দ্বিধা । মোহছেনা ঝর্ণা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ নভেম্বর ২০১৬, ১১:৪২ অপরাহ্ণ, | ২২২৩ বার পঠিত
মেয়েটাকে প্রথম দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েছিলাম। ভাসা ভাসা ডাগর ডাগর চোখ, যেন চোখে একটা নদী আছে, টলমল করছে ঢেউ, টিকোলো নাক, কি মায়া মায়া চেহারা, গায়ের রঙটা অবশ্য কৃষ্ণ বর্ণ। রবীন্দ্রনাথ কি এমন কাউকে দেখেই গেয়েছিলেন কিনা, “কৃষ্ণ কলি আমি তারেই বলি, কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক। মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে , কালো মেয়ের কালো হরিণ—চোখ।”
বয়সটা একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে। পনের-ষোল হতে পারে। ঘোর কাটিয়ে আমি জিজ্ঞেস করি কি, কি নাম তোর?
নরম গলায় জবাব দিল, আমার নাম আসমা।
—বাসার কাজ করতে পারিস?
—পারি।
—বাচ্চা-কাচ্চা আদর করিস? নাকি বিরক্ত হস?
মিষ্টি করে হেসে বলল, বাচ্চারা আমাকে পছন্দ করে।
আসমার জবাব শুনে আমি আশ্বস্ত হওয়ার চেষ্টা করি।
রাতে—দিনে বাসায় বিশ্বস্ত কাজের মানুষ পাওয়া এখন সরকারি চাকরি পাওয়ার চেয়েও বেশি দুরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাসায় কাজের মানুষ নিয়ে আগে আমার অত ভাবনা ছিল না। কারণ দিনের বেশির ভাগ সময় চাকরির কারণে আমাকে আর ফাহিমকে বাইরেই থাকতে হয়। বাসায় ফিরে দু’জনে মিলে সারাদিনের গল্প করতে করতে রান্না-বান্নাটা শেষ হয়ে যেত। ছুটির দিনে একটা ছুটা বুয়া এসে টুকিটাকি কাজে সহযোগিতা করে যেত।কিন্তু ইলিনের জন্মের পর থেকেই আমাদের নিশ্চিন্তে ঘুমের দিন শেষ হয়ে গেছে।
ইলিনকে সার্বক্ষণিক দেখার জন্য তো একজন মানুষ দরকার।ফাহিমের বাবা-মা গ্রামে থাকে। গ্রামে ফাহিমের ছোট ভাই-বোন আছে। আমার বাবার বাসা কাছে। কিন্তু মায়ের বয়স হয়েছে। তার ওপর হাজারটা অসুখের ভারে মা আমার নুয়ে আছে। তাছাড়া ভাইয়ের বাচ্চাদের নিয়ে আমার মায়ের অবস্থা এত বেগতিক যে মাও এসে যে থাকবে সে উপায় নেই। বাধ্য হয়ে মানুষ খোঁজ।
বাসায় কেউ না থাকলে আসমা আর ইলিনকে সকাল বেলা মা’র বাসায় রেখেই আমাকে অফিসে যেতে হয়। আসমাকে নিয়ে আমার মা-ভাবীরাও খুশি। কারণ এই মেয়ে এক মিনিটও কাজ ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকে না ।
ইলিনকে এত যত্ন করে যে আমার এই ছোট্ট বাচ্চাটি আসমা ছাড়া কিছু বোঝে না । অনেক সময় দেখা যায় আমি ইলিনের কান্না থামাতে পারছি না, কিন্তু আসমার কোলে গেলে কিছুক্ষণের মধ্যে ইলিন কান্না থামিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
আসমা খুব অল্প সময়ে আমার বাসাটাকে নিজের বাসার মতো সামলে নিয়েছে। ও আগেও অন্য বাসায় কাজ করেছিল বলে ওকে সেভাবে আমার কোনো কাজই শেখাতে হয় নি। আর ইলিনকেও খুব যত্ন করে কোলে নেয়, খাওয়ায়, ঘুম পাড়ায় যে আসমা ধীরে ধীরে আমাদের পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে পরিগনিত হয়।
আমরা কোথাও বেড়াতে গেলে আসমাকে নিয়ে যাই, ঈদের শপিংযে ওর পছন্দ মতো পোশাক কিনে দেই, পয়লা বৈশাখে ডিসি হিলে কিংবা সি আর বিতে গেলেও সাথে থাকে, বলতে গেলে আসমাকে ছাড়া ইলিন যেমন কোথাও যায় না, আসমাও আমার কাছে থাকার সময়টুকু বাদে ইলিনকে খুব একটা চোখের আড়াল করে না ।
আসমা মাঝে মাঝে ওর মা-বাবার সাথে কথা বলত আমাদের মোবাইলে। আবার ওর মাও কখনো কখনো ফোন করত আমাদের মোবাইলে। ফাহিম তাই ভাবল, মেয়েটাকে একটা ফোন কিনে দিলে নিশ্চয় মা-বাবার সাথে সারাক্ষণ যোগাযোগ করতে পারবে, এতে ওর মন ভালো থাকবে এবং ইলিনের প্রতি নিশ্চয়ই আরো ভালোবাসা দেখাবে।
আমার শ্বাশুড়ি এসেছে বাসায়। তাই আজ আর ইলিনকে নিয়ে মা’র বাসায় যাইনি। দুপুর বারটার দিকে শ্বাশুড়ি-মা ফোন করে বললেন, বৌমা আসমাকে খূঁজে পাচ্ছি না । আমি বললাম, খূঁজে পাচ্ছেন না মানে? ছাদে দেখেছেন?
বাসায় বারান্দা থাকা স্বত্তেও আসমা ছুটির দিনগুলোতে ছাদে গিয়ে কাপড় শুকাতে দিত। জিজ্ঞেস করল বলত, বারান্দায় ছায়ার মধ্যে কাপড় শুকালে কাপড় ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যায়। যেহেতু ওর কাজ ছিল খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং টিপটপ ভাবতাম কি জানি হবে হয়তো।
তবে এই মেয়ের ঘরের বাইরে যাওয়ার একটা নেশা ছিল। প্রথম প্রথম এসেই আমাকে বলল, মামী আমাকে একদিন বাজার চিনিয়ে দিলেই হবে। আমিই বাজার করতে পারব। মামার সময় না থাকলে বাজার করার দরকার নাই।
আমি কাচুমাচু করে বলি, থানায় যেতে তো ভয় লাগে। আর কাজের মেয়ে পালানোর মতো বিষয় পেলে তো থানার লোকজনের অনেক নাজেহাল করার সম্ভাবনা থেকে যায়।
ফাহিমকে বলার পর ফাহিম বলল, তাহলে তো ভালোই হলো।
আমি বললাম, মোটেও ভালো হয়নি, ওকে বাজার করতে পাঠাই, আর রাস্তা-ঘাট সব চিনে, রাস্তার মানুষজনদের সাথে খাতির করে পালাক আর কি।
ফাহিম বলল, এত সন্দেহ করে কি চলতে পারবে?
ফাহিমের কথা মতো আমি সন্দেহের উর্দ্ধে উঠে আসমার উপর নির্ভর করতে থাকলাম।
শুধু আমি না, ফাহিমসহ আমার কাছের মানুষেরাও আসমার উপর বেশ নির্ভরশীল হতে শুরু করল। আমার অনেক মেয়ে সহকর্মী যখন অফিসে এসে সারাক্ষণ বাসায় কাজের মানুষ নিয়ে অশান্তির কথা বলত, বাচ্চা মানুষ করার জন্য ফ্যামিলি থেকে চাকরি ছেড়ে দেয়ার চাপের কথা বলত আমি তখন আসমার কথা ভেবে মনে মনে বেশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতাম। কারণ ইলিনের জন্মের পর চাকরি ছাড়ার কথা আমাকেও বেশ ক’বার শুনতে হয়েছিল। কিন্তু আসমা আসার পর থেকে আর কোনো ঝামেলা হয় নি। অবশ্য সহকর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ বলত এদের বেশি ছাড় দিবেন না, নির্ভর করবেন না, পরে দুঃখ করতে হবে।
এখন মনে হচ্ছে সেই দুঃখের সময় যেন চলে এসেছে।
মা বললেন, ও ময়লা ফেলতে বাইরে গিয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে আমার বুকটা ধক করে উঠল। বললাম, মা ইলিন কোথায়?
মা বললেন, আমার কোলে।
ফোনে ইলিনের কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। বললাম, মা ইলিন কাঁদছে কেন?
মা বললেন, বুঝতে পারছি না, আসমাকে দেখছে না তো অনেক্ষন।
আমার মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করে উঠে।
ফাহিম ওকে মোবাইলটা কিনে দেয়ার পর থেকেই দেখি এই মেয়ের ফোনের কোনো শেষ নেই। বাবা–মা ছাড়াও এই ভাই, সে ভাই, কত ভাই যে তাকে ফোন করে! এমনকি রাতের দুই’টা –তিনটা বাজেও হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে শুনি পাশের ঘরে খিক খিক করা হাসির শব্দ।
মাঝে মাঝে ফাহিমকেও ঘুম থেকে ডেকে তুলে শুনিয়েছি। ফাহিম বলত, ইগনোর করো, সব বিষয় ধরতে গেলে সেই প্রবাদ বাক্যের মতো হয়ে যাবে পশম বাছতে গিয়ে কম্বল উজাড় করার অবস্থা।
আমি আসমার মোবাইলে ফোন দিই। না, সংযোগ পাচ্ছি না। মোবাইল বন্ধ।
দিশেহারা হয়ে ফাহিমকে ফোন দিই। এই মেয়ে কিছু চুরি টুরি করল না তো। বাসার কোথায় কি আছে সব ওর জানা। বাসার কোথাও আমি তালা মারি না । আমি ওকে কয়েকবার বলেছি দেখ, আমার বাসার আলমারিতে আমি তালা মারি না, কারণ আলমারিতে যা আছে সেগুলো হারিয়ে গেলে আবার জোগাড় করা যাবে, হয়তো একটু কষ্ট হবে, কিন্তু তোর কাছে যা রেখে যাচ্ছি আমার জীবনের সবচেয়ে দামি সম্পদ এটা হারালে আমি আর বাঁচব না রে। তোর যখন যা লাগবে বলবি আমাকে। কারণ তুই ভালো থাকলেই তো আমার বাচ্চাটা তোর কাছে ভালো থাকবে।
আসমা প্রতিবার লাজুক হাসি দিয়ে বলত, মামী, ওতো আমার বোন। ওকে ছাড়া আমার বুকটাও খালি খালি লাগে। ওকে রেখে আমি কখনো যাব না ।
দুপুরের কড়া রোদের মধ্যে অফিস থেকে বের হয়ে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকি । অতিরিক্ত রোদের কারণে রিকশাওয়ালাগুলোও বেশ ক্লান্ত। আমার বুকটা ধুকপুক ধুকপুক করতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ পর একটা রিকশাওয়ালার মায়া হলো। একটু বেশি ভাড়া নিয়ে আসতে রাজি হলো। রোদের তাপে ছেলেটার গায়ের গেঞ্জিটা ভিজে চুপাচুপ হয়ে যায়। আমি মনে মনে আল্লাহ, আল্লাহ্ বলে জপতে থাকি। এই মেয়ে না জানি কি অঘটনটাই না ঘটিয়েছে। বাসায় আলমারির ড্রয়ারে আমার কিছু এফ.ডি.আর রশিদ আছে, বেশ কিছু গয়না আছে, সামান্য কিছু টাকাও আছে। এই মেয়ে কি সব হাপিস করে দিল কিনা কে জানে।
খুব শংকা মনে বাসায় ঢুকে মার কোল থেকে আমার দু’বছর বয়সী মেয়েকে আমি কোলে নিয়ে বুকে জড়িয়ে রাখি। আমার মেয়ে আমাকে দেখে বলে, আপু নাই।
আধো আধো কথা বলে ইলিন। আসমাকে খুব পছন্দ করে। একটু বেশি সময় আসমাকে না দেখলে অস্থির হয়ে উঠে।
মাকে আমি পুরো ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করলে মা বলে, আমি ইলিনকে নিয়ে বারান্দায় কাঠবিড়ালী দেখাচ্ছিলাম, ফাঁকে ফাঁকে একটু খিচুড়ি খাওয়ানোর চেষ্টা করছিলাম, এমন সময় আসমা বলল, দাদী আমি একটু নিচে গিয়ে ময়লা ফেলে আসি, দরজা খোলা থাক।
বৌমা আমি না ওকে আর কিছু বললাম না । ইলিনকে নিয়ে কাঠবিড়ালী দেখাচ্ছিলাম বারান্দায়।
আমি একটু ধাতস্থ হওয়ার জন্য ফ্যান ছেড়ে খাটে বসি। আর মনে মনে নিজেকে বুঝ দেই অস্থির হওয়া যাবে না । ফাহিম আসুক। দু’জনে মিলে ভেবে চিনতে ঠিক করা যাবে কি করা যায়। এর ফাঁকে মনে হলো, আলমারিতে জিনিসগুলা ঠিক আছে কিনা দেখে নেই। আলমারি খুলে দেখি সবই ঠিক আছে।
আসমাকে আর এফ এল এর ছোট একটা ড্রয়ার সেট কিনে দিয়েছিলাম। ওর কাপড়-চোপড়সহ দরকারি সব জিনিসপত্র রাখার জন্য। ওকে দেয়ার পর থেকে ঐটা আমি কখনো ধরিনি। আজ খুলতে গিয়ে কিছুটা সংকোচ হচ্ছিল। তারপরও খুলে দেখলাম ও কি কি নিয়েছে দেখার জন্য।
মা ফোন দেয়ার পর অফিসে আমি আমার সহকর্মী নীরাকে যখন ঘটনাটা বললাম, নীরা বলল, আমি আপনাকে আগেই বলেছি এদের বেশি ছাড় দিতে নেই। যার যার নিজস্ব লেভেল থাকে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসা অনেক কষ্টের ব্যাপার। দেখলেন তো , সুযোগ বুঝে ঠিকই জাত চিনিয়ে দিল।
ড্রয়ারে তো জামা কাপড় সবই আছে মনে হচ্ছে। ছোট্ট একটা টাকার ব্যাগে বেশ কিছু টাকাও আছে। শুধু মোবাইলটা নেই।ভাঁজ করা কিছু কাগজও আছে। খুলে দেখি সেখানে বেশ কিছু মোবাইল নম্বর।
ফাহিম বাসায় এসেই বলল, ওর খালাকে ফোন করেছ?
—না। যদি ওরা ভাবে আমরা আসমাকে মারধর করেছি, তাহলে তো আরেক সমস্যা হবে।
ফাহিম বলল, ওর খালাকে ফোন না করলে তুমি বুঝবে কিভাবে ও কোথায় গেছে।
আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললাম, এজন্য বলেছিলাম মোবাইলটা না দিতে।
ফাহিমও বিরক্ত হয়ে বলল, যে যাওয়ার সে এমনিতেই যেত। মোবাইল আমি কিনে না দিলে নিজে কিনে নিত। এখন এসব বলে কোনো লাভ নেই। কি কি নিয়েছে সেটা বলো।
কাপড় চোপড় তো কিছু নেয়নি মনে হচ্ছে। টাকা পয়সাও আছে দেখছি। কোথায় যে গেল?
খুব অস্থির লাগছিল আমার। এই মেয়ে পালাল কেন কিছুই মাথায় আসছে না।
কাজের মেয়ে হারিয়ে গেলে বা পালিয়ে গেলে সর্বপ্রথমে যাকে আসামী হিসেবে চিহ্নিত করা হয় সে হলো বাসার গৃহকর্ত্রী। সবাই ভাববে নিশ্চয়ই আমার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে কাজের মেয়ে পালিয়ে গেছে। অথচ আমি যে আসমাকে কত পছন্দ করতাম এখন কার কাছে গিয়ে বলি।
বিকালের দিকে ইলিন আসমার জন্য আপু আপু করে কাঁদতে থাকে। আধো আধো বুলিতে আমাকে জিজ্ঞেস করে, আপু কোথায় গেছে?
আমি ইলিনকে থামানোর চেষ্টা করি। কাঁদতে কাঁদতে ইলিন একটা সময় ঘুমিয়ে পড়ে। আমি আমার বান্ধবী মহুয়াকে ফোন দিয়ে পুরো ঘটনা বলি। মহুয়া আবার ল’ইয়ার। কোর্ট বিল্ডিং এ চেম্বার আছে। ও সব শুনে বলে তুই এক্ষুনি থানায় একটা জিডি করে রাখ। আর ওর খালার সাথে কথা বল। গিয়ে দেখ এই মেয়ের পালানোর ক্ষেত্রে খালারও যোগসাজস আছে । দু’দিনের মধ্যে কোনো খবর না পেলে পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দিয়ে দিস।
আমি কাচুমাচু করে বলি, থানায় যেতে তো ভয় লাগে। আর কাজের মেয়ে পালানোর মতো বিষয় পেলে তো থানার লোকজনের অনেক নাজেহাল করার সম্ভাবনা থেকে যায়।
মহুয়া থানার ওসির সাথে কথা বলে নেয়। আমি আর ফাহিম সন্ধ্যার পরে গিয়ে জিডি করে আসি।
আমি খুব সতর্ক থাকার চেষ্টা করি যেন আশে পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন আসমার বিষয়টা জানতে না পারে। থানা থেকে ফিরে এসে খুব বিরক্তি নিয়ে আমি আসমার খালাকে ফোন দেই।ঘটনা শুনে তো আসমার খালা তো কেঁদে কেটে অস্থির। আরো বলছে, আফা, আফনের লগে কি কিছু হইছিল। আফা আমরা গরীব মানুষ। আমার বইনডা আরো গরীব। আমার বইনের মাইয়াডারে সুস্থ ভাবে ফেরত দিয়া দেন আফা। নাইলে আমার বইনডা মইরা যাইব।
আমি রাগ করতে গিয়েও পারি না। শুধু বলি, আসমার কোনো খবর পেলে অবশ্যই আমাকে জানাবে।
আসমার খালাকে ফোন করাটা মনে হচ্ছে ভুল হয়েছে। শুধু ভুল না ব্লান্ডার জাতীয় ভুল। কারণ আমি ফোন রাখার পর থেকেই আসমার মা আর খালা একটু পর পর ফোন দিয়ে বলে, আমার মাইয়ার কোনো খবর পাইছেন আফা। আফনাগোরে বিশ্বাস কইরা আমার মাইয়াটা দিছি। আমার মাইয়ারে ফিরাইয়া দেন। আমি আছি আমার যন্ত্রণায়, তার উপর এদের এমন অসহ্য অসহ্য ঘ্যানর ঘ্যানরে জীবনটা পুরো তিতা হয়ে উঠেছে।
দু’দিন পেরিয়ে গেল আসমার কোনো খবর নেই। আমার বাসাটা পুরো এলোমেলো হয়ে আছে।
তিনদিনের দিন আসমার মা আর খালা এসে হাজির। আসমার মাকে দেখে অবশ্য খুব মায়া লাগল। মেয়ের শোকে কাঁদতে কাঁদতে পুরো চোখমুখ ফুলে একাকার। মুখে খালি এক কথা। আফা আমার মাইয়াডারে খুঁইজা দেন আফা। আমার আর কিছু লাগব না। আফা আমার মাইয়াডার কোনো বিপদ হইল না তো?
আসমার মায়ের চোখের পানি আমাকে বিগলিত করে। আমি অনুভব করি সন্তানের মায়া সব মায়ের জন্যই সমান। আর্থিক বৈষম্য মায়ের বুকে সন্তানের ভালোবাসার ক্ষেত্রে কোনো তারতম্যই করতে পারে না।
আমার মনে হতে থাকে একটা জলজ্যান্ত মানুষ আমার ঘর থেকে এভাবে দিনে দুপুরে হারিয়ে গেছে, অথচ আমরা কেউ কিছু জানিনা , কেউ কিছু জানতে পারছি না, কি আশ্চর্য বিষয়। আসমার উপরও রাগ হতে থাকে, তুই কাজ না করলে আমাকে বলে চলে যেতি। এভাবে পালানোর কি দরকার ছিল। আর মোবাইল ফোনটা সাথে নিলিই যখন, বন্ধ করে রেখেছিস কোন দুঃখে?
সামাজিক নিয়মের ভীতির কারণে আমি আসমার বিষয়টা নিয়ে কারো সাথে মন খুলে একটু কথাও বলতে পারছি না। খালি মনে হচ্ছে কে কোন দিক দিয়ে কোন ঝামেলা পাকিয়ে ফেলে! তারপরও আমার অফিস কলিগদের মধ্যে কেউ কেউ অতি উৎসাহী হয়ে ফোন করে কাজের মেয়ে হারিয়ে যাওয়া কিংবা পালিয়ে যাওয়া ঘটিত তাদের বিভিন্ন বিরূপ অভিজ্ঞতার ঝাঁপি খুলে বসতে চান।
আমার অফিসের রাশভারী একজন সহকর্মী হচ্ছেন হায়দার সাহেব। কোনো বিষয় নিয়ে স্থুল কোনো কথা এই লোক বলেন না। বরং যে কারো সমস্যায় তিনি তার গাম্ভীর্য থেকে বেরিয়ে অন্যদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। সেই ভদ্রলোক আজ আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, ম্যাডাম আপনার বিপদের কথা শুনেছি। আমার এক ছোট ভাই কোতোয়ালী থানার ওসি। থানা বিষয়ক কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে নিঃসংকোচে বলবেন।
ফোন রেখে দেয়ার আগ মুহূর্তে বললেন, শ্রমিক জাতীয় মানুষ হচ্ছে নিন্ম বর্গীয় মানুষ। মানুষদের স্বাভাবিক প্রবনতা থাকে এদের ঠকিয়ে দেয়া। বঞ্চিত করা। আপনি খেয়াল করলে দেখতে পাবেন একজন রিকশা চালক, কিংবা একজন গৃহপরিচারিকা কিংবা একজন কারখানার শ্রমিক, দিনমজুর, গার্মেন্ট শ্রমিক এদের সাথে মানুষ খুব তুচ্ছ কারণে খুব অনায়াসে প্রচন্ড খারাপ ব্যবহার করে ফেলে। অনেকে তো নিজের ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে তাৎক্ষনিকভাবে দু’চারটা চড়-থাপ্পর দিতেও দেরি করে না । বঞ্চনা পেতে পেতে এদের অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে এরা মানুষের স্বাভাবিক ভালোবাসাটা আর অনুভব করতে পারে না। আর তাই এদের ভালো রাখার জন্য এবং নিজ়ে ভালো থাকার জন্য এদের রাখতে নাটাইয়ের সুতার মতো নিয়ন্ত্রণে। নাটাইয়ের সুতার নিয়ন্ত্রন না থাকলে আকাশে উড়তে থাকা রঙ বেরঙ্গের ঘুড়ি কোথায় গিয়ে কার সাথে প্যাচ খেয়ে যে ভোকাট্টা হয়ে যায় তা আর নাটাইয়ের মালিকের পক্ষে কিন্তু সবসময় খূঁজে বের করা সম্ভবই হয় না।
চারদিন ছুটি কাটানোর পর অফিস থেকে জরুরি তলব, হেড অফিসের অডিট টিম এসেছে। অফিস করতে হবে। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা। ইলিনকে কে দেখবে। কারণ ইলিন সবার কোলে যেতে চায় না। সবার কাছে থাকতে চায় না। ইলিনের সুবিধার কথা চিন্তা করে ফাহিম এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে প্রস্তাব আসে সন্তানের চেয়ে তো চাকরি বড় নয়। চাকরি, বাকরি, অর্থ-বিত্ত–বৈভব, সবই তো সন্তানের সুখের জন্য। তাহলে সেই সন্তানের প্রতিদিনের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য, মায়ের সান্নধ্যের জন্য এমন চাকরি তো অনায়াসেই ছেড়ে দেয়া যায়।
চাকরি ছাড়ার প্রসংগটা আসতেই আমি খুব অসহায় হয়ে পড়ি। ইলিনকে বুকের সাথে লাগিয়ে রাখি। আসমার কথাও খুব মনে পড়ে। আবার রাগ করে মনে মনে ওর চৌদ্ধ গুষ্ঠি উদ্ধার করতে থাকি। মনে মনে বিশ্রী বিশ্রী গালি দিই ওকে। এত সুবিধা পাওয়ার পরও আমাকে বিপদে ফেলে বেঈমানের মতো পালিয়ে গেল।
রাতে ঠিক মতো ঘুম হচ্ছে না। অস্থিরতায় ঘুম ভেঙ্গে যায়। যদি আসমাকে খূঁজে পাওয়া না যায় এবং আসমার মা যদি তার মেয়ে হারানোর জন্য থানায় মামলা টামলা করে তাহলে কি যে বিপদ হবে এসব ভাবতে ভাবতে রাতগুলো কেমন নির্ঘুম কেটে যায়। ফাহিমও টেনশন করে। তবে সেটার মাত্রা সামান্য।ও শুধু বলবে, আমরা তো কোনো অন্যায় করিনি বা ওর উপর কখনো কোনো অত্যাচারও করিনি তাহলে আমাদের এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
পরদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে আমি ফাহিমের সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবার তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ইলিন ঘুম থেকে ওঠার আগেই যেন সব কাজ শেষ করতে পারি তাই বেশ তাড়াহুড়ো করছিলাম। এত সকালে কলিংবেলের শব্দ শুনে বুঝতে পারছিলাম না কে এসেছে। খুব বিরিক্তি নিয়ে দরজা খুলে আমি ভুত দেখার মতো চমকে উঠেছি। আসমা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। খুব বিধ্বস্ত মনে হচ্ছিল ওকে। আমাকে দেখেই মুখে একটা হাসি ছড়িয়ে বলল, মামী ভালো আছেন?
আমি খুব অবাক হয়ে বললাম, তুই? এই শুনছ, দেখ আসমা এসেছে। ফাহিম, আমার শ্বাশুড়ি সবাই দৌড়ে এসেছে দরজার সামনে। ফাহিম এসে যেন কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গিতে আসমাকে বলল, তুই বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
কিছুক্ষণ জড়সড় হয়ে থাকে আসমা। ফাহিম অফিসে যাওয়ার পর পরই ইলিন ঘুম থেকে উঠে যায়। আসমাকে দেখে তো ইলিনের সে কি খুশি! এতটুকু বাচ্চা কিন্তু ঠিকই ভালোবাসা বোঝে! আসমাও ইলিনকে বুকের সাথে লাগিয়ে বারান্দার দিকে চলে যায়। আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল এই মেয়ের চোখে হয়তো পানি। আমার শ্বাশুড়ি অবশ্য বিরক্তি নিয়ে বলল, ওকে কিছু জিজ্ঞেস করছ না কেন বৌমা? কোথায় ছিল?
মাকে আমি হাত ইশারায় বলি, জিজ্ঞেস করব মা, একটু সময় দেন।
আসমার খালাকে খবরটা জানাই। ওর মায়ের মনটা যেন একটু শান্ত হয়।
মেয়েটা খুব ক্লান্ত ছিল। সকালের নাস্তা খেয়ে, গা গোসল ধুয়ে নেয়। এই সময় আমি ওকে কোনো প্রশ্ন করার চেষ্টা করিনি। দুপুরের ভাতটা খেয়ে ঘুমিয়েছে ।
এর মধ্যে আসমা আসার খবর পেয়ে আমার বাবা-মা চলে এসেছে। বাবা এসেই বলছে এই মেয়েকে এক্ষুণি ওর মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিবি। এই মেয়ে খুবই বিপজ্জনক। মা খুব চেষ্টা করে যাচ্ছিল বাবাকে সামলাতে। বাবা খুব রেগে আছে। এত আদর যত্নে থাকার পর যদি পালিয়ে যায় তাহলে এদেরকে রাখা তো দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পোষার মত হয়ে গেল। বাবার হৈ চৈ তে আসমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ও কুঁকড়ে থাকে। ওর জন্য আমার খুব মায়া হয়। বাবা চলে যাওয়ার পর আসমা আবার আমার সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করে।
সন্ধ্যার পর ফাহিম বাসায় এসে বলল, জানতে পারলে কিছু?
মাথা নেড়ে বোঝাই, না।
রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আসমার বিছানার পাশে গিয়ে বসি। আসমা বোধহয় জেগেই ছিল। আসমা বলল, মামী আমাকে কি আর কাজে রাখবেন না? আমি আসমার কথার জবাব না দিয়ে বললাম, তুই শুধু আমাকে সত্যি কথাটা বল, তুই কোথায় গিয়েছিস? কার সঙ্গে গিয়েছিস? কেন গিয়েছিস? গেলিই যদি আবার ফিরে আসলি কেন? আমি তোকে কিচ্ছু বলব না। শুধু মিথ্যা কিছু বলিস না।
আসমা যা বলল, শুনে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে।
ও ওর গায়ের জামাটা উপরের দিকে উঠিয়ে আমাকে কিছু দগদগে ঘা এর চিহ্ন দেখায়।
ও নাকি ময়লা ফেলতে যাওয়ার সময় মোবাইলটা নিয়ে গিয়েছিল মোবাইলে কার্ড রিচার্জ করার জন্য। হঠাৎ করে পেছন থেকে কেউ তার মুখ চেপে ধরেছে। এরপর সে কোথায় ছিল, কিভাবে ছিল কিছুই জানে না। হঠাৎ হঠাৎ ঘুম ভাংগলে মনে হতো শরীরটাকে কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে। সে যে কারো সাথে যোগাযোগ করবে সে উপায় ছিল না, কারণ তার মোবাইলটা কে নিয়েছে বা কোথায় আছে সে জানত না। আর তার তো কারো নাম্বারও মুখস্থ ছিল না। গতকাল সে নিজেকে খূঁজে পায় বটতলী ষ্টেশনের পাশে একটা নালার কাছে। বটতলী ষ্টেশনটা তার খুব চেনা। মা-খালাদের সাথে সে ট্রেনে করে এখানেই নামত।ষ্টেশনে নাকি কার থেকে হাত পেয়ে পঞ্চাশটা টাকা নিয়েছে। সেই টাকা দিয়েই রিকশা করে এই ভোরে বাসায় এসেছে।
বাইরে কোথাও আলো জ্বলছিল। সেই আলোর ছায়া এসে পড়ে আসমার বিছানায়। সেই আবছা আলোতে আমি আসমার মুখের দিকে তাকানোর চেষ্টা করি।
আসমার শরীরের দগদগে ঘা গুলো আমাকে খুব অস্থির করে দেয়। আমার ভেতরটাতে কেমন যেন একটা যন্ত্রণা হতে থাকে। আমার ইচ্ছে করে আসমাকে বুকে জড়িয়ে কতক্ষণ হাউমাউ করে কাঁদি। নিজেকে আমার খুব তুচ্ছ মনে হয়। মনে হয় নর্দমার কীট। কারণ গত চারদিনে আমার একবারের জন্যও মাথায় আসেনি এই মেয়েটারও তো কোনো বিপদ হতে পারে। একবারও তো মনে হয়নি সে নিশ্চয়ই ভয়ংকর কোনো বিপদে পড়েছে। অথচ তার মা কিন্তু ঠিকই বলেছিল, আফা আমার মাইয়াডার কোনো বিপদ হয় নাই তো!
সারাটা রাত আমি একটা ফোঁটা ঘুমাতে পারিনি। নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিলাম না কিছুতেই। বারান্দায় পায়চারি করতে করতে আর নিজের আদালতে নিজের বিচার করতে করতেই রাত যেন কখন ভোর হয়ে গেল। ফাহিম হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠে আমাকে বারান্দায় দেখে বলল, কি হয়েছে তোমার? সারা রাত ঘুমাও নি? চেহারা এমন ফুলে আছে কেন?
আমি আবেগে চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। বারান্দায় বসেই ফাহিমকে আসমার কথাগুলো বলি। শুনে ফাহিমও কিছুটা নির্জীব হয়ে থাকে।
পরদিন সকাল বেলা আমি অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। আমার শ্বাশুড়ি এসে খুব বিরক্তি বলল, বৌমা, তুমি আসমার কি ব্যবস্থা করলে? এই মেয়েকে কিন্তু আর বিশ্বাস করা যাবে না। তুমি কাউকে বলো একটা মানুষ খূঁজে দিতে।
আমি বলি, আচ্ছা ঠিক আছে মা। আমাকে একটু ভাবতে দিন।
বুকের ভেতরে ভারী পাথর চেপে থাকে আমার। আসমার মুখের দিকে তাকাতে পারি না। অফিসে যাওয়ার সময় ইলিনকে আসমার কোলে দিয়ে বললাম, মা আর ইলিনের দিকে খেয়াল রাখিস। মা কিছু বললে রাগ করিস না।
অনেকদিন পর অফিসে আসায় কাজের বেশ চাপ ছিল। এর মধ্যে সবাই আসমার খবর নিল।কিভাবে যেন পুরা অফিসে আসমার হারিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে গেল। লাঞ্চের পর আমি মহুয়াকে ফোন দিয়ে আসমার ফিরে আসার খবর জানালাম। আসমার সাথে ঘটে যাওয়া নির্মমতার কথাও বললাম। শুনে মহুয়া বলল, তোর এই আসমা তোকে পড়ে ফেলেছে। সে তোকে সিম্পলি ধোঁকা দিচ্ছে। এমন কিছু ঘটার পর সে আবার এত স্বাভাবিক ভাবে তোর কাছে চলে আসল কোনো ভয়-ভীতি সংকোচ ছাড়া!! হয় এই মেয়ে যে ছেলের ফাঁদে পড়ে পালিয়েছে সেই ছেলে এই মেয়ের টাকা পয়সা সব হাতিয়ে নিয়েছে, অথবা এই মেয়ে অন্য কারো পরামর্শে কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়ে এসেছে।মনে রাখবি, ধনুক থেকে তীর একবার বেরিয়ে সেই তীর কিন্তু আর ফিরে আসে না।
আমি মহুয়ার কথা শুনে কিছুটা দ্বিধায় পড়ে যাই। মহুয়াকে বলি, ওর শরীরের ওই দগদগে ঘা গুলো!! ওগুলো তো মিথ্যা নয়।
মহুয়া হো হো করে হেসে বলল, প্রতিদিন কোর্ট বিল্ডিং এ এরকম মামলা না হলেও কয়েক গন্ডা নিষ্পত্তি হয় আবার কয়েক গন্ডা শুরু হয়। এগুলো খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আসমা মেয়েটা তোকে খুব ভালো রিড করতে পেরেছে। সে হয়তো খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছে তুই ওর উপর অনেকখানি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিস। আসলে এটা এই ক্লাসটারই প্রব্লেম। তুই ইলিনকে সাবধানে রাখিস। কখন না আবার ইলিনকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায়!
মহুয়ার সাথে কথা বলে আমার মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল। আসমাকে অবিশ্বাস করতে কিছুতেই আমার মন সায় দিচ্ছে না। ওর শরীরের দগদগে ঘা গুলো আমার চোখের সামনে ভাসছে।
ফাহিম অফিস থেকে ফেরার পর মহুয়ার কথা গুলো বলছিলাম। বলতে বলতে একটা সময় আসমার জন্য ভালোবাসায় আমার চোখে পানি চলে এল। ফাহিম বলল, তোমার যদি মনে হয় আসমা সত্যি বলছে তাহলে তুমি যা ঠিক মনে করছ তাই করো।
ফাহিমের কথায় আমার প্রশান্তি লাগে। কিন্তু মহুয়ার শেষ কথাটা আবার মনের ভেতরে অস্বস্তি তৈরি করে। আমার কিছুই ভালো লাগে না। একটা ঢেউ ভাঙ্গা অস্থিরতায় ডুবে থাকি আমি।