পাওলো সরেন্তিনোর ইয়োথ । আবু তাহের তারেক
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১০:২৩ অপরাহ্ণ, | ২৮৩২ বার পঠিত
হইছে কি, কিছু ফিল্ম আছে; পয়লা দেইখা তেমন ফিলিংস তৈরী হয় না। বাট, যত সময় যায়; তত ওই ফিল্মের ভাবনাগুলা মাথায় ঢুকতে থাকে। পাওলো সরেন্তিনোর ইয়োথ এইরকম একটা ফিল্ম।
ইয়োথ দেখবার সময় তো কিছুটা বিরক্তই ছিলাম। এত হাইপ একটা ফিল্ম নিয়া, পুরস্কার টুরস্কার; আমি তো বেশীই উচ্ছাকাংখী ছিলাম। এইরকম আরেকটা ফিল্ম দেখছি সম্প্রতি, চাইনিজ নির্মাতা ইয়াং ইমুর- টু লিভ।
ইয়োথ আর টু লিভ, যত দিন যাইতেছে; তত মজার হইয়া উঠতেছে, আমার স্মৃতিতে।
ইয়োথ দেখতে গিয়া বিরক্তি লাগছিল। কারণ, বকার বকার বেশি এই ফিল্মে। কিছু বিচ্ছিন্ন এক্টিং আর খালি ইন্টেলেকচুয়াল কথাবার্তা। এইরকম কথাবার্তাময় উপন্যাস হইল গোরা। তো গেয়র্গ লুকাচ গোরা পইড়া বলছিলেন, ইন্ডিয়ার লোকরা কি কাম কাজ করে না, খালি কথাই কয়!
এইরকম কথাবার্তাময় শিল্পকর্মের প্রব্লেম হইল, উনারা বৈচিত্রময় হন না। সরেন্তিনোর ইয়োথ দেইখা, পর্তুগিজ ফিল্মমেকার মানুয়েল দি অলিভেইরার কথাও মনে পড়ল। কারণ উনার ফিল্মেও কথাবার্তা বেশী, একশন কম। একশন কম হইলে, লোকেশনের বৈচিত্র থাকে না। যদিও অলিভেইরার দীর্ঘ ফিল্ম ‘ইব্রাহিম ভ্যালি’ ভালই লাগছে।
তো, ইয়োথ সিনেমার মনোটনাসনেস আর একশনের কঞ্জুসী ভুইলা, একটু ডিপে যাইতে পারলে; আমরা খেয়াল করব- ইয়োথে একটা দুইটা কাহিনি না, অনেকটা কাহিনীমুখরে পেইস্ট কইরা; একটা কাছাকাছি মিনিংয়ের দিকে যাইতে চাইছেন নির্মাতা সরেন্তিনো। ফলে, দর্শক বা রিডারের; নিজের মত কইরা ফিল্ম বুঝবার অপশন থাকে। আর এইখান থিকাই, ইয়োথ ফিল্মরে ভালো লাগা শুরু হইব আপনার!
ইয়োথ কি যৌবনের গান গাইছে, যেমন নজরুল গাইছিলেন? দৃশ্যত এরকম ই মনে হয়। বাট ফিল্ম যেহেতু, নজরুলের প্রবন্ধ থিকা সে তো ডিপ একটু হইব ই।
যাই হোক, ইয়োথ ফিল্মের একটা বড় শক্তি হইল, সিনেমার আলগা আলগা, আনরিলেটেড শটগুলা একেকরকম চিন্তার দুয়ার খুইলা দেয়।
সিনেমায় হিটলারের আগমন যেমন থ্রিলিং, ভাবনার যায়গা থিকা; তেমন শক্তিশালীও। সিনেমার এক দৃশ্যে হিটলার বলে যে আপনারে বাইচা থাকবার লাগি একটা উপায় বাইছা নিতে হইব। সে ডিজায়ার নিছে। তো, হিটলারের মতে- মানুষ হয় ডিজায়ার নেয়, নয়ত হরর নেয়। যারা হরর নেয়- হেরা ভিতু; একটিভ লোক না। এখন, আপনে ডিজায়ার চয়েস করলে, নৈতিকতার দিক দিয়া যতই সবল আর দুর্বল হউক আপনার ডিজায়ার; তা তো আপনারে প্রকাশ করতেই হইব। না?
যেমন, ইদানিং অনেকে নিজে নিজেরে বুদ্ধিজিবী দাবি করতেছেন। এতে, বাকি অনেকে হাসি-তামশা-আপত্তি করতেছেন। আমার মনে হয়, এই হাশি তামাশার ছোটলোকি থাকি, আপনার নিজেরে প্রকাশের ছোটলোকি ডিজায়ারই বরং অনেক ভালো।
এইরকম, অনেক আলগা আলগা ভাবনার ঝলক ইয়োথ ফিল্ম আপনারে দিব।
ফিল্মের একপর্যায়ে আমরা দেখি, ডাক্তার বৃদ্ধ শিল্পীরে বলতেছে যে তিনি এখন টগবগে ঘোড়ার মত সুস্থ হইয়া উঠছেন। মানে, বৃদ্ধ বয়সেও; চাইলে যৌবন নিয়া থাকা যায়- এইরকম কিছু?
বাট, এই সিনেমা আমার মইদ্যে যৌবনের স্পিরিট দেওন থিকা বরং হাহাকার আর বিষাদ তৈরী করছে বেশী। এই যে, দুই বৃদ্ধ আর্টিস্ট বন্ধুর সামনেই যখন পুরা উদাম হইয়া জলকেলিতে নামে মিস ইউনিভার্স! দুই বুইড়া অথর্বের সামনে, মিস ইউনিভার্স তার যইবন নিয়া খেলা করে; কেন?
অথবা, যে বুইড়া আত্মহত্যা করে, সে তো বিখ্যাত নির্মাতা ছিল; সে কেন মরতে যায়? যইবন নাই বইলাই কি, তার নিজ হাতে গড়া নায়িকা তারে রিজেক্ট করল?
আবার ধরেন, যে মেয়ে মাসাজ করে বৃদ্ধ শিল্পীরে; তারে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি সহ বার বার দেখায় কেন ফিল্মে? অথবা যে কচি মাইয়া দেহ ব্যাবসা করে, তারেও তো বিভিন্নভাবে দেখতে পাই আমরা।
তো, আমরা কি এইভাবে ভাবতে পারি, যে- ও মাসাজ করা মাইয়া, তুমি যে এই ডিগা যইবন মাসাজ কইরা আর বোবা নৃত্য কইরা পাস কইরা দিতাছ, যেমন দেহব্যাবসায়ী কচি মাইয়াটাও, যইবন ঢাইলা দিতাছে দেহব্যাবসায়; তোমাদের যইবন যে ওই বুইড়াদের মত একদিন ফুরাইয়া যাইব রে।..
আর মমতাজ তো কইছেন ই – যইবন একটা গোল্ডলিফ সিগারেট।…..
ইয়োথ সিনেমা আমার মইদ্যে বিষাদই জাগায় বরং।..