এক গুচ্ছ কবিতা । রাসেল রাজু
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জুন ২০১৭, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ, | ১৫৯৫ বার পঠিত
প্রশান্ত ভাব
তুমি নির্ভার হলে জেগে ওঠে সান্ধ্য বাতাসেরা
বৈরি আবহাওয়া ছাপিয়ে ক্রমশ শান্ত জলে
ভাসমান প্রশান্তির এই এক শেষ ছোঁয়া —
প্রিয়তমা সন্ধ্যাকাল, আমি জেগে আছি
নেই কোন বৈরিভাব, শুদ্ধতাবাদী চাওয়া
শাপলা অথবা পদ্মফুল হয়ে ভাসুক আবার
আমাদেরই চেনা ক্ষুদ্র কোন বিলে
অথবা অচেনা কোন জলাশয়ে,
হাঁসেরা প্রশান্ত জলে ক্ষণকাল কাটুক সাঁতার
ঢেউ এঁকে এঁকে, ডুবে ডুবে করে সন্ধান
বাড়াক নাহয় জীবনের কিছু চাওয়াপাওয়া।
অযথা বিকেল পেরুনো বেলায় নীরব এ গানে
মৃদুতর বায়ু মেখে নিয়ে দেহে এই ছায়া
চাঁদের বনতলে, চালতার সুঘ্রাণ মেখে
রোজনামচা জীবনে আরেকটিবার অন্তত এসো ফের
সব ব্যবধান ব্যবচ্ছেদ ভুলে চলো বলি
আমরা হৃদয় সাজাতেই ভালবাসি
আনন্দ অথবা বিমূর্ত ব্যথার আলোড়নে…
বিষাদ মরুভূমি
সমুদ্র তোরঙ্গ তোমার
আলগোছে চড়ে বসো।
বহুদল অগ্নুৎপাত মূলে
বিষাদ হয়েছে আঁকা
বিজলি জ্বলেছে প্রাতে
আকাশ রেগেছে একা
বজ্রপাতে
তুবু তুমি স্থির-অবিচল
বিষাদিত রাতে জাগো
নিগূঢ়তম সম্ভাবনাতে।
আলো ভাসে জলে
জাগতিক উপকণ্ঠে
নিভৃত সে ভ্যালি
ক্লান্তিহীন নিভে-জ্বলে
জোনাকি আলোতে
বিষাদিত সাঁকো এক
অন্ধকারে আছে খুব
দাঁড়িয়ে একাকী
নিভৃত জীবনে।
চিঁহিঁহিঁ! চিঁহিঁহিঁ! নয়
কলকল ঢেউ বয়ে যায়
বৃষ্টি থেমে গেলে
হাতিদল করে যায়
বৃংহিত উচ্ছ্বাস।
তেপায়া কেদারা জুড়ে
শুধু কল্পনায় যাবে তুমি
যাবে তুমি বহুদূরে একা
এই যে বিষাদ মরুভূমি
অবিরাম এই রাত
কোনদিন ফুরোবে না
ফুরোবে না কোন এক
অতিকায় রাত
পোহাবার প্রাক্কালে!
একা রেঞ্জার
নিত্য রাতে একা একা বহুদূর কোন সে পাহাড়
বলে যায় কিছু কথা বায়ুময়।
পোকাদের সমানুপাতে
নিজেকে পেরিয়ে এসে
কত রোজ হয়ে যাই লাজুক বিড়াল,
কাদাজলে ঢেকে ফেলি কায়াহীন মন।
অবিরাম বেদনাবোধে ভীষণ একা
জেগে আছি এই তীরে নেই যেথা কোন এক নদী,
অথবা রমণী কোন নিভৃত স্তনাগ্রে যে
মেখে চলে বেদেচক্র কোন
স্থায়ী যার নয় কোন দেশ
তবু রোজ নিভন্ত বিপণি জুড়ে বসে মেলা
কাদাজল মেখে মেখে মুখে পুরে হাসি
বলে কেউ, ‘ভালবাসি এইটুকু থাক’
শীর্ণ দেহে পসারিণী-বল
নামট্যাগ ভুলে যাই, ভুলে যাই সব
অনুভূতি-অনুভব যত
শুধু রাতে একা একা ভেসে চলে বায়ু
পৃথিবীর বুঝিবা ফুরিয়েছে সব আয়ু…
মৃত্যুচিত্র
নাহয় দেখালে আজ এতটুকু ত্রিকোণ জীবন
বেদনা কতটা পথে যায় ছুটে একা একা
বিমূঢ় আনত চক্ষুঃ ছলছল করে উঠে যেন
এই বালিয়াড়ি দিতে রোজ রাতে পাড়ি
বয়ে যায় বাতাস যখন।
বিমূর্ত যে আঁখি দেখে চলে তার কায়া
নশ্বরী, তুমি যে মরীচিকা মায়া
এই মরুভূমি জুড়ে প্রান্তরেখা অভিমুখে
ধেয়ে যায় কত সুখ, কত না অসুখ
মৃত্যুচিত্র হয়ে যায় ক্ষণকালে আঁকা!
সুনেত্রা
গরম হেসেছে বাতাসে যে!
তুলোভরা বালিশ জড়িয়ে মেঘে মেঘে
ঝরেছে কত যে বৃষ্টি গতরাত্র!
সুনেত্রা যে ঘরে নেই আজ
নেই তার পদচিহ্ন কোন
যায় নি সে কোন পদছাপ ফেলে
নিরুদ্দেশে গেছে কি সে?
তরল বেঁধেছে বাসা
সুনেত্রার স্মৃতিপটে
একাধিক মাকড়শা বুনেছে জাল দ্বারে—
সুনেত্রা যে ঘরে নেই আর
ঘর ছবি হয়ে আছে বসে
সুনেত্রা নেই যে
নিরুদ্দেশে গেছে কি সে?
গুমোট আকাশ!
বাতাস বইছে যদিওবা
তপ্ত বায়ু! নিঃশ্বাস! নিঃশ্বাস!
সুনেত্রা! সুনেত্রা!
এই হাক হেকে যাক রাতের সুবাতাস,
পতঙ্গভুক প্রাণ যেন ফিরে পাক
জীবনের মানে
সুনেত্রা সেসব জানে!
সুনেত্রা সেসব মানে!
নাহয় ভেজালে এইটুকু একা দৃষ্টিপথে চেয়ে
এইখানে রাতে নিভে নিভে তবু বেঁচে যায় শেষ বাতিটা
শুধু যেন কোন সুবহেসাদিকে উঠে পড়ে ফের
বিলুপ্ত শেয়াল—
গোরস্তান থেকে কোন কৌতুহলে
ডেকে ওঠে যেন হঠাৎ হঠাৎ।
নির্মোহ এ চোখে যেন আছে এক গভীর জলদি
ব্রতচারী রাতে অনুগামী মন
মীনরাশি নারী, ভিনগ্রহবাসি নর
কতটা অনড়! কতটা অনড়!
দিগের অন্তে যেন অবসর জুড়ে রেখাটুকু মেনে
দিগন্তে বিলীন শেষ সূর্যরশ্মি
যেতে চায় শুধু দিগন্তে অপার।
অভিমান জুড়ে আছে কত ভোররাত
নেই যেন সেই বিমুগ্ধ পিপাসা
নেই যেন সেই বিদগ্ধ ভুবন
করতল জুড়ে নেমে আসে রাত
হস্তরেখা যায় কপট আবহে মুছে
মুছে যায় শেষ জলছবিটুকু।
‘সুদূরে মিলিত রেখা তুমি আজ
পড়েছি ত কত সেই চিঠি আমি
বিরহে গড়েছি মেঘ
কত যে আবেগ!
যেইদিন গেছে বলে জানি আজো
সময়ের ভাগাড়ে তাই তবে খুঁজো
বিরহ বেদনা জাগাবেই শুধু শুধু?’
‘এই হাত দেখো, এই চোখ পড়ো
কোথাও কি আছে ব্যবধান কোন?
ভালবাসি সুরে তালপাতা দুপুরে
বয়েছে বাতাস আজ?
নাহয় ভেজালে এইটুকু একা দৃষ্টিপথে চেয়ে
নাহয় ভেজালে এইটুকু একা দৃষ্টিপথে চেয়ে!