বর্ষাদিনে সাংকেতিক ও অন্যান্য । আজমাঈন তূর হক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ আগস্ট ২০১৬, ৯:১৫ পূর্বাহ্ণ, | ১৮৮৮ বার পঠিত
বর্ষাদিনে সাংকেতিক
মফস্বলীয় কোমল দুপুরের
আজানের কাছে,
রং-মরে-যাওয়া ভেজা শাড়ির
ঝুলে-থাকা কৈশোর পার হয়ে
সবচে উঁচু তিনতলা ছাদের
রূপালি বৃষ্টিগন্ধ মতো
বুক-উঁচু দেয়ালের নরম শ্যাওলায়
ভেজা মুখের আভাস
এখনো ফুটে আছে।
ব্রিজের কালোতে বসে
নিচে আত্মহত্যা
জলজ পাতার ক্ষীণকম্পনে
প্রতিফলিত আধোভাঙা মেঘের সুর
সৃজনের মতো ক্লান্ত প্রাগৈতিহাসিক
এমন ভাবতে, লালপোকায় ধরা
বেগুনী মাছের গুঁতা মারা পুকুরের পারে
বর্তুল প্রবাহের ভিতর, আরো অশান্তি
সাইরেন, আরো ক্লিশে-ধরা শ্যাওলাসবুজ
নরম গ্রাম্যতার মাঝে, বর্ষার
নিউজপ্রিন্টের শহরমানচিত্র
বেয়ে রাতের কম্পন, লোহার গুমবাদ্য শুনে
আমরা হয়ে ওঠার যৌথ সবুজের ভিতর
আদিম চোখ তার লালতম স্বপ্নের
জমিন ভেঙে আসছে;
আত্মহত্যার জঙের বাস্তবে
লোহার দুঃখমতো ভাসছে
তোমার মুখ
হত্যাকল্পনা
অস্থির বিকালের পরতে প্রলেপ-জড়ানো পানি
ঘোলাটে ধুলার উপর, আরো উষ্ণ অস্থিরতায়।
নরম শব্দের নিচে আলোর ভেঙে ভেঙে একমুখী
হয়ে ওঠার ভিতর, তোমার চোখ খুলে যাচ্ছে; বিস্বাদ
দুপুরের পর কম্পিত ঝিনুকের শরীরে জাগা রাতের সমুদ্রগান,
শিশুঝাউবৃক্ষের আড়াল থেকে সহজ প্লাকিঙে হাবুডুবু
বারান্দার গ্রিলে আমের পরাগ হয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে বুকের ওঠানামা-
প্রিয়রং চাদরের ছায়াচ্ছন্নপ্রদেশে, নিদ্রাভঙ্গের দুপুর-প্রবণতা এই
উষ্ণ বিকালে মিসপ্রিন্টেড রোদের গায়ে মেঘ, জলহীন
অভিমান করে মাটির কাছাকাছি সরে ঝরে এসেছে।
একটা ঠোঁট টিপে ধরে গানঘোর
আয়নার সামনে বসে কত-না কথা ভেবে যাও
ঈষৎ শৈশবস্মৃতির আদলে, দুই দূরবর্তী কাচের গভীরে
বাতাসের তর্কে লুকানো শালিক, নির্ভয় উড়ে গেল… উড়ে গেল…
গ্রীষ্মকোলাহলে বিকালের রাস্তায়, ঝুম বাষ্পমুখরতায়
আঙুলে বিষণ্ণ ঝরে গেল
সরে গেল মিথ্যা অরগ্যাজম;
ঘুমচাদরের অতলে, দ্রুত হলো
গুঁড়ো গুঁড়ো হলুদ বাতাসে
রূপকথা দ্রুত হলো তুমুল হত্যাকল্পনা …
প্রণয়ঋতুপ্রতিবেদন
‘…But now, my lord
I deserve to know why you are so distressed’[Jocasta to Oedipus, ‘Oedipus the king’ ]
এমন বিকালের গন্ধে দৃষ্টির গভীরে নবআবিষ্কৃত আলতামিরার চিত্রময় আলো ঝরে আসে। বৃষ্টি পড়তে থাকে — স্রোত, নিষ্কাশিত। বাতাসের সাথে বাকবিনিময় করি সহসাই। শেওলাসবুজ ট্রেন — পাহাড় ভেদ করে হস্তনির্মিত বন আর দিনগুলোর ভিতর দিয়ে কত নতুন নতুন সুর তুলতে পারে! ওঠে পারস্পরিক হাসি আর আড়ালের স্পর্শখেলা। চোখের দিকে তাকানো যায় এমন বিকাল — যখন ঝড় থামে এবং পুনরায় জমে ওঠে মেঘ, মাঝবরাবর ভেঙে পড়বে বলে। ট্রেন চলে গেল — বিগত লেবুবাগানের পাশ দিয়ে — কাটালেবুর লালরঙ তোমার চোখ থেকে ওষ্ঠ বেয়ে পড়বে এমন স্বপ্নও দেখেছি অপ্রেম ছিল বলে, আরো দেখেছি এই যাতায়াত — নক্ষত্রের ক্ষীণপ্রভায়…
এই ধার্মিক শহরে — প্রতিটি মহল্লায় তার পরিচয় বাতাসে ভাসিয়ে রাখে কোনো প্রেমিক ঝালর। একটা প্রশান্ত বাস — আলো ছড়াতে আসছে তোমার দিকেই, এই আলোতেও ভেসে আছে বহু পূর্ণিমাপূর্ব মাহফিলের ধূম্রপবিত্রতা, লোবানের রক্ত। বিষণ্ণ রাস্তা-ভুল-করা সাইকেলেরও, যদি তা হয় যথেষ্ট ক্লান্ত অথচ বিদ্রোহী, স্টেশনে শৈশব অতিবাহিত তার থাকে ডায়েরি ভেজানোর মতো যথেষ্ট মেয়েলিপনা কিংবা আপাতবয়স্ক কোনো নারীকে ভালোবাসার মতো আনন্দ — সহজ উদাহরণ সহ। ব্যালকনিতে স্মিতশুভ্র আলো পড়লে পরিচিত স্তনে তোমার নিমীলিত নম্রভুরু; আজানতপ্ত মিনারে স্থির থাকে যেমন পাখি, ডানার নিচে যার থাকে পাপ আর শান্ত বিস্মৃতি
প্রেমের সহজ উপায় সন্ধানে এই নতুন শহরে ‘চুম্বন’ শব্দটি প্রচলিত হয়ে গেল; চুম্বনের ক্ষুদ্রতম একক কার্বনের আদিম রূপভেদ রূপালি হলে সবাই বোঝে এই বর্ণটি ধার করা হয়েছে ঝালরের কাছে, ঝালর — চাঁদের পর এই শহরের সবচে যোগ্য প্রেমিক। ওতপ্রোতভাবে জেগে আছি, — যে গেছে তার সন্ধানে আমরা, বর্ণহীন। একবার সমদ্রের নিকটে গেলে আর ফিরে আসা যায় না আগের মতো, সবুজ ট্রেনের চোখেও লবণ জমে যায় আর সুপেয়র অভাবে শিশুরা শুধু চকলেট চুষতে থাকে। পানিহীন চকলেট সবসময়ই মৃত্যুর এক আনন্দময় পদ্ধতি, ধাঁধায় হয়তো লুকানো থাকে হ্যামলিনের বাতাস। এই বাতাসে প্রেমিকা পার্কে প্রিয় মৃতদেহের উপর অট্টহাসির হাত দিয়ে গায় — ‘এই যুবকের আঙুলে এবং অন্যান্য সংকেতে তার মাতৃছবি, প্রেম আর অন্ধত্ব ঝরে ঝরে পড়েছিল…’
এ হলো দুর্গের দিক; যার সীমান্তে অনুপস্থিত রেলপথ। এই অন্ধকারে কখনো ছড়ায় না বেথেলহামের সোনালি আলো। খড় আর আস্তাবলের পাতার পাশে সরাইখানায় কোনো সান্ত্বনা নেই, কাঁটাঝোপের আড়ালে ঘোড়ার বিধিবদ্ধ আশ্রয় নেই। সংলগ্ন পানিতে গভীররাতে যে অবয়ব জেগে ওঠে, প্রাগৈতিহাসিক কাছিমের পিঠের মতো বাতাসে অনুপ্রাসে স্থান করে ধীরে মিশে যায় ভোরের মৃদু ভূমিকায়।
এই ধার্মিক আর ইস্কাপনের দ্বিমুখিতার লোকালয়, মেয়রের আন্ডারগ্রাউন্ডে ঘাম আর স্তুপ করে রাখা অন্তর্বাস, পানীয়বোতল টুপুটুপ শব্দে সারাদিন — সূর্যের সমস্ত পথে বিছানো কড়া চকলেট। তোমাদের বাঁশির শব্দে অম্লতার মুখ থেকে এমন বিশাল শহরে — সর্বত্র ধ্বনিত হলো চুম্বন, ভোরের গোপন আস্তাবল থেকে — অন্ধত্বের বাহিরদেয়ালে, কোনো নিষিদ্ধ আপাত-অন্ধকার ব্যালকনি থেকে, আরো প্রেমে…