জন লেনন দুই ডজন । জাহেদ আহমদ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ৯:৩৫ অপরাহ্ণ, | ২৫৪৯ বার পঠিত
দুনিয়ার যে-কোনো টপিক নিয়া আলাপালোচনায় এখন এই ওয়ান-ক্লিক-অ্যাওয়ে টেক্নোসুবিধার যুগে আলাদাভাবে ভূমিকা ফাঁদার দরকার আছে কি না ভাবতে হয়। বেশিরভাগ ভূমিকায় যে-জিনিশটা আমরা চাই এবং পেয়েও যাই, অবিলম্বে, সেইটা হচ্ছে তথ্য। বস্তুসংশ্লিষ্ট প্রাথমিক তথ্যাবলি। চিনপরিচয়। কিন্তু তথ্যের জন্য মহাসড়কের কিনারায় দাঁড়িয়ে অলস বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ নিম্নমুখী রেখে হিচহাইক করা যায় না আবিশ্ব তথ্যদুনিয়া, — আজকের যুগে হেন বদনসিব ভূখণ্ড খুঁজে পাওয়া ভার। গোল ও মেরুপ্রদেশে কিঞ্চিৎ চ্যাপাঢ্যাপা অবয়বের এই গোলার্ধে সার্চ-ইঞ্জিনে গলগল করে বেরিয়ে আসে না টাইপের অতি অল্প টপিকই বিরাজে। এবং অন্যদিকে এখন সক্কলে সেলেব্রিটি যার যার নিজের বলয়ে। এবং কারো সঙ্গে পয়লা আলাপপরিচয়ে আইসব্রেইকিং দরকার হয় না আজকে। তেরোবর্ষীয় হইতে তেয়াত্তরবর্ষীয়ান পর্যন্ত সকলেরই জীবন সাফল্যমণ্ডিত সহস্র-সহস্র ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফলোয়ারে। সেহেতু ভূমিকা আদৌ দরকার হয় না। কাজেই প্রিফেসের প্রয়োজন আজ আর নাই। ডিরেক্ট অ্যাকশনে গেলেই হয়। কিন্তু ভূমিকারও দরকার হতে পারে বটে। এখনকার যুগে ক্ল্যাসিক্যাল আঙ্গিকী প্রিফেস বা ভূমিকা বা প্রাচীন গ্রন্থিকের বাংলায় যারে বলে গৌরচন্দ্রিকা, সাংবাদিকী লিঙ্গুয়ায় এরেই কয় ইন্ট্রো বোধ’য়, তার দরকার কবে থেকে উধাও হয়েছে এবং এর রিপ্লেসমেন্ট হিশেবে কে এসে ব্যবসা ফেঁদে পার্পাস্ সার্ভ করে যেতেছে এফিশিয়েন্টলি … ইত্যাদি নিয়া আলাদা জায়গায় আলাপ জোড়া যাবে। নেসেসিটি যত্রতত্র হয় না আজ আর, ভূমিকার, এইটুকুই-যা আপাতত বলবার।
দশাসই ইন্ট্রো হয়ে গেল কিন্তু! হলো যদি তবে সখা, রাবীন্দ্রিকতা ছাড়িয়া, প্রাণের মাঝে আয়? না, আসবার কথা গানের মাঝে। সে তো এল না। আসবে, নিশ্চয়, জরুর আয়েগা। গানের আগে একটু গপ্পোসপ্পো, পুরানা কায়দা মেনে, করে সারা যাক। তথাস্তু!
জন্ম যদি তব বঙ্গে, হে শ্রোতা-পাঠক ভ্রাতা-ভগ্নি-ইয়ারদোস্ত, লেনন এবং লেনিন নিয়া আপনার লগে আলাপ জোড়া আদতে মায়ের সনে মাতুলালয়ের গল্প করার শামিল। ভ্লাদিমির ইলিচের যেমন বহু প্রশাখার গল্প শুনে আপনি উঠেছেন বেড়ে, এর্নেস্তো গেবারার শুনেছেন যেমনভাবে, তেমনি জন লেননেরও। তবু, স্মরণযন্ত্রে একটা ঝাঁকি দিতে, অল্পের উপর দিয়া খানিক তথ্য বিতরিয়া যাই। ‘বিটলস’ গ্রুপটার নাম মুখে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে লেননমুখ মনে পড়ে, ম্যাকার্টনি কিংবা হ্যারিসন প্রমুখের চেহারা ভাসে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পলকে, অ্যাট-লিস্ট আমাদের বাংলা-ভূভাগে এই স্বীকারোক্তি নির্ঘাৎ সত্যি। কিন্তু প্যল্ ম্যাকার্টনি কি জর্জ হ্যারিসন বা পিট বেস্ট কি রিঙ্গো স্টার আমাদের কাছে কম প্রিয়, কথা সেইটা না। আজকের উন্মুক্ত রিসোর্সের সময়ে এসে সব্বাইকে এবং সবকিছু আমরা চাক্ষুষ করছি, চাখছি ইচ্ছামাফিক, নিরূপণ করতে পারছি যথাযোগ্য তুল্যমূল্য। কথা হচ্ছে, লেননের ব্যাপারে একটা আলাদা প্রাণপ্রকোষ্ঠ রয়েছে কোথাও আমাদের ভিতরে। কে বেশি ‘বিটলস’ গ্রুপের ভুবনজয়ী সিদ্ধির নেপথ্য হকদার, — এমনতর গোছে ক্রেডিট নিয়া হাজার ফ্যাসাদের পরেও লোকে, দুনিয়াজোড়া প্রায় সকলেই, ‘বিটলস’ উচ্চারিবামাত্র গোড়াতে লেননের নামটাই নেয় অ্যাট ফার্স্ট। অচিরে একসময় ব্যান্ড ভেঙে যাবার পরে ম্যাকার্টনি এবং হ্যারিসন উভয়েই নিজেদের সোলো ক্যারিয়ারে চমৎকার সমস্ত গানবাজনা বেঁধেছেন এবং গেয়েছেন, যেমন লেননও প্রচুরসংখ্যায় এবং গুণপ্রাচুর্যের সঙ্গেই। নিবন্ধের নেক্সট কয়েকটা প্যারায় আমরা শুধু জন লেননকে কেন্দ্রে রেখে কথা পাড়ব।
অত্যন্ত অল্প বয়সেই নিতান্ত খেলাচ্ছলে লেখা-গাওয়া-বাজানো শুরু, জনি এবং অন্য বিটলদেরও, অল্প বয়সেই দুনিয়াজয়ী সিদ্ধিলাভ। জন লেননের বয়স তিরিশে পৌঁছানোর আগেই প্যপমিউজিকের রকধারায় ‘বিটলস’ গগনচুম্বী নিদর্শনগুলো স্তূপাকারে রেখে সেরেছে। এরই মধ্যে এলএসডি, পিল্ ও অন্যান্য বহুবিধ ফর্মে ড্রাগাসক্তিও তুঙ্গে। এর অব্যবহিত আগে প্যপ রকের রাজপাট ছিল এলভিসের কব্জায়। লেননেরা বেড়ে উঠেছেন এলভিস প্রিস্লির রক্-ন্-রল্ আবহাওয়ায়। বিল্ হ্যালি প্রমুখ অনেকেই ছিলেন তখনকার ধুন্দুমার রকতারা। পাঁচের দশকের সেই সংগীতক্ষেত্রটি ছিল পরবর্তীকালের রকোন্মাদনার বুনিয়াদ। বিটলদের গানে-বাদনে এলভিসের প্রভাব সবার চেয়ে বেশি, সিক্সটিজের এই বিশ্বমাতোয়ারা ব্যান্ডের প্রায় প্রত্যেকেই প্রিস্লির প্রভাব কথাবার্তায় স্বীকার করেছেন বহুবার। সোজাসাপ্টা ভাবভঙ্গির নকলনবিশি ছিল না তা, ছিল সৃজনশীল প্রভাব এবং আত্তীকরণের তূরীয় উদাহরণ। ফলে লেননেরা প্রায় প্রিস্লিস্মৃতি শ্রোতার কর্ণকুহর থেকে ইরেইজ্ করে দিয়েই নিজেদের রকবিজয়ের রথ হাঁকায়েছিলেন। ফলে আজও চমৎকার লেনন এবং তার গানসঙ্গী ভাইব্রাদার।
সংক্ষেপে এইভাবে অবশ্য সংগীতের ইতিহাস বলে গেলে জেনারালাইজেশনের জুলুম এত ব্যাপক হয়ে যায় যে শেষপর্যন্ত গোটা ব্যাপারটা পাঠকের হাস্যতামাশার খোরাক ছাড়া আর-কিছুই হয় না। তারপরও সংক্ষেপে এই তথ্যনিচয় তাবৎ লোকেরই জানা যে গেল-শতকের পঞ্চাশের দশকের প্রিস্লি, চাক বেরি, লেনি ডোনেগ্যান, বিল হেলি, লিটল রিচার্ড প্রমুখ অসংখ্য সংগীতশিল্পীর মঞ্চচারণায় বিশেষত রক্-ন্-রল্ অ্যারেনা মুখরিত। তবু কোথাও যেন অ্যামেরিক্যান রক্-ন্-রল্ দাপটের পাশে য়্যুরোপ এবং বিশেষভাবেই ব্রিটেন ম্রিয়মাণ ছিল। ব্রিটিশ তরুণযুবারা রীতিমতো হীনম্মন্য দিনযাপন করত এক্ষেত্রে, তাদের ভূখণ্ডের রক্ মিউজিক অ্যাটল্যান্টিকের অন্যতীরের সঙ্গে মেলাতে যেয়ে। এই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে সেই লিভারপুলের ছোট্ট বন্দরশাহরিক ব্যান্ড ‘কোয়ারিমেন’ থেকে ‘জনি অ্যান্ড দ্য মুনডগস্’ প্রভৃতি তিন-চারটে ফেইজ্ পার হয়ে একই শিল্পীদের সমবায়ে যখন ‘বিটলস’ দলটি বিশ্বের শ্রোতাদের দরবারে হাজিরা দিতে শুরু করে তখন থেকে। এর অব্যবহিত পরের দশকটি ফিফটিজের রক্-ন্-রল্ হ্যাংওভার আর বিটলম্যানিয়ায় আক্রান্ত। অ্যাটল্যান্টিকের দুই সাইডেই চিত্র অভিন্ন মোটামুটি। সিক্সটিজে ব্যাপক প্রতাপে রক্-ন্-রল্ মঞ্চে সওয়ার হয়ে একের-বাদে-এক বিস্ময় হাজির করে চলেছে। এই দশকেই বিটলসের তীব্র দোলার মাঝখানে একদম অবিসংবাদিত হয়ে দেখা দিচ্ছেন বব ডিলান, অ্যামেরিকায়, যেমন জোন বায়েজ এবং আরও অন্তত দুইডজন প্রভাবশালী শিল্পী, যাদের কাজ রকমিউজিকসিনে এভারলাস্ট অবদান রেখেছে। এই দশকেই, সিক্সটিজেই, লিট্রেচারে গিন্সবার্গদের ‘বিট জেনারেশন’ উদ্দাম ঘোড়া হাঁকাচ্ছে গোটা সাহিত্যনৈতিকতা মাড়িয়ে। এই দশকেরই শেষদিকে ব্যান্ড গড়ে উঠছে একে একে, যে-ব্যান্ডগুলো পরবর্তী ডিকেডগুলোতে ব্যাপকতায় বিস্তারী হয়ে ওঠে রকসিনে; এদের মধ্যে যেমন ‘পিঙ্ক ফ্লয়েড’, ‘লেড জেপ্লিন’, ‘রোলিং স্টোন্স’ ব্যান্ডগুলোর নামোল্লেখ না-করলেও শ্রোতারা ইয়াদ করে উঠতে পারবেন। তন্মধ্যে শেষোক্ত ‘রোলিং স্টোন্স’ লেননের স্বভূখণ্ডের এবং সম্ভবত দুনিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ পার্ফোর্মিং ক্যারিয়ারের ব্যান্ড, বিটলসের প্রায় পাশাপাশি সময়ে এদেরও উত্থান এবং সাফল্য, মিক জ্যাগারের নেতৃত্বে এই ব্যান্ডটি মিউজিকে ব্যাপক কাজ করেছে। লেননের সঙ্গে জ্যাগারের ঠোকাঠুকি লেগেই থাকত এবং পত্রিকা আর রেকর্ডিং কোম্প্যানিগুলোও ব্যাপারটাকে ক্যাশ করে কেচ্ছাকাহিনি বিলাইতে দরাজ-হস্ত সবসময়।
‘বিটলস’ গ্রুপের গগনছাওয়া সাফল্যের পেছনে ফ্যাক্টরগুলো কি ছিল, — এই কিসিমের কথিকাভরা আলোচনাবই ইংরেজি ভাষায় দেদার উৎপন্ন হয়েছে গেল ছয়-সাতদশকের লম্বা টাইমস্পেলে; এই নিবন্ধে আমরা সেসব স্পর্শই করব না, আমাদের সেই তৌফিকও হবে না আপাতত। শত শত বই আছে ইংরেজিতে, অ্যানালিটিক্যাল, যেমন আয়্যান ম্যাকডোনাল্ডের লেখা ‘রেভোল্যুশন ইন দ্য হেড : দি বিটলস রেকর্ডস্ অ্যান্ড দি সিক্সটিজ্’ কিংবা হান্টার ডেভিসের ‘দ্য বিটলস’ প্রভৃতি। মিল্টন ওক্যুন্ সম্পাদিত ‘দ্য কমপ্লিট বিটলস’ বই, কিংবা টনি রাসেল সম্পাদিত ‘এন্সাইক্লোডিয়া অফ রক্’ বই; ইভেন বাংলাতেও, অন্যান্য ভাষায় কি আছে বা কি নাই তা তো অনুমেয় সহজেই, এমনকি বাংলাতেও গোটা-কতেক চমৎকার রচনা আছে লেনন ও বিটলস নিয়া; আপাতত মনে আসছে একটা আস্ত বই এবং বইদীর্ঘ প্রবন্ধ একটা; বইটার নাম ‘গান ছাড়া জানি না কিছুই’, সম্পাদিত বই, অলকানন্দা সেনগুপ্ত এবং সন্দীপন ভট্টাচার্য কর্তৃক যৌথসমবায়ে সংকলিত-বিন্যাসকৃত-ভাষান্তরিত এবং কলকাতার অফবিট প্রকাশগৃহ ‘মনফকিরা’ কর্তৃক ২০০৫ সনে প্রকাশিত; বইদীর্ঘ প্রবন্ধটি ‘বিটলস উপাখ্যান’ শিরোনামে লিখেছেন শুভোদয় দাশগুপ্ত, রচনাটা ছাপা আছে ‘অনুষ্টুপ’ ২০১৪ প্রাক-শারদীয় সংগীত সংখ্যায়। এই দুইটা বাংলা উৎসের হদিস রেখে যেতে চাইছি, যেন অনুসন্ধিৎসুরা ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখেন এদের, বিশেষত শুভোদয় দাশগুপ্ত রচিত উপাখ্যানের, ইন্টার্প্রিটেশনে কতটুকু মৌলিকতা আছে এবং কতটা তা আংরেজি রিসোর্সপ্রভাবিত সরাসরি। রিমার্ক রাখবার মতো ফুরসতও আপাতত নাই, নিবন্ধের অভিপ্রায় একেবারেই ভিন্ন; উপস্থিত মুহূর্তে এইটুকুই বলবার যে, ট্র্যান্সল্যাশন হোক অথবা প্যারাফ্রেইজিং — ট্র্যান্সলিটার্যাশন হোক বা ট্র্যান্সক্রিয়েশন — সম্ভাব্য সমস্ত উপায়ে দুনিয়ার গানবাজনা নিয়া বাংলায় আলাপঝালা চালানোর ব্যাপারটা বাংলাগানের ডেভেল্যপমেন্টের জন্যই রিকোয়্যার্ড; বলা বাহুল্য, কথায় কথায় মৌলিকত্ব খোঁজা কাঁঠালের আমসত্ব ভক্ষণখায়েশের মতো অলীক ব্যাপার। উক্ত দুই রিডিং-ম্যাটেরিয়্যালের উসিলায় এতদবিষয়ে বাংলায় প্রাইমারি ভিত্তি তৈয়ারকরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে এখনও। কথা আপাতত শর্টে সেরে নেয়া বাঞ্ছনীয়। কয়েকটা গানের বাংলা প্রেজেন্টেশন আমাদের বর্তমান মামলা।
নানা ফ্যাক্টর নিয়া আলাপের দরকার নাই, ইঞ্জিনে স্টার্ট দেয়ামাত্র উইকিপিডিয়া হাজির করবে কয়েক লক্ষ তথ্যপত্র; শুধু সকলের অবগত কথাটাই আরেকবার উগরাই, সেইটে এ-ই যে, লেনন এবং ম্যাকার্টনির সমবায়ী লিরিক্স, অথবা তাদের আলাদা লিখিত পদগীতাখ্যগুলো, অবাক স্ফূর্তিবিচ্ছুরিত বাকপ্রতিমা একেকটা। আটপৌরে এক্সপ্রেশনগুলোকেই লিরিক্যাল এক্সটেইসির চূড়ায় নিয়া যাবার আশ্চর্য ম্যাজিক। মধুর সংগীতে একমোচড়ে বিধুরতার স্পর্শ। কোনো মোটাসোটা ভাবনা ছাড়াই মিউজিক ও সহুজে কথায় অন্তর বাজানো। জন লেনন এবং ‘বিটলস’ বলতে এ-ই ইন্ শর্ট। নইলে এমন আর কী! মিষ্টি গলা ম্যাকার্টনি এবং লেনন দুইজনেরই, এমন কোনো পৃথকতা নাই, মিষ্টি গলা তো কতশত সংগীতশিল্পীরই গিফটেড; ম্যাকার্টনি তুলনামূলক একটু বেশিই মিষ্টি, লেননে তা-ও রকনেস্ খানিকটা আছে। একেবারেই সাধারণ ইন্ ওয়ান হ্যান্ড, জন উইন্সটন লেনন, অন্যদিকে এতটাই নিরুপম!
বর্তমান গোছায় লেননের দুইডজন লিরিক্স বঙ্গানুবাদিত। মূলত ‘জন লেনন অ্যান্ড প্লাস্টিক ওনো ব্যান্ড’ পর্যায়ের গানগুলোই নিতে চেয়েছি। বিটলস পর্যায়ের লেনন-রেন্ডিশন নিয়া আলাদা কোনো বৈঠকে একটা ট্রাই করব মর্মে দিলের ভিতর তমন্না আছে। দেখা যাক। যদিও দুইয়েকটা গান বা তারও অধিক হতে পারে দেখা যাবে যে বিটলস পর্যায়ের সৃজন এবং সেগুলো প্যল্ ম্যাকার্টনি কিংবা আরও টিমমেটদের কন্ট্রিবিউশন ধরে রেখেছে; যেমন ‘স্ট্রবেরিফিল্ডস্ ফরেভার’ এবং ‘ইন মাই লাইফ’ শীর্ষক গানদ্বয় এই তর্জমাগোছায় এঁটে দেয়া হয়েছে যে-গানদুটো অসম্ভব শ্রোতাপ্রিয় দুই বিটলসকম্পোজিশনের নমুনা। ম্যাকার্টনির সঙ্গে লেননের সামবায়িক গানসৃজনের প্রক্রিয়া-পদ্ধতি নিয়াও আমরা জানি ইন্টার্ভিয়্যু সুবাদে, ‘প্লেবয়’ এবং ‘রোলিংস্টোন’ প্রভৃতি পত্রিকান্তরে লেননের দীর্ঘ কথামালায় সেসব জানা যায়, এতদসংক্রান্ত কোনো কথাবার্তা আপাতত তর্জমাভাষ্যে অ্যাবসেন্ট রাখা হয়েছে। সেসব খুঁটিনাটি পরে এক-সময় খুঁটিয়ে দেখে নেবার অবকাশ পাবো ও তথাস্থলে তথ্যজ্ঞাপনের সুযোগ নেব আশা করছি। জীবিকাদেবতা (ঠাকুরের জীবনদেবতা ত্রাহিরবে চেঁচায় এই জীবিকাদেবতার শাসনে) আমাদের সহায় হলে এক-সময়কার নিদ্রাকাড়া গানগুলো দুঃখিনী বর্ণমালায় এনে বসানোর কোশেশ তো করে যেতেই হবে আমাকে, এবং আমাদেরকে, কেয়ামতের আগে যেটুকু ফুরসত পাই। নিম্নসংরক্ষিত কথাগীতিগুলোর বাইরেও রয়ে গেল তর্জমাকারের আরও কতিপয় লেননরচনা, ফাটাভাঙা বাংলায়, বাদে একসময় সেগুলো প্রকাশোপযোগী বিন্যাসে এনে প্রেজেন্ট করা যাবে হয়তো-বা। আপাতত চব্বিশটা।
আর এখানকার এই বাংলায়ন বিষয়ে বিস্তর কৈফিয়ৎ দেয়া আসলে এমন জরুরি কিছুও নয়। পরে একসময় সেই চেষ্টা চালাব, যখন তর্জমার গোছাটা হাতে নিয়ে রিক্যাপ ও রিনোভেইট করতে বসব। তবে একটু শুধু বলি যে, এই ভাষান্তর বলা যায় একটা বড় অংশে অনুসৃতি, ঠিক মূলানুগ অনুবাদ যাকে বলে তা না। আদৌ অভিপ্রেতও ছিল না এইভাবে স্বেচ্ছাচার করে যাওয়া, ক্ষ্যামতা দিয়া কুলিয়ে উঠতে পারি নাই, কিংবা সেই চেষ্টাও জোরালো ছিল বলা যাবে না আমার দিক থেকে, নেসেসারি মনে হয় নাই বলে। ব্যাপারটা হচ্ছে যে, একেকটা গানের শরীর বাংলাস্নানের পরে দেখতে পাচ্ছি বিস্তর প্রতিসরিত হয়ে যেতেছে অরিজিন্যালের অর্থদ্যোতনা থেকে। আবার মূলের অর্থদ্যোতনা রাখতে গেলে কেমন ডিস্টিউন্ড শোনাচ্ছে কানে। শেষে স্রেফ বাংলা লিরিক্যাল মায়াবশত মূলানুগ থাকবার কিংবদন্তিতুল্য ‘অনুবাদকীয় সততা’ জলাঞ্জলিই দিতেছি। বিশেষ কিছু গোস্তাকিও হয়ে যেতেছে এই মায়ার খেলায়, সেসব নিয়া আত্মকৈফিয়ৎ ধাঁচের একটি প্রিফেস, বা পোস্টস্ক্রিপ্টাম টাইপ কিছু-একটা, মুসাবিদা করতে হবে দিনশেষে। এগুলো কাজেই অনুবাদ না-বলে অনুবিম্ব বললেই বরং সেইফ সাইডে থাকা হয়। বিম্বিত হতেছে যেমনটা আমার কাছে লেননগানের কথানিহিত ভাবটুকু, মৌহূর্তিক প্রতিবিম্ব যেমন দর্পণে, ওইটুকু অনুবিম্ব।
মুখ্যত প্রণয়ের গানে লেনন মশহুর। শুধুই কি প্রেমগীত? যুদ্ধবিরোধী গান, শান্তিগীতিকা, সুসময় এবং অসময়ের বিবরণ ও বয়ান সহজিয়া ভাষায়, এবং সর্বোপরি স্মৃতিতোলপাড় চিরন্তনতা। তারপরও ওই-সময়কার তুঙ্গ দুনিয়াপাল্টানো জলহাওয়ায় লেননের গানে রাজনৈতিকতা কি একেবারেই অলভ্য? জন লেননের একান্ত আপন কায়দায় হাজির তার সমাজবাস্তবতা এবং রাজনৈতিকতাও। জনেরই একটা গান আছে ‘রেভোল্যুশন’ নামে। সেইখানে এক সশস্ত্র তরিকায় বিপ্লবপন্থীর সঙ্গে লেননকে বাহাস করতে দেখা যায়। এবং যার যার সাধ্যমতো সকলেই পৃথিবীটা পাল্টায়ে চলেছে, চেয়েছে যেন দুনিয়াটা আগায়, এই-রকম একটা জায়গায় লেনন প্রকাশ করেন নিজেকে সেই গানটায়। অ্যানিওয়ে। লেনন শেষদিকে অতিমাত্রায় পেসিফিস্ট হয়ে গিয়েছিলেন। এহেন পেসিফিজম ওই সময়ে বেশ সন্দেহের উদ্রেকও করেছিল। গোটা ষাটের দশক জুড়ে অ্যাক্টিভিস্ট এনগেইজমেন্টের সেইকালে লেননদের ব্যক্তিবিমোক্ষণের গানপালা আজও সমালোচিত হয়ে থাকে একটা সাইড থেকে, সেইটাও স্ট্রং কম নয় ক্রিটিক হিশেবে, এরপরে লেননদের বিলাসভাসা যাপন ও রঙ্গিবিরঙ্গি বিজ্ঞাপনে লেখায়-কথায়-দূরদেখায় নেশাকাহনের জয়গাথা গাওয়া প্রকাশ্যে এবং সমালোচিত হয়েছে একেবারেই আচম্বিতে লেননের প্রায়-সেইন্ট পরিবর্তন; ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে অ্যাপার্টমেন্ট-বেইসমেন্টে একুনে চল্লিশে এক আততায়ী ভক্তের গুলিতে নিহত হবার আগের কয়েকবছর লেননদিনযাপন ছিল পত্নী ইয়োকোর সঙ্গে বেশকিছু স্টুডিয়োসংকলন তৈয়ারকরণে ব্যস্ত এবং কথাবার্তা-আচরণে যেন অনেকটা প্রাচ্যদেশীয় দরবেশতুল্য; গোপনও করেন নাই তিনি নিজের এহেন রূপান্তর, খোদ লিরিক্সেই স্বীকার করতে দেখা যাবে তাকে তার এই সন্তের চেহারা। নানান গানে, শেষদিকে। হ্যাঁ, শান্তির গান গাইলেই হয় না, শান্তি ছিনিয়ে আনতে হয়, ফের আরেকপক্ষ ছিনিয়ে নেয়, ফের একটা ভ্যাক্যুয়াম ক্রিয়েট হয় যেইখানে কেউ অসহায় নিরর্থ দুই-চাইরটা বাক্যে-শব্দে এইসব ফিউটিলিটি নিয়া গান লেখে বা লোকের চোখে একটু ধরিয়ে দিতে চায়, লেনন যেমনটা চেয়েছেন মনে হয়।
লেনন বা বিটলস এতই স্বতঃস্ফূর্ত ও সহজিয়া যে, বেঙ্গলের তাবৎ শ্রোতা ব্যাপারটার সঙ্গে অরিয়েন্টেড নানাভাবে, এর সুর ও অন্যান্য সংগীতাবহগত আয়োজনে এরা এতই চিন্ময় যে কথায় এগুলো ধরতে যেয়ে নাকানিচুবানি খাওয়ার চেয়ে এই সিরাতুল মুস্তাকিম পন্থাটাই নিয়েছি বেছে; — যেমন মনে হয়েছে যখন ও যেখানটায় এবং যেভাবে, তেমন করেই লিখে গেছি এ-যাত্রা। বাদ-ম্যে দেখা যায়েগা, আনে-দো যো আপসেআপ আ রাহা হ্যায়, ফি-আমানিল্লা বলে একেকটা আপ করে গেছি নিত্য ২০১৫ সনে ফেবুতে। অ্যানিওয়ে। এখানে এই গানগুলোর শিরোনাম অরিজিন্যাল ইংরেজিতে রেখে যেতেছি আগাগোড়া, লক্ষ করবেন, যাতে কেউ গুগলের সার্চ-ইঞ্জিনে যেয়ে ‘মেট্রো লিরিক্স’ বা ‘অ্যা-টু-জেড লিরিক্স’ বা জন লেনন অফিসিয়্যাল ওয়েবসাইট থেকে টেক্সট পড়ে নিতে পারেন। খুবই অ্যাভেইলেবল যেহেতু সবকিছুই আজকাল, এবং ইউটিউবে এগুলো জনের গলায় এবং অন্য অনেকের কাভার ভার্শন হিশেবেও শোনা যায় যখন-তখন। তবে, আই ক্যশন য়্যু, মূলের সঙ্গে মেলাতে যেয়ে এগুলোতে এত প্রতিসরণ টের পাবেন যে তেড়েফুঁড়ে আমারে ধোলাই দিতে আসতে পারেন এই সুরমার সরু লিকলিকা খাল পর্যন্ত। ওপশন ওপেন রইল। আর, ‘উপসংহারে বলা যায় যে’, গানাবাজানা থেকে দূরে রহিবেন জরুর দুই কিসিমের লোকেরা : হার্ডকোর পণ্ডিত ও হাড়কাঁপানো পরহেজগার।
সমস্ত অর্থে এইগুলো তো জনের সিরিজ কবিতা। বা জন ও তার বউয়ের কোনো-কোনোটা। না, সিন্থিয়া লেনন নয়, ইয়োকো ওনো। জন লেনন অ্যান্ড প্লাস্টিক ওনো ব্যান্ড। ওইভাবে ঠিকঠাক ধরা যায় না, মানে আমি দেখছি যে আমি পারছি না, বাংলায় খেলিয়ে তুলতে ঠিকঠাক। স্টুডেন্ট ছিলাম এককালে, কী কুক্ষণে যে, সেইসময় ইংরেজি বিস্তর গান বাংলায় লিখতে চেষ্টা করে দেখেছি যে আমার সমস্ত তর্জমাচেষ্টা সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত হয়ে যায়। এমনিতে আমি মনে করি যে গানের অনুবাদ অসম্ভব, কবিতার যতটুকু সম্ভাবনা থাকে একটুকু সভ্যস্থ-ভদ্রস্থ অনুবাদের, গানে সেইটা আমার বিবেচনায় এবং আমারে দিয়া আদৌ সম্ভবই না। গানের ক্ষেত্রে আমার মতে ওয়ার্ড-টু-ওয়ার্ড ইভেন বেশিরভাগ সময় সিক্যুয়েন্স-টু-সিক্যুয়েন্স অনুবাদন মানেই মার্ডার। যেইটা হতে পারে তারে বোধহয় অ্যাডাপ্টেশন বলে, বেঙ্গলে, কী-যেন ওই অভিযোজন/উপযোগীকরণ বলে বোধহয়। অ্যানিওয়ে। এই বার্ধক্যে এসে সেই দিনগুলো, লোকে যাকে স্টুডেন্টলাইফ বলে, পুনরায় চেটেপুটে নেয়া যায় কি না দেখছিলাম। তাছাড়া আমি লিখতেটিখতেও ছাই পারি না, কাজবাজের ফাঁকে একটু ফুট্টুশ, বাঁজা মুর্গির ডিমপাড়া প্রোব্যাব্লি। কিন্তু একটা ব্যাপার দেখছি যে একবার সুর ইগ্নোর/ওভার্ল্যুক করতে পারলে বেশ-খানিকটা বাংলা করা যায় বৈকি। মিউজিকটা ভালো যদি জানতাম একটু, তবে হয়তো-বা ট্র্যাক ধরে শব্দের ওজন বুঝে বিট গুনে গুনে এগুলো অনেক কনফিডেন্টলি করতে পারতাম। কিন্তু বীনাপাণি বাম। ডান হবার ভরসা আর নাই বিশেষ, কবে জানি বাঁশি ওঠে বেজে। শেষের হ্যুয়িস্যল্ এবং পগারপারের ফ্ল্যাগ এই পড়ল বলে! এইটুকু, — অচিরে কখনো অন্য দুই-চাইরজনেরও করা যাবে হয়তো, — তড়িঘড়ি তর্জমা তাই। নিতান্ত শখে। প্রচুর আপোস হয়ে যেতেছে অরিজিন্যাল লিরিক্সের সঙ্গে, যেইটা গর্হিত হয়তো। তবে কেউ নিশ্চয় নিরাপোস একটা ফেয়ার ট্রাই দেবেন এগুলো দেখে তেড়েফুঁড়ে। এইগুলো একটু থাকুক এইখানে। ব্ব্যাস্। যদি এই নবিশি ক্রিয়াকলাপের গোছা হাতে নিয়া আবার কখনো বসতে পারি, লিখি যদি প্রিফেস্ কিসিমের কিছু, তখন একটা ফাইনটিউনিং তোড়জোড় করা যাবে হয়তো। য়্যু ম্যে স্যে আ’য়্যাম অ্যা ড্রিমার … সুখিতা ভবন্তু!
জন লেনন দুই ডজন ।। ভূমিকাভাষ্য ও তর্জমা : জাহেদ আহমদ
ইম্যাজিন
মনে করো কোনো স্বর্গটর্গ নাই
মনে তো করতেই পারো
উতরোল নরকের গোটা কল্পনাটাই
বিচ্ছিরি বিকট আরও
উর্ধ্বগগনে কেবলি অগাধ শূন্য
মনে করো শুধু মুহূর্তটাই আছে বাঁচবার জন্য
মনে করো কোনো রাষ্ট্রদর্প নাই কিংবা দেশ
কল্পনাটা আদৌ অলীক নয় কিংবা নাই বিভ্রমলেশ
মনে করো যত খুনখারাবি চিরতরে হয়েছে বিদায়
মনে করো মতান্ধ ধর্মেরও দাপাদাপি নাই দুনিয়ায়
আর মানুষেরা যেইখানে যাপিছে জীবন
পরমায়ুপরিবৃত ভূপৃষ্ঠে দ্বেষ-হিংসা-হানাদারছাড়া শান্তির বরিষন
বলতেই পারো দেখতেছি আমি অসম্ভবের খোয়াব
কিন্তু জানি বিপন্ন গ্রহে এই দৃশ্যটা দেখিতেছে অনেকেই
বিশ্বভরা প্রাণের প্রণয় সূর্যতারার সদ্ভাব
এই দিবাস্বপ্ন দেখে জেগে উঠবে তুমিও আশা করি অচিরেই
মনে করো কোনো মালিক নাই বা নাই মালিকানাবোধ
কোনোমতে যদি একবার তুমি ভেবে দ্যাখো ঘটনাটা
নাই লোভ নাই অভাব ও ক্ষোভ ক্ষুধা কান্না বা ক্রোধ
বিপুলা ভুবন ব্যাপিয়া কেবলি সপ্রেম সন্নাটা
সহজ চোখে একবার শুধু তাকিয়ে দেখতে যদি
পৃথিবী ও তুমি প্রেমাবনত পরস্পরের পরিণতি নিরবধি
বলতেই পারো দেখছি কী-এক অসম্ভবের খোয়াব
কিন্তু জানি বিপন্ন গ্রহে এই দৃশ্যটা দেখিতেছে অনেকেই
বিশ্বভরা প্রাণের প্রণয় সূর্যতারার সদ্ভাব
এই দিবাস্বপ্ন দেখে জেগে উঠবে তুমিও আশা করি অচিরেই
.
গিভ্ পিস্ অ্যা চান্স
এক দুই তিন চার, ওয়্যন টু থ্রি ফোর
শুনছে না কেউ বলছে সবাই, চিৎকারে বেখবর
বলছে ব্যতিবিচিত্র যত বকমবকম বাদ ও বিসম্বাদ —
থলেঝোলাবাদ, ব্যোমভোলাবাদ, তালগোলাবাদ, ছেঁড়াত্যানাবাদ, কাজিয়াফ্যাসাদ
এইটাবাদ, ওইটাবাদ, হয়বাদ, নয়বাদ, আছেবাদ, গ্যাছেবাদ, অস্তিবাদ, নাস্তিবাদ, জয়বাদ, জিন্দাবাদ, কুস্তাকুস্তিমাস্তিবাদ
আমাদের কথা একটাই, বাছা, শান্তিকে দাও মওকা
আমরা চাইছি চালাক সকলে শান্তিবাদের চরকা
ওইদিকে চেয়ে দ্যাখো
সবাই বিভোর বলিছে কেবল মন্ত্রী নিয়ে সেপাই নিয়ে দেশের দণ্ডমুণ্ড নিয়ে
এতলবেতল দ্বন্দ্ব নিয়ে, মন্দ এবং ভালো নিয়ে, বারুদ নিয়ে বরাত নিয়ে, কয়েদখানার গরাদ নিয়ে
বলছে সবাই বিশপ নিয়ে বৈশ্য নিয়ে স্পৃশ্য ও অস্পৃশ্য নিয়ে
র্যাবাই নিয়ে প্যপাই নিয়ে তেঁতুলখেকো হুজুর নিয়ে যুক্তি নিয়ে ভক্তি নিয়ে বেয়াক্কলি বিদ্যা নিয়ে
বলছে যেন দৌড়ের ওপর, কেউই কোথাও দাঁড়াচ্ছে না, কার কথা কে শুনবে মামা
বাদের ওপর বাদের বাড়া, গোঁদের ওপর বিষের ফোঁড়া, মাধবী এসেই বলে মাধবেরে —
যাই যাই, ভাই, প্রিয়তম হে, বিদায় বন্ধু, ফুরায়ে এল বেলা আমার, বাই বাই … বাই বাই …
আমাদের গলায় মিনতি একটাই, আল্লার দোহাই, গিভ্ পিস্ অ্যা চান্স
আমাদের গলায় টিউন একটাই, প্লিজ, গিভ্ পিস্ অ্যা চান্স
বলছি তোমায় শোনো
সবাই নিদারুণ বকে চলেছে একনাগাড়ে বকরবকর
রেভোল্যুশন, ইভোল্যুশন, মাস্টারব্যাশন
আত্মনিয়ন্ত্রণ, নীতিবিধায়ন, রেগ্যুলেশন, ইন্টিগ্রেশন
মেডিট্যাশন, ইউনাইটেড ন্যাশন, বাহ্ কী বিভীষণ, কনগ্যাচ্যুল্যাশন!
বহোৎ হয়েছে হেন হুজ্জোতি ও হুজুগ, উস্তাদ, এলায় শান্তিরে দ্যাও সুযোগ
বহোৎ হয়েছে কেচ্ছাকাহিনি কেলেঙ্কারি, মিয়াভাই-বিবি জায়া ও পতি, নিতে দাও এবে শান্তিকে উদ্যোগ
লোকে দ্যাখো শুধু বলাবলি করে অন্যেরে নিয়ে
জন ও ইয়োকো, টিমি লিয়্যারি বা রোজম্যারি নিয়ে
টমি স্ম্যুদারদিগেরে নিয়ে এবং ববি ডিলান বা টমি ক্যুপার নিয়ে
ডেরেক ট্যাইলার, নর্ম্যান ম্যাইলার
অ্যালান গিন্সবার্গ, হরে কৃষ্ণা
হরে হরে, হরে কৃষ্ণা, কৃষ্ণা কৃষ্ণা হরে হরে …
আমরা ভ্যানতারাছাড়া বাক্য জপছি একটাই : গিভ্ পিস্ অ্যা চান্স
ঘুরিয়েফিরিয়ে একটামাত্র ছোট্ট ও একরত্তি : গিভ্ পিস্ অ্যা চান্স
অল উই আর স্যেয়িং ইজ গিভ্ পিস্ অ্যা চান্স
.
ও ইয়োকো!
ইন দ্য মিডল অফ দ্য নাইট
আই কল য়্যুর নেইম
ও ইয়োকো! ও ইয়োকো!
মাই ল্যভ উইল টার্ন য়্যু অন
মাঝরাত্রির জ্বরে নিশি-পাওয়া কামঘোরে
তোমার নামটি ধরে ডেকে বলি প্রিয়
ও ইয়োকো! ও ইয়োকো!
আদরে আদরে আমি তোমায় জাগাব
শ্যাম্পু-সাবান মেখে স্নানের মধ্যিখানে
সোচ্চারে শিস দিয়ে ডেকে বলি প্রিয়
ও ইয়োকো! ও ইয়োকো!
আদরে আদরে আমি তোমায় তাতাব
ক্ষুরধার ব্লেড গালে দাড়ি কামাবার কালে
ওষ্ঠাধরের সুরে ডেকে বলি প্রিয়
ও ইয়োকো! ও ইয়োকো!
আদরে আদরে আমি তোমায় কাঁপাব
দুঃস্বপনের পারে দুপুরে অন্ধকারে
হ্যাঁ গো শোনো সম্ভাষে ডেকে বলি প্রিয়
ও ইয়োকো! ও ইয়োকো!
আদরে আদরে আমি তোমায় বাঁচাব
মেঘ-থমথমা দিনে বিষাদের গৃহকোণে
কই গেলা চাঁদ বলে ডেকে উঠি প্রিয়
ও ইয়োকো! ও ইয়োকো!
আদরে আদরে আমি তোমায় রাঙাব
ও ইয়োকো! ও ইয়োকো!
মাই ল্যভ উইল টার্ন য়্যু অন
মাই ল্যভ উইল টার্ন য়্যু অন …
.
গড
গড একটা ধারণা
যা দিয়া আমরা মাপি আমাদের
অতল অবোধ বেদনা
আই’ল্ স্যে ইট অ্যাগেইন :
গড ইজ অ্যা কান্সেপ্ট
বাই হুইচ উই মেজ্যার
আওয়ার পেইন
বলি পুনঃপুনঃ শোনো :
ঈশ্বর একটা ধারণা
যা দিয়া আমরা মাপি আমাদের
প্রগাঢ় প্রভূত বেদনা
মোজেজায় নেই বিশ্বাস আমার বুঝি না চায়না আই-চিং
বাইবেলে নেই আস্থা কিংবা তাসের ধর্ম হিংটিং
বিশ্বাস নাই হিটলারে ফের যিশুতেও অবিশ্বাস
কেনেডি কিংবা বুদ্ধের মতবাদেও করি না বাস
তন্ত্রে-মন্ত্রে থাকিনাকো আমি গীতাতেও নাই বিলকুল
নই কোনো যোগগুরুর চ্যালা বা রাষ্ট্রধর্মে মশগুল
এলভিসে নেই হিয়ার বাঁধন অথবা বব ডিলানে
বিটলসে নেই বিশ্বাস শুধু রয়েছি নিজেরই ধ্যানে
ইয়োকো আর আমি
রিয়্যালিটি দিবাযামী
এবারের মতো স্বপ্নদেখা তামাদি হয়েছে আমার
কী বলব ইয়ার, কী করে বোঝাই, কী বাকি গাহিবার?
টুটেছে খোয়াব অদ্যজন্মের, দ্য ড্রিম ইজ ওভার
বেশি দূর নয় এই-তো মাত্র গতকাল
ছিলাম আমি নির্মাতা এক স্বপ্নকুর্তা বানাবার
আজকে দেখছ পুনর্জন্মগৃহীত আমার হাল
এদ্দিন শুধু অসুরের ন্যায় আগলে রেখেছি সৃজনের সংসার
এখন যতটা পারা যায় থাকি সাধুর মতন একাকী নিরুচ্চার
অতএব শোনো শ্রোতাভক্ত ও ভাইবোনবন্ধুরা
ছোটাও তোমার হাওয়ার হ্রেষায় দিগ্বিদিকের ঘোড়া
স্বপ্ন তো নয় সমস্তটাই ফকফকা বাস্তব
.
ক্রিপল্ড ইনসাইড
জুতোজোড়া রাখো চকচকে উজ্জ্বল
পরনের জামা দারুণ উন্নতমান
চিরুনি চালায়ে কেশরাজি পরিপাটি
তুমিই দিব্যকান্ত ডন-জুয়ান
লুকাইতে পারো প্রকাশ্য ক্রন্দন
হাসির আড়ালে চেহারার স্পন্দন
অবয়বে ঠিকই ফুটে ওঠে গোপনতা
যার যেইটুকু ভেতরের পঙ্গুতা
আমুণ্ডু পরো ইয়াব্বড় এক মুখোশ
রঙে ভরে তোলো অপুষ্ট মুখপাত
বড়াই করেই নিজেরে জাহির করো
প্রভুপ্রশ্রয়ে শ্রেষ্ঠ মখলুকাত
তদুপরি গায়ে ইস্তিরি-করা শার্ট
নিখুঁত গিঁটের টাই-পরিহিত স্মার্ট
অবয়বে ঠিকই ফুটে ওঠে গোপনতা
যার যেইটুকু ভেতরের পঙ্গুতা
লাভ নাই তবু ওম দিয়া ফাটা ডিমে
বেড়ালেরও আছে একের অধিক নয়টি জীবনপর্ব
এইখানে তুমি নিদারুণভাবে মেকুরেরও অধমর্ণ
তোমার কুল্লে একটি জীবন অদ্বিতীয় সন্দর্ভ
ফেলনা নয়কো কুকুরেরও ঘেউ ঘেউ
ঝকমারি এই দুনিয়াদারি নিলখা প্রাণের ঢেউ
যেতে পারো তুমি নিত্য ধর্মালয়ে
গাহিবারে পারো পবিত্র জপমালা
গাত্রবর্ণে আমারে চিনতে পেরে
মিথ্যাযাপন করে যেতে পারো আমৃত্যু বোবাকালা
অবয়বে ঠিকই ফুটে ওঠে অভিসন্ধি
ভিতরে কে কত করুণাসিন্ধু কতটুকু প্রতিবন্ধী
.
ওয়েল, ওয়েল, ওয়েল
বেরিয়েছি প্রিয়তমার হাতটি ধরে
একটু কোথাও দু-দণ্ড বসে খেতে
এমনও না তার গা থেকে লাস্য ঝরে
তবু মনে হয় খেয়ে ফেলি তারে সর্বতোপ্রকারে
খাসা তার রূপে পারি আমি পুড়ে যেতে
মুখোমুখি বসে কথা বলি বিপ্লবের
সৌরজগতে যেন দুই ক্ষীণ পোকা
আরও বলি কথা নারী ও প্রগতি বিষয়ের
কল্পনা করি কীভাবে সাজাব সংসার দু-জনের
জনান্তিকে হাসিছে জীবন ও রাজনৈতিক ধোঁকা
নিয়া যাই তারে নিকটের ময়দানে
দু-নয়ন ভরে দেখি দিগন্তশোভা
হাহাকার আর শূন্যতা জাগে প্রাণে
এ-জীবন এত ছোট ক্যানে — কে জানে!
রতিজীবন্ত দু-জনের দেহে দ্বিগুণ রক্তপ্রভা
.
আই ডোন্’ট্ ওয়ানা বি অ্যা সোলজার, মামা
সৈনিক হতে চাই না জননী সেনাপতি হতে চাই না
এই মিঠে মেঘ নাশপাতি রোদ ছাড়িয়া কোথাও যাই না
জাহাজিয়া হতে চাই না জননী কাপ্তেন হতে চাই না
অপরূপা ডাঙা গাছপালা ফেলে ভেসে দূরদেশে যাই না
গোল্লা খাইতে চাই না আম্মা ব্যর্থ হইতে চাই না
সুরম্য এই ভবসংসারে রোদন করিতে চাই না
কথাটা আমার পাক্কা মাগো সৈনিক হতে চাই না
মরিতে ঝরিতে ভাসিতে ফাঁসিতে পটল তুলিতে চাই না
না-চাহি হইতে টাকার কুমির ধনপতি হতে চাই না
দৌলতচাপে চিড়েচ্যাপ্টার যক্ষজীবন চাই না
চাই না হইতে গরিবগুর্বো দীনহীন হতে চাই না
ভাত-না-পাওয়া ন্যাংটো যোগীর মতন মরিতে চাই না
চাই না হইতে আইনপোশাকী বিচারক হতে চাই না
উকিলের মতো ফন্দিদক্ষ মিথ্যুক হতে চাই না
সৈনিক হতে চাই না জননী সেনাপতি হতে চাই না
এই মিঠে মেঘ নাশপাতি রোদ ছাড়িয়া কোথাও যাই না
মরিতে ঝরিতে ব্যর্থ শোণিতে রসাতলে যেতে চাই না
ভিক্ষুক হতে চাই না আম্মা মাধুকরী আমি চাই না
দ্বারে দ্বারে ফেরা লাত্থিঝাঁটার জিন্দেগি আমি চাই না
তঞ্চক হতে চাই না জননী চোরখ্যাতি আমি চাই না
জনতার হাতে প্রহৃত হবার অপমান আমি চাই না
চাই না হইতে পাদ্রী পুরোত হুজুর হইতে চাই না
ব্যস্ত ধর্মবেনের ঐশী জিকিরি জীবন চাই না
সৈনিক হতে চাই না জননী সেনাপতি হতে চাই না
এই মিঠে মেঘ নাশপাতি রোদ ছাড়িয়া কোথাও যাই না
মানবের মাঝে বাঁচিবারে চাই মৃত্যুঞ্জয়ী নিশানা
দারুণ ধূলির ধরায় মাগো মরিবারে আমি চাই না
.
আই নো (আই নো)
বছরসমূহ চলে গেল পলকেই
একটি জিনিশ বুঝতে পেরেছি শেষে
বেলা ভাটি নিলো কথাবুলি শিখনেই
জঙ্গলে থেকে গাছের হিসেবনিকেশে
অতঃপর যা যা ঘটিবে আমি তা জানি
কলকাঠি হবে কোত্থেকে পরিচালিত
ঠুঁটো হয়ে এই বসিয়া থাকার গ্লানি
কিয়দংশও হয়নি ভাষাটা শাণিত
বহু অপচয়ে জেনেছি কথারা তুচ্ছ
তোমাকে বোঝার পথ হলো অনুভূতি
স্বীকার করছি স্বীয় অপরাধ উচ্চ
ভুল পথে তব করেছি কত-না ক্ষতি
এখন বুঝেছি কি ছিল অসংগতি
এতদিন বাদে দেখছি তোমায় প্রিয়
তোমাতে আমার এই নিঃশর্ত প্রণতি
আমার জন্যে যেমন করেছ তুমিও
অধুনা আমিও টের পাই ভাষাতীত
বুঝি নীরবতা আসে কোত্থেকে নিমেষে
এইখানে এসে ফিরেছে হারানো সম্বিৎ
বোঝাপড়াগুলো পরস্পরের অনুভূতিনির্দেশে
ভালোবাসি আজি তোমারে দ্যাখো-না কালকের চেয়ে বেশি
এক্ষণে যেই হৃদয়াভিপ্সা আগামীর উদ্দেশী
না না, কাঁদে না, কান্না করে না প্রিয়
না না, কাঁদে না, এভাবে না-কান্দিও
.
ওয়াচিং দ্য হুইলস
লোকে বলে আমি ছিটগ্রস্ত ও বখে গেছি একদম
সুপরামর্শ যোগায় যেন করি কিছু সংযম
জবাবে যতই ঠিকাছে জানাই তারা বোঝে এর উল্টো :
“পোলাডা পার্কে খেলতে যায় না মাথাঢিলা নাটবল্টু”
কুঁড়ের খোয়াবে খুয়ায়ে দিতেছি শ্রীমতী জীবনটারে
সকলে আমারে দেখায় দিশা ব্যাপক আকারে-প্রকারে
বলি ভাই আমি জরিপে ব্যস্ত পাঁচিলের প্রচ্ছায়া
নাচাগানা নাই তারা ভাবে তাই আমি প্রেতায়িত কায়া
বসে আছি আমি নিরালার দেশে দেখছি ঘূর্ণিচাকা
ভালো লাগে এই ত্রিকালঘূর্ণিদৃশ্যে বসিয়া থাকা
আমার নাইকো গতিপ্রমত্তা নাগরদোলায় চড়া
আনমনা আমি নিরখিয়া যাই দুরন্ত ওঠাপড়া
আমারে বোঝাতে এসে বেবাকেই চিন্তায় পড়ে যায়
আমিও ওদেরে একটু যোগাই সান্ত্বনা সস্তায়
বলি ভাই কিছু সমস্যা নাই যা-কিছু সবই তো সমাধান
উত্তরে তারা হাতেনাতে পায় আউলা মাথার প্রমাণ
হতাশ গলায় শেষবার বলি হুড়োহুড়ি কিছু নাই
ত্রিকালদোলার ত্রস্ত মেলায় জীবন পোহায়া যাই
বসিয়া একাকী নির্জনপদে দেখছি ঘূর্ণিচাকা
ভালো লাগে এই ত্রিকালচর্কি নিরাই হেরিতে থাকা
আমার নাইকো ঘোরপ্রমত্তা নাগরদোলায় চড়া
আনমনা আমি নিরখিয়া যাই নিয়মিত ওঠাপড়া
.
স্ট্রবেরিফিল্ডস ফরেভার
স্ট্রবেরিবাগান ঘুরে আসি চলো দোঁহে
এইখানে এত সত্যিমিথ্যা বাস্তবতার গান
স্ট্রবেরিবাগান জন্মান্তর ধরিয়া আবহমান
আঁখি মুঞ্জিয়া দিবালোক দেখি মেলিলেই বিভ্রম
প্রত্যেকে হেথা ভাবে নিজেদেরে একমেবাদ্বিতীয়ম
স্ট্রবেরিবাগান ঘুরে আসি চলো দোঁহে
এইখানে এত সত্যিমিথ্যা বাস্তবতার গান
স্ট্রবেরিবাগান জন্মান্তর ধরিয়া আবহমান
হয় বেঁটে নয় দীর্ঘকায়া বেবাক অসমদর্শী
পৃথিবীপৃষ্ঠে এই দৃশ্যই স্বাভাবিকতাস্পর্শী
স্ট্রবেরিবাগান ঘুরে আসি চলো দোঁহে
এইখানে এত সত্যিমিথ্যা বাস্তবতার গান
স্ট্রবেরিবাগান জন্মান্তর ধরিয়া আবহমান
হামেশা হারায়ে নিজেরে আবার ফিরে পেয়ে দেখি খোঁয়ারি
জানি-বুঝি-দেখি সবকিছু তবু অবোধ দুনিয়াদারি
স্ট্রবেরিবাগান ঘুরে আসি চলো দোঁহে
এইখানে এত সত্যিমিথ্যা বাস্তবতার গান
স্ট্রবেরিবাগান জন্মান্তর ধরিয়া আবহমান
স্ট্রবেরিবাগান জন্মান্তর ধরিয়া আবহমান …
স্ট্রবেরিবাগান জন্মান্তর ধরিয়া আবহমান …
.
রিমেম্বার
ইয়াদ করো যখন তোমার তুখা তরুণবেলা
ম্যুভিপর্দায় নায়কটিকে যেত না ফ্যাসাদে ফেলা
নায়ক থাকত অপরাজেয় প্রতিদ্বন্দ্বীহীন
ইয়াদ করো ওই নির্মম ষণ্ডামুণ্ডু লোক
যার হাতে তুমি নিত্য হয়েছ পরাস্ত উজবুক
তোমারই দিকে তাক-করা তার উদ্যত সঙ্গিন
কোনোদিন যদি তুড়ি মেরে অবহেলে
সেই স্মৃতিবিষ দুঃসহকাল যেতে পারো পিছে ফেলে
মনে রেখো, মনে রেখে দিও শুধু অদ্যকার এই দিন
ভেবো না খামাখা
যা-কিছু তোমার কীর্তিকলাপ অতীতের
বেহুদা ভাবনা
যা-কিছু হয়েছে হিতঙ্করী বা অহিতের
ইয়াদ করো যখন তুমি পিচ্চিটি ছিলে একদম
তুমি ছাড়া আর-সকলেই ছিল লম্বা ভীষণরকম
মুক্তপঙ্খি জীবনে যেনবা যার যার মতো অমলিন
ইয়াদ করো তোমারই তো বাবা-মা
ছায়াছবির স্ক্রিন জুড়ে যেন যুযুধানপ্রতিমা
সারাক্ষণ অভিনয়লিপ্ত দুই বিপন্ন রঙিন
কোনোদিন যদি গ্রাস করে অবসাদ
দুনিয়া তোমায় বানায়ে ফ্যালে বেহদ্দ উন্মাদ
মনে রেখো, মনে রেখে দিও শুধু অদ্যকার এই দিন
.
আইসোল্যাশন
সব্বাই ভাবে এ-ই বেশ তো
অথচ ভিতরে ভীত ও ত্রস্ত
ভয়টা আসলে একলা হবার
অকালবেলায় গৃহহীনতার
দুঃসহ এই বিরানায়
ওই দ্যাখো দুই ছেলে-মেয়ে মিলে
বদল আনতে নেমেছে মিছিলে
আজদহা এই বিরানায়
দুনিয়াটা এক ছোট্ট শহর
খুনসুটি শুধু অষ্টপ্রহর
অভব্য এই বিরানায়
এইসব জানি বুঝবে না ভালো তুমি
নিতে হবে কিছু তোমাকেও দায়ভার
যদিও তোমারে দোষ দেয়া যাচ্ছে না
আসলে তুমিও অপ্রকৃতিস্থ গুটিকয়েকের শিকার
প্রত্যেকে হেথা সাহস-খোয়ানো
সূর্যালোকেও দৈত্যদানো
অকথ্য এই বিরানায়
লাপাতা হবে না সূর্য যদিও
দুনিয়া তো নয় পরমায়ুপ্রিয়
নৃশংস এই বিরানায়
.
ডিয়ার ইয়োকো
যদিও অনেক বছর হয়েছে গত
ক্ষণিক বিরহ পীড়া দ্যায় অবিরত
নয়ন-সমুখে নাই যদি তুমি প্রিয়তম ইয়োকো
বিরহ যদিচ কুল্লে একটি দিনের
রহিয়াছ তুমি দূরে এ-সহায়হীনের
আচমকা এসে দাঁড়াও দুয়ারে এক্ষুণি ইয়োকো
দূরে গেছ ধরো শুধু একটাই রাত
অসহ প্রদাহে হয়ে যাই কুপোকাত
ঘনযামিনীর গৃহ উছ্লায়ে ডেকে ফিরি ইয়োকো
দূরে থাকা যদি একটি ঘণ্টা মোট
নিষ্প্রভ ফুল হয়ে রই আমি বিমর্ষ অস্ফুট
আমাদের প্রেম দুনিয়ামাঝারে একটাই প্রিয় ইয়োকো
শোনো সোয়াচান শোনো জানেমান শোনো শোনো ইয়োকো
কখনো তোমারে দেবো না যাইতে আমা’ হতে বেশি দূরে
শোনো সোয়াচান শোনো জানেমান শোনো শোনো ইয়োকো
ধনেমানে আমি পারিব না জানি ধরিয়া রাখিব সুরে
কখনো-বা আমি পাড়ি দিয়া যাই সুদূর সমুদ্দুর
কাছেপিঠে নেই নিঝুম কোনো স্থলীয় অচিনপুর
তখনও তুমিই স্মৃতির সুবাসে সঙ্গিনী প্রিয় ইয়োকো
তুমিহীন ঘরে দূরদর্শনে রেখেছি যখন চোখ
দিব্যচক্রে সেখানেও তুমি দেখে গেছি উন্মুখ
নজরদারিতে নেই সাধ্য শোবে এসে কেউ উটকো
শোনো সোয়াচান শোনো জানেমান শোনো শোনো ইয়োকো
কখনো তোমারে দেবো না যাইতে আমা’ হতে বেশি দূরে
শোনো সোয়াচান শোনো জানেমান শোনো শোনো ইয়োকো
ধনেমানে আমি পারিব না জানি ধরিয়া রাখিব সুরে
একদেহলীনা আমরা অনেক দিন
বিরহপ্রহরে মেঘার্দ্র-মুখ সূর্য অনুড্ডীন
তুমিহীনা আমি ভীষণ বেদিশা ভ্যাবাচ্যাকা ভারি ইয়োকো
সবটুকু বলা সবটুকু করা শেষে
দুইটি শরীর অদ্বৈতে এসে মেশে
আমাদের প্রেমে রাশি রাশি ঝরে আরশ হইতে বরাভয়
ও ইয়োকো!
জুধা হতে আমি দিব না তোমারে যেতে নাহি দিব কখনো
ও ইয়োকো!
আই’ল্ নেভার এভার এভার এভার গ্যনা লেট্ য়্যু গ্য
আউট দ্য ব্লু
সহসা সবেগে এলে তুমি এইখানে
আমার জীবনে শোক হলো অবসান
কুয়াশা সরিয়ে জীবনের সুখস্নান
দুঃখ-ঘুচানো তোমার আগমনী গানে
নিতিদিন থাকি কৃতজ্ঞ তার প্রতি
দিয়েছেন যিনি তোমাকে এই জীবনে
হেন দুর্লভ প্রাপ্তি এ-অভাজনে
দুই মন দুই দেহ অথচ একটাই নিয়তি
জীবন আমার যেন ছুরি এক ভোঁতা
জন্মেছি যেতে তোমারই তো অধিকারে
অনেক ধূসর দিবসের শেষে রূপনারাণের পারে
তোমাকেই চাই দয়িতা ওগো সুষমাসম্ভূতা
ভিনগ্রহ থেকে এলে তুমি এইখানে
আমার জীবনে শোক হলো অবসান
বেদনা কাটায়ে জীবন সমুত্থান
কুয়াশা-তাড়ানো তোমার আগমনী গানে
গ্রো ওল্ড উইথ মি
বুড়ি হবে এসো আমারই সঙ্গে প্রিয়
হয় নাই পাওয়া শ্রেষ্ঠ-যা প্রাপণীয়
পেয়ে যাব জেনো অচিরেই ঈপ্সিত
দুই দেহ হবে একাঙ্গ সমাহিত
আমাদের প্রেমে প্রতিপালকের পূর্ণ আশীর্বাদ
আমাদের প্রেমে প্রতিপালকের পূর্ণ আশীর্বাদ
বুড়ি হবে এসো আমারই সঙ্গে সখা
একটা গাছের একজোড়া শাখা যেই-মতো মুখঝোঁকা
গায়ে-গা-ঠেকানো সূর্য-অস্ত দেখে যাব দুইজনে
মনোরম মনোটনির অন্তে দিবসের সমাপনে
আমাদের প্রেমে প্রতিপালকের পূর্ণ আশীর্বাদ
আমাদের প্রেমে প্রতিপালকের পূর্ণ আশীর্বাদ
জীবনের এই প্রচুর ভাঁড়ার
দুইজনে মিলে করিব সাবাড়
ফুরাবার নয় এই পৃথিবীর গান
আমরা দু-জনা আদি ও অন্ত অনন্তবহমান
বুড়োবুড়ি হব দুইজনে জড়াজড়ি
নিয়তি রেখেছে যেটুকু কানা ও কড়ি
দু-জনে সমান করে নেব বাটাবাটি
আমাদের প্রেম সাচ্চা এবং খাঁটি
আমাদের প্রেমে প্রতিপালকের পূর্ণ আশীর্বাদ
আমাদের প্রেমে প্রতিপালকের পূর্ণ আশীর্বাদ
অ্যাইন্’ট্ দ্যাট অ্যা শেইম্?
কেঁদেছি ভীষণ তোমার নিষ্ঠুরতায়
বিনে নোটিসে এসেই বলেছ বিদায়
হেন আচরণ নহে কি অতীব লজ্জার?
মুষলধারায় ঝরিল অশ্রুবৃষ্টি
এ কী নয় এক লজ্জার অনাসৃষ্টি?
আমার এহেন রোদনে প্রকৃত তোমারই তো দোষভার
ভেঙে খানখান অটুটা হৃদয়টাও
বলেছ যখন ‘বিচ্ছেদ মেনে নাও’
এ কী নয় সখি অতিশয় লজ্জার?
চোখ ফেটে নামে অঝোরে অশ্রুধার
এ কী নয় সখি সাতিশয় লজ্জার?
আমার এহেন রোদনে প্রকৃত তোমারই তো দোষভার
ভুল বলছি কি, বলো তুমি, প্রিয়তমা?
এ কী নয় সখা সাতিশয় লজ্জার?
চিরবিচ্ছেদ, চিরতরে শুভবিদায়
কেঁদে যাই তবু কেঁদে যেতে হবে হায়
এইটা আদৌ নয় বুঝি লজ্জার?
আঁখি উছলিয়া নামে জল ঝর্ণার
এ কী নয় সখা সাতিশয় লজ্জার?
আমার এহেন রোদনে প্রকৃত তোমারই তো দোষভার
ভুল বলছি কি, বলো তুমি, প্রিয়তমা?
এ কী নয় বলো অতিশয় লজ্জার?
কেঁদেছি ভীষণ তোমার নিষ্ঠুরতায়
বিনে নোটিসে এসেই বলেছ বিদায়
হেন আচরণ নহে কি অতীব লজ্জার?
মুষলধারায় ঝরিল অশ্রুবৃষ্টি
এ কী নয় এক লজ্জার অনাসৃষ্টি?
আমার এহেন রোদনে প্রকৃত তোমারই তো দোষভার
আমার এহেন রোদনে প্রকৃত তোমারই তো দোষভার
আ’য়াম্ ল্যুজিং য়্যু
এইখানে দ্যাখো অচেনা কারোর কামরায়
ম্রিয়মাণ আলো অপরাহ্নের ডুবন্ত এই বেলায়
আনবাড়ি এসে কী করছি আমি আনমানুষীর ধারে?
সর্বনাশের বাকি নাই কিছু নিঃসন্দেহ তায়
ক্রমশই আমি হারায়ে ফেলছি তোমারে
ব্যাহত সকল সংযোগপ্রবাহ
যোগাযোগেরও তো কোনোই উপায় নাই
বিকল যত টেলিফোনগুলো কী করে তোমায় পাই
পারি তো কেবল একটা কথাই প্রচারিতে চিৎকারে
আমি প্রিয়তমা হারাতে চলেছি তোমারে
এইখানে এই ইতস্তত গোলকধাঁধার ফাঁদে
জানি না আমার করণীয় কী হৃদয় গুমরে কাঁদে
টের পেতেছি ক্রমশ তোমার সুদূরে ফসকে যাওয়া
চেয়ে চেয়ে দেখি প্রিয়তমাটির দূরের তরণী বাওয়া
ক্রমশই আমি হারায়ে ফেলছি তোমারে
আমি প্রিয়তমা হারাতে চলেছি তোমারে
বনিবনা আর হচ্ছে না আমাদের
একদা যদিও ছিলাম একাঙ্গের
এখন তোমার জুধা হবার এই ইচ্ছায়
কী যে করি বলো, কোথা পাওয়া যায় ব্যান্ডেজ এই বেদনায়?
এসো রক্তক্ষরণ করি এক্ষুণি বন্ধ
এসো জখমে এবার ফেরাই আবার তা-থৈ নৃত্যছন্দ
আমি জানি আমি দুঃখ দিয়েছি তোমাকে
তার আগে আমিও লভেছি তোমার প্রদত্ত বেদনাকে
সেই শোধবোধ সেই ক্রুশকাঠ বয়ে বেড়াতেছ এখনো?
কোকিলের মতো রক্তক্লান্ত তোমাকে ডাকছি শোনো :
ক্রমশই আমি হারায়ে ফেলছি তোমারে …
আমি প্রিয়তমা হারাতে চলেছি তোমারে …
.
আই ফাউন্ড আউট
ছায়া মাড়াবি না ব্যাটা বলেছি আগেই
আভি নিকলা হারামজাদা হেথা জায়গা নেই
চুতিয়ারা চায় যেন গুটায়েই থাকি
আমাকে আমার মধ্যে না যেন রাখি
বুঝতে পেরেছি ওই ব্যাটাদের সব
বুঝেছি বুঝেছি সমস্তটাই নিরর্থ কলরব
দেখিয়েছি তোমায় এতদিন আমি বেঁচেছিনু কেমনে
নেইনি কারোর কথামৃত মুখে তোমাদের মতো যতনে
নেমে আসবে না আসমান থেকে যিশুতোষ কোনো লোক
বুঝেছি আমার কান্নাই সার কান্নারই গান হোক
বুঝতে পেরেছি তোমাদের দিবাযামী
বুঝেছি বুঝেছি সকলকিছুই নিরর্থ ন্যাকামি
বসিয়া বিজনে বাতায়নপাশে শিশ্ন মুঠোয় চেপে
কেউ তোমারে তো খুঁজেও পাবে না বড় হবে স্কেল মেপে
ডাঙ্গর আমারে হইতে হয়েছে সময়ের ঢের আগে
বাপ-মা চায়নি বড় হই তাই তারকা হয়েছি রাগে
বুঝতে পেরেছি তোমাদের টালবাহানা
বুঝেছি বুঝেছি বিদঘুটেদের জামানা
বুড়ো ওই হরেকৃষ্ণ তোমার বুঝবে না কচুটাও
করতে দেবে না কিচ্ছুটি শুধু হরিনাম জপে যাও
ঐশী ফলের আশায় তোমারে রেখে দেবে লোভাতুর
তোমার চক্ষে হেরিবে জগৎ কোথা সেই গুরুঠাকুর?
বুঝতে পেরেছি গুরুশিষ্য ও তস্যের ঘনঘটা
বুঝেছি বুঝেছি গীতিনৃত্যের নয়নধাঁধানো ছটা
দেখিয়াছি আমি দুনিয়ার যত হাড়-হাভাতের দল
ধর্ম দেখেছি জিরাফও দেখেছি যিশু থেকে সেইন্ট প্যল্
সুযোগ দিও না খাওয়াতে তোমারে ওদের বানানো আফিম
নেশা নয় জেনো সুখ সাতিশয় স্বাদিতে ব্যথার নিম
বুঝতে পেরেছি গোঁদা মানুষের গমগমে গলাবাদ্যি
বুঝেছি বুঝেছি অবশেষে আমি নিজের সীমা ও সাধ্যি
বুঝেছি হে আমি বুঝতে পেরেছি নিরর্থ নৌটঙ্কি
.
হাও
আগুয়ান হব কোন ভরসায় বলো
কোথায় যাচ্ছি নিজেই জানি না যেহেতু?
সামনে আগাব কেমনে কও তো দেখি
কোনদিকে মোড় নিতে হবে কে জানে?
কেমন করিয়া মনোনিবেশিব কিছুতে
যেহেতু জানি না নিশ্চিত করে কিছুই?
কোত্থেকে আমার অনুভূতি পয়্দাবে
যেহেতু জানি না কারে বলে অনুভূতি?
কী প্রকারে বলো অনুভবি কোনোকিছু
যদি নাহি জানি অনুভবিবার কলা?
কীভাবে আমার অনুভূতি জিন্দা থাকে
যেখানে সইতে হয়েছে এতটা ঘাত আর প্রতিঘাত?
ভালোবাসা আমি দিবাম কেমন করিয়া
যদি-না আমি নিজেই জানি কী দিতেছি ইহকালে?
কোন পন্থায় দেই বলো ভালোবাসা
আমারই নিজের নাই যদি জানা প্রদানের কৌশল?
আর এমনকিছু কেমনে আমি দিতে সক্ষম বলো
যা আমি নিজেই লভি নাই ইহজন্মে?
জীবন অনেক দূরের জিনিশ জীবন অনেক দীর্ঘ
তোমার সেহেতু হতাশা সরিয়ে জেগে ওঠা চাই শীঘ্র
দুনিয়াটা বহোৎ ঘোড়েল ও ধড়িবাজ
হামেশা আমার মনে হয় হেথা ঢের হলো কামকাজ
আগাব আমরা কার ভরসায় বলো
কোথায় যাচ্ছি নিজেরা জানিনে যেহেতু?
সামনে আগাব কেমনে কও তো দেখি
কোনদিকে মোড় নিতে হবে কে জানে?
কেমন করিয়া মনোনিবেশিব কিছুতে
যেহেতু জানি না নিশ্চিত করে কিছুই?
কেমন করিয়া … কেমন করিয়া …
.
ওনলি পিপ্যল
মানুষই জানে মানুষের সনে কথা বলবার কায়দা
মানুষই জানে কেমন করে বদলাতে হয় দুনিয়া
মানুষই জানে মর্মেমূলে মানুষের হিম্মৎ
একজন নয় জেনো শতগুণে একশ মানুষ শ্রেয়
এসো তবে এই ময়দান ভরে করি হর্ষ ও চিৎকার
দেখেছি আমরা আবহমান মানুষের কসরত
কেঁদে গেছি কত সহস্রকাল কত দুর্গম পথ
কত নদী সরোবর পাড়ি দিয়ে এখন হয়েছি থিতু
হাতে হাত রেখে হাঁটতে জানলে কেউ বলবে না ভীতু
ভুল করছি না আমরা আদৌ গড়ছি ভবিষ্যৎ
রুটি সেঁকে যাই নিজের রুজিতে নিজেদের দৌলত
চাই না আমার আঙিনায় কোনো মামদো ভূতের বিহার
অনেকটা কাল কেটে গেছে এরই মধ্যে
তেমন কিছুই বলবার মতো পারি নাই করে উঠতে
বহু কাল বহু আলোকবর্ষ পারায়ে এসেছি এখানে
জানিয়াছি এই নিধুয়া জমিনে ফলাবার কিছু নাই
এখনই সময় উড়াল দেবার মায়ার খামার ফেলে
ধরিবারে চাই আগামীর তরে মৎস্য অথবা বাজি
সব্বাই মিলে গেলেই কেবল শৃঙ্খল ছেঁড়া যায়
আঙিনায় দেখতে নারাজ উটকো ভূতেদের দাপাদাপি
.
ইন মাই লাইফ
ভুলিব না আমি পৃথিবীতে এসে পেয়েছি তীর্থ কতশত স্মৃতিকীর্ণ
গোটা জীবন জুড়ে পেয়েছি অনেক যদিও ধূসর ইতোমধ্যে অনেকে
বেশকিছু সৌধতীর্থ অকাজেরই চিরতরে
কিছু উবে গেছে আর কিছু আছে এতাবধি টিকে
এই স্মৃতিতীর্থ সকলেই নিজের নিজের মুহূর্ত লইয়া বাঁচে বুঁদ ও বিধুর
আমারও অনেক ছিল বন্ধু ও প্রেমিকামুখর দিন
কেউ তারা গেছে মরে চিরতরে কেউ আছে আজও বেঁচে
একতিলও নয় মিথ্যে যে আমি সবারে বেসেছি ভালো
অথচ ওই বিস্তর বন্ধু ও প্রেমিকারাজির ভিতর
তোমার সঙ্গে তুলনীয় হবে একজনও নাই কেউ
স্মৃতিগুলো সব অর্থলুপ্ত হয়ে পড়ে এক-লহমায়
যেই-না ভাবি ভালোবাসা দারুণ নয়া মানেবাহী জিনিশ
যদিও অতি নিহিতার্থে জানি নিরাবেগ নই আমি
পিছনে ফেলে এসেছি যেইসব মুখ আর মুখরতা
জানি ঠিকই আমি ক্ষণে ক্ষণে থেমে বেভুল রোমন্থিব উহাদেরে
এবং আজীবন শুধুই স্মৃতিভিড় ঠেলে বেসে যাব ভালো তোমারে
যদিও অতি নিহিতার্থে জানি নিরাবেগ নই আমি
পিছনে ফেলে এসেছি যেইসব মুখ আর মুখরতা
জানি ঠিকই আমি ক্ষণে ক্ষণে থেমে বেভুল রোমন্থিব উহাদেরে
এবং আজীবন শুধুই স্মৃতিভিড় ঠেলে বেসে যাব ভালো তোমারে
আজীবন শুধুই স্মৃতিভিড় ঠেলে বেসে যাব ভালো তোমারে
.
হোয়াটেভার গেটস য়্যু থ্রু দ্য নাইট
যা-কিছু তোমায় তাড়া করে এনে এই রাত্রিগর্তে ফেলেছে — ঠিক আছে, সবই ঠিক আছে
সেটা যা-ই হোক টাকাকড়ি কি জীবনযাপন ধুম-মাচালে — ঠিক আছে, সবই ঠিক আছে
গাছ থেকে ফুল পেড়ে আনতে তরবারি নিষ্প্রয়োজন
না না না, গাছ থেকে ফুল তুলিতে দোস্ত তলোয়ার উঁচিও না
যা-কিছু তোমায় তাড়িয়ে এনে সংসারে এই সমরাঙ্গনে ঠেলে দিয়েছে — ঠিক আছে, সবই ঠিক আছে
যা-ই হোক করো মনটা যা চায় ভুলভ্রান্তি কি সহি — ঠিক আছে, সবই ঠিক আছে
সময়ক্ষেপণ করিবারে যেয়ে কব্জিতে ঘড়ি দেখাদেখি নিরাবশ্যক
না না না, কালক্ষেপণের গরজে ঘড়ির দরকার নাই দোস্ত
ধরে রাখো বুকে জাপটে আমারে শোনো বলি প্রিয়তমা
চাই না বাজাতে তোমার বারোটা আমি
বিশ্বাস করো ওগো প্রিয়, অয়ি, শোনো বলি হৃদিস্বরে
এসো তবে, এক্ষুণি এসো, শোনো অন্তর্যামী
যা-কিছু তোমায় তাড়িয়ে এনে এই আলোয় আছড়ে ফেলেছে — ঠিক আছে, সবই ঠিক আছে
মেঘ না-চাইতে বজ্রপতনে অথবা আলগোছে অস্ফুটে — ঠিক আছে, সবই ঠিক আছে
মনহরণের মামলা থাকলে বন্দুক সামলাও
না না না, চাও যদি হৃদি জিনিতে প্রিয় বন্দুক বাগিও না
ধরে রাখো বুকে জাপটে আমারে শোনো বলি প্রিয়তমা
চাই না বাজাতে তোমার বারোটা আমি
বিশ্বাস করো ওগো প্রিয়, অয়ি, শোনো বলি হৃদিস্বরে
এসো তবে, এক্ষুণি এসো, শোনো অন্তর্যামী
.
রেভোল্যুশন
বিপ্লব চাও বললে এসেই নির্ঘোষ।
তুমি কি জানো না আমরা সকলে চাই পৃথিবীটা পাল্টাক?
তুমি বললে এইটা তো ভাই বিবর্তনের লেবেঞ্চুশ।
বটে যা-ই হোক চাই দুনিয়াটা আমূল বদলায়া যাক;
কথায় কথায় যেই বুঝলাম তোমার স্বপ্ন ধ্বংসকাণ্ডে বেহুঁশ, —
বলিলাম ম্লান হেসে হ্যাঁ গো বিপ্লবী কেলেঙ্কারীর একশেষ
তোমার ক্যাল্কুলেশনে বেকুব আমার বোধবুদ্ধি বেবাক খামোশ
বিপ্লবের শুভ-মহরতের আগে দেখছি আমারেই করে ফেলিছ নিকেশ!
দ্যাখো কমরেড, কমান্দান্তে, ডোন্’ট্ য়্যু নো ইট্’স্ গনা বি অলরাইট?
তোমার খুনখারাবির বাইরেই বিরাজে আবহমানের গুডডে অ্যান্ড গুডনাইট
চিরতরের সল্যুশন আছে কেবল তোমারই হ্যাভার্স্যাকে
শোনামাত্রই বলিলাম বৎস্য পরিকল্পনাটা দেখানো যাবে না আমাকে?
এড়িয়ে যেয়ে এইবারে চেয়ে বসলে একটু খর্চাপাতির বিপ্লবঝোঁকা চান্দা
জানালাম খর্চা তো ভাই করিয়া যাইছি যেটুকু সাধ্য যার যেমনটা ধান্দা
তারপর তুমি ডিরেক্টলি পয়সা চাইলে সেই গোষ্ঠীর জন্যে
যারা মানুষ মেরে মিহি কায়দায় ভেসে বেড়ায় এই আবিশ্বজনারণ্যে
আর তাদের মুখে রঙবেরঙের বুকনি এবং কত-না হাজারও বোলচাল
বলিলাম, বাছা আর তো পারি না, থামো বাপুজি, তিষ্ঠ হে ক্ষণকাল
শোনো কমরেড, কমান্দান্তে, ডোন্’ট্ য়্যু নো ইট্’স্ গনা বি অলরাইট?
তোমার রক্তখোয়াবের বাইরেই বিরাজে আবহমানের গুডডে অ্যান্ড গুডনাইট
আঁতেলের মতো বললে এবার জরুরি কি-না সাংবিধানিক আগাপাশতল সংস্কার
বলিলাম বাপু সর্বাগ্রে তোমার মস্তিষ্কবৈকল্যের ব্যামোটা সারানো দরকার
এরপর তুমি মওকা পেয়ে লেগে গেলে চটকাতে প্রতিষ্ঠানের মেদমজ্জা ও কলিজা
বাছা আমরা বলি কি নিজের মাথাখারাপের চিকিচ্ছে ছাড়া তোমার বীভৎস নতিজা
আমাদের কথা না-শুনে কেবল যদি চিনি-চিয়ার্ম্যানের ছবি নিয়া কান্দো
কোনোকিছুতেই কিছু হবে না বাপুরাম সাপুড়ের ন্যায় বীণ বাজাইবা আজীবন হুদাই আন্দু
বোঝো কমরেড, কমান্দান্তে, বুঝে দ্যাখো সবকুচ গনা বি অলরাইট
তোমার ভুবনডুবানি ড্রিমের বাইরেই বিরাজে রোজকার ন্যাচারাল জাস্টিস্ অ্যান্ড ফাইট
.
উই’আর অল্ ওয়াটার
দিগম্বর হয়ে হেঁটে গেলে রাস্তায়
চেয়ার্ম্যান্ মাও এবং রিচার্ড নিক্সন্
কে যে কোনজন চেনাই যাবে না প্রায়
উঁকি দিয়া দ্যাখো কফিনের অন্ধকারে
লেনি ব্রুস্ আর মেরিলিন্ মনরোর
কোন কঙ্কাল কার ছিল বলা সাধ্যির ওপারে
তেমন কিছুই ভিন্নতা পাওয়া দায়
হোয়াইট হাউজ আর গণভবনের মধ্যে
দেখো গুনে সেই খিড়কিগুলো সমানই তো সংখ্যায়
পৃথক করবে কোনখানে দুইজনে
জেরি রুবিন্ আর রেক্যুয়েল্ ওয়েল্চের
মেপে দেখো যদি নিঃশ্বাসস্পন্দনে
যেই জল সেই পানির ধারা নানান নদীর থেকে
এসেছে বলেই মিলনোন্মুখ শত ভিন্নতা রেখে
এবং আমরা পানিরই তো ধারা সাগরের মহাস্রোতে
এসে ফের চলে যেতে উদ্যত মহাবাষ্পীয় ভূতে
দ্যাখো খুব বেশি বেমিল পাবে না কোথাও
ক্যুয়িন্ এলিজায় এল্ড্রিজ্ ক্লিভারে
পাত্রে তাদের পরিমাণমতো অশ্রুর ফোঁটা নাও
অসাদৃশ্য অতটা প্রকট নয়
চার্ল্স ম্যান্সন্ অথবা পোপের কায়দায়
কাতুকুতু দিয়া হাসালেই দ্যাখো হয়
বেশি দূরে নয় দুজনার ব্যবধান
তোমার সঙ্গে ধনাঢ্য রকেফেলার
একবার তুমি গেয়ে ওঠো এই গান
বেশি দূরে নয় দুজনার ব্যবধান
তোমার সঙ্গে ধনাঢ্য রকেফেলার
তোমার স্বপ্ন শোনাও বৎস্য অমৃতসমান।