কাহিনিকাব্য ‘নয়নতারা’ আর ‘দহনদয়িতা’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ, | ১৭৩৬ বার পঠিত
শুভাশিস সিনহা কাব্য আর কাহিনি প্রায়শই একই অঙ্গে আত্ম হয়ে বিরাজ করছিল আমাদের এই ভূখন্ডে। সে বহুকাল আগ থেকে। উপনিবেশ কিবা সাম্রাজ্যবাদের ভাব-নান্দনিক বিস্তার তার যূথ অনিন্দ্য কাঠামোকে ছেয়ে ফেলেছে ছিন্ন ছিন্ন ধারকের ছাঁচে। আমাদের কাহিনি হয়েছে কাব্য-সুর-হারা, হয়েছে নিরেট পড়ে দেখবার বিষয়, শোনানোর বা শুনবার নয়, মুখে বলবার ন; আর আমাদের কাব্য কেবলই ব্যক্তির বিচ্ছিন্ন জৈবনিক অবলেশ নিয়ে গুমড়ে মরার মধুর-তিক্ত প্রহসন। হারিয়ে গেছে যৌথ চেতনার মধ্য থেকে প্রকাশিত প্রেম-কাম-বিরহ-বেদনার সহজিয়া স্রোতে ভেসে চলা মানুষ। সেই মানুষকে তাদেরই জীবনের নিজস্ব তরিকায় তৈরি করা চলমান ভাবপ্রবাহে পুনরায় দেখে নেবার একটা উপায় এই দুই রচনা। কাব্যের আশ্রয়ে কাহিনি-আখ্যান কিবা আখ্যানের অভিপ্রায়ে কাব্য — যে-কোনোকিছুই বলা যেতে পারে একে। হতে পারে আখ্যানকাব্য কিংবা কাব্যআখ্যান। কিংবা অন্য অন্য কিছু। তবে কাব্য আর গল্প বা আখ্যানের যে ভেদ লুপ্ত করে দেবার বাসনা জারি রেখে ইতোঃপূর্বে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সমৃদ্ধ হয়েছে আমাদের শিল্পপ্রকরণ, এই রচনাদ্বয় তার থেকে খানিকটা স্ততন্ত্র পথ খুঁজে নিয়েছে। এখানে কাহিনি আর কাব্য পরস্পরের প্রতি নিগূঢ় সংবেদনশীল, আরও গভীর সমঝোতা রেখে কেউ কারও বিন্দুমাত্র ক্ষতি না করে লুপ্ত হবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। কহতব্যের দুর্নিবার একমুখী নির্বিরতি কথাবেগ এ রচনাদ্বয়কে পাঠকের সাথে আদি-অন্ত একমর্মে যুক্ত থাকার শক্তি দেয়। ঐতিহ্যের কাছে হাত পেতে অধুনার ভাষার চলমান সৃষ্টিশীল সৌন্দর্যকে তার রথবাহন করে একটি নয়া ভাষার সহজ সবেগ প্রকাশ এর লক্ষণ। আমাদেরই চিরচেনা সাধারণ নর-নারীর প্রেম-টান-যাতনা-সংঘর্ষ-জয়-পরাজয়ের ভাষ্যকে প্রতীচ্যের সুদূর-কবির এক বহুচেনা প্রেমকথার আখর থেকে জারিত করে নিয়েছে নয়নতারা আবার দহনদয়িতা’য় দূর জাপানের কোনো এক লোককথার আখর থেকে জারিত করে নিয়েছে আত্মমর্ম। আশা করি, পাঠকের জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা হবে।
বই দুটি প্রকাশ করেছে বাতিঘর। দুটিরই প্রচ্ছদ করেছেন সব্যসাচী হাজরা।
নয়নতারা পৃষ্ঠাসংখ্যা ৬৪, দাম ১৫০টাকা
দহনদয়িতা পৃষ্ঠাসংখ্যা ৯৬, দাম ২০০টাকা
প্রকাশিত গ্রন্থ
ডেকেছিলাম জল (কাব্য, ঐতিহ্য ২০০৬)
বেলা দ্বিপ্রহর (কাব্য, শুদ্ধস্বর ২০১০)
হওয়া না-হওয়ার গান (কাব্য, ইউপিএল ২০১১)
দ্বিমনদিশা (কাব্য, বেঙ্গল পাবলিকেশন ২০১২)
চিহ্নহীন দিনের ডায়েরি (কাব্য, ঐতিহ্য ২০১৬)
প্রতিরূপকথা (নাটক, কিসসাকাহিনি ২০০৫)
কুলিমানুর ঘুম (উপন্যাস, অ্যাডর্ন ২০১২)
ইঞ্জিন (উপন্যাস, অ্যাডর্ন ২০১৪))
রবীন্দ্রনাথ : গ্রামের ছবি (গবেষণা, মূর্ধণ্য ২০১১)
ভাষা, কবিতা ও রবীন্দ্রনাথ (প্রবন্ধ, ঐতিহ্য ২০১৫)
মোহাম্মদ রফিক : কবিতার অতল ভাসান (প্রবন্ধ, ঐতিহ্য ২০১৭)
মণিপুরি সাহিত্য সংগ্রহ ২খন্ড (অনুবাদ, ঐতিহ্য ২০০৭ ও ২০০৮)
ইয়ের্মা ( লোরকার কাব্যনাট্যের অনুবাদ, অ্যাডর্ন ২০১৬)
রৌদ্রজলের পঙ্ক্তিমালা (সম্পাদনা)
২০১১ সালে ‘হওয়া না-হওয়ার গান’ কাব্যগ্রন্থের জন্য এইচএসবিসি-কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার পুরস্কার লাভ করেন। ২০১২ সালে ‘কুলিমানুর ঘুম’ উপন্যাসের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক ও সমকাল প্রবর্তিত ‘হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’ অর্জন করেন। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সাহিত্যে অবদানের জন্য ভারতের আসাম থেকে ‘দিলীপ সিংহ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার’ এবং বাংলাদেশে পৌরি প্রবর্তিত গীতিস্বামী অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
থিয়েটারে নাট্যকার ও নির্দেশক হিসেবে ২০০৮ সালে অর্জন করেছেন ঢাকার থিয়েটার প্রবর্তিত জাকারিয়া স্মৃতি পদক এবং ২০১১ সালে নাট্যধারা’র তনুশ্রী পদক। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন।