গদ্যলেখার গদ্য । হোসনে আরো কামালী
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ, | ১৭২২ বার পঠিত
হোসনে আরা কামালী‘র গদ্যের বই গদ্যলেখার গদ্য বের হয়েছে ২০১৮ সালের একুশে বইমেলায়। প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ এবং প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের নাগরী প্রকাশনী থেকে। বইটি দুইবাংলার বইমেলাতেই পাওয়া যাবে।
মেয়েবেলার কোনও এক সময়ে কীভাবে যেন আত্মজা মীরাকে লেখা রবীন্দন্রাথ ঠাকুরের একটি চিঠি আমার হাতে এসে পড়ে। চিঠির মমার্থ উপলব্ধি করার বয়স বা শিক্ষা তখনও আমার হয়ে ওঠেনি। কিন্তু অসাধারণ এক ভালো লাগার স্নিগ্ধতায় ছেয়ে গিয়েছিল আমার বৃত্তাবদ্ধ কিশোরীমন সেদিন। চিঠিটা কি পিতা-কন্যার ছিল! বন্ধুতার ছিল! গুরু-শিষ্যার ছিল! তখন সেটাও আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি। তবু আমার মনে হয়েছিল কী এক ঐশ্বরিক বাণী, গমগমে উচ্চারণে নয়, মেটেমিঠে অভয়সুরে যেন বেদনাকে ভাষা দিচ্ছে, লীন করে দিচ্ছে জগতের যত গ্লানি ও পাপকে। একটি চিঠি যে এভাবে মুক্তি দিতে পারে আঁধারের, কে উড়তে দিতে পারে সীমাবদ্ধতায়ও-এযাবৎ আমার জানা হয়ে ওঠেনি তখনও। বয়সটা ছিল কাঁচা, ছিঁচকাঁদুনের অথবা লুকিয়ে লুকিয়ে দু-একচ্ছত্র পদ্যলেখার দুবৃর্ত্তপনা অথবা বালখিল্যতার! তবু কেন জানি মীরাকে লেখা রবীন্দন্রাথের চিঠিটি নির্ভার বেদনার ভাষায় চোখ চিক্চিক্ করে ওঠেনি, ঠোঁটকামড়ে মুখ লুকাতে হয়নি বাড়ির বড়োদের! বরং যদ্দূর মনে পড়ে লাল কালি দিয়ে চিঠিটি আমি হাতেলেখে কপি করেছিলাম এবং মাঝেমধ্যে কোনও এক নিজস্ব একলা দুপুরে সে চিঠিটি মেলে ধরতাম চোখের সামনে। এই-এক অবিমিশ্র অনুভূতি বেলার মতো ভালো লাগা; যা বিশ্লেষণের ইচ্ছাটিকেই অবান্তর করে ছেড়ে দেয়!
নানাবাড়ির সবচেয়ে বড়ো ঘরটির মেটেদেয়ালের অনেকখানি জুড়ে একটি কালো বিরাট আলমারি বলতে গেলে আমার জন্মবধিই ঠায় আত্মম্ভর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। মেটেদেয়ালটির সঙ্গে তার আভিজাত্য ঠিক মিলছিল না। আর কারও কথা বলতে পারছি না; আমার মেয়েবেলায় আমি সবসময়ই দেরাজটির দিকে বড়ো সমীহ নিয়ে তাকিয়েছি। তার কারণ ছিল বিবিধ। এক, সংসারের সবচেয়ে মূল্যবান ও প্রিয় বিবেচিত জিনিসপত্র, সেটা কাচের বোয়ামের আচার থেকে শুরু করে সে সময়ের বহুল জনপ্রিয় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মীর মশাররফ হোসেন, ইসমাইল হোসেন সিরাজী এবং শরৎবাবুর মোটামুটি একটি ভালো জায়গা ছিল বিরাট দেরাজটির এক কোণে। আচারের চেয়ে তাঁদের প্রতি ‘ইঁচড়ে পাকার ডেঁপো’ বলে খ্যাত আমার নীরব আকর্ষণ ছিল বেশি। কিন্তু বয়সটা ছিল ভীষণ বেকায়দার! মাত্র এগারো আর শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি তখনও অনুত্তীর্ণ মানে অধ্যয়নরত। এই অভিজাত আলমারি ইতিউতির অবাধ যাতায়াত ছিল স্কুলপাস করা আমার শিক্ষিত মামা-খালাদের এবং সে সময়ে বাড়িতে আসা স্নিগ্ধ রুচির নতুন ছোটোমামির। আর বাড়ির যিনি কর্তা তাঁর কথা না-বললেই নয়, কিন্তু একহাতে পানসুপারির কুট্নি (পানসুপারি গুঁড়ো করার হস্তনির্মিত যন্ত্রবিশেষ) এবং অন্য হাতে বই নিয়ে হেঁটে হেঁটে পড়তেন আমার নানামশাই। কিন্তু সে প্রসঙ্গ ভিন্ন। সেই কালো আধার দেরাজের প্রসঙ্গেই চলে আসি। একটি ছোটোখাটো বিপ্লবই যেন ঘটে গেল একদিন! খালা-মামাদের গোলমিটিংয়ের তোয়াক্কা নাকরেই যেন গুরুতর পাকামো করে, কালো ফটকের তালা-খোলার মতো আমি দেরাজের কপাটটি খুলে যে বইটি হাতে নিই সেটা ছিল আমার জন্য তখন মারাত্মকভাবে নিষিদ্ধ। বইটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিষবৃক্ষ।
আলাদাভাবে সবার লেখাকে ভাবতে শেখা অথবা চর্চা যেটাই বলি না কেন সেটা আরও পরের ঘটনা। কিন্তু তখনও গদ্যের পাশাপাশি আমার ক্রেজ-‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার সময়’
সংগত কারণেই সমবেত উপস্থিত জনতা সহাস্য (উপহাস?) তৎক্ষণাৎ আমাকে সচকিত করে তোলে, কিন্তু নিবৃত্ত করেনি। বিষবৃক্ষ পড়ে তেমন কিছু বোধগম্য না-হলেও কুন্দনন্দিনীর প্রতি কেমন যেন একটা মমতা অনুভব করেছিলাম। আমরা দুবোন যখন ছোটোবেলায় একসঙ্গে পড়তে বসতাম, আমাদের মা প্রায়শই পাশের বিছানায় শুয়ে শুয়ে মীর মশাররফের বিষাদ-সিন্ধু মৃদুস্বরে পাঠ করতেন। অনেকটা ধর্মগ্রন্থ পাঠ করার মতোই।-‘রে পথিক! রে পাষাণ হৃদয় পথিক। কী লোভে এত ত্রস্তে দৌঁড়িতেছ? কী আশায় খ-িত শির বর্শার অগ্রভাগে বিদ্ধ করিয়া লইয়া যাইতেছ? এ শিরে-হায়! খণ্ডিত শিরে তোমার প্রয়োজন কী? সীমার এ শিরে তোমার আবশ্যক কী? হোসেন তোমার কী করিয়াছিল? …হোসেনের শির তোমার বর্শাগ্রে কেন? তুমিই-বা সে শির লইয়া ঊর্ধ্বশ্বাসে এত বেগে দৌঁড়াইছ কেন? (বিষাদ–সিন্ধু, মীর মশাররফ হোসেন, পৃষ্ঠা ১৩৭) এ ধরনের হৃদয়মথিত বাক্য শুনে আমরা প্রথমত ফেসফেসে গলায় পড়া মুখস্থ করতাম, তারপর হেঁচকি তুলে তুলে English for today book-1 পড়া এবং শেষ পর্যন্ত হাউমাউয়ে কিছুই বোঝার উপায় থাকত না। পড়ে থাকত ইংলিশ ফর টুডে, বুক-১ অথবা নামতানামা। এই কান্নার সুবাদে মায়ের আহ্লাদে হয়ত ওইদিন আমাদের পড়াকামাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি দিয়ে বিবেচনা করা হত। বয়স যখন বারো-তেরো তখন আব্বা নিয়ে আসতেন কিশোর থ্রিলার কুয়াশা আর তাঁর নিজের জন্য মাসুদ রানা। আমার আকর্ষণ ছিল নিজেরটির প্রতি নয় আব্বারটির প্রতি। কুয়াশা সিরিজের তিনটি বই পড়ার পর মাসুদ রানাই পড়তাম-পাগল বৈজ্ঞানিক, হ্যালোসোহানা, টর্পেডো কতশত বই! পাঠকদের ধরে রাখতে কারিগর কাজী আনোয়ার হোসেন। মাসুদ রানার প্রতি সোহানার ভালোবাসার ইতিহাস কী জীবন্ত! সাহসী থ্রিল-নির্ভর। হোক না তা বিদেশি ! কিন্তু সে তথ্যের বোধ মাথায় তো তখন নেই আমার! শরৎবাবুর গদ্যের চিত্তচমৎকারিত্ব আরও ব্যাপক। আমার বুয়েটপড়–য়া বড়োভাইকে কোনওদিন জিজ্ঞাস করার কোনও সুযোগ হয়নি কেন শরৎসাহিত্য তার এত ছিল? একমাত্র পথের দাবী উপন্যাসটি ছাড়া প্রায় সমগ্র শরৎসাহিত্যই আমাদের বাড়িতে ছিল। মেয়েবেলাকার অনেক চোখের জলই আমার খরচ হয়েছে দেবদাসপার্বতী, বড়দিদি, মেজদিদি অথবা পিতিমশাইয়ের জন্য। এভাবে আমি গদ্যই বেশি পড়লাম তখন কিন্তু লিখতে চেষ্টা করতে থাকলাম কবিতা। প্রথমে লুকিয়ে লুকিয়ে পয়ারছন্দ তৈরির সে-কী কসরত! কবি হবার দুর্দান্ত বাসনা! দুলাইন কবিতার জন্য বুকের ভেতর দুরন্ত হাহাকার! জগৎসংসার শুধু শূন্য শূন্য মনে হয়! শৈশব-কৈশোরের অন্তঃমিলের মুক্তি ঘটিয়ে একসময় আধুনিক গদ্যছন্দের দিকে ঝুঁকে পড়ি। তখনও স্কুল পেরোইনি। আমাদের স্কুলের মৌসুমি প্রতিযোগিতায় দেয়াল পত্রিকা বেশ নান্দনিক হত। ক্লাস নাইনে আমি দিলাম দুটো কবিতা এই পত্রিকায়। একটি নিজের অন্যটি বান্ধবীর জন্য। শিক্ষকরা বুঝলেন, হাসলেন, বললেন না কিছু। ঔদার্য বলে কথা! আমার কলেজজীবনটা ছিল ‘আমি’র জন্য অনুকূল। ঘোর লাগা চোখ, রাতজাগা ভোর, উন্মত্ত দুপুরের কবিতায় শীর্ষে তখনও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-‘বিষণ্ন আলোয় এই বাংলাদেশ/ …এ আমারই সাড়ে-তিন হাত ভূমি/ অথবা ‘আমি কীরকমভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ/ এই কী মানুষজন্ম? নাকি শেষ/ পুরোহিত-কঙ্কালের পাশা খেলা’-আহা কী অমৃত! ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত’-(সুভাষ মুখোপাধ্যায়) আর আরেকজন সুকান্ত ভট্টাচার্য যিনি কবিতাকে ছুটিই দিয়ে দিলেন, ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবীকে গদ্যময় বলে। পণ করলেন ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি’(ছাড়পত্র)। কী উদ্দীপনার কবিতায় মজে মন, ডুবে আর ভাসে! তখনও নির্মলেন্দু গুণ থেকে আমার পছন্দে পিছিয়ে শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, রফিক আজাদরা। কিছু ব্যতিক্রমধর্মী কবিতার জন্য রফিক আজাদ, কী দুর্বার দুঃসাহস খিদের দ্রোহে মানচিত্রই খেয়ে ফেলবেন কবি! এভাবে গদ্য ও পদ্যের ভ্যাবাচ্যাকা অনির্বচনীয় বোধ ভালো লাগায়, মন্দ লাগায় মাঝেমধ্যে কবিতার নরম জমিতে নিড়ানি, আগাছা পরিষ্কার, নতুন ও পুরাতন মূল্যবোধের দ্রোহ ও দাহের মধ্যেই আমার জগতে তসলিমা নাসরিনের আগমন। ‘শৃঙ্খল ভেঙ্গেছি আমি, খসিয়েছি পান থেকে সংস্কারের চুন’ এর আগে তো এমন কথা বলেনি বাংলাদেশের মেয়েদের কেউ। কবি রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের মেয়েদের আপনভাগ্য রচিবার অধিকার ভগবানের কাছে বর চাইলেন, কাজী নজরুল তাজমহলের মর্মরে সম্রাট শাহজাহানের প্রিয়তমা নারী মমতাজকে অনুভব করলেন কিন্তু সাধারণ নারীসত্তার অপমান-গ্লানি-দ্রোহ তসলিমার মতো কেউই বলতে পারলেন না নিজের জীবন দিয়ে। যদিও ড. হুমায়ুন আজাদ লিঙ্গ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে তার সততস্বভাব মতোই কথা বলে গেছেন। আমি তাই হামলে পড়লাম তসলিমা নাসরিনে
বোধোদয় হবার পর সে যখন পৃথিবীর রূপরসগন্ধ ও বর্ণ দেখবে বলে
চৌকাঠ ডিঙোতে চাইলো,
তাকে বলা হলো-না। এই দেয়াল দিগন্তরেখা
এই ছাদ তোমার আকাশ।
এই বিছানা বালিশ, সুগন্ধি সাবান, ট্যালকম পাউডার,
এই পিঁয়াজ, রসুন, সুঁইসুতা, অলস বিকেলে বালিশের অড়ে
লাল নীল ফুল তোলা, এইটুকুই তোমার জীবন।
আরও আছে —
ওই পারে কতটা বিস্তৃত বিচরণভূমি আছে, দেখবে বলে
যখন সে কালো ফটকের তালা খোলে,
তাকে বলা হল-না, উঠোনে সজনের চারা রোপে
পুঁইশাক, লাউ মাঝেমধ্যে রকমারি টবে দুরকম
ফণিমনসা, হলুদ গোলাপ
এই যে নিকোনো উঠোন, এইটুকুই তোমার জমিন।(সীমানা, আমার কিছু যায় আসে না পৃ. ৩৪)
সত্যবলার সাহসই আমাদের প্রণোদনা। লেখেও ফেললাম যায়যায়দিন (১৯৯২)এ দুকলম তসলিমা নাসরিনবিষয়ক গদ্য। কিন্তু সমাজমানস পালটানোর তত্ত্বটি একা-একা নারী কীভাবে নেবে সেই সমস্যার সমাধান নিয়ে অকূল সমুদ্রে পড়লাম।
গদ্যকে ভালোবাসতে শুরু করলাম একজন কবির হাত ধরেই। কবি নির্মলেন্দু গুণের রাশিয়া ভ্রমণের কাহিনি ভল্গার তীরে (১৯৮৫) পড়ে। নিরাভরণ ভাষা, একজন অর্থশ্রীহীন কবির বিদেশ ভ্রমণের আকাক্সক্ষা ও সংগতির বিচিত্র সম্মেলনে কবির নিজস্ব সহাস্য শৈলীটি ভালো লেগে গেল তখন। ভ্রমণকাহিনিতে এতটাই মজে গেলাম ঝিলাম নদীর দেশ (লেখকের নাম বুলবুল সরওয়ার) পড়ে, এসময়টা আমার উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, শংকর প্রভৃতি ছিল আমরা বান্ধবীদের জপতপের মণিমালা। বিশেষত সুনীলের
কবিতাবুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালোবাসবে
সেদিন আমার বুকেও-এরকম আতরের গন্ধ হবে!
ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়েছি
দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮ টা নীলপদ্ম
তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
. এখনো সে যে-কোনো নারী!(কেউ কথা রাখেনি শ্রেষ্ঠ কবিতা পৃ. ৫৯-৬০)
পড়ার অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে ড. আনিসুজ্জামান, আবদুলাøহ আবু সায়ীদ তাঁদের নির্ভেজাল, সরল প্রাণছোঁয়া গদ্যে আকৃষ্ট হতে থাকি। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর গদ্যসৌষ্ঠব কীভাবে যেন আলাদা করে দেয় সকল থেকে। পূর্বোক্ত সবারই গদ্য প্রত্যেক থেকে আলাদা। আলাদাভাবে সবার লেখাকে ভাবতে শেখা অথবা চর্চা যেটাই বলি না কেন সেটা আরও পরের ঘটনা। কিন্তু তখনও গদ্যের পাশাপাশি আমার ক্রেজ-‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার সময়’ (নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়, যে জলে আগুন জ্বলে) অথবা ‘এখন তুমি কোথায় আছ, কেমন আছ পত্র দিয়ো’/‘একজীবন কতোটা আর নষ্ট হবে এক মানবী কতোইবা কষ্ট দেবে/ (প্রস্থান, পূর্বোক্ত)। কিন্তু একথাও ঠিক ‘বেশির ভাগ সময়েই কেন্দ্রে তাকে একটি উদ্যান, যাকে স্বর্গ বলি আর যা-ই বলি। উদ্যানের প্রধান গুণ হলো নিরাপত্তা। সুখ কেবল অসুখের অভাব নয়, সুখ মানে নিরাপদ জীবনযাপনও। সুখের সেটি একমাত্র শর্ত নয়,অবশ্যই নয়, কিন্তু প্রথম ও প্রধান শর্ত বটে। অপর শর্ত বৈচিত্র্য, বাগানে যেমনটি থাকে, বহুফুল পাতা ও গাছের সেখানে সমারোহ। সুখের আরেক শর্ত অব্যাহত বিকাশ। স্তব্ধতা এক ধরনের অসুখ বটে।’ (সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অবতরণিকা, উদ্যান এবং উদ্যানের বাইরে, ঢাকা ১৯৯২)। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর অন্য প্রসঙ্গের উদ্ধৃতি আলোচ্য বিষয়টিতে প্রসঙ্গ করা যায় ‘স্তব্ধতা এক ধরনের অসুখ’। উদ্যানের সৌন্দযের্র মানে সাহিত্যে উদ্যানের বিকাশ ও বর্ণাঢ্যতায় গদ্য ও পদ্য পরিপূরক না-হলেও সমান্তরাল। তবে উভয় উভয়কে প্রকাশও করতে পারে নিজস্ব আঙ্গিকে। উদাহরণ টানছি খানিক পরে। অভিজ্ঞতা একটি বিশাল বিষয়, নবীন বয়স সবসময় তা মানতে চায় না। বিষয় ও বিষয় প্রক্ষেপণে ভাষার ঋজুতা, ধার (কখনও সেটা লঘু অথবা গুরু) পাঠককে সরাসরি সরবরাহ করেন প্রাবন্ধিক। এই শুভমিলনে মাঝখানে নেই কোনও চটকদার ঘটক। নেই কল্পিত কাহিনি, চরিত্রের আড়াল-আবডাল, কৌশলে নেই শিল্পীর নিজের জীবনদর্শনের প্রক্ষেপে। প্রবন্ধে পাঠক-লেখক চার চোখের মিলন হয় সবার সামনে, সরাসরি। গানের কবি, প্রাণের কবি, মানুষের কবি নজরুলের কাব্য বিশেষত উদ্দীপনামূলক কবিতায় তাঁকে চেনার প্রধান আকর হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধারণে। কিন্তু তাঁর বক্তব্যের ধার যেমন কাব্যে ঠিক তেমনই তারঁ গদ্যেও। তাঁর প্রবন্ধের আলোচনা সমালোচনা বাংলা সাহিত্যে সীমিতই হয়েছে বলতে হয়।
যখন লেখাটি দাঁড়িয়ে যায়, তৃপ্ত করে, দেবশিশু দেখার মতো, তখন কষ্টের কথা আর মনে থাকে না-‘যিনি গড়তে জানেন তিনি শিবও গড়তে পারেন, বাঁদরও গড়তে জানেন’ অথবা ‘সাহিত্য ছেলের হাতের খেলনাও নয়, গুরুর হাতের বেতও নয়’ (সাহিত্য খেলা, প্রমথ চৌধুরী) কথাটি প্রাণাবেগে আর সবসময় মস্তিষ্ক থেকে মন পর্যন্ত টেনে আনা যায় না। মনে হয় গদ্যের ছাঁচছোলা অপার আনন্দের নজিরতো অনাহূত নয় বরং অনেক অনেক মনীষী লেখকের ভূষণও।
রাজদ্রোহিতার মিথ্যে অভিযোগের সাজানো মামলার বিচারক সুইনহোর আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন এর সাহিত্যমূল্য অপার বিধায় আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তা থেকে পাঠ নেয়। পাঠক হিসেবেও সত্যিকারের নজরুল অন্বেষণ হয় প্রত্যক্ষ ও শিল্পমানে-‘একধারে রাজার মুকুট, আরধারে ধূমকেতুর শিখা। একজন রাজা, হাতে রাজদ-, আরজন সত্য, হাতে ন্যায়ের দ-। রাজার পক্ষে নিযুক্ত রাজবেতনভোগী রাজকর্মচারী। আমার পক্ষে সকল রাজার রাজা, সকল বিচারকের বিচারক, আদি অনন্তকাল ধরে সত্যজাগ্রত ভগবান। রাজার পেছনে ক্ষুদ্র, আমার পেছনে-রুদ্র। রাজার পক্ষে যিনি, তাঁর লক্ষ্য স্বার্থ, লাভ অর্থ,আমার পক্ষে যিনি তাঁর লক্ষ্য সত্য, লাভ পরমানন্দ।’ (রাজবন্দীর জবানবন্দী, কাজী নজরুল ইসলামের প্রবন্ধ সংকলন পৃ. ১০৫) এর কাব্যময়তার ধার-দাহ ও দ্রোহের ভেতর দিয়ে সতত প্রবাহিত হয়ে পাঠককে চঞ্চল করবেই, প্রাণের কবির এটাতো নিজস্ব শৈলীবেত্তা। উদাহরণ দু-একটা নয়, বর্তমান বিশ্বসাহিত্যে সম্পর্কে ধারণা দিতে কাজী নজরুলের গদ্য আরও বাক্সময়, আরও মৃন্ময়-‘হঠাৎ শুনি দুরাগত বাঁশির ধ্বনির মতো শ্রেষ্ঠ স্বপ্নচারী
নোগুচির গভীর অতলের বাণী,’ `The sound of the bell that leave the bell itself’। তারপরেই সে বলে-আমি গান শোনার জন্য তোমার গান শুনি না। ওগো বন্ধু, তোমার গান সমাপ্তির যে বিরাট স্তব্ধতা আনে, তারি অতল তলে ডুব দেওয়ার জন্যই আমার এ গানশোনা। শুনতে শুনতে চোখের পাতা জড়িয়ে আসে। ধুলার পৃথিবীতে সুন্দরের স্তবগান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি নতুন প্রভাতের নতুন রবির আশায়। স্বপ্নে শুনি পারস্যের বুলবুলের গান, আরবের উষ্ট্র চালকের বাঁশিতুরস্কের নেকাবপরা মেয়ের মোমেরমত দেহ।’ (বর্তমান বিশ্বসাহিত্য, প্রবন্ধ সংগ্রহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পৃ. ২৬৪)। এ গদ্যসত্তার কাব্যমিতি, ঋজুতা, অভয়প্রেম নজরুলের মতো ঝাঁকড়া চুলের বাবড়ি দোলানো সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা গদ্য স্রষ্টার পক্ষেই সম্ভব। তাই বলে পাঠকের কাছে তাঁর দ্রোহ তো অচেনা নয় মোটেও-‘বল বীর বল চির উন্নত মমশির’ (বিদ্রোহী), ‘মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে’ (আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে, অগ্নিবীণা) ইত্যাদি উদ্দীপনামূলক কবিতায়। সাহিত্যবৈভব একেই
বলে!
লেখাটি কবিগুরুকে দিয়ে শুরু করেছিলাম। তাঁর কাব্য, প্রবন্ধ, চিঠিপত্র থেকে এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ টেনে আনা যেতে পারে যে আধুনিক নানা কাব্য প্রকরণে তাঁর অভিজ্ঞতা ও চিন্তার সরোবরের নীলপদ্ম হয়ে ফুটেছে। চিরন্তন বাণীর মতোই বাঙালিচিত্তের বৃত্ত ভাঙতে, চিত্ত জাগাতে, নির্ভর করতে রবীন্দ্রনাথের জুড়ি নেই। অদ্বিতীয় তিনি! ‘আজি ঝর ঝর মুখর বাদর দিনে/ জানি নে জানি নে, কিছুতে কেন যে মন লাগে না’ (গীতবিতান পৃ. ৩৩৩)-যেমন সংগীতে-কবিতায় বাজে তেমনই তাঁর গদ্যেও একই অনুভূতির আবাহন চলে আঙ্গিক ভিনত্নায়। ‘মেঘের সঙ্গে আমাদের প্রতিদিনের চিন্তা চেষ্টা কাজকমের্র কোন নাই বলিয়া যে আমাদের মনকে ছুটি দেয়। মন তখন বাঁধন মানিতে চাহে না, প্রভু শাপেনির্বাসিত যক্ষের বিরহ তখন উদ্দাম হইয়া উঠে।’ (নববর্ষ বাংলা, প্রবন্ধসংগ্রহ পৃ. ৬৯)। খণ্ডিত করা যায় আঙ্গিক বৈশিষ্ট্যকে, ভাবকে নয়। রবীন্দন্রাথ ঠিকই বলেছেন ‘সব বড়ো কবির কাব্যে পূর্বমেঘ ও উত্তরমেঘ আছে’। (পূর্বোক্ত) কিন্তু এটা কী শুধু কাব্যাঙ্গিকের ক্ষেত্রেই সত্য, না সমগ্র কাব্যভাবের ক্ষেত্রেও সত্য? আমার মতামত দুটোরই পক্ষে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যখন লেখেন ‘তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?’ (কপালকু-লা, পৃ. ১৬) ‘এই বন্দী আমার ’ (দুর্গেশনন্দিনী, দ্বিতীয় খ- পৃ. ৮২) পাঠকের সচকিত বেদনার আভা কোথায় আশ্রয় খোঁজে? হালভাঙা যে নাবিক হারিয়েছে তার পথের দিশার মতোই বেদনা সুখ। শ্রাবস্তীর কারুকাজের অপার মায়ার প্রেমবোধে আঙ্গিকভেদ করেই আবিষ্কার করে নেওয়া পাঠক
স্বভাব।-‘তুমি আমার বাতাস থেকে/ মোছো তোমার ধুলো/ তুমি বাঙলা ছাড়ো’। (বাঙলা ছাড়ো, সিকান্দর আবু জাফর) বিষয় আঙ্গিকের সৌকর্যে পার্থক্য থাকলেও ভাব বিষয়ের পার্থক্যই-বা কতুটুকু? কবিতার রূপকউপমাউৎপেক্ষার কত বিষয়-আশয়! নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিতর দিয়ে যাচ্ছে বাংলা কবিতা। প্রবন্ধে বা গদ্যে লেখকপাঠকের অন্তগর্ত সত্যের বাণী যে শুধু জাগিয়ে তোলেন তা নয়, নিজস্ব উন্মাদনায় লেখক কাছে টানেন পাঠককে।
এখানেও ভাষা-শব্দ প্রয়োগের নিজস্বতার নানান পরীক্ষা! পাঠক সরাসরিই লেখকের বোধ-ভাষায় পরিচিত হয়ে ওঠেন-একসময় তাঁকেই আবিষ্কার করে নেয় পাঠক নিজস্ব সত্য হিসেবে। এজন্য গদ্য লেখা কঠিন একটি বিষয়।
ব্যক্তিগত বিষয়ও অনেক সময় নৈর্ব্যক্তিক হয়ে যায়, সেটা আরোপিত যখন না হয়ে ওঠে। যখন সমষ্টির সঙ্গে তার কোনও বাধা, কোনও তফাত থাকে না। আমার ভালোবাসা-ঘোর লাগা (ভালোবাসা অন্ধই হয়) একটা সময় পর্যন্ত গদ্যরীতির কাঠিন্য ঋজু-ভঙ্গিটিকে অনেকটাই পর মনে করে আসছিলাম; জানি না কোন অজ্ঞাত কারণে। সেটা বাঙালির কাব্যপ্রীতির আপাত কি না কে জানে। কিন্তু পাঠককে সরাসরি পাবার আগ্রহ তো সবসময়ই ছিল। যদিও আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ থেকে উদ্ধৃত করছি নিজেকে ‘নিষ্ফলা মাঠের কৃষক’ হিসেবে। অথবা হয়ত আমি‘তাবৎগরল/ আমি তোমার জলে ধুয়ে/ বিশুদ্ধ করেছি পৃথিবীর আঙিনা’ (সুরমার কাছে, নাশাপাতি ঘ্রাণে মন)মহৎতম বিষয় ও শিল্পাঙ্গিক ভেবে সীমাবদ্ধ থেকেছি। তাই একটা লম্বা সময় নিলাম নিজেকে দেখার, অপরকে জানার, পড়ার। নীহার রঞ্জন রায় লিখেছিলেন-প্রসব বেদনার কথা মেয়েরা ভুলে যায়। গদ্যলেখাকে আমার মাঝেমধ্যে এ রকমই মনে হয়। কষ্টকর বেদনার মতো।
যখন লেখাটি দাঁড়িয়ে যায়, তৃপ্ত করে, দেবশিশু দেখার মতো, তখন কষ্টের কথা আর মনে থাকে না-‘যিনি গড়তে জানেন তিনি শিবও গড়তে পারেন, বাঁদরও গড়তে জানেন’ অথবা ‘সাহিত্য ছেলের হাতের খেলনাও নয়, গুরুর হাতের বেতও নয়’ (সাহিত্য খেলা, প্রমথ চৌধুরী) কথাটি প্রাণাবেগে আর সবসময় মস্তিষ্ক থেকে মন পর্যন্ত টেনে আনা যায় না। মনে হয় গদ্যের ছাঁচছোলা অপার আনন্দের নজিরতো অনাহূত নয় বরং অনেক অনেক মনীষী লেখকের ভূষণও। আর সামনে রয়েছে আমার চিন্তা-ভাবনা-গীতি-প্রীতি সবকিছুর জুহুরি আমার পাঠক। তারা পড়বেন হয়ত-বা ছুঁড়ে মারবেন, মন্দ কী? রাতজাগা, ভোরভাঙা এবং অনুরোধে ঢেঁকি গেলার কিছু তাগিদ থেকেই যায়! লেখক-পাঠকের মিত্রালয়ের পথের সঙ্গে যে অন্য শিল্পরাস্তার কোনও কাটাকাটি নেই!
‘দেখ আমি চোর বটে, কিন্তু আমি কি সাধ করিয়া চোর হইয়াছি? খাইতে পাইলে কে চোর হয়? দেখ, যাহারা বড় বড় সাধু, চোরের নামে শিহরিয়া উঠেন, তাহারা অনেকে চোর অপেক্ষাও অধার্মিক। তাহাদের প্রয়োজন নাই বলিয়াই চুরি করেন না। …অর্ধম চোরের নহে চোরে যে চুরি করে, সে অধর্ম কৃপণ ধনীর। চোর দোষী বটে, কিন্তু কৃপণ ধনী তদপেক্ষা শত গুণে দোষী। চোরের দ- হয়, চুরির মূল যে কৃপণ, তাহার দ- হয় না কেন?’ (কমলাকান্তের দপ্তর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)। -এ প্রশ্নের উত্তরটি না-দিলেও তো ‘জোছনা রাতে সবাই গেছে
বনে’র মজা অনেকসময়ই দু-এর মিলন একসঙ্গে ফিকে হয়ে আসতে বাধ্য! তাই পাঠক-লেখকের মিত্রালয়ের চলমান এ চাষাবাদ গদ্য। আর কাব্যময়তা কোথায় নেই? কখনও নিঃশব্দে, দূরের যাত্রার আলতো যাত্রীর সহযাত্রার মতো, কখনও প্রতিদিনের নিজ প্রাত্যহিক অভ্যাসের মতো তা সব শিল্পে বহমান। তার থেকে তো মুক্তি নেই, মুক্তির কামনাও নেই। মাঝখান থেকে পাঠকের অভিব্যক্তির চকিত গদ্য ঝলক দিয়ে ওঠে। দুই-ই সত্য, দুইই সুন্দরতম হতে পারে লেখক-শিল্পীর চর্চার মাধ্যমে। পাওয়া না-পাওয়ার বেদনা লেখকের অন্তর্বাসনার সৃষ্ট-স্ফূর্তি! গদ্যলেখায় পাঠক প্রতিক্রিয়ার একটা অজানা আশঙ্কা লেখককে তাড়িত করে। চাবুক মারে। সেটা লেখকের জন্য ফলপ্রদ। অনির্বচনীয় সুন্দরকে ধরার আগ্রহে চাবুকপেটা ঘোড়ার মতো যদি গতি হয়ে যায় লেখকের, এর একটি ঐতিহাসিক মূল্য থাকবেই। তবে সেটা বড়ো কথা নয় চাবুকের আঘাতটি যত থাকবে তীব্র ততই শিল্পের আমেজ, লেখকের নিজস্ব ভাবনার কপাট খোলা হবে ঋদ্ধ স্ফূর্তির! গদ্যলেখা শ্রমসাধ্য। এই সশ্রম কারাদ — নিতে আমার সবসময় অপছন্দ-তা নয়। নিজের অন্তর্গত ইচ্ছের চাবুক যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাঝেমধ্যে চাগিয়ে ওঠে না-তাই-বা কে বলতে পারে? তবু বুঝি, নিজের অনেক কিছ্ইু না বলতে পারার, শৈলীহত হওয়ার সীমাবদ্ধতার কথা। মেয়েবেলার নতুন ছোটোমামি যখন সলাজ আবৃত্তি করতেন কোনও কবিতা অথবা তাঁর লেখা কোনও গদ্য; হাড়গিলার মতো তাকিয়ে থাকতাম আমি তাঁর মুখের দিকে। তিনি থেমে যেতেন, লজ্জা পেতেন কিন্তু আমি বুঝতাম না। সে না-বলা কথার চাবুক নিশ্চয় পাকামো করতে গিয়েই নতুন ছোটোমামির লিখিত কথাগুলোতে জুড়ে দিলাম নিজের কিছু কথামালা। যার বিষয়বস্তু ছিল ‘প্রেম’। বিষয়ের কারণেই হোক অথবা লেখকের কাঁচা বয়সের মায়ার কারণেই হোক সৌভাগ্য তো নয়ই, লেখাটি দারুণ হওয়ার পরও বেরসিক গুরুজনের হাতে পড়ে যায়! তিনি মানেন না অথবা ধারও ধারে না প্রমথ চৌধুরীকে-‘সাহিত্য ছেলের হাতের খেলনাও নয়, গুরুর হাতের বেতও নয়।’ শেষমেষ গুরুর হাতের বেতই জুটে ছিল কপালে!
তথ্যপঞ্জি
১. আবু সয়ীদ আইয়ুব ব্যক্তিগত ও নৈর্ব্যত্তিক, দেজ পাবলিশিং, কলকাতা, ১৩৯৮।
২. আবৃত্তির জনপ্রিয় কবিতাবলি, টি.এস.সি ঢাকা বিশ¦িবদ্যালয় ২০১৪।
৩. প্রবন্ধসংগ্রহ, ঢাকা বশ্বিবদ্যিালয়, ঢাকা ১৯৯২।
৪. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, উদ্যান এবং উদ্যানের বাইরে, বিদ্যা , ঢাকা, ১৯৯২।
৫. নজরুল রচনাবলী, প্রথম খ-, বাংলা একাডেমি, জুন ২০১২।
৬. সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, কবিতা, নওরোজ, সাহিত্য সংসদ, ঢাকা, ১৯৮৫।
৭. তসলিমা নাসরিন, আমার কিছু যায় আসে না, বিদ্যা , ঢাকা, ১৯৯০।
৮. হেলাল হাফিজ, যে জলে আগুন জ্বলে, অনিন্দ্য , সপ্তম সংস্করণ, ১৯৯১।
৯. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কপালকু-লা, বণর্বিচিত্রা, ১৯৮৫।
১০. পূর্বোক্ত, কমলোকোনরে দপ্তর।
১১. প্রমথ চৌধুরী, প্রবন্ধসংগ্রহ, বশ্বিভোরতী, ১৯৮৬।
১২. মীর মশাররফ হোসেন, বিষাদ-সিন্ধু, অবসর প্রকোশোে, ২০১৬।
১৩. গীতবিতান, প্রতীক প্রকোশোে, একাদশ মুদ্রণ ২০১২।