পথের ব্যঞ্জনাবলি । সৈয়দ আফসার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জুলাই ২০১৬, ১২:২৮ পূর্বাহ্ণ, | ২৪৭৫ বার পঠিত
পথ নাকি দু-পায়ের ব্যঞ্জনা ডাকছে আমায়
যেখানেই থামি, অন্ধকার ঠায় দাঁড়াইয়া রয়
অপেক্ষার পাশে দাঁড়ালেই প্রত্যাগমনের ভয়
হাঁটতে-হাঁটতে ক্লান্ত পা-দুটি পথ হয়ে যায়!…
মাড়ানো পথে দাঁড়ানো বিশ্বাসে-পাতা ছিঁড়ে
মনের প্রস্তুতি নিভৃতে কাঁদে ভিতর-বাইরে
অভাবনার দিনে গোছাতে পারিনি নিজেকে
সম্পর্ক পুষে হারায়েছে জল একজোড়া চোখে
এমন রসাতল জীবন যে বুঝিনি যাত্রামুখে
নিজের ছায়াটুকুও হারায়েছি অপ্রাপ্তির দিকে
***
অপ্রাপ্তি, ক্ষত-বিক্ষত এই বুকে ঠাঁই দাও
সমুখে ঘুমিয়ো না স্মৃতি, ইশারায় দাঁড়াও
এ অমাবস্যারাতে শর্টকাট স্বপ্নে ঝাপটাও
পাখি হও, অবসন্ন দেহে নির্ভরতা পরাও
তাকিয়ে দেখো তুমিহীনা বিরহিনী নিঃসঙ্গতা
হাইডরোড থেকে কাচবাগান পর্যন্ত নীরবতা
আমি যে বিষ্যুদবার রাতে সব-ক’টি দুয়ার
খুলে বসব, হাসনাহেনা ফুলটিও মলিন আজ
ভেজা চুলের ঘ্রাণে — স্তব্ধ হৃদয়খানি স্নানাহার
শীতস্পর্শরাত্রি কেবল পাশাপাশি বসিবার
***
এ ঘ্রাণ না-ছুঁলেই দেখি দখিনের জানলায়
ভেঙে-ভেঙে পড়ি আমি পুরানা আয়নায়
তারে ধরিবার গিয়া এই ভোরবারান্দায়
কাপের ধোঁয়ায় মন পুড়ে-পুড়ে অনসূয়
এই ধুলোমাখা দু-পায়ের প্রস্তুতি প্রতিদিনের
যা-কিছু অর্জন … সবই গছিয়ে দিয়াছি তোদের
তার নীরবতায় হাতে হাত রাখি আঁধারে
অভিমানের তিরটি ছুঁড়ি মনহারা ঝড়ে
লুকায়ে দিয়াছো যৎটুকু অতৃপ্ত মনগহ্বরে
নির্মাণ করবে কী ফের দেহবিশ্রামাগারে?
***
শোনো হে শীত-পোহানো দিন, কথা যে এই :
পুরনো কল্পকাহিনি ঘিরিয়া ধরছে নিজেকেই
কাহিনিপোড়া ঘ্রাণ টেনে ধরে উড়ে-আসা ছাই
দৃষ্টির মুখোমুখি দাঁড়াইয়া থাকো — আশ্চর্য হই
দাঁড়াইয়া থাকো, ব্যাকুলা দৃষ্টি জুড়ে হাসো
আমিও পাশে দাঁড়াইয়া জমা রাখি শীতস্পর্শ
অহম-উল্লাসে চোখ দুটি শুয়েছে স্বপ্নের নিচে
তবুও আলাভোলা দু’টি চোখ নিয়ন্ত্রণ বাঁধছে
আনকোরা স্মৃতিটি ব্রতচারিণীর ছায়ার পিছে
দৃশ্যপট দেখিয়া সে-ও হাসাহাসি করে নামছে
***
একাকী উড়ছো ঐ নীল ফিতার লুকানো টানে
টানে জোড়াঠোঁটখানি হারায় হাওয়ানিশি বনে
পাখি ও ঘুড়ির মতো আমাকে উড়াও আনমনে
দূর থেকে কলকাঠি নাড়াও আগত স্বপ্নাহরণে
প্রতিটা স্বপ্নের ভেতর একটু-আধটু গল্প থাকে
আমাকে উড়াও কেন জলেস্থলে ভ্রমস্বপ্ন ফাঁকে?
সে-ও জানে ঘোরলাগা আর্তনাদের বোঝাপড়া
সঞ্চয়াদি হারায়েছি, হারায়নি দগদগে স্বপ্নরা
পুস্তকাদি সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে, নেই পাঠের তাড়া
আমার অসহায়ে হেসে ওঠে শেষরাত্রির তারা
***
কতটুকু নির্ভরতায় মুগ্ধ হও পাখি, মন-দোলা আশা
আমাকে তাড়ায়ে নিচ্ছে হাঁসমুর্গের সহজাত নেশা
আমাকে টানছে একরোখা চোখ, এক পাখিনীভাষা
আঙুল পুড়েছে এবার শিল্প হও সহজ-সরল নেশা
থু-থু ছোঁড়া দেহখানি ঘুরিয়ে রাখছি শেষ প্রতীক্ষায়
বুনোফুলের ঘ্রাণে পুনর্নির্মাণ করো ফের আমায়
আমাকে শরমিন্দা করো না ঘোরদৃষ্টি, চোখলজ্জায়
রহস্যবাতাসে কে আমাকে টানছে একক ক্ষমতায়
আমি তারে বেঁধে রাখি চূড়ায়, শূন্য হাওয়ার খাঁচায়
দেখি, আমায় ভেদ করে কতটুকু হারায় — লুকায় …