রূপান্তরের ঘোড়া, শব্দবোধে পোড়া । কালের লিখন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জানুয়ারি ২০১৭, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ, | ৩০৯১ বার পঠিত
কবির বাহন শব্দ। কবির সম্পদ উপলব্ধ। কবির প্রেম কাব্য। কবির সময় নাব্য। সমকালীন জীবনমাঠে দৌড়ে বেড়াচ্ছে রূপান্তরের ঘোড়া। কখনও সহজাত সেই দৌড়, কখনও বোধজাত, কখনওবা হৃদয়জাত। সেই দৌড়ে কখনও সঙ্গী হিসেবে পাই মানুষ, কখনও ভূ-বৈচিত্র কখনও আশাবাদী নিষ্ফল অভিমান। এই দৌড় জীবনের দৌড়, সময়ের দৌড়, এই দৌড় যাপনের দৌড়, আবার এই দৌড় উত্তরণের দৌড়ও। এই রূপান্তর মননের রূপান্তর, চিরন্তন বদলে যাওয়ার চালচিত্র! সময়ের সাথেসাথে বিস্তৃত এই রূপান্তরের ক্ষেত্র!
কবি ফেরদৌস নাহার-এর কবিতাগ্রন্থ, ‘রূপান্তরের ঘোড়া’ পড়তে-পড়তে এরকমই মনে হয়েছে আমার। প্রথাগত গ্রন্থসমালোচনা নয় এই লেখা। একজন ঋদ্ধ কবির সাথে আমার যে পাঠকমন দৌড়ে বেড়িয়েছে, সেই দৌড়ের পথ-বৈচিত্র মননশীল পাঠকের সাথে ভাগাভাগি করে নিতেই এই লেখা। কে না জানে? কবিতার কোনো ব্যাখ্যা হয় না, কবিতা মূলত নিষ্ঠপাঠকের উপলব্ধে আঁকা!
কবিতা যাপনের চিত্র, কবিতা অনুভবের ধারণপাত্র, প্রতিটি জীবন একটি ভালো কবিতার কয়েকছত্র। কবিতা আশার কথা বলে, কবিতা নিরাশার দোলায় দোলে! কবিতা ভেসে বেড়ায় জীবনের অনুকূলে প্রবাহমান কালের জলে। কবিতা বুক কাঁপায়, কবিতা কূল ছাপায়; জল নামায় চোখে! কবিতার নীতি ঋদ্ধপ্রীতিতে, শুদ্ধ ও শুভ্রতায়, কবিতা আনন্দে না হাসলেও আলো জ্বালে শোকে। কবিতা বারুদের মতো জ্বলেওঠার অপেক্ষায় থাকে উপলব্ধজাত পাঠকের বুকে!
আসুন আমরা রূপান্তরের ঘোড়ায় চড়ে দেখে আসি কবি ফেরদৌস নাহার কবিতা নিয়ে কী বলছেন তার শাব্দিক দৌড়ে—
‘একদিন মানুষ গল্প বলতে বলতে রাত্রি নেমে এলে
কবিতারা আলো হাতে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল
সেই থেকে আজও কি তারা তেমনই আছে
শুধু মানুষের গল্পগুলো বড়ো বেশি বদলে গেছে’
বিমূর্ত টান/ রূপান্তরের ঘোড়া/ পৃষ্ঠা-৪৩
চিরন্তন জীবনের গল্প বলতে-বলতে নেমে আসে চিরকালীন রাত, তখন আলো হাতে পাশে এসে দাঁড়ায় কবিতা’রা। হ্যাঁ, কবি তার এই কবিতাংশে তাই বলছেন, হয়তো বদলে গেছে মানুষের গল্প! তবুও কবিতা অন্ধকারের বিরুদ্ধে, অজ্ঞতার বিরুদ্ধে, অশুদ্ধতার বিরুদ্ধে, নিকৃষ্টতার বিরুদ্ধে, অনাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে। কবিতা শুদ্ধ-সত্য-সুন্দর ও নান্দনিকতার পক্ষে। কবিতাই একমাত্র সুন্দর এই ধরিত্রীর বক্ষে। কবিতাই করে আসছে- সৃষ্টিলগ্ন হতে অনাসৃষ্টির করালগ্রাস থেকে, জগতের যাবতীয় সৌন্দর্য রক্ষে!
মানুষের খামখেয়ালি স্বার্থ, ভোগবাদী মানসিকতায় যখন অস্থির চারপাশ, তখন কবি ফেরদৌস নাহার, তাঁর ‘নিগ্রহ-গ্রহে’ কবিতার শেষলাইনে উচ্চারণ করেন এক অমোঘআকুতি— ‘প্লিজ, পৃথিবীকে বাঁচতে দাও পৃথিবীর আয়ুর সমান।’
এই চাওয়া, এই আকুতি এককণ্ঠের নয়, এই আকুতি শতকোটি প্রাণের। এই আকুতি জল-মাটি-বায়ু, পাখ-পাখালি প্রত্যেকের। এই আকুতি শান্তিকামী, মানুষগামী প্রতিটি মানুষের। এর অন্যথা হলে সত্যাসত্যের ঘোরে, মৃতগ্রহে রূপান্তরিত হয়ে যেতে পারে আমাদের প্রাণের গ্রহ! তাই কবি’প্রাণের আহ্বান- থামাও এই গ্রহে নিগ্রহ।
রূপান্তরের ঘোড়ায় চেপে কবি ফেরদৌস নাহার-এর যে ভ্রমণ, সেই ভ্রমণের সাথী হয়েই একটা কবিতা পড়ি—
কৈশোরের জনপদে হারিয়ে আসা প্রথম আধুলি
যা দিয়ে আইসক্রিম কিনব বলে পথে বেরিয়েছিলাম
বাইরে অগ্নিদাহ, শীতল হাওয়ার খুব প্রয়োজন
এ-কথা বললেই মায়েরা তাঁদের জমানো খুচরো পয়সার
কৌটো খুলে দু-একটি সিকি আধুলি বের করে দিতেন
তখন আমাদের নিজের পয়সা ছিল না
মায়েদের পুরানো বিস্কুটের ডিব্বা মাটির ব্যাংকই ভরসাএখন মহাগ্নিকাল। চারিদিকে অনেক পয়সা, হিসেব নেই
কিন্তু আইসক্রিম কেনা হয় না। শীতল বাতাসও আসে না
সকলের মুখে গুঁজে দেয়া আছে জ্বলন্ত মুখাগ্নি কাঠ
ঠাস ঠাস দিন রাত অবিরাম ফুটে চলছে তারা
আইসক্রিমে কুলাবেও না, তাই কোনো ঘরেই নেই
খুচরো পয়সার খোঁজ, মায়েদের আঁচলও শূন্যনিজস্ব মুখাগ্নি আয়োজনে যোগ দিতে সারাদিন সারারাত
দৌড়াতে থাকি মা মা চিৎকারে
পথ হারিয়ে কাঁদতে থাকি কৈশোরের জনপদে, অথচ
সেই ছেলেবেলার আইসক্রিমওয়ালা আজও ঝুনঝুনি বাজিয়ে
পাড়ায় পাড়ায় হাঁক দিয়ে যায়, স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি—
কই গেলিরে পোলাপান মায়ের থেকে পয়সা আন
মা যদি তা না দেয়, আঁচল ধরে টেনে আনখুঁজতে থাকি হারিয়ে যাওয়া প্রথম আধুলি
হারিয়ে যাওয়া প্রথম আধুলি/ রূপান্তরের ঘোড়া/ পৃষ্ঠা- ১৬
বোধে চেতনার রোদ মেখে, শব্দের কাছে নতজানু হয়ে, যাপনের কাছে আহ্লাদিত হয়ে, নিষ্ঠার কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে, স্মৃতির কাছে প্রীতির গান শুনিয়ে কবি ছুটে চলেছেন তার ‘রূপান্তরের ঘোড়া’য় চেপে। সাঁইসাঁই শব্দে স্থিরদৃশ্য রূপান্তরিত হচ্ছে নানাবিধ চলিষ্ণু দৃশ্যকল্পে। ভাবনা রূপান্তরিত হচ্ছে প্রজ্ঞার গল্পে, জীবন রূপান্তরিত হচ্ছে একজন ঋদ্ধ কবির সমৃদ্ধ উপলব্ধির কারুকার্যে। ‘রূপান্তরের ঘোড়া’ যেমন শিল্পবোধে উন্নত, তেমনি নিরলস পরিভ্রমণ তার সুকুমার ধৈর্যে!
কবি উচ্চারণ করেন—
‘ঘাটের ওপারে বাঁধা সঙ্গম-ক্লান্ত ঘোর শব্দ শুয়োর
মাংসমজ্জা ঠেলে দাঁড়িয়েছে অস্পৃশ্য অশ্লীল পাথর’
শব্দ শুয়োর/ রূপান্তরের ঘোড়া/ পৃষ্ঠা- ১৭
মনে পড়ে জীবনানন্দের কাব্য- ‘তবুও তো পেঁচা জাগে/ গলিত স্থবির ব্যাঙ আরও দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে।’ এই যে জীবনের ফুরিয়ে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া, গড়িয়ে যাওয়া মুহূর্তের আঁচ বাঁচিয়ে, আবার নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়ানো, এই বোধ এই ভাবনা শাশ্বত সত্য। জগতের সকল সমৃদ্ধ কবির ভাবনার স্তর একটা বিন্দুতে গিয়ে ধাক্কা খাবেই। সেই স্তরের নাম- চিরন্তনের স্তর, সৌন্দর্য ও স্বপ্নের ঘর।
আজ হতে শতবর্ষ আগের কবিও ভালোবাসার কাব্য লিখেছেন, ভালোবাসার গান বেঁধেছেন, আজকের কবিও কাব্য লিখছে, গান বাঁধছে। শতবর্ষ পরের কবিও ভালোবাসা নিয়ে কাব্য করবে। ভালোবাসার গানের দোলায় হৃদয় ভরবে। যুগেযুগে অনুভব বা বিষয় প্রায় একই, প্রকাশভঙ্গী আলাদা। এই আলাদা প্রকাশভঙ্গীই একজন কবিকে সময়ের থেকে স্বতন্ত্র করে।
কবি ফেরদৌস নাহার, তাঁর রূপান্তরের ঘোড়া’য় চড়ে বর্তমান সময়ের কবিদের মধ্যে একজন উজ্জ্বল পরিব্রাজক হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শব্দেশব্দে ঠকঠক আওয়াজ তুলে! এখনও দারুণভাবে ফলজ তাঁর কাব্যবৃক্ষ, সুনিপুণ ব্যঞ্জনায় দৌড়-সক্ষম তাঁর অনুভূতিজাত অনুভব। কবি বলছেন—
‘ঘুমাতে ঘুমাতে এত যে বিষমন্ত্রের ছবি এঁকে যাই
তাও তো ভাঙে না ঘুম
জীবন শুয়ে আছে মরফিন মিডিয়ায়
চুপ করে থাকা ঠোঁটে গান শুরু হলে কার কী আসে যায়’
অ্যাকুয়া অ্যাকুইস্টিক খেলা/ রূপান্তরের ঘোড়া/ পৃষ্ঠা- ১৮
এই ঘুমঘুম ঘুম ভাঙার খেলা অতি প্রাচীন। আবার সমভাবে স্থির বর্তমান। কবি ফেরদৌস নাহার আপন তালে গেয়ে যান— জীবনমুখর জীবনের গান।
‘রূপান্তরের ঘোড়া’র পাতায়-পাতায় রূপান্তরের দৌড়! মৌলিকত্বের ঘোর। কখনও সেখানে প্রেম, আবার প্রকৃতি কিংবা জগত-সংসার। কবির এই শাব্দিক ভ্রমণে উঠে এসেছে- মানুষ, রাজনীতি, দেশপ্রেম, মহাকাল, ভাবীকাল, প্রকৃতি, প্রযুক্তি, শিল্প, বিপ্লব, প্রণোদনা, অভিমান, আক্ষেপ, বেদনা, আকুলতা, দেশভাগের হাহাকার, মাধুর্য, সৌন্দর্য, বিমূর্তকলা ও নান্দনিক চেতনার দোলা।
এভাবে বিষয় থেকে বিষয়ান্তর, ভাব থেকে ভাবান্তরে ছুটে চলেছে রূপান্তরের ঘোড়া। আমরাতো জানি, কোনকিছুর বিনাশ নাই, ধ্বংস নাই ,আছে রূপান্তর। এই রূপান্তর জীবনের রূপান্তর, এই রূপান্তর সময়ের রূপান্তর, এই রূপান্তর রূপায়নের রূপান্তর। অজস্র পথ, একজন কবিরূপী ঘোড়সওয়ার! আমি পৃষ্ঠাউল্টে যাই- আমার ঘোর কাটে না, আমার মুগ্ধতা বেশুমার।
চলুন আমরা রূপান্তরের ঘোড়া’য় চেপে মরুতীর্থপথ ঘুরে আসি—
তার চেয়ে কিছুটা বড়ো থাকতে চেয়েছিলাম। প্রেমে
অসীমের গানে, উদাত্ত ক্ষমায়। আরাধ্য প্রেরণায়
যাবতীয় ধ্যানে, গোপনে গভীরেঅন্য পরিক্রমায় সবকিছুতে সে-ই ক্রমে বড়ো হতে থাকে
ক্ষমা ও আনন্দে, হৃদয় ও প্রণয়ে তাকে ছাড়িয়ে যাবার
কোনো সাধ্যি রইল না আর। অজানা বাতাসের দেশে
গল্প ও আখ্যানে সে মরুচারী বেদুঈনের উদ যন্ত্রের
উদাস উড়াল। ঝরে পড়া বেদনা কুড়িয়ে নিয়ে
হয়ে ওঠে আমার সমান। তারপর ধীরে গভীর আয়োজনে
নিঃশর্ত আলিঙ্গনে, কণ্ঠলগ্ন মগ্নতায় ভেসে ভেসে আরও
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে ওঠে
কিছুতেই পারি না তাকে পেরুতে, শুধু বয়স বাড়তে থাকেআজকাল শুনতে পাই, অপসৃত আলোর সন্ধানে সে নাকি
আমাকেই খুঁজছে মরুতীর্থ পথে
মরুতীর্থ পথে/ রূপান্তরের ঘোড়া/ পৃষ্ঠা- ২০
এই খোঁজ রূপান্তরের খোঁজ। এই প্রত্যায়িত গল্পের পিছনেও আরও একটা গল্প ঘুমিয়ে যায় রোজ। কবি রূপকে নির্মাণ করেন দৃশ্যরূপের মুখ! কে না জানে— পরিভ্রমণ কবি মাত্রেরই অলিখিত অসুখ! সেই রূপকের রূপান্তরে মত্তপথিকের শেষগন্তব্য যেখানে স্থির। রূপান্তরের ঘোড়া’য় চেপে সেখানেই করেছে ফেরদৌস নাহারের শব্দেরা ভিড়! তার কাব্যভাবনা অনাদি-আদির!
কবি তার কাব্যে ব্যবহার করেছেন চলমান শব্দপুঞ্জ, যা পাঠককে দেয় সমসাময়িকতার ঘ্রাণ। কবি বলেন গুগোলের কথা, প্লে-স্টোর কিম্বা অ্যাপস এর কথা, বা সিলভার সেপারেশনের কথা। কবি বলেন হিউম্যান-মাস্ক মাইমের কথা, অথবা ব্ল্যাকআউটের কথা । কবি সবিস্তারে বলে যান কী কী থেকে যাবে, সেসবের কথাও। চলুন পড়ি- যা যা থেকে যাবে—
এইসব সুন্দর দিন থাকে না
এইসব সুন্দর থাকবে না বলে পাল্লা দিয়েছে হাওয়া
হাহাহোহো অসহ্য চিৎকারে দ্রুত দৌড় লাগিয়েছে
মনে নেই সেসব স্বপ্নভুখ দিনগুলোর কথা
যখন তোমার নাম ছিল গতজন্ম, তারপরও আমি
তোমাকে চিনতাম। কথা বলতাম নানা নামে
এসব আমাদের নিজস্ব শব্দ বা ভাষাশৈলীর প্রবাহে
খুব চনমনে পায়ে তাল ঠুকে নেচেছি গানও গেয়েছিকিন্তু, দিন তো থাকে না। থাকবে না বলেই তো
এতসব অন্ধত্ব শিয়রে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে পড়ে
এসবের পরিবর্তে উপস্থিত হতে থাকে
খেলার পুতুল আর নিবভাঙা লেখার কলম
যা যা থেকে যাবে/ রূপান্তরের ঘোড়া/ পৃষ্ঠা- ৩০
কী থাকবে আর কী থাকবে না, এই ভাবনার দোলাচলে, পরিপূর্ণ জীবনবোধের কোলাহলে, কবি আমাদের বলছেন ব্ল্যাকআউটের কথা—
পাতায় পাতায় ব্ল্যাকআউটের ধ্বনি
সবুজদেশে অন্য উচ্চারণ
কারও দেহ ভেঙে বেরিয়েছে নগ্ন কারিগর
মাঠের বাতাস খুব অচেনা অন্ধ সমার্থকপাতায় পাতায় সবুজ মুছে, কালো দ্বিপ্রহর
দূরপাল্লার যাত্রায়নে রাতের আগন্তুক
ঘুমিয়ে পড়ার নামান্তরে উচ্চস্বরে চমকে দিলো
একশো হাজার মনএই মনের গড়ন অন্যরকম
আঁধার হলে বৃষ্টি যেমন তেপান্তরের মাঠে
হারিয়ে যাবার যন্ত্রণাতে হালকা-মৃদু কাঁপে
ঠিক সেরকম জলজ্যান্ত আগুন লাগা বুকে
পথে পথে দৌড়ে বেড়ায় চরম অভিঘাতে
ব্ল্যাকআউট/ রূপান্তরের ঘোড়া/ পৃষ্ঠা- ৫৮
কবি এখানে পাতায়-পাতায় ব্ল্যাকআউটের ধ্বনি শুনছেন, দেহ ভেঙে বেরিয়ে আসছে নগ্ন কারিগর! এই নির্মোহ সরল আলাপন কবি ফেরদৌস নাহারের মতো জীবনঘনিষ্ঠ চর্চিত কবির পক্ষেই বলা সম্ভব! যার শব্দেশব্দে নাব্যতার গান, জীবনের কলরব।
‘রূপান্তরের ঘোড়া’র জন্য বিষয় উপযোগী দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ এঁকেছেন গ্রিকদেশীয় শিল্পী ক্যাতেরিনা দ্রামিতিনো। চারফর্মার বোর্ড বাঁধাইয়ে বইটি প্রকাশ করেছে— অনুপ্রাণন প্রকাশন। রূপান্তরের ঘোড়ায় চড়ে পরিভ্রমণরত অবস্থায় আমাকে বিশেষভাবে ছুঁয়ে গেছে কিছু কবিতা, যেমন— পথিক পরান, বিমূর্ত টান, ভিনগ্রহে পাঠিয়েছি বখাটে সংবাদ, কান্নাটা জরুরী হয়ে পড়ে, ক্যাপ্টেন কুকের টুপি, ছায়াবাজি, নিশিকন্যার শ্লোক, ল্যান্ডস্ক্যাপ গতি, উলুবনের দেশে, বেজন্ম সময়সহ আরও অনেক কবিতা। কবিতাপ্রেমী পাঠকের কাছে ‘রূপান্তরের ঘোড়া’ হাজির হবে এক আনন্দময় জগতের দৌড় নিয়ে। যে জগত একজন ঋদ্ধ কবির ভাবনার জগত, যে জগত সমুদয় মৌলিকতা ধারণ করে রূপান্তরের জগত।
কবি তাঁর রূপান্তরের ঘোড়া’র নামকাব্যে বলছেন—
‘আমিও গেয়েছি তার গান
মাঝেমাঝে দীর্ঘশ্বাসের মতো এক একটি যতিচিহ্ন
দাড়ি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে
আমিও চিনেছি সেই স্তব্ধতার মানে
শব্দাবেগে ঝড় ওঠা বিমূর্ত আবেগ’
রূপান্তরের ঘোড়া/ পৃষ্ঠা- ৬৩
‘রূপান্তরের ঘোড়া’ কবিতাগ্রন্থে— কবি করেছেন কাব্য নিয়ে নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিভিন্ন অনুষঙ্গে সাজিয়েছেন তার কবিতার মেদহীন অবয়ব। নানাভাবে জ্বেলেছেন স্নিগ্ধবোধের আলো, সুকৌশলে ছুড়েছেন চেতনার তীর। এই কবিতাগ্রন্থ তার জন্য— যার আছে শব্দপ্রেম, যার মন তেপান্তরের পথ পেরিয়ে রূপান্তরের পরিভ্রমণে থাকার ব্যাকুলতায় অধীর। রূপান্তরের ঘোড়া; শব্দবোধে পোড়া। এই রূপান্তর মননব্যাপী, এই রূপান্তর বিশ্বজোড়া। ‘রূপান্তরের ঘোড়া’ মূলত তার, মনে আছে যার, একটা তেজী ঘোড়সওয়ার!