বাসু । তাহসিন রাহমান ঋতু
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০১৮, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ণ, | ১২০১ বার পঠিত
বাসু রাস্তার মাঝখানে বসে ঝিমুচ্ছে । আজ বেশ ভাল খাওয়া হয়েছে। তার সঙ্গীরা আশেপাশে নেই। সবাই যার যার রাস্তায় বসে হয় ঝিমুচ্ছে, না হয় ঘুমুচ্ছে।
বাসুদের দলটা বেশ ভারী। এই বিশাল বাজারটায় ওরা দুপুর পর্যন্ত দলবেঁধে ঘোরাঘুরি করে, এঁটোকাঁটা নিয়ে মারামারি করে। দুপুরের পর সবাই বাজারের সরু রাস্তাগুলোর আশেপাশে বসে ঝিমোয়। রাতের ব্যাপারটা অবশ্য আলাদা। বাজারের সরু রাস্তাগুলোতে ওরা দলবেঁধে ঘুরে বেড়ায়, আচমকা ঘেউ ঘেউ শব্দে পথিকের পিলে চমকে দেয়। যেন তারা বাজারের কর্তা, তাদের রাজত্ব এই বাজারে, মানুষকে তারা এই সময় বরদাস্ত করে না।
বাসুর বয়স হয়েছে। এখন সে আর জোর গলায় ঘেউ ঘেউ করতে পারে না। যৌবনের সেই বিদ্রোহীভাব আর নেই। বরং যেন একটু অনুগত, একটু ভীতু ধরনের।
রাগে গরগর করছে সে। ছেলেগুলো কিছু বুঝার আগেই কামড়ে ধরে একটার পা। চিৎকার করে ওঠে ছেলেটা। মানুষ ছুটে আসে। বাসু যেন পাগল হয়ে গেছে। সে পা ছাড়ে না। লোকেরা মারতে থাকে তাকে। মারুক, যত খুশি মারুক, সে প্রতিশোধ নেবে। হঠাত একটা বাড়ি এসে লাগে বাসুর ঘাড়ে। বাসুর চারপাশ কেমন যেন অন্ধকার হয়ে যায়। চোখ খুলতে পারে না সে।
দুপুরের পর রাস্তার পাশে বসে ঝিমাতে ঝিমাতে অতীতের কথা ভাবে। অতীতে সে ছিল বিদ্রোহী টাইপের। বাজারের কুকুরগুলোর মধ্যে সেরা। কোনো মানুষ ওর ধারে ঘেঁষত না। এসব কথা ভাবতে ভাবতে ঝিমোচ্ছিল সে। হঠাৎ খিস্তির শব্দে চমকে ওঠে। সে আজ বসে পড়েছে রাস্তার অন্যপাশে। এখানে বসে থাকায় পথ চলতি লোকদের অসুবিধা হচ্ছে। তবু বাসু নড়ে না, বসেই থাকে।
একদল ছেলেপিলে ইদানীং বাসুকে বড় বিরক্ত করে। বুড়ো হয়েছে, আগের মতো শক্তিও নাই। কিছু করতে না পারার অখখমতায় রাগে শুধু গরগর করে।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। মফস্বলের এই বাজারে সন্ধার পরই ভিড় কমে যায়। বাসু দেখে, ছেলেগুলো ফুটবল খেলে ফিরছে। বুঝতে পারে, আজকে তার একটা কিছু করতে হবে। ছেলেগুলো ওর পাশে চলে এসেছে। বাসু উঠে দাঁড়ায়।
রাগে গরগর করছে সে। ছেলেগুলো কিছু বুঝার আগেই কামড়ে ধরে একটার পা। চিৎকার করে ওঠে ছেলেটা। মানুষ ছুটে আসে। বাসু যেন পাগল হয়ে গেছে। সে পা ছাড়ে না। লোকেরা মারতে থাকে তাকে। মারুক, যত খুশি মারুক, সে প্রতিশোধ নেবে। হঠাত একটা বাড়ি এসে লাগে বাসুর ঘাড়ে। বাসুর চারপাশ কেমন যেন অন্ধকার হয়ে যায়। চোখ খুলতে পারে না সে।
অচৈতন্যের অন্ধকারে তলিয়ে যেতে যেতে বাসু কেবল প্রতিশোধ নেওয়ার কথাই ভাবে।