শুকনো ফুলপাখি… । রেজওয়ানা জাহান
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জুন ২০১৭, ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ, | ১৮০৭ বার পঠিত
রুদ্রের দুটো কবিতার ভাঁজে ছিলাম। বুঝলে?
“বৃষ্টির ভ্রূণ দেখে” আর “এক গ্লাস অন্ধকার” এর মাঝে। রুদ্রকে আমার ভালোই লাগতো। সুতরাং ওর সঙ্গে সহবাসে আমার কোনো আপত্তি ছিলোনা। খুব ভালোই যাচ্ছিলো। কিন্তু ঐ যে,
“অবেলার বেলা কে সুভাস! ৭ই ফাল্গুন, ১৪১৮”
হলদে হয়ে আসা পৃষ্ঠায় রোজ মিসেস বেলা মূখার্জির গড়িয়ে পড়া চোখের জল আমাকে, আমাদের কী যন্ত্রনায় পিষছিলো শেষের ৫টি বছর! রোজ রাতে তার বুকে কান পেতে ঢেউ ভাঙ্গার শব্দ শুনতাম। এত্তো বড়ো সমুদ্র তবু শূন্যতা, এতো নহর তবু জীর্ণতা।
সেই নোনা ঝড়-বাতাসে আমরা শুকিয়ে যাই। আমরা মরে যাচ্ছিলাম, প্যারালাইসিস, বোবা আর কি কি শব্দ ব্যাবহার করা যায় জানি? মাথায় আসছেনা!
সে যাই হোক, আমি ছিলাম বিনা মালিকের বাগানের সাদা গোলাপ। আমার সুবাসে কতো শত পথিক পাগল হয়েছে, কতো প্রেমিকা চুমু খেয়েছে, কতো শহীদকে নতশিরে প্রণাম করেছি, আশীর্বাদ পেয়েছি। আমায় দেখলে কতো অসুখ দৌড়ে পালাতো, আমি মান ভাঙ্গাতাম ভুলে যাওয়া জন্মদিনের, কতো ভালোবেসেছিলো সবাই আমায়।
অথচ আমাকে দেখলেই কি না বেলার চোখ ভরে আসতো! ভাবতে পারছো? সেই পোড়া চোখ আমার রূপ গন্ধ শুষে নিতো রোজ। আমি, রুদ্রের বইয়ের পাতায় দম চেপে শুয়ে থাকতাম আর কি!
আমি পাখি হয়ে গেলাম! ভাবতে পারছো! সেই শুকনো ফুলটি কী সুন্দর কালো কুচকচে কোকিল হয়ে গেলো! আমি উড়তে উড়তে হঠাৎ একটা ঝরে পরা বকুল হতে পারতাম, জলের গানে ভাসতে পারতাম, ভাসতে ভাসতে এক টুকরো মেঘ হতে পারতাম। নাহ, পাখি হতে ইচ্ছা করলো ভীষণ। আমার যা হতে ইচ্ছা করবে আমি আজ তাই হবো। আমি মুক্ত। আমার যা খুশি আমি তাই করতে পারি। আমি নাচছি, উড়ছি, বাতাসে ডানা ঝাঁপটাচ্ছি
হঠাৎ একদিন অবাক কান্ড! আমার পাশেই অগাথা ক্রিস্টি! জহির!
রবীন্দ্র!
তার উপরে রঙ বেরঙের কতো নানান চুড়ি, কাজল, শামুকের মালা, একটা শঙ্খ আর, পুরো ঘর জুড়ে একটা চাপা বুনো ফুলের সুবাস ছিলো। ফুলটা আমার পরিচিত লাগছিলো খুব। হ্যাঁ, হ্যাঁ ঐ ফুলটাইতো যেটা ফোটে রাত গভীরে অথবা ঠায় দুপুরে, হাড় কাঁপা শীত বা কটকটে গ্রীষ্মে।
যে ফুল ফোটে যেকোন ক্ষণে, কারণে অকারণে, লাজে, ভয়ে, তৃষ্ণায়, কান্নায়, রান্নায়, চায়ের কাপে আঙুল ডুবিয়ে, খুব যত্নে শার্টের বোতাম সেলাই করতে করতে বা…যাহ! আর বলা যাবেনা।
হুম … হুম … হুম … গুন-গুন … রয় না? … বসন্ত এসে গেছে!!
বেলা আমার দিকে তাকালো। বেলী ফুলে খোপা ঢাকা। কেমন জানি দেখলো আমায়। কান্না তার আজও পাচ্ছিল । শুধু সেই কান্নায় ছিল কাজলে লেপটানো নরম আদর। সে আমায় ছুঁলো। তারপর একটা দমকা বাতাসে উড়িয়ে দিলো হাওয়ায়। ফু…
আমি পাখি হয়ে গেলাম! ভাবতে পারছো! সেই শুকনো ফুলটি কী সুন্দর কালো কুচকচে কোকিল হয়ে গেলো! আমি উড়তে উড়তে হঠাৎ একটা ঝরে পরা বকুল হতে পারতাম, জলের গানে ভাসতে পারতাম, ভাসতে ভাসতে এক টুকরো মেঘ হতে পারতাম। নাহ, পাখি হতে ইচ্ছা করলো ভীষণ। আমার যা হতে ইচ্ছা করবে আমি আজ তাই হবো। আমি মুক্ত। আমার যা খুশি আমি তাই করতে পারি। আমি নাচছি, উড়ছি, বাতাসে ডানা ঝাঁপটাচ্ছি। রুদ্র আমায় দেখে হাসছে, যেনো আমি পাগল হয়ে গেছি খুশিতে! ঐযে, বইমেলায় ওকে দেখা যায় অন্য একটা মলাটে, গোটা গোটা হরফে বাবাটা লিখছেন,—
“মামনী, প্রতিটি ‘আজ’ আর ‘এখন’ ভালো থাকবি…. ৭ই ফাল্গুন, ১৪২৩।” মধুরও অমৃত বাণী, বেলা গেলো সহজেই.. সে কি! গান না আমি বরং শিষ দি।
কু … কু …