নির্বাচিত কবিতায় সরদার ফারুক, শব্দে আঁকা সময়ের মুখ । কালের লিখন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ আগস্ট ২০১৬, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ, | ৩০৪২ বার পঠিত
নির্বাচিত কবিতা এমনিতেই সারের সার। সেখানে যদি কবিতাগুলো সু-নির্বাচিত হয় তাহলে তো কথাই নেই। সাধারণত একজন কবি তার সুদীর্ঘ কাব্যজীবনের উৎকৃষ্ট কবিতাগুলো উপস্থাপন করেন তাঁর নির্বাচিত কবিতায়। বাংলাসাহিত্যের প্রতিষ্ঠিত প্রায় সকল কবির নির্বাচিত কবিতা বা কবিতাসমগ্রে মূলত সঞ্চিত হয়েছে মহাকালের পৃষ্ঠায় লিখিত বাণীবদ্ধ চেতনার নির্যাস। কবিতা বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়, কবিতা একটা নির্দিষ্ট ভাষাগোষ্ঠী বা সমগ্র মানুষের বোধের খোরাক। কিছু কল্পনাপ্রবণ সৃষ্টিশীল মানুষ যা রচনা করে থাকেন। কবিতা সাথে সাথে জনপ্রিয় অথবা লোকপ্রিয় হবার কিছু নয়, কবিতার সফলতা বিফলতা, বর্জন বা গ্রহণযোগ্যতা সময়ের হাতে। এরকম অসংখ্য উপমা আছে যে, জীবদ্দশায় যার কবিতা খুব বেশী পাঠ হয়নি, মৃত্যু পরবর্তী আরও অধিক সময় পরে তাঁর কবিতাই দিক নির্দেশনা দিচ্ছে মানুষের যাপিত জীবনবোধে। আবার এরকমও আছে, জীবদ্দশায় কোনো কবি হয়তো খ্যাতির শিখরে, কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময়কাল পরে তাঁর লেখা পাঠকের বোধে রোদ ছড়াতে পারছে না। ছোট্ট করে আমরা একটা অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছতেই পারি— কবিতা সময়ের নান্দনিক ছাপচিত্র এবং সময়ই কবিতার একনিষ্ঠ মুল্যায়ক।
সম্প্রতি পড়লাম কবি সরদার ফারুক এর ‘নির্বাচিত কবিতা’। পঁয়ত্রিশ বছরের দীর্ঘ কবিতা জীবনে প্রকাশিত ৮ টি বইয়ের নির্বাচিত কবিতা স্থান পেয়েছে এই বইটিতে, এছাড়াও আছে কিছু অগ্রন্থিত কবিতাও। ‘নির্বাচিত কবিতা’ বইয়ের ঋদ্ধ পরিবেশনায় যেসব কবিতাগ্রন্থ সহায়ক ভূমিকা রেখেছে তা হলো— ‘আনন্দ কোথায় তুমি’, ‘পড়ে আছে সমুদ্র গর্জন’, ‘দীপালি অপেরা’, ‘উন্মাদ ভূগোল’, ‘ও সুদূর বীজতলা, মঠের গম্বুজ’, ‘দূরের জংশন’, ‘অন্যদের তর্কে ঢুকে পড়ি’, ও ‘লিলিথ’(কাব্য নাটিকা)। ১৪৪ পৃষ্ঠার বইটির দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ করেছেন তৌহিন হাসান। ৩০০ টাকা মূল্যের বইটি প্রকাশ করেছে সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা— অনুপ্রাণন প্রকাশন।
কবি সরদার ফারুক তাঁর নির্বাচিত কবিতা বইটি উৎসর্গ করেছেন— ভূতলবাসী কবিদের…। কবিতার পাঠকমাত্রই জানা আছে, কবিতার কোনো বাঁধাধরা ব্যাখ্যা হয়না, অনুবাদ হয়না সকল অনুভবেরও। প্রশ্ন আসতে পারে- কেন তবে এই লেখা? —এই লেখা লিখছি মূলত একজন কবিতা পাঠকের অপার মুগ্ধতা থেকে। ভালোবাসার দায়বদ্ধতা আর একনিষ্ঠ কাব্যপ্রেম থেকে। আমি একটা ভালো বই পড়েছি, পাঠপরবর্তী আমার প্রতিক্রিয়া পড়ে যদি অন্যকোনো কাব্যপ্রেমী বইটি সম্পর্কে আগ্রহী হয় এবং পাঠ করে আমার চেয়েও বেশী তৃপ্তি পায় তবেই আমার এই লেখার সার্থকতা। এই লেখা কোন সাহিত্য সমালোচনা নয় বরং পাঠালোচনা শব্দটি এখানে অধিক যুক্তিযুক্ত।
দীর্ঘ সময় নিয়ে পড়া কবি সরদার ফারুক এর নির্বাচিত কবিতার সকল কবিতা নিয়ে নিজের মুগ্ধতা প্রকাশ করতে গেলে হাজার পৃষ্ঠার বই হতে বাধ্য। এক একটি কবিতার একটি দু’টি পঙক্তি ধরেও লিখে ফেলা যায় প্রমাণ সাইজের একটা পুস্তিকা। চেষ্টা থাকবে নির্বাচিত কবিতা হতে কিছু কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে নিজের মুগ্ধতা আর কবির কাব্যশৈলীর কিছুটা রূপরেখা প্রণয়ন করার।
আনন্দ কোথায় তুমি কাব্যগ্রন্থের ‘মানুষ’ শিরোনামের কবিতাটি আমরা পড়তে পারি—
এইভাবে হয়ে ওঠো, হয়ে ওঠো নিজের ভেতরে
বেড়ে ওঠো রক্তবীজ, অবাঞ্চিত ভ্রূণ
ফুটে ওঠো অনায়াসে কিশোরীর গোপন কোরকএইভাবে শিখে নাও শরীরের নিভৃত জ্যামিতি
শিকারীর নিবিড় কৌশল
ভ্রমরের চৌর্যকলা আর
পাষণ্ডের অবিবেকী ক্রীড়া
এইভাবে হয়ে ওঠো, হয়ে ওঠো ক্রমশ মানুষ!
রক্তবীজে মাখামাখি হয়ে অবাঞ্চিত ভ্রূণ অধ্যায় পেরিয়ে কিশোরীর গোপন কোরকে মানবফল হয়ে ফুটে ওঠা। এরপর শরীরের নিভৃত জ্যামিতি শিখে আবারও সেই একই চৌর্যকলা বা অবিবেকী ক্রীড়ায় মত্ত হওয়া, যেন মানুষ হয়ে ওঠা একটা ধাবমান চক্র। কবিতাটি পুনঃপাঠে এর আবেদন আরও স্পষ্ট হতে থাকে। এ যেন সীমার মাঝে অসীমের কলরব। অক্ষরবৃত্তের সাজানো শিল্প, একজন মানুষের সমূদয় জীবনচক্রের সাবলীল অনুভব।
সরদার ফারুক এর নির্বাচিত কবিতা পড়তে পড়তে একটা কথা বারবার মনে হয়েছে— এই কবির নিজস্ব একটা স্বর আছে, আছে নিজস্ব শব্দমালার বিচক্ষন প্রায়োগিকতা। হিসেবী শব্দে বেহিসেবী জীবনের যাপিতকলার সুষম চিত্রায়ন খুব সহজ কাজ নয়, এই সহজ কাজটি কবি সরদার ফারুক করে গেছেন অনুপম দক্ষতায়।
আনন্দ কোথায় তুমি কাব্যগ্রন্থের— মনু ব্রীজ, এক্সোডাস, পাথরের পাখি, নির্মলা মিশ্র, উচক্কা বয়স কবিতাগুলো বিশেষভাবে ভাবনায় দোলা দেয়, চেতনার কার্নিশে বসে শুনিয়ে যায় জীবনের ভিন্ন সুরের অন্য এক রুপায়ন। ত্রাহি সিরিজের কাব্যগুলোও অনবদ্য। মনে রাখার মতো— ‘ঘাতকেরা বড় হয়ে ওঠে’ সিরিজটাও। ‘আনন্দ কোথায় তুমি’ কাব্যগ্রন্থ থেকে
এবার আমরা ‘সজারুর অবয়বে’ কবিতাটি পড়বো—
সজারুর অবয়বে আছি
মাঝেমধ্যে উন্মাদের কাছে যাই, বুঝে নেই
রিপুর উদ্যম
কখনো কখনো দেখি মানবিক প্রয়াসের
আকীর্ণ শ্মশানে
শৃগালের আমিষ উৎসবগান গাইবার কালে কণ্ঠ চিরে গেলে
আর্তনাদ বলে মনে হয়
পারো যদি মুছে ফেলো
নিঃসঙ্গ পথের চিহ্ন, রক্তঝরা দিন
যাপিত সময়ের কাঠিন্য, হিংস্রতা আর বর্বরতা বোধযুক্ত মানুষের মনে কাঁটার মতো বিঁধে, তাই কবির উপলব্ধি সজারুর অবয়বে আছি। আবার উন্মাদের কাছে পাঠ নিচ্ছেন রিপুর উদ্যম। আর মানবিক প্রয়াসের আকীর্ণ শ্মশানে চলছে শৃগালের আমিষ উৎসব। এতসব ভয়াবহতার মধ্যেও কবি অনায়াসে উচ্চারণ করেন আশাবাদের গান, বলতে চান— মানবগান গাইতে গেলে কণ্ঠ চিরে যাবেই, চেরা কণ্ঠকে মনে হতে পারে আর্তনাদ, তাই বলে আর্তনাদ বুকে ধরে থেমে যেওনা, নিঃসঙ্গ পথের চিহ্ন মুছে দিও, মুছে দিও রক্তঝরা বিগতদিনের ক্রিয়াকল্প। কবি মাত্রই সত্যদ্রষ্টা, কবি মাত্রই অসুরের মাঝে বসেও সুরের রচয়িতা, আমরা সরদার ফারুক এর এই কবিতায় চিরকালীন সত্যের পথনির্দেশনা পাই।
কবি সরদার ফারুক এর কবিতার শরীর ঝরঝরে মেদহীন। শব্দের বাহুল্য নেই, চমকের বিশেষ প্রচেষ্টা নেই, মাঝে মাঝে মনে হতে পারে কিছুটা কাঠিন্য এসে ছুঁয়েছে কবিতার কোমলশরীর। পুনঃপাঠেই এই ভ্রান্তি দূরে চলে যায়, চোখের সামনে ভেসে ওঠে একজন পরমনিষ্ঠ শব্দপ্রেমিকের শব্দ প্রেম, প্রতিটি কবিতার প্রতিটি শব্দ সুচয়িত এবং সুচিন্তিত।
চলুন এবার সরদার ফারুক এর নির্বাচিত কবিতার ‘পড়ে আছে সমুদ্র গর্জন’ কাব্যগ্রন্থ হতে ‘মাতাল’ শিরোনামের কবিতাটি পড়ি—
মাতাল হলেই বুঝি, সব মনে আছে
রাতের সকল তারা দিনের আকাশে।
কাঁটাতারে ঘেরা
সারি সারি ক্রিসেনথিমাম
হরেকৃষ্ণ মালি বলত ‘কিসন্তিবাম’—
মধ্যিখানে ফুটে ছিল বিশাল ডালিয়া।এখনো পায়ের পাতা টলোমলো হলে
কার যেন খোপা খুলে পড়ে
আপট্রেন ছেড়ে যায় ঘুমন্ত শহর।
শব্দমাতালের সুগভীর মাতালামি আমাদের মনে করিয়ে দেয় সুস্থতার সীমারেখায় মুখোশ পড়া যে স্থানু মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের বোধের মধ্যে রোদ নেই। তাদের চেতনার ধার নেই, যখনই একজন মানুষ স্মৃতিমাতাল হবে তখনি সে দেখতে পাবে— ঘুমন্ত শহর ছেড়ে যাওয়া আপট্রেন, সুসময়ের খোঁপা খুলে এলিয়ে পড়ছে পথ থেকে পথে।
সরদার ফারুক সময়ের কবি, কোনো দশকের বিভাজনে তাঁকে আঁটকে ফেলতে আমি নারাজ। সরদার ফারুক এর কবিতা পড়তে পড়তে মনে হয়েছে, নিভৃত ধ্যানী এই শব্দঋষির ভাবনার জগত কাল পেরিয়ে মহাকালের, সীমানার বেড়াজাল পেরিয়ে সরদার ফারুক এর যাত্রা অসীমের দিকে। তাঁর বোধ সুশুদ্ধতার বলয়ে বাঁধা পরম সাচ্ছন্দতায়।
‘পড়ে আছে সমুদ্র গর্জন’ কাব্যগ্রন্থের— অবগাহন, কালের শেকল, ভাঙা হাট, কুণ্ডলী পাকানো সাপ শিরোনামের কবিতাগুলো ভাবে বিন্যাসে, সমসাময়িকতায় আর কবির নিজস্ব প্রকাশশৈলীতে দেদীপ্যমান। আমরা এবার ‘পড়ে আছে সমুদ্র গর্জন’ কাব্যগ্রন্থের নামভূমিকার কবিতাটি পড়বো।
তরল মোমের পরিচয়
কুসুমের উগ্র স্বাদ জানো,
সুড়ঙ্গ পথের বিস্মরণ?কখনো মৃতের দেহে কাফন হয়েছো,
নিশ্চল মিনার?
তবে তো তীর্থের শেষ
পড়ে আছে সমুদ্র গর্জন
সরদার ফারুক এর কবিতা কখনো অস্পষ্ট, রূপক, ইঙ্গিতময়, বিচ্ছিন্ন, কিন্তু বারবার পাঠে পাঠকমনে জন্মায় একটা গভীর কিছু জানার স্পৃহা, বারবার ধরি ধরি করেও ধরতে না পারার আকুলতা সিক্ত করে চলে আসক্ত শাব্দিক মন। পাঠকে’কে ভাবনার খোরাক দিতে কবির কার্পণ্য নাই। কবির সমূদয় কার্পণ্য শব্দের বাহুল্যে। আর এই বাহুল্যহীন ছোট ছোট কাব্যের শরীর, কবি সরদার ফারুক’কে করে তুলে অন্যসব কবিদের চেয়ে আলাদা। এখানেই কবির নিজস্বতা।
কবিতার নির্দিষ্ট প্রকরণ নেই, কবিতার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞাও নেই, তাহলে কবিতার কি আছে? কবিতার আছে মানবিক গান গাওয়ার সক্ষমতা। কবিতার আছে সুন্দরের জয়গান গাওয়ার অদম্যস্পৃহা, কবিতার আছে একটা অদ্ভুত সুরে সকল মানুষের কণ্ঠস্বর প্রকাশের সাবলীল ক্ষমতা। এই সক্ষমতার কথা বারবার মনে হয় সরদার ফারুক এর কবিতা পাঠে। এই কবির কবিতার পটভূমি বিষয়বৈচিত্রে ভরপুর, একজন প্রত্নতাত্ত্বিক যেভাবে মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে আবিষ্কার করেন অমূল্য প্রাচীন। সেভাবে কবি সরদার ফারুক একজন শব্দতাত্ত্বিক হিসেবে তুলে এনেছেন মানুষের সমূদয় ভাবনার ইতিবৃত্ত।
সরদার ফারুক এর নির্বাচিত কবিতা থেকে— ‘দীপালি অপেরা’ কাব্যগ্রন্থের ‘পনের বছর পরে’ কবিতাটি এখন আমরা পড়বো—
পনের বছর পরে ফিরে এসে দেখি
আগের মতোই সব, চায়ের দোকানে
চেনা লোকজন—
ক্যারমবোর্ডের পাশে ভিড়;
মজিদ মিয়ার চুলে কলপ লাগায়
পুরোনো নাপিতসেলুনের আয়নায় একবার দেখে নেই
নিজের চেহারা
বাঁয়ের রাস্তায় চিনিকল, ডানে গেলে
রিনিদের দোতলা দালান।
উদ্ধৃত কাব্যে আমরা পাই একজন মানুষের এক যুগেরও বেশী সময় পরে ফিরে আসার পর স্মৃতিকাতরতার পরিবর্তে একই দৃশ্যের পুনঃঘূর্ণায়ন। আমারা জানি মানুষ মাত্রই দীর্ঘদিন পরে ফিরে এলে স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠে, এ নেই, সে নেই, অমুক মারা গেছে তমুক শুধুই স্মৃতি। কিন্তু সরদার ফারুক এর এই কাব্যের স্মৃতিকাতরতা আমাদের মনে এক ভিন্ন রেখাপাত সৃষ্টি করে। পনের বছর পর ফিরে এসেও কবি দেখতে পান সব আগের মতোই আছে, চেনা লোকজন, ক্যারমবোর্ডের পাশে ভিড়, পুরনো নাপিত, সেলুনের আয়নায় নিজের পুরনো চেহারা দেখেই মনে পড়ে যায়, বায়ের রাস্তায় চিনিকল আর ডানে গেলেই রিনিদের দোতলা বাড়ি। কবিতা শেষ হতেই বুকের মধ্যে একটা শূন্যতা ভেসে ওঠে, আবার পড়তেই স্পষ্ট হয়, সব আগের মতোই আছে, তবুও ভিতরে ভিতরে কোথায় জানি তুমুল ক্ষরণ, নিদারুণ হাহাকারের গল্প। এখানেই সরদার ফারুক এর কবিতারা আমিত্ব ছেড়ে সার্বজনীন হয়ে ওঠে।
সরদার ফারুক এর কবিতার বিশেষ বৈশিষ্ট ছোট ছোট চিত্রকল্পে একটা বৃহৎ জীবনকাঠামোর পরিপূর্ণ চিত্রায়ন। কোথাও ছেঁড়াছেঁড়া চিত্রকল্প মিলেমিশে নানা রকম ভিন্নতা তৈরি করে এক আঁধারে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। দীপালি অপেরা কাব্যগ্রন্থের মোজেজার দিন, বেলি ড্যান্স, সতীর প্রাসাদ, ব্রতকথা, পড়ালেখা, প্রখর এন্টেনা, রাখাল, সাঁতার, বিবাহের রীতি, মফস্বলে, বাতাসিয়া লুপ প্রভৃতি কবিতাগুলো অসাধারণ ভাবনার সুবিন্যস্ত প্রকাশ। এবার আমরা দীপালি অপেরা কাব্যগ্রন্থের নাম ভূমিকার কবিতাটি পড়বো—
ভেসে আছে ডানাকাটা পরী,
হিমে ভেজা হারমোনিয়াম-
আহা দীপালি অপেরা, ভুলে যাওয়া সুর
সেতু পার হলে মোহনগঞ্জের হাটখড়ের গাদায় সিংহাসন,
হাতে হাতে মৃতসঞ্জীবনীগ্রীনরুমে পেইন্টের ঘ্রাণ—
শেষ রাতে রঙিন ঘাঘরা
পুরাতন জাহাজের পাল হয়ে ওড়ে।
সরদার ফারুক রচিত দীপালি অপেরা কবিতাটি আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, যখন যাত্রাগানের বিকাশ শুরু হয়। যাত্রাপালা বাংলার পুরনো সংস্কৃতির এক সোনালী অধ্যায়। কালের আবর্তনে আকাশ সংস্কৃতির ক্রমউন্নয়নে যাত্রাপালা এখন খাঁচায় বন্দী। যাত্রাগানের ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যায়— ১৯৬৯ সালে গোপালগঞ্জের ধীরেন্দ্রকুমার বাকচী চালু করেন ‘দীপালি অপেরা’। তিনি ১৯৭২ সালে ‘আদি দীপালি অপেরা’ এবং ১৯৭২ সালে স্ত্রী বনশ্রী বাকচীর সঙ্গে যৌথ মালিকানায় ‘১ নং দীপালি অপেরা’ গঠন করেন। তিনি এসময়ে ‘নব দীপালি অপেরা’ এবং ‘দীপ দীপালি অপেরা’ নামে আরও দুটি যাত্রাদল প্রতিষ্ঠা করেন।
কবি সরদার ফারুক এর কবিতায় আছে মানুষের অনুভব, যাপিত জীবনের দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ- হাসির সচিত্র অবস্থান, কবির কবিতায় আছে জীবনের বহুরৈখিক বিচিত্রতার গান। সরদার ফারুক এর কবিতায় আছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, দ্রোহ, প্রেম আর মনোগত প্রলয়ের সাতকাহন।
এবার আমরা সরদার ফারুক এর নির্বাচিত কবিতা থেকে- ‘উন্মাদ ভূগোল’ কাব্যগ্রন্থের লজিং মাস্টার কবিতাটি পড়বো—
কাচারি ঘরের তক্তপোশে
ছেঁড়াখোঁড়া বই
চেয়ারে ময়লা শার্টদুপুরে ভাতের সাথে জল রঙা ডাল
বথুয়ার শাক
মাছ শুধু জলাশয়ে থাকেমাঝে মধ্যে চিঠি আসে—
‘শরীলের যত্ন নিও বাপ’শরীরে খিদেই থাকে, নানাবিধ খিদে
উঠোনে মোরগগুলো রাজার মতন
তারে ঝোলে সালমার লাল পায়জামা
লজিং মাস্টার কবিতাটি সরদার ফারুক রচিত একটি অনবদ্য জীবনাখ্যান এর গল্প। একটা সময়ের চিত্র সুনিপুণভাবে চিত্রায়িত হয়েছে এই কবিতায়, যে সময়ে অবস্থাসম্পন্ন গৃহস্থরা তাদের সন্তানের লেখাপড়ার জন্য একজন রানিং স্টুডেন্টকে লজিং মাস্টার হিসেবে রাখতেন, সেই সময় এখন আর নেই, কিন্তু কবির কবিতায় সেই স্মৃতিময় সময়ের চিত্র উঠে এসেছে। কাচারি ঘর, ছেঁড়াখোঁড়া বই, তরতাজা এক যুবকের মনোকাঙ্ক্ষা মিলেমিশে একাকার এই কবিতায়। নানাবিধ ভাবনার খোরাক আছে এই কবিতার শরীর জুড়ে।
সরদার ফারুক এর কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে— ভাবনার বহুমুখীতা, শব্দের খিড়কী দ্বার পেরিয়ে কবি পাঠককে পৌঁছে দেন তাঁর নিজস্ব বোধের আলোকপুঞ্জের কাছে। ‘উন্মাদ ভূগোল’ কাব্যগ্রন্থের পলায়নপর্ব, আঙুরলতার পাশে, ঘন আগাছায়, ঋতু, বাগানবাড়িতে, টান, অপবাদ, ছাতা কিম্বা পানপর্ব কবিতাগুলো পাঠকমনে দাগ কেটে যাওয়ার মতো। নামভূমিকার উন্মাদ ভূগোল কবিতাটিও ভিন্নতার পূর্ণমুকুল।
এবার আমরা সরদার ফারুক এর নির্বাচিত কবিতা থেকে— ‘ও সুদূর বীজতলা, মঠের গম্বুজ’ কাব্যগ্রন্থের কিছু কবিতা পড়বো। এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলোর একক কোনো শিরোনাম নেই। ১,২,৩ ক্রমবিন্যাসে ৬২ টি ছোট বড় কাব্য স্থানপেয়েছে কাব্যগ্রন্থটিতে। প্রতিটি কবিতাই স্বীয় বৈশিষ্টে সমুজ্জ্বল। এই লেখার অবয়ব বৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও ‘ও সুদূর বীজতলা, মঠের গম্বুজ’ কাব্যগ্রন্থের কিছু কবিতা উদ্ধৃত করার লোভ সামলাতে পারছি না, চলুন কিছু কবিতা পড়ি—
ট্রাভেল-ব্যাগের গায়ে ধুলো
কতোকাল আগে টার্মিনালে
টিকেট কেটেছি?
কোর্ট-কাচারির পরে পার্ক
কিছুদূর গেলে বাকল্যান্ড বাঁধ, সারি সারি লঞ্চএকবার পকেটমারের হাতে বড় নাজেহাল
একবার ভুল করে অন্যের কেবিনে ঢুকে
বিশ্রী কেলেঙ্কারি
দূরের নৌকার থেকে কে যে কাকে ডাকে
‘সো লে মা ন, সো লে মা ন’(ও সুদূর বীজতলা, মঠের গম্বুজ/ ৬)
কবিতাটি পাঠান্তে পাঠক মনে ছেঁড়া ছেঁড়া কিছু দৃশ্যের অবতারণা হয়, আবার সব মিলিয়ে একজন মানুষের সামগ্রিক জীবন পরিভ্রমণের গল্পও এখানে বিদ্যমান, পাঠকের কানেও ভেসে আসে দূরের সেই ‘সো লে মা ন, সো লে মা ন’ ডাক। আর একটি কবিতা পড়ি এই কাব্যগ্রন্থ হতে—
দরদাম করে খেতে হতো
সস্তার হোটেলে
জুতোগুলো ছিলো বেইমান
পরীরা যখন উড়ে এসে মহল্লায়
ঝড় তুলে যেতো
আমাদের ময়লা পোশাক
লুকোতে পারি নিভুল করে ভেবে গেছি কলম্বাস হবো
(ও সুদূর বীজতলা, মঠের গম্বুজ/ ২৪)
উদ্ধৃত কবিতাটি পাঠান্তে পাঠক মনে বাস করা সেই দিকভ্রান্ত অসফল কলম্বাসের মুখ ভেসে ওঠে, মুহূর্তের জন্য সেখানে বোধকরি নিজের রূপও ভেসে ওঠে। সামান্য সময়ে কবি সরদার ফারুক গেয়ে যান অসামান্য সব সময়ের গল্প, অসামান্য সব মুহূর্তের আবাদ তাঁর কবিতার জমিন জুড়ে। এবার একই কাব্যগ্রন্থ হতে আমরা আরও একটি কবিতা পড়বো—
ধৃত অপরাধীদের মতো নিচে বসে আছো
গ্রুপফটো ,সাদাকালো ,উনিশশো সাতাত্তর সাল
বিশিষ্ট জনেরা সব পেছনে দাঁড়ানো
টাই আর চশমায় বোঝা যায়বাঁ থেকে চতুর্থ ,মাংকি ক্যাপ
হ্যাঁ উনিই ,কণিকার ছোটমামা
একবার সবার সামনে…চিঠিটা কী করে তাঁর হাতে পড়েছিলো?
(ও সুদূর বীজতলা, মঠের গম্বুজ/ ২৫)
একটি এ্যালবাম, সেখানে একটা গ্রুপছবি, আর সেই ছবির ইতিহাস আর পিছনের আখ্যান নিয়ে পরিপূর্ণ একটা বিফল প্রেমকাহিনীর মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা, ছোট ছোট শব্দের ফ্রেমে এরকম অসামান্য কাব্যভাষায় অনবদ্য কবিতা নির্মাণে সরদার ফারুক এর জুড়ি মেলা ভার। বাংলা সাহিত্যে মেদহীন কাব্য আর শব্দ ব্যাবহারে এত বেশী মিতব্যয়ীতা খুব কম কবির মধ্যেই দেখতে পাওয়া যায়। অল্প কথায়, বিশাল আর বড় ক্যানভাস আঁকা, একজন দক্ষ শব্দশিল্পীর এক অনুপম গুণের প্রকাশ। আর একটা ছোট কবিতা উদ্ধৃত করছি—
গরুর গাড়ির থেকে এক আঁটি
ধান পড়ে গেছে
পথ জুড়ে পাখিদের পিকনিকগাড়োয়ান পেছনে দেখেনি
সামনেই কালীগঙ্গা ব্রীজ(ও সুদূর বীজতলা, মঠের গম্বুজ/ ২৮)
সামান্যক’টি শব্দে নির্মিত একটা কবিতার শরীর, অথচ এখানেই ঘুমিয়ে আছে মহাকালের গান। গরুর গাড়ি থেকে এক আঁটি ধান পড়ে গেলে যে পাখিদের পিকনিক হয় এই ভাবনা শুধু সরদার ফারুক এর মতো জীবনঘেঁষা কবির পক্ষেই বলা সম্ভব। যুগযুগ ধরে বয়ে চলা সামান্য একটা ঘটনা কীভাবে কবিতা হয়ে নাড়া দিতে পারে চিন্তার চাঞ্চল্য, এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ সরদার ফারুক এর কবিতা।
পাঠক হিসেবে ‘ও সুদূর বীজতলা, মঠের গম্বুজ’ কবিতাগ্রন্থের কবিতাগুলো একটা বিশেষ অনুভবে মাখামাখি করে গেছে বোধের চৌকাঠ। আর কবি হিসেবে এই কাব্যগ্রন্থে সরদার ফারুক বারবার নিজেকে নিজেই ছাড়িয়ে গেছেন, নির্মাণ করেছেন একের পর এক কালজয়ী সব কাব্য, এই কাব্যগ্রন্থের ক্রমানুক্রমিক সবগুলো কবিতাই সুখপাঠ্য এবং বোধজাগানিয়া। আর একটা কবিতা উদ্ধৃত করে এই কাব্যগ্রন্থ থেকে বিদায় নিবো—
টাকাকড়ি ফুরিয়ে গেলেই
পাখি ধরে আনি
বেচে দেই নন্দীপুর হাটে
কিছুদিন মেঘ কিনি
শীতকালে সুলভ শিশিরগ্রাহকেরা এবারে চেয়েছে
ধুতুরা ফুলের বীজ
শতমূলী গাছের শেকড়
(ও সুদূর বীজতলা, মঠের গম্বুজ/ ৩২)
এবার আমরা সরদার ফারুক এর নির্বাচিত কবিতা থেকে— ‘দূরের জংশন’ কাব্যগ্রন্থের নাম ভূমিকার কবিতাটি পড়বো—
একদিন লিখবোই খরা আর শ্রাবণদিনের কথা
উন্মাদের বিধিলিপি,অক্ষরের অভিশাপ
ও আমার দূরের জংশন, ট্রেন কি এখনো আছে?যারা পালানোর আগে ধরা পড়েছিলো
চোখে কালি, হাতে পুরাতন স্যুটকেস
তাদের লজ্জার ভঙ্গি লিখে যাবো দীর্ঘ কবিতায়
দূরের জংশন কবিতায়, কবি সরদার ফারুক দীর্ঘকবিতায় পৃথিবীর চলমান যানে যাত্রারত, সকল যাত্রীর সমূদয় ভাবনার বিন্যাস লেখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন অবলীলায়। আমাদের শুনাতে চান জীবনের বারোয়ারী মঞ্চে মানুষের কত কতো দোদুল্যমান দোলাচল।
নির্বাচিত কবিতা পড়তে পড়তে একটা ব্যাপার খুব করে আকর্ষণ করেছে, সেটা হচ্ছে— অক্ষরবৃত্ত ছন্দের উপর কবির অসামান্য দখল। ছোট ছোট পর্ব থেকে শুরু করে ২২ মাত্রার সুদীর্ঘ পর্বেরও সজ্জিত হয়েছে কবির কবিতার শরীর। জোড় শব্দের সাথে জোড় শব্দ ও বিজোড় শব্দের সাথে আর একটা বিজোড় অথচ প্রাসঙ্গিক শব্দ চয়নে সরদার ফারুক এর দক্ষতা ঈর্ষনীয়।
‘অন্যদের তর্কে ঢুকে পড়ি’ কবি সরদার ফারুক এর একটি বহুল আলোচিত কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থের বেশ কিছু কবিতা স্থান করে নিয়েছে ‘নির্বাচিত কবিতা’ সংকলনে। এই কবিতাগ্রন্থের— পথ, বাজার, চন্দনচিকিৎসা, সিঁড়ি, পোলাপান, নাচের আখ্যান, ত্রয়ী, ইতিহাসযান, ভাষাতরু প্রভৃতি কবিতা যে কোনো কবিতাপ্রেমী পাঠকের মনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির দ্বার খোলে দিবে, জাগিয়ে তুলবে চিন্তার উৎকর্ষ আর ভাবনার পরিধি।
আমরা এবার ‘অন্যদের তর্কে ঢুকে পড়ি’ কবিতাগ্রন্থের ‘আখেরি দস্তান’ কবিতাটি পড়বো—
অক্ষরবৃত্তের কারাগার থেকে বেরিয়ে পড়েছি।
শব্দমোহ, বাক্যের পাপ।
অচল মুদ্রার মতো ছুঁড়ে ফেলি পথে—
কবিতা আমাকে কিছুই দেয়নি
শুধু অপমান কুড়িয়ে পেয়েছি। নিজেই নিজের চোখ
উপড়ে ফেলতে গিয়ে আশ্চর্য বন্দরের কাছে থেমে যাইপরিত্যক্ত জাহাজে জাহাজে ছেঁড়া পাল, নাবিকের কঙ্কাল
নারিকেলবীথি শেষ বিকেলের ছায়া নিয়ে শান্ত হয়ে আছে
বাণিজ্যের কথা অবান্তর। এ যেন গোপন সমাধিক্ষেত্র
শেষকৃত্যের পরে স্বজনেরা প্রার্থনা ভুলে ঘরে ফিরে গেছে। রাত হলে
রক্তমাখা চাঁদ ফিস্ ফিস্ করে বলে যাবে আখেরি দস্তান
শব্দপ্রেমী, ছন্দপ্রেমী, অক্ষরপ্রেমী, ভাব আর ভাষাপ্রেমী এক শব্দশ্রমিকের হৃদয়ের আকুতি সুগভীর বোধ নিয়ে উঠে এসেছে উদ্ধৃত কবিতায়। কোথাও যেন সুমধুর বিচ্ছেদের গানে বেজে যাচ্ছে করুণ বাঁশির সুর। কে না জানে— জীবন মূলত বেদনাবিধুর। মানুষ মাত্রই অভিমানী, কবিদের অভিমান ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে শব্দের কোণাকাঞ্চিতে। সরদার ফারুক এর নির্বাচিত কবিতা পড়তে পড়তে একজন পাঠক যত পৃষ্ঠা উল্টাবে, একের পর এক শব্দের কাঠামো বোধের রোদ জ্বেলে আলোকিত করে যাবে তার মননের চারপাশ, নতুন নতুন ভাবনা বিন্যাস, উপলব্ধ, স্মৃতি কিম্বা প্রীতি এসে ভিড় করবে ভাবুক মনের মনোকোঠায়।
জীবদ্দশায় একজন কবির নির্বাচিত কবিতা সংকলন নিশ্চয় বিশেষকিছু। আলোচ্য নির্বাচিত কবিতা সংকলনে সংযুক্ত হয়েছে একটি সুখপাঠ্য কাব্যনাটিকা, কাব্যপ্রেমী যে কোনো পাঠককে ‘লিলিথ’ নামের এই কাব্যনাটিকাটি দিবে পাঠ ভিন্নতার স্বাদ। কাব্যে কাব্যে একটা ভিন্ন মোহনায় নাব্য হবার সুযোগ। এছাড়াও আছে কবির অগ্রন্থিত বেশ কিছু কবিতা, যা পাঠক মনে জাগাবে বিশেষ মাধুর্য। অগ্রন্থিত কবিতার মধ্যে- রতিফল, গলিপথে, কুয়োতলা, উড়ন্ত সংসার, চোখের আড়ালে, জলের ফোঁটা প্রভৃতি কবিতা বিশেষভাগে উল্লেখযোগ্য। আমরা এবার নির্বাচিত কবিতা সংকলনে অগ্রন্থিত কবিতা হতে ‘দূরবীন’ কবিতাটি পড়বো—
অন্তরীক্ষে ঘোরে বুড়ো দূরবীন। কাচে লেগে আছে
গ্রহাণুর ধুলো, কালের সিনেমা, অতল খাদের জল
উলম্বরেখার কাছে এক পাহাড়ের নাভি
প্রসাধন ভেবে মাখে ফসিলের ছাই
ব্যাখ্যাতীত আলোর উল্লাসে
ভেসে যায় অগণিত বিচারের দিন
উদ্ধৃত কাব্য পাঠে মনে হয়— সময়ের বুড়ো দূরবীন হাতে সময়ের কবি সরদার ফারুক যাপিত জীবনের ভেসে যাওয়া অগণিত বিচার্য দিনের আচার্য হয়ে হাতে তুলে নিয়েছেন কালের কলম। যে কমল সময়ের একনিষ্ঠতা ছুঁয়ে হয়ে ওঠে দৃষ্টিমগ্ন শৈল্পিক দূরবীন। যে দূরবীনে দেখা যায় গ্রহাণুর ধুলো, কালের সিনেমা…
এই পাঠালোচনার শেষ কথা কবির কবিতা দিয়েই হোক—
মুগ্ধ হবে, এমন ভাবি না
তবু যদি চোখে পড়ে যায়
আমার নামের কাঙাল অক্ষরগুলো
সে লোভেই ঘোরাফেরা করেসারারাত পদ্য লিখে টাঙিয়ে রেখেছি
মোড়ে মোড়ে, যাত্রীবাহী ট্রেনেআর্দ্র হবে, অত আশা নেই
একবার ভুল করে পড়ো
অনাদৃত নামের বানান(কাঙাল/ দীপালি অপেরা)