কবিতাবই নিয়ে এই মেলায় ফয়সাল আদনান
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ৭:৫৯ অপরাহ্ণ, | ১৪০৯ বার পঠিত
সুবর্ণ বাগচী : দ্বিতীয় দশক হিশেবে পরিচিত সময়খণ্ডে একদল কবি লিখতে আরম্ভ করেছেন নতুন কবিতা, বাংলায়, বাংলাদেশে। পরিবর্তিত সময় এবং সময়হীনতার স্বপ্নকল্পনা, বাস্তবতা, ভাঙাচোরা বাহির ও অন্দর উঠে আসতে লেগেছে নবতর বয়ানে এবং বিন্যাসে তাদের কবিতায়। এইবার, ২০১৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলায়, বেরোচ্ছে বেশকিছু বই নবীন এই কবিদের। বেরিয়েছিল গতবছরও যেমন, বেরোচ্ছে এইবারও, আসছে বছরেও হবে বেশকিছু অভিষেক কবিতাবইয়ের প্রকাশ। বাংলা কবিতার আবহমান শুভানুধ্যায়ী ও সন্ধিৎসু পাঠক এই বইগুলোর জন্যে সাগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন। তরুণ কবির ডেব্যু বইটির জন্য অপেক্ষা। পাঠকের এই অপেক্ষা শাশ্বত, শুভ, অভিনন্দনীয় দুঃখিনী বাংলা কবিতার জন্য।
ফয়সাল আদনান এই সময়ে লেখায় ব্যাপৃত মগ্নচৈতন্য কবি। লিখছেন কবিতা ও অন্যান্য গদ্যপত্তর, কবিতাই মুখ্যত, বছর-পাঁচ/ছয় হলো মোটামুটি। লিখে থাকেন অল্প, বলা ভালো ফয়সাল প্রকাশ করেন অল্প, অভিনিবিষ্ট যদিও, প্রচুরপ্রসূ ও প্রচারলিপ্সু নন কবিতাসাহিত্যে এই সময়ের সাধারণ প্রবণতামাফিক। ওয়েবম্যাগ ও অন্যান্য সংযোগমিডিয়ার সুবাদে বেশকিছু কবিতা পাঠকের পড়াও হয়েছে এরই মধ্যে। সেসব অবশ্য বিচ্ছিন্নভাবে। এইবার ফয়সাল আদনানের একবই কবিতা অনবচ্ছিন্ন পড়ার মওকা পাঠক পেতে চলেছেন। প্রকাশের সমস্ত জোগাড়যন্ত সম্পন্ন হয়েছে, যে-কোনো মুহূর্তে মেলাপ্রাঙ্গনে মিলবে আদনানের প্রথম বই ‘চতুর্থ সেলাইয়ের নিচে’, এবার কবিতাগুলো উদযাপনের পালা শুরু হবে অচিরে।
কেমন কবিতা থাকছে এখানে? সেইটা ভালো বলা যাবে বইটা হাতে নিলে পরে। এখন অবশ্য প্রকাশিতব্য/যন্ত্রস্থ বইয়ের কন্টেন্টের ব্যাপারে একটা আঁচ আগেভাগেই পাওয়া যায় বিভিন্ন ওয়েবম্যাগের বদৌলতে। এইসব ওয়েবপত্রিকা পাণ্ডুলিপি থেকে একগুচ্ছ কবিতা ছাপায় এবং আসন্ন বইটি সম্পর্কে সেখান থেকে একটা আন্দাজ করে নিতে পারে ক্রেতাপাঠকেরা। আলোচ্য বই সম্পর্কে এই কায়দায় গিয়েছে বেশ-একটা তালাশ করতে পারা। আদনানের একটি কবিতায় যেমন দেখা যাচ্ছে এই স্বরগুচ্ছ : “যুদ্ধ হচ্ছে, বাতাসে সীসার ঘ্রাণ, আর ভারী হয়ে আসছে মেঘদল, যুদ্ধ হচ্ছে, নেভার মাইন্ড। বাতাস! বুক ভরে নাও সীসা, ক্ষয়ে যাও গলন্ত কামানের নিচে, হাড় ও হাড়ের সংগীত এমনই সময়ে এইসব বিবমিষা! যুদ্ধ হচ্ছে, নেভার মাইন্ড।” অন্যতর কণ্ঠস্বরের সমাবেশনে একই বইতে যেমন রয়েছে : “তারপর তারা বাতাসে ছড়িয়ে দিলো যৌনবর্ণনা, শিশ্নের দৈর্ঘ্য ও যোনির গভীরতা। পাঠ হলো সমবেত শোকপ্রস্তাব। সেই সম্মোহিত প্রেমিকাদের ভাবি, যারা স্কুলপালানো শিশুদের চুমু খেত অননুযোগে। রাত্রিকালে এমন সব স্বপ্নে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। পুষ্পগন্ধ আড়াল হয়ে যায়। সকাতর সব মাস্টারবেশন খুলে খুলে পড়ে প্রেমিকাদের শরীরে — আমার মাঝেই যারা সমাহিত ও সম্মোহিত, যাদের উদ্দেশ্যে এই স্তোত্রপাঠ, এই সমবেত শোকপ্রস্তাব।” সমুজদার কবিতাপাঠকের আগ্রহপারদ চড়াতে এরচেয়ে বেশি নিদর্শন নিশ্চয় নেসেসারি না।
আদনান নিজের প্রথম বই প্রকাশের প্রাক্কালে এক ফেবুবার্তায় কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন কবিতাগুলো রচনাকালীন বন্ধুসুহৃদদের স্মরণ করে : “লুকানো ডায়েরির ফাঁকে টুকটাক লেখা থেকে এই বই পর্যন্ত আসা আমার কাছে কিছুটা অদ্ভুত এবং কিছুটা অসম্ভব মনে হয় এখনো। এইটুকুর জন্য কিছু মানুষের কাছে চিরঋণী থাকা হবে।” এবং আরও জানিয়েছেন, “চতুর্থ সেলাইয়ের নিচে আমার প্রথম কবিতার বই। বেরোচ্ছে সামনেই, খুব দ্রুত কখনো, উলুখড় থেকে।” কাজেই, মেলা চলাকালীন লিটলম্যাগ চত্বরে এবং উলুখড় স্টলে এই বইটি পাবেন পাঠক। প্রোক্ত ফেবুবার্তার সঙ্গে অ্যাটাচড বইয়ের চমৎকার প্রচ্ছদটি এবং প্রকাশনাসংক্রান্ত অন্যান্য তথ্যও রক্ষিত রয়েছে। ‘চতুর্থ সেলাইয়ের নিচে’ প্রচ্ছদ করেছেন রাজীব দত্ত। উলুখড় প্রকাশনালয়ের পক্ষে বইটির প্রকাশক সাগর নীল খান দীপ।
চতুর্থ সেলাইয়ের নিচে ।। ফয়সাল আদনান ।। প্রচ্ছদ : রাজীব দত্ত ।। প্রকাশক : সাগর নীল খান দীপ ।। উলুখড় প্রকাশন ।। প্রকাশকাল : অমর একুশে বইমেলা ২০১৭