মেঘ রঙা ফানুস । ফাহমিদা ফাম্মী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ নভেম্বর ২০১৬, ৫:৪৬ অপরাহ্ণ, | ১৮৫৮ বার পঠিত
গড়গড় করে প্রায় আঠারোটি ঘুমের ঔষধ গিলে ফেললাম। সাথে ছিল প্যারাসিটামল সহ আরও কয়েক প্রকার ঔষধ। খাওয়ার পর পরই মনে হল একটা সুইসাইড নোট লেখা উচিৎ। মরবো এটা সিউর কারন বাসায় কেউ নাই। সবাই বিয়ে খেতে গেছে। আসতে আসতে আরও দুই তিন ঘণ্টা লাগবে, আর এর মধ্যে কারো এসে সুপারমেনের মত আমাকে বাঁচানোর কোন সম্ভবনা নাই। অবশ্য সেলিমকে নিয়ে একটু ভয়ে ছিলাম যেতেই চাচ্চিল না। জোড় করে পাঠালাম তার এক কথা তুমি না গেলে আমি কেন যাবো? কিন্তু আমার মনে হল লোকটা আর কত নিজেকে আমার জন্য গুটিয়ে রাখবে তার যাওয়া উচিৎ। তাকে পাঠিয়ে শাড়ীটা বদলে নিলাম। মারাই যখন যাচ্ছি একটু সেজে গুঁজে মরি সাদামাটা ভাবে মরতে চাইনি বলে ফাঁসিতে ঝুলে বা পুকুরে ডুবে মরার প্ল্যান তো বাদই দিলাম। হাত অবশ লাগছে মাথা ঘুরছে, মনে শক্তি সঞ্চয় করছি একটা চিঠি না হোক একটা চিরকুট তো লিখতেই হবে। কিন্তু সময় খুব কম… ড্রয়ার থেকে কাগজ কলম নিলাম একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটছে এত এত শব্দ লিখছি কিন্তু কোন শব্দই কাগজে প্রতীয়মান না… হাত কাঁপছে… চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে। হটাৎ নিজেকে আবিষ্কার করলাম মেঝেতে।। আমার সামনে আমার শাশুড়ি আর ননদ বসে আছে।
একটা মানুষ বহন করে চলেছি আমি… তখন আমার চেয়ে খুশি আর কেউ ছিল না। অবশ্য এই কথাটা পুরোপুরি সত্য না আমার কাছাকাছি খুশি ছিল আরেকজন সে হল সেলিম… বাবু গর্ভে আসার পর থেকে নানান দুশ্চিন্তা কোন ভাবেই কাটাতে পারছিলাম না… যার ফলশ্রুতি এই দুঃস্বপ্ন।
সায়মা আমাকে বলছে ভাবি কি হয়েছে তোমার শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে? আমার কথা শুনতে পাচ্ছ? আমার শাশুড়ি বলছেন এই মেয়েকে আমি আমার কোন কথা এই অব্দি শোনাতে পারিনি। সেই বিয়ের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত… সায়মা অনবরত তার ভাইকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে, সেলিম ফোন ধরছে না হয়তো মিটিং বা অন্য কোন কাজে ব্যস্ত। হটাৎ একটা রিং বেজে উঠলো সায়মার ফোনে।
ভাইয়্যা ভাবি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল, জ্ঞান ফিরেছে… তুমি তাড়াতাড়ি এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসো। অবস্থা ভালো না।
জ্ঞান ফেরার পর থেকে আমি আবোল তাবোল কথা বলছি… এতক্ষন স্বপ্ন দেখছিলাম, বাবু পেটে আসার পর থেকে এমন স্বপ্ন প্রায় দেখছি। এক এক দিন এক এক স্বপ্ন! মাঝে মাঝে দেখি কেউ একজন আমাকে খুন করার জন্য ধেয়ে আসছে মস্ত বড় রামদা নিয়ে। কখনো কখনো দেখি এই মাত্র একটা ট্রাক চাপা দিয়ে আমাকে চলে গেলো।রক্তে রাজপথ ভিজে যাচ্ছে। আরও কত কি।
তবে আজকের স্বপ্ন দেখে একেবারে বিছানা থেকে মাটিতে পরে গেছি। জ্ঞান ফেরার পর থেকে আমি বলেই যাচ্ছি আমাকে হসপিটালে নিয়ে যাও আমার বাবুটা নড়ছে না… ওর হয়তো কিছু হয়ে গেছে… তাড়াতাড়ি করো । প্লিজ…
সেলিম এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে চলে এসেছে। ধরা ধরি করে আমাকে ওঠানো হল। আমি শক্ত করে সেলিমের হাতটা ধরে রেখেছি। সেলিমের দিকে তাকালাম সে ঘামছে। তার ঘাম ফোটা ফোটা হয়ে তার গলা বেয়ে বুকে নেমে যাচ্ছে, নাকের ফুটো বড় হয়ে যাচ্ছে সে যখন কোন বিষয় নিয়ে ভয়ে থাকে তখন তার নাকের ফুটো বড় বড় হয়ে যায়। সেলিম বার বার বলছে কিচ্ছু হবে না তরু কিচ্ছু হবে না তোমার, এইতো আমি এসে গেছি এইতো আরেকটু পরেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
বিয়ের প্রায় বারও বছর হয়ে যাওয়ার পর এই বাবুটা আমার গর্ভে এসেছে। বাচ্চা হয়না দেখে আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সহ্ আরও অনেকে অনেক কথা শুনিয়েছে, বন্ধ্যা সহ্ আরও কত কত শব্দ। আমার শাশুড়ি উঠে পরে লেগেছিলেন সেলিমকে বিয়ে করানোর জন্য এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছিল যে সেলিম রাজী কিংবা রাজী না তাতে কিছুই যায় আসে না… বিয়ে সেলিমকে করতেই হবে… আমিও হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম. একবার তো আত্মহননের চেষ্টাও করেছিলাম .. ঠিক তখনই বুঝতে পারলাম আমার ভেতর আরেকটা আত্মার স্পন্দন। একটা মানুষ বহন করে চলেছি আমি… তখন আমার চেয়ে খুশি আর কেউ ছিল না। অবশ্য এই কথাটা পুরোপুরি সত্য না আমার কাছাকাছি খুশি ছিল আরেকজন সে হল সেলিম… বাবু গর্ভে আসার পর থেকে নানান দুশ্চিন্তা কোন ভাবেই কাটাতে পারছিলাম না… যার ফলশ্রুতি এই দুঃস্বপ্ন।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছি। ঔষধের গন্ধে পেট উগ্লে মনে হচ্ছে সব খাবার মুখ দিয়ে বের হয়ে আসবে। ডাক্তার অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষা করে বললেন এখনই অপারেশন করতে হবে… অনেকগুলো বাতি জ্বলছে চোখের ঠিক উপরে। আমাকে এনেস্তেতিয়া দেওয়া হল, চোখ বন্ধ হয়ে আসছে আমার আমি বেশ বুঝতে পারছি একটা ছোট পা বার বার আমার পেটে লাথি দিচ্ছে। কিন্তু আমার কেন যেন খুব কষ্ট হচ্ছে। শ্বাস নিতে পারছি না ঠিকমত..অক্সিজেন মাক্সেও কোন কাজ হচ্ছে না. হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে, আস্তে আস্তে চোখ দুটোও বন্ধ হয়ে আসছে.. বিকট আলো অন্ধকারে পরিনত হচ্ছে ধীরে ধীরে…