উডি এলেনের দুইটা ফিলিম । আবু তাহের তারেক
প্রকাশিত হয়েছে : 30 September 2016, 11:13 pm, | ২৯৯৮ বার পঠিত

উডি এলেন প্রচুর ফিল্ম বানাইছেন। এত্তগুলা ফিল্ম দেইখা, উনারে লইয়া আলাপ করা বিশাল সময়ের কাম। আমি কয়েকটা ফিল্ম দেখছি উনার। এর সবগুলা যে ভালো লাগছে, এমনও না। আসলে, একজন নির্মাতা- যতই প্রলিফিক হউক উনার ক্যারিয়ার, খুব বেশী মাস্টারপিস তো আর বানাইতে পারেন না, না?
যে কয়েকটা দেখছি, খেয়াল করলাম- উডি এলেনের প্রিয় কিছু থিম আছে, যেগুলা প্রায় প্রত্যেকটা ফিল্মেই ঘুইরা ফিইরা আসে। তো, আমার মনে মিডনাইট ইন প্যারিস আর ভিকি ক্রিস্টিনা বার্সেলোনার দাগ কাটছে। সেই সূত্রে, এই দুই ফিল্ম নিয়াই আলাপ।
মজার ব্যাপার হইল, দুইটা ফিল্মই আর্টরে কেন্দ্র কইরা আগায়। সেই হিসাবে, আর্ট আর আর্টিস্টের জীবনও আমরা পাই এই দুই চলচ্চিত্রে।
মিডনাইট ইন প্যারিস ফিল্মের নায়ক, মাঝরাতে প্যারিস শহরের অতীত শিল্পের জগতে ঢুইকা পড়ে। তো, নায়ক প্যারিসের পুরাকালে মাঝরাতেই ঢুকে কেন? আর আমরা তো দেখি- দুনিয়ায় যত অঘটন ঘটে, তার সবই প্রায় রাইতে ঘটে। রাত্রির মনেহয় মাইনষরে মাতাল কইরা দিবার মত তাকত আছে।
ঘটনা হইল, আমাদের নায়ক যিনি আবার উপন্যাসও লিখছেন একটা; তিনি ঘোর মধ্যযামে গাড়ীযোগে অতীতের প্যারিসে চইলা যান।
দেখবার মত বিষয় হইল, উঠতি লেখক আমরার এই নায়কের বাগদত্তাও আছে। এই বাগদত্তা কিন্তু লেখকের লগে গাড়ীযোগে অতীতে যায় না। লেখকও এই মাইয়ার না যাওনরে পাত্তা দেয় না।
লেখকের নাম হইল জিল আর তার বাগদত্তার নাম ইনেজ।
জিল রাইত হইলেই, বেরিয়ে পড়ে। আর রাত দুপুরে, একটা গাড়ি তারে গত শতাব্দির বিশের দশকে নিয়া যায়। সেখানে জিল আশ্চর্য সহকারে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে সহ সেই সময়ের প্যারিসের নামকরা আর্টিস্টদের লগে মোলাকাত করে।
ভরা যুবতী ইনেজও ঘরে থাকে না কিন্তু। সে তার এক সিউডো ইন্টেলেকচুয়াল বন্ধুর লগে নাচতে বেরয়। মনে রাখবার বিষয় হইল, এই সিউডো ইন্টেলেকচুয়ালের কিন্তু নিজের বউও আছে । বাট ইনেজের লগে নাইচা নাইচা, ইনেজ আর ওই ইন্টেলেকচুয়ালের হইয়া যায় প্রেম!
স্বভাবত ঘরে প্রেমিকা রাইখা গেলে, যে কারো মাথায় প্রেমিকার গতিবিধি, মুড ইত্যাদি কাজ করে। স্ক্রুটিনি করে। আর জিল এমন যে, সে বুঝতেই পারে না তার বাগদত্তা এতদূর আগাইছে। একপর্যায়ে তাদের ছাড়াছাড়িও হয় অবশ্য।
আমরা- শিল্প আর নারী, শিল্পীর এই দুই আরাধ্য নিয়া যদি ভাবি, কেমন হয়? শিল্প তো শিল্পীর কাছ থিকা পুরা একটা জীবন দাবি কইরা বসে। জেনুইন শিল্পীর কাছে যদি নারী আর শিল্প- এই দুইটা অপশন দেওয়া থাকে, সে তো শিল্পরেই চাইব, মনে হয়।
তো, শিল্প কি শিল্পীর বাস্তবিক দেখার চোখরে একটু ভোতা কইরা দেয়? আর অবাস্তব চোখরে দেয় শানাইয়া? বাস্তবের চোখরে ভোতা না করলে তো জিল ইনেজের পরিবর্তন বুঝতে পারত।
দেখেন অবস্থা, ইনেজ তার প্রেমিক থাকা স্বত্তেও ইন্টলেকচুয়ালের লগে চইলা যায়। আর ইন্টলেকচুয়াল, তার বউ থাকার পরেও; ইনেজের প্রেমে পড়ে। সমগ্র পশ্চিমেই মড়কের মত প্রেমে পড়া আর সংসার ভাঙার উন্মত্ততা। উডি এলেনের সিনেমার বৃহত একটা থিমও এইটা। ভাঙা গড়ার এই মিনিংলেস উন্দুর দৌড় থিকা, জিল যে নিজেরে শিল্পের কাছে শপলো, এর কোন মিংনিং আমরা করতে পারি?
এদিকে, ভিকি ক্রিস্টিনা বার্সেলোনাতে তিন মাইয়া পইড়া যায় এক আর্টিস্টের প্রেমে!
আর্টিস্ট, জুয়ানের বউ হইল মারিয়া। মারিয়ার লগে জুয়ানের ছাড়াছাড়ি। এখন, জুয়ান দুই বান্ধবি ভিকি আর ক্রিস্টিনারে আরেক শহরে লইয়া যায় শুইবার ধান্ধায়!

43107, PARIS, FRANCE – Thursday July 29 2010. Owen Wilson and Rachel McAdams on the set Woody Allen’s new film “Midnight in Paris” – a romantic period comedy which is set for release in 2011.-**UK & NORTH AMERICAN USE ONLY** Photograph: PacificCoastNews.com**FEE MUST BE AGREED PRIOR TO USAGE** **E-TABLET/IPAD & MOBILE PHONE APP PUBLISHING REQUIRES ADDITIONAL FEES** UK OFFICE:+44 131 557 7760/7761 US OFFICE:1 310 261 9676
এদিকে ভিকির কিন্তু বয়ফ্রেন্ড আছে। হইলে কি হইব, ভিকি জুয়ানের লগে এক মাতাল রাত্তিরে মউজ করে। পবিত্রমনা ভিকি তার প্রেমিকের লগে শাদি করবার পরও জুয়ানের লগের একরাত্রি ভুলবার পারে না।
ভিকি যে বিয়ার পরেও জুয়ানের লগে শুইবার স্মৃতি ভুলবার না পারে- এইটা কি পাপবোধের কারণে? না জুয়ানের প্রতি তার মনোদৈহিক টানের কারণে?
জুয়ান এর ভিত্রে অবশ্য ক্রিস্টিনার লগে ঘুমাইয়া টুমাইয়া, তাইরে বিয়াও করছে। এখন হইছে কি, জুয়ানের আগের তরফের বউ মারিয়া আবার উদয় হইছে। জুয়ান- মারিয়া আর ক্রিস্টিনা, দুইটারেই রাখে ঘরে।
বাট, ক্রিস্টিনা কেনে মারিয়া আসবার পরও জুয়ানের সংসারে থাকল? আর, মারিয়াই বা কেনে আরেকটা মাইয়া লইয়া স্বামীর ঘরে থাকবার চাইল?
মারিয়া আর জুয়ান দুইজনেইই আর্টিস্ট। মারিয়া বলে কি, জুয়ান নাকি মারিয়ার আর্ট নকল কইরা; মারিয়ার শিল্পীস্বত্তারে ফতুর কইরা দিছে। এর লাগি সে হাহাকার করে। মারিয়া যে জুয়ানরে ছাইড়া দিয়াও, আবার তার ঘরে আইলো, এইটা কি প্রেমের লাগি, না তার চুরি হয়ে যাওয়া শিল্পীস্বত্তার কাছে যাইবার লাগি?
এদিকে, মারিয়া আর ক্রিস্টিনাও দেহ বিনিময় করে। জুয়ান তা এলাও ও করে। তাইলে শিল্পী জুয়ানের কি এই দুই মাইয়ার কারো লাগিই প্রেম নাই? শিল্প কি আমরারে মানবের তরে প্রেমহীন আরো কোন শিল্পপ্রেমের দিকে লইয়া যায়?
তো জুয়ানের প্রেমেই পড়ে কেনে এত এত মাইয়া? সে আর্টিস্ট বইলা? জুয়ানের লগে ইউরোপিদিসের বাক্কাই নাটকের দিওনিসাস দেবতার কী মিল! দিওননিসাস খামখেয়ালি। আর তার প্রেমে পড়তে আছে ঝাঁকে ঝাঁকে মাইয়ার দল।
একপর্যায়ে ক্রিস্টিনা জুয়ান রে ছাইড়া যায়। মারিয়াও চইলা যায়।
তখন জুয়ান আর ভিকি আবারো কাছে আসে। ভিকি তার স্বামিরে ফাকি দিয়া যখন জুয়ানের লগে শুইবার যায়, তখন আবারো আসে মারিয়া; জুয়ান রে মারবার লাগি।
তিন তিনটা মাইয়া জুয়ানরে দেহ দিয়া, মন দিয়া নিজেদের জীবনরে জ্বালাইয়া পুড়াইয়া দিতেছে। জুয়ানের লোমও কিন্তু নড়তেছেনা এতে। বিষাদ কি তাইলে মাইয়ালোকি কায়কারবার? পুরুষের বিকার নাই কোন?
দেবতা দিওনিসাস বা আর্টিস্ট জুয়ানের দেবতুল্য উপস্থাপন সম্ভব হইছে এইগুলার কাহিনিকার পুরুষ বইলা?
আমরা আবারো উডি এলেনের প্রিয় থিম সেক্স এর মুখোমুখি হইব এই ফিল্মে। বিয়ার আগে, বিয়া কইরা; বা বিয়ার পরে, পরপুরুষের লগে সেক্স হইতেই আছে। সেক্সের লাগি সংসার ভাঙতে আছে। ভিকির সংসারে আগুন লাগছে। ক্রিস্টিনা আর মারিয়াও চইলা গেছে জুয়ানরে ছাইড়া। এদিকে এই সিনেমার আরেকটা চরিত্র জুড। সেও পরকীয়া করতেছে।
এই যে পশ্চিমের ঘরে ঘরে সেক্সের আগুন, এতে তারা শান্তি পায় কোথাও?
উডি এলেনের এক ফিল্মে উনি বলতেছেন ভালোবাসাই একমাত্র ভরসা মানবজাতীর। বলতেছেন, প্লাটো বলেন আর যেই বলেন- কারো কোন জ্ঞানই মিনিং নিয়া আসে না। এদিকে, খোদাও নাই। তারে কোথায় খুঁজবেন? ইংমার বার্গম্যানে আমরা খোদারে তলব করছি। উত্তর তো মিলে নাই কোন।
তাই মিনিংয়ের খুঁজে উ. এলেন সেক্স আর ভালোবাসারে এক্সপ্লোর করলেন। তিনি জানেন, সেক্স হইল এমন কিছু; যা মানুষরে ড্রাইভ করে।
কিন্তু সেক্স আর ভালোবাসা কি এক? আর, যে ভালোবাসা উ. এলেন আরাধ্য মনে করছেন, সে ভালবাসাই বা কোথায়? ভিকি ক্রিস্টিনা ফিল্মে কোন ব্যাপারটারে আমরা ভালবাসা বলব?
এদিকে, লারস ভন ট্রায়ারের নিম্ফোম্যানিয়াক ফিল্মে আমরা সেক্স আর ভালোবাসার মুখোমুখি হইব আরেকবার। ওই ফিল্মে দেখি, ভালোবাসাও নিরপরাধ না। প্রেমের কথা বইলা কত কত অন্যায় ঘটতে আছে জগতে।
তাইলে, শান্তি কি নাই কোথাও? কোন মিনিংই নাই কিছুর?
উডি এলেনের ফিল্মও এমন- আমাদের বিশ্ববাস্তবতার মত। কোন ডাইরেক্ট মিনিং বের করবার উপায়ই নাই তার ফিল্ম থিকা। অথচ কেমন সহজ ফিল্মের কাহিনীগুলা!