এক গুচ্ছ কবিতা । নওশাদ জামিল
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জুন ২০১৭, ১:৫৩ পূর্বাহ্ণ, | ১৪৫৮ বার পঠিত
সবুজ রক্ত
চুপচাপ শুয়ে আছি পাহাড়-টিলায়। চারদিকে
সহজ সবুজ ঘন চা বাগান, মৃদু আলোড়ন।
কোথা থেকে এল ঢেউ? ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে
খিল খিল করে হাসে। বলে, ‘বাবু মেরা সাথ যাবে’?
হাসি শুধু হাসি নয়, বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে মদ
কটুগন্ধ। তিতাস্বাদ। তারাপুর পাহাড়চুড়ায়
কে তবে আমাকে ডাকে? মাটিতে লুটানো এলোচুল
বাগানে ছড়ানো শাড়ি। হাতে হাত রাখি, মুখে মুখ।
এ যেন সবুজ রক্ত, যোনীদ্বার থেকে গলে গলে
জ্বালিয়ে রেখেছে লাল মশাল, নিস্তব্ধ চরাচর।
বলি ‘চল ঘরে যাই’। হঠাৎ সে জোরে টান মেরে
আমাকে বলল হেসে: ‘বাবু এ-বাগান মোর ঘর’।
এত হাসি, এত সুখ? সামান্য গিলেই নাচে চাঁদ
আমি নাচি, সে-ও নাচে, কাঁপে পাহাড়ের কালোসাপ।
পাগল প্রলাপ
দীর্ঘ বিস্মৃতির দিন এসেছে এখন। মস্তিষ্কের
কোষে কোষে অসার জড়তা। সবুজের জট যেন
মাথার ভিতর ঢুকে গেছে সাবলীল। তবে কেন
এসেছি এখানে? কিছু কী ছিল আমার? আমাদের?
শূন্যহাতে, ভিক্ষার ঝুলিতে ঝরে পড়ে টুপটাপ
কবিতার বিষণ্ন প্রহর। আমি ধরতে পারি না
ছুঁইতে পারি না বলে ছুঁয়ে দিই নিরুদ্দেশ মেঘ
মুখমণ্ডলের রেখা। তুমি বলো: পাগল প্রলাপ।
স্মৃতি থেকে বিচূর্ণ মুখের দিকে হেঁটে যেতে যেতে
মনে পড়ে শালপাতা, শান্ত নদী। মধ্যবয়সের
কাছে কেন যাব? তুমি তো চেয়েছ শৈশবের রোদ
চেয়েছ কুড়িয়ে আনা শালিখের ছানা, মাটিঘর।
কিভাবে বানাব ঘর? কাঠ নেই, মাটি নেই বলে
বালির ওপরে আঁকি ঘর, আঁকি তোমার অধর।
নগ্ন পদচ্ছাপ
এক বিদায়ের থেকে অন্যকোনো বিদায়ের দিন
যত দীর্ঘ হয় ততদিন ঘুরে আসি
ততদিন দেখি কিছু নগ্ন পদচ্ছাপ
মাঝখানে অধিকারহীন — উড়ে উড়ে চলে যায়
মুহূর্তের ধাক্কা
দেখি একভ্রুণ থেকে জেগে ওঠে আরেক পৃথিবী
এই রাত্রি এই সুড়ঙ্গের কানাগলি
আবার কী অবলীন হবে?
সিঁড়িমুখ ধরে হেঁটে যেতে যেতে শুনি
ঝিমধরা পাগলের হাসি
যেন আচ্ছন্নতা। আলো নেই, ছায়া নেই
নিশ্বাসের মতো পড়ে আছি এই গ্রহে, মায়াজালে
মাঝখানে কিছুদিন ঘুরে আসি — মাটিতে, পাথরে
ঘুরে আসি অশ্র“তে, হাসিতে।