কবিতাবই নিয়ে এই মেলায় রায়হান রাইন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ, | ১৪১১ বার পঠিত
সুবর্ণ বাগচী : ইতোমধ্যে বাংলাদেশের কথাসাহিত্য ও কবিতায় আলাদা আদলের স্বর ও ব্যঞ্জন উপহার দিয়ে পাঠকের নিত্য ও নির্জন পড়ার পরিসরে স্থান করে নিয়েছেন যারা, রায়হান রাইন তাদের অগ্রগণ্য একজন। এই মেলায় এসেছে তার নতুন কবিতাবই ‘নিক্রোপলিসের রাত’, বইটি প্রকাশ করেছে ‘চৈতন্য’ প্রকাশন। অমর একুশে বইমেলার ময়দানে শুরুর সপ্তাহ থেকেই ‘চৈতন্য’ স্টলে বইটি পাওয়া যাবে বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গিয়েছে।
আবির্ভাবসময়ের হিসাব ধরে রায়হান রাইন নব্বইয়ের দশকের কবি হিশেবেই পরিচিত। শুধু কবিতাই নয়, লেখালেখিজীবনের গোড়া থেকেই রাইন কবিতার পাশাপাশি সমান ধ্যানে নিমগ্ন রয়েছেন গদ্য ও অনুবাদ নিয়ে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের ছোটগল্পে তার সিদ্ধি প্রমাণিত হয়েছে, যেমন কবিতায় তেমনি বিশ্বের দার্শনিক অনুধ্যানাবলির সঙ্গে বাংলা পাঠকের পরিচয় তিনি নিবিড়ভাবে করিয়ে দিয়েছেন তার মাননিক গদ্যের বইগুলোর মাধ্যমে। একইসঙ্গে সৃজনশীল ও মননশীল উভয় জাতের রচনাকাজে তিনি নিজের ধ্যানমগ্ন অনুশীলনজাত পারঙ্গমতা হাজির করেছেন ইতোপূর্বে।
কবিতায় দার্শনিক বোধির বিনিয়োগে একটা আলদা তাৎপর্য যোগ করতে রাইন সক্ষম হয়েছেন আবহমান বাংলায়। এবারকার ‘নিক্রোপলিসের রাত’ বইটিও কবির সেই পৃথক বৈশিষ্ট্য উদ্ভাসনে ধীঋদ্ধ পাঠকের দৃষ্টি আকৃষ্ট করবে সন্দেহ নাই। “চতুর শেয়াল / কাহিনির বন থেকে বেরিয়ে পড়েছে, / জোছনায় ধোয়া মাঠ পার হয়ে গেছে সে ভোরের দিকে হেঁটে, / এবং যেখানে আছে শারনের গোলাপ বাগান, / এবং যেখানে ফোটে মিষ্টি লিলিফুল। / আহা সুলেমান, / যে তুমি পয়গম্বর ডাইনীর বাহুডোরে শুয়ে / শুনেছ আওয়াজ অপার্থিব, / কোথাও রোদের গন্ধে বুঁদ হয়ে একটি বিকাল / মজেছে নিজেরই মদে, আর থোকা থোকা / ফুটেছে গোলাপ ফুল, শারনের গোলাপ।” … রায়হান রাইনের কবিতার ধাঁচ ও ধক সম্পর্কে এইভাবে উদ্ধৃতির পর উদ্ধৃতি টানা যায়। একই বই থেকে, ‘নিক্রোপলিসের রাত’ কবিতাবই থেকে, আরও উদ্ধৃতি ছিঁড়ে আনা যায়। যেমন, এখানে আরেকটা : “সুতরাং চলো, আমরা এগিয়ে যাই, / হাওয়া হয়ে যাই আজ রাতে; কোথাও নিখোঁজ হয়ে যাই / এই সন্ধ্যাবেলা, / আমাদের পথটাকে আর এই গোধূলিকে / গুটিয়ে নিজের দেহে / গুম হয়ে যাই। / চলো, একটা গাছ হই, / ঢুকে পড়ি ধুতুরার বীজের ভেতর, / ঘাসের ঘুমের মধ্যে — / সবুজ মাংসের উষ্ণ আনন্দ আস্বাদ করা যাক।” … পুরো বইটিতে এ-রকম কণ্ঠ মন্দ্র ও মৌনী এক অনাবিল ধ্বন্যালোক সৃষ্টি করেছে। এই চিৎকারজান্তব কবিতাকালে এহেন স্বরসংশ্রয় ভিন্নতর কবিতাজাগতিক বাস্তবতায় পাঠককে ডেকে নিতে চেয়েছে যেন।
দর্শনে স্নাতকোত্তর কবি রায়হান রাইন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন দুই দশকের কাছাকাছি হলো। দর্শনশাস্ত্রেরই শিক্ষক। উল্লেখযোগ্য দুটো পূর্বপ্রকাশনা ‘আকাশের কৃপাপ্রার্থী তরু’ এবং ‘তুমি ও সবুজ ঘোড়া’ ছাড়াও মনসুর হাল্লাজের ‘তা ওয়া সিন’ গ্রন্থটি বঙ্গানুবাদের মধ্য দিয়ে রাইন বাংলাভাষী পাঠকের মনোযোগ লভেছেন। প্রকাশিত হয়েছে উপন্যাস ছাড়াও দর্শনকেন্দ্রী বিবিধ অনুবাদ ও সম্পাদনা।
‘নিক্রোপলিসের রাত’ বইটি ২০১৭ বইমেলায় একটি তাৎপর্যবহ প্রকাশনা হিশেবে ক্রেতাসাধারণ ও কবিতাপাঠকের কাছে বিবেচিত হবে আশা করা বাড়াবাড়ি হবে না। বইয়ের উৎপাদনমান, ছাপা-বাঁধাই-পৃষ্ঠান্যাস-প্রচ্ছদ ও অন্যান্য মুদ্রণসৌকর্য, অত্যন্ত নয়নশোভন। চৈতন্য প্রকাশনীর পক্ষে ‘নিক্রোপলিসের রাত’ বইটি প্রকাশ করেছেন মো. জাহিদুল হক চৌধুরী রাজীব। বইমেলা চলাকালীন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের চৈতন্য স্টল ৬৩৪-৬৩৫ থেকে বইটি খরিদ করা যাবে।
নিক্রোপলিসের রাত ।। রায়হান রাইন ।। প্রকাশক : মো. জাহিদুল হক চৌধুরী রাজীব ।। চৈতন্য প্রকাশন ।। প্রকাশকাল : অমর একুশে বইমেলা ২০১৭