসার পর প্রথমদিককার দিনগুলোয়। পায়রার আদর আর ফড়ফড় উত্তেজনার শব্দে মোহান্ধ আমার একাকিত্ব ঘুরে বেড়িয়েছে বাড়ির আনাচে কানাচে। বিলম্বিত পদশব্দ ফিসফিসিয়ে বলে গেছে, এই বাড়ি শুধু মানুষের নয়।
পায়রার অসুন্দর বাচ্চা বড় হয়ে, সুন্দর হয়ে উড়ে যায়। ক্রমশ একাকী হয়ে আসা দুপুরগুলোয় রেলিঙের ওপর ফিরে আসা পায়রা ফাঁকা তাকের দিকে তাকায়। ওখানেই কি জন্ম হয়েছিল ওর? জন্মস্থানেই কি ফিরে আসে বারবার? বড় হলে সুন্দর হলে সবাই দূরে চলে যায়। তাও তো এই বাড়ি শুধু মানুষের নয়।
আর কোনোদিন ফুটবে না ছুঁয়ে ফেলা ডিম। না ছোঁয়া ডিম থেকে মধ্যরাতে বেরিয়ে আসা একরত্তি পায়রাছানা ঘন অন্ধকারে আধফোটা চোখে দেখে, তাকের নিচে মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে আছে এক অতিকায় শরীর। মুখ থেকে বেরোতে থাকা গ্যাঁজলা সাদা তৈরী করছে কালোয়। অন্ধকারে অদেখা পালক উড়ছে সর্বত্র। আস্তে আস্তে মৃতদেহের ওপর নেমে আসছে সেইসব বরফস্বরূপ পালক। পালকগুলো ঠাণ্ডা শরীর স্পর্শ করতে করতে বলছে, “এই বাড়ি শুধু মানুষের নয়।” মৃতশরীরের পিঠে চিত্রার্পিত হয়েছে তোমার প্রাচীন মুখ।
কি করে বুঝবো কোনটা কোন পায়রা? কেন সবাইকে একরকম দেখতে লাগে? কই, আমাকে তো আর মানুষদের মতো দেখতে লাগে না। এই বাড়ি কি আর শুধু মানুষের নাকি? কোন পায়রা উড়ে যায়? কোন পায়রা ফিরে আসে? প্রত্যেকে জানে একাকিত্বের নিশি ডাক, তাও মর্যাদা নেই তার। কেন ক্ষতি করবো পায়রাদের? কেন পায়রাছানা ভয়ে নিজের মধ্যে সেঁধিয়ে যায়, আমায় কাছেপিঠে দেখলেই? উড়ানের আকাশ অচেনা তার। প্রত্যাশার আকাশে আক্রমণ লেগে থাকার কি কারণ? তবে কি এই বাড়ি শুধুই মানুষের নাকি?
ডিমে হাত দেওয়া মানে মৃত্যু। আর কোনোদিন ফুটবে না ছুঁয়ে ফেলা ডিম। না ছোঁয়া ডিম থেকে মধ্যরাতে বেরিয়ে আসা একরত্তি পায়রাছানা ঘন অন্ধকারে আধফোটা চোখে দেখে, তাকের নিচে মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে আছে এক অতিকায় শরীর। মুখ থেকে বেরোতে থাকা গ্যাঁজলা সাদা তৈরী করছে কালোয়। অন্ধকারে অদেখা পালক উড়ছে সর্বত্র। আস্তে আস্তে মৃতদেহের ওপর নেমে আসছে সেইসব বরফস্বরূপ পালক। পালকগুলো ঠাণ্ডা শরীর স্পর্শ করতে করতে বলছে, “এই বাড়ি শুধু মানুষের নয়।” মৃতশরীরের পিঠে চিত্রার্পিত হয়েছে তোমার প্রাচীন মুখ।