গুচ্ছ কবিতা । অরুদ্ধ সকাল
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মে ২০১৭, ১১:৩৩ অপরাহ্ণ, | ২১৭৭ বার পঠিত
নিখোঁজ কুমার
সারু হারিয়ে গেছিলো
আমারও হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে খুব। এই আধভাঙ্গা রাস্তার কংক্রিট শহরে।
শব্দে-শব্দে মাতাল দূর্বানগর ছেড়ে অনেক দূরের অচেনা গন্ধময়—
বুনোফুল গলিপথের ‘নিখোঁজ কুমার’ হতে ইচ্ছে করে।
নামফলকহীন কোন স্টেশনে বসে থেকে-থেকে জনমানবের পথচলা দেখতে ইচ্ছে করে।
এক-দু’বেলা খাবার চেয়ে নিয়ে খেতে খেতে,
“হারিয়ে যাবার পর কোন কিছুই মনে পড়ছে না” কথাটি বলতে ইচ্ছে করে।
দু’এক রাত্তির ফুটপাতের জঞ্জালে শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করে খুব।
অযতনের উপহাস কিংবা তিরস্কার দু’চোখে মেখে কাঁদতে ইচ্ছে করে।
এই আধ-পাগলা রাষ্ট্র ছেড়ে দূরের কোন মন্ত্রী বিহীন রাজ্যে নিজেকে—
. উদ্বাস্তু হিসেবে দেখতে ইচ্ছে করে।
ভীড় ভরা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে স্বাধীন পাখির মতো—
অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করে।
মৌলিক অধিকারের চিন্তা কিংবা পরিপাটি অসুখী মানুষ হবার চেয়ে—
উচ্ছন্নে যেতে ইচ্ছে করে খুব।
সারু হারিয়ে গেছিলো, আবার ফিরেও এসেছিলো
কিন্তু—
আমার ফিরবার ইচ্ছে নেই, আশাহীন বুনোপথের
‘নিখোঁজ কুমার’ হতে ইচ্ছে করে।
গোপন অন্ধকার-১
লবঙ্গের স্বাদ নেই, আছে তার ঝাঁজ। মুখে পুরে উত্তাপের সমুদ্রে হাঁটছি রোজ। ‘দ্যা পিকচার’ ম্যাগের পাতা উল্টাই। মুহুর্তের প্রশান্তি দোল খায় মস্তিস্কের বালুচরে। নবনীতার নগ্নালঙ্কার পাতায় পাতায়। কতো মধূর হাসিমুখ নিয়ে নিজেকে মেলেছে প্রজাপ্রতির মতো। গন্ধরাজের গন্ধে আকুল-ব্যকুল হয় ক্যামেরার মেষকুল। নবনীতা হেসে-হেসে উড়িয়ে দিয়েছে গোপন অন্ধকার। ঠোঁটের ভাঁজে অতটুকু দুঃখবোধ নেই, যা আমি রোজকার দীর্ঘশ্বাসে ফেলি।
এখানে পাতায় পাতায় শুধু ডলারের ছড়াছড়ি। শরীরের ভাঁজ বিক্রি হয় আনন্দের খামে। বেঁচে থাকার জন্য, শরীরের জন্য, ভালো মানুষীর জন্য, শুধু অর্থের যখন প্রয়োজন, তখন শরীরটাইবা আফসোস করবে কেন ফ্ল্যাড লাইটের সামনে দাঁড়াতে। নবনীতা রোজ হাসে, রোজ বলে, অন্ধকারে আমাকে দেখার চেয়ে ম্যাগাজিনের পাতায় দেখো, তাতে অপরাধবোধ কম জাগবে। চেয়ে থাকি। প্রশান্তি দোল খায় মস্তিস্কের বালুচরে।
অসমাপ্ত কথা
চুলপাকা চশমায়, পাঞ্জাবী, চাদর জড়িয়ে
তিনি উঠে দাড়িয়ে বললেন,
না-না আমি ঠিক কবিতা লিখিনা
কবিতার মতো করে লিখি।
কবিতা বলতে আমি বুঝি, ব্যর্থ-বিদ্রোহের প্রলাপ
আমার জীবনে বিদ্রোহ নেই
আমি নতমুখী টিপিক্যাল বাঙালী
বেতন বাড়াতে অনশন করি,
বোনাস না পেলে, শাসন কর্তার গোষ্ঠি উদ্ধার করি
ব্যাস এই তো!
বাসাভাড়া বেড়ে গেলে মুখ-কোচকাই কিন্তু
পাশের বাড়ির কেউ ধর্ষণ হলেও টু-টা করিনা
তবে অফিসে রোজ বাংলিশ বলে বলে বাংলাকে ধর্ষণ করি
আমি ঠিক কবিতা লিখিনা
তবে কবিতার মতো করে লিখি
কবিতা বলতে আমি বুঝি…
না- থাক আরেকদিন বলবো।
কল্পকথার গল্প
কল্পকথার গল্প লিখে দিলাম তোমায়, কোন শিরোনাম নেই। ইচ্ছেমতো বসিয়ে দিও কোন একটা নাম।
অজ¯্র নাম রয়েছে দুনিয়া জুড়ে, সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিতে নামের ছড়াছড়ি। কল্পকথায় যে গল্প দিলাম তোমায়, তা তোমার সমস্ত জীবনের কথা বলবে। মুখ বুজে পড়ে আছে ‘শব্দরথ’ তোমার উচ্চারণের অপেক্ষায়। তুমি বললেই শব্দরথ চলতে শুরু করবে, তুমি বললেই এই গল্প তোমায় কল্পনার, আল্পনায় জল্পনার জগতে ঘুরিয়ে আনবে।
তুমি শুধু ইচ্ছেমতো বসিয়ে দিও কোন একটা নাম।
কল্পকথার গল্প দিলাম তোমায়, প্রতিটি পাতায় আঁকা আছে জীবন ছবি। তুমি শুধু পৃষ্ঠা নম্বর লিখে দিও। এই ছবি তোমার ‘জীবনালঙ্কার’। তুমি বললেই তোমাকে জড়িয়ে নেবে। তুমি বললেই জীবন ছবি, রবি হয়ে তোমায় রাঙাবে বেলা-অবেলায়। তুমি শুধু ইচ্ছে মতো পৃষ্ঠা নম্বর বসিয়ে দিও।
কল্পকথার গল্প লিখে দিলাম তোমায়, কোন শিরোনাম নেই। ইচ্ছেমতো বসিয়ে দিও কোন একটা নাম।