ভীত চোখগুলো হাহাকারে বোবা । রোমেল রহমান
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:৩৯ পূর্বাহ্ণ, | ১৬৩০ বার পঠিত
পুড়ে গেছে ঘর
আঙিনার ছায়া
নিকনো উঠোন
মমতার চারা
ভস্মে এখন শুধু ক্রন্দন
বেঁচে থাকা শুধু
বেঁচে থাকাটাই
শেষমেশ এই সম্বল কাঁধে
পালাতে পালাতে বন মাঠ খাড়ি
তোলপাড় ক’রে নাফ নদী পার
পৌঁছাতে কি পারবো আমরা
বেঁচে থাকাটাকে কাঁধে বয়ে নিয়ে
পেছনে ঘাতক বন্দুক তুলে
তাড়া করে যেন শিকারে নেমেছে
আমরা মরছি ঝাঁকে ঝাঁক বেঁধে
কেউ কি কাঁদছে আমাদের দেখে
ভস্মে এখন শুধু ক্রন্দন
কোলের শিশুটা মরা মাছ যেন
জল ভালোবেসে ছিলো ব’লে আজ
মরে নি মাটিতে
দেয় নি তো দায়
অবাক পৃথিবী একবার দেখো
বারবার শুধু মরছি আমরা
ভীত চোখগুলো হাহাকারে বোবা
পৌঁছাতে চায় সীমানা ডিঙিয়ে
পৌঁছাতে কি পারবো আমরা
বেঁচে থাকাটাকে কাঁধে বয়ে নিয়ে?
২
এরকমভাবে শেষ হয়ে যাওয়া হয় যদি পরিণাম
রাষ্ট্রের হাতে ছাই হয়ে যায় সাজানো গোছানো গ্রাম
কার কাছে দেবো নালিশ আমরা
সিজদা করছি কাকে
সাক্ষী কেবল বোবা চোখগুলো অশ্রুর ধারাপাতে।
বুটজুতো এসে লেফট রাইট করে
আঙিনাতে ছায়া শকুনের
বুলেটে বুলেটে হাজার ছিন্ন পাতাবাহারের আঙিনা,
মাটি ভিজে ওঠে রক্তের দাগে
যেন কসাইয়ের উল্লাস।
কোলের শিশুটা আছড়ে মেরেছে,
কিশোরী মেয়েটা নির্বাক
চেয়ে আছে শুধু আকাশের দিকে ঘৃণাভরা চোখে চুপচাপ
নালিশ দেবে না কাউকে তো মেয়ে,
নালিশ দেবে না কাউকে!
পালাতে পালাতে কতো মাইল পথ
বৃদ্ধ জননী- পিতা কোলে নিয়ে
দিন নেই রাতে ঘুমহীন চোখে
শুধু বেঁচে থাকা কাঁধে বয়ে
পালাতে পালাতে সীমানার খোঁজে
এইপার ছেড়ে ঐপারে এসে
একই তো মুখ একই তো ভাষা,
হায় কাঁটাতার তুই নির্বাক
কেবলই বিবাদ রাজনৈতিক
মানুষে মানুষে বিভেদের দাগ।
নালিশ দেবো না কাউকে আমরা
কাকে দেবো তার ঠিকানা জানি না।
খুন হয়ে গেলো এক জনপদ,
তবু নির্বাক
নালিশ দেবো না
কাকে দেবো তার ঠিকানা জানি না।
বিধাতা পাথর চেয়ে চেয়ে দেখে
হত্যার উৎসব,
মানুষের হাতে মানুষ মরছে উন্মাদ উল্লাস।
যারা দেখে তারা চোখ বুজে দেখে
ঘুম যারা তারা আরো ঘুম
যারা বলে তারা গুনে গুনে বলে
চুপ যারা তারা আরো চুপ!
ধর্মের রঙ লাল নাকি নীল
সাদা নাকি কালো জানা নেই
কেবল দেখছি ধর্মের নামে নিহতের হয় শিরোনাম!
‘মানুষ মরছে, মানুষ মারছে’
একথা বলতে দ্বিধা হয়,
কাকে পুঁজো দিতে ফুল তুলি রোজ
ভুল তুলি বুঝি ভয়ানক।
সব লেনদেন
সব রাজনীতি এই যদি হয় শেষতক,
ফিরে যাই আমি মানুষের পাশে
সস্তা সতেজ গন্ধে
মিশে যাই আমি মানুষের ভাঁজে
যারা বন্দুক ধরে নাই,
উবে যাবো আমি সেই ক্রন্দনে
জাতীয়তা যারা বোঝে নাই।
‘মানুষ মরছে, মানুষ মারছে’ এই সত্যের অপরাধ
কাঁধে নিয়ে আমি নেমে আসি ভীত শরণার্থীর শিয়রে।
বোবা মুখ গুলো চেয়ে চেয়ে দেখে
শঙ্কায় কাঁপে থরথর
আমি ছুঁয়ে দিলে সেও ছুঁয়ে দেখে
কেঁদে ফেলে ঢেলে বিশ্বাস,
গুনগুন সুরে আহাজারি ক’রে
অশ্রুর রঙে বলে যায়…
ফেলে আসা দেশ
জন্মভূমিতে রচিত স্মৃতির চিহ্ন।
৩
‘মানুষ মরছে, মানুষ মারছে’
একথা কেবল সত্য।
আমরা পারিনি পৌঁছাতে সেই শান্তির মহাশৃঙ্গে।
শুধু কিছু কথা দাড়ি আর কমা
মিটিঙে মিছিলে চিৎকার
গোল বৈঠকে সাপলুডু খেলা
তামাশার যেন অবসর,
গণহত্যার বেয়নেটে তবু আসে নি তো ঘুম ক্লান্তি
বোমা বুলেটের বিক্রেতারাই ত্রাতা হয়ে আসে বর্বর।
৪
আমরা কেবল জড়িয়ে ধরতে পারি বুকে নিতে টেনে বেদনা
তুমি আর আমি একই তো লাল, লাল রক্তের জন্ম,
তুমি আর আমি মানুষ নামেই হই যেন শেষ শিরোনাম।
মুসলিম নই হিন্দুও নই
নই বৌদ্ধ খ্রিস্টান
তুমি আর আমি আমরা সবাই এই পৃথিবীর সন্তান।
মানুষ আমরা
এইটুকু শুরু
এইটুকু শেষ
শিরোনাম।
৫
তুমি পুড়ে গেলে আমি পুড়ে যাই
তুমি নিভে গেলে আমি ধসে যাই।
তুমি আর আমি আর কিছু নই
এই পৃথিবীর সন্তান।
তুমি ভূমিহারা হয়েছ বলেই
আমি করি আজ আহ্বান।
তুমি আর আমি মানুষ নামের এই পৃথিবীর সন্তান।