বায়োমেট্রিক বিকার ও ইউসুফ-জুলেখা । হাসান শাহরিয়ার
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুলাই ২০১৬, ৯:০০ পূর্বাহ্ণ, | ২৫৩৫ বার পঠিত
বাদ মাগরিবের বৃষ্টি
ঘরের জানালায় বাদ মাগরিবের বৃষ্টি
গুম করতেছে শোক
বাচ্চা মাছিটার উড়ার ইচ্ছা;
যেন একটা যুদ্ধ বিরতি চলতেছে
মাঝখানে জিরাইয়া নিতেছে সে
থেকে থেকে দেখতেছে দূরে
শত্রু শিবিরের তাঁবু।
নিইভা যাইতে থাকা টিলার
ঘাড় বাঁকা করে
জ্বলতেছে চিমনির আলো
আপোসবাজির বিনয় থেইকা
মুখ ফিরাইয়া নিয়া।
এই বাদ মাগরিবে ঝরঝর বৃষ্টি
জানালার অতলে আইসা হৈ-হল্লা করে।
চরকা
চরকা, চরে চরে চরতেছ তুমি
ভরা রাস্তায় ঘুরতেছ তুমি
কারো গালে
ট্রাফিক পুলিশের হুইসেলে
সিএনজি’র হেডলাইটে
নেমে যাওয়া বিকালের কান ধরে
তুমি সরতেছ ধীরে টিলার দিকে
চরকা, টিলার মাথায় বসে চোখ মারতেছ—
সন্ধ্যা ভরে যাওয়া কারো ভ্যানিটি ব্যাগে।
তুমি দরগা থেইকা শাহপরাণ
আল্লায়-হল্লায় মেহেরবান।
দেখ, এই কিনব্রীজে রাত নামতেছে ধীরে
চাঁদ উঠতেছে কারো শিম গাছ ধরে
কী খোঁজে তুমি হ’পার ছাইড়া
টানতেছ নিজেরে এপার?
চরকা, সুরমার ফেনায় জ্বলতেছে
ভাসা ভাসা চাঁদ।
এইসব বাদ দাও
এইসব বাদ দিয়া— আসো
একলগে ভাসি এক গ্লাস আখের শরবতে
মিইয়া যাওয়া রোদ গিলতে গিলতে
একা কাক ঝুলবে যখন কারেন্টের তারে
চরকা, আসো। তারে ভুল খবর দিবো।
আমরা দুইজনে। তারে একটু কাঁপাবো।
তারপরে তিনজনে কোন কলোনিতে যাবো।
সেইখানে— লেংটা পেটফুলা বাচ্চাদের লগে
ঘরের কাছে কুড়াইয়া পাওয়া বেলুন ফুলাবো।
চাঁদের পেটে কৃমি
কোনদিন এইরকম হয়
গোলাপচোষা রোদের ভিতর কোথাও
যাইতেছ তুমি।
গাছের ডাল, ডালের প’রে পাখি
কোন ময়লা জানলা
তার ভিতর বিরান রাস্তা—
তাদের নিজের ভাষার গানের ভিতর
শুনতেছ বোধ হয়— গলে যাওয়া কারো
দৃশ্যহীন স্তুতি; বিলাপের মতন।
কোনদিন … (হইলো না কিছু…)
কোনখানে উঠতেছ তুমি
পেটভর্তি কৃমি নিয়া শিশুর কপালে যেমন
উঠতেছে চাঁদ। শরত্কালের রাতে—
এই ইছামতি ডুব দিলে নিজের ভিতর
পাড় ধইরা তুমি পোহাইতেছ রাত।
যা যা সরতেছে
তোমার সাথে এই যাত্রায়
সব কথা হলো
পুরানা কথাগুলা আবার বলা হলো
ফের বলতে বলতে
সমান্তরালে আমি; ফের মুখোমুখি তুমি
একজনের পিছে আরেকজন হাঁটতে হাঁটতে
একজনের পিছে আরেকজন হোঁচট খেতে খেতে।
এই মহাবিশ্ব। ছোট হইতে হইতে
জানতেছি যারে
নিজের শিকড় রাইখা সইরা যাইতেছে দূরে।
সরতেছে প্রেম; তোমার নাকি?
তোমারে লাগতেছে এত্ত ছোট।
শব্দহীন কাঁপতেছে তোমার ঠোঁট
পুরান কথাগুলা হয়ত বলতেছ ঘোরে।
আলো হইতেছে যথা হালকাতর।
অন্ধকার যথা গহিন ঘন।
দিওতিমা, একুশ শতক
ফের তুমি
ঘন ঝাঁকড়া আগুনে
টলটলে তুমি গইলা যাইতেছ
মৃত্যুর হল্লায়, তার নিকষ নির্বেদে
বিকানো জলাশয়ে অস্ত যাইতেছে চাঁদ।
ফের তুমি
আততায়ীর বিকারে
ঝরঝরে তুমি ঝুইলা যাইতেছ
অসহায়; কাঁপতেছে কাঁটাতার
বিকানো জলাশয়ে অস্ত যাইতেছে চাঁদ।
বায়োমেট্রিক বিকার
ফিইরা আসো ডাকবাকসো
পুরান ঢেঁকির মত
নিশিজাগা— নতুন আর পুরান বউদের
হাসাহাসির ভিতর।
সকাল থেইকা বাদ আসর
জানালায় জোড়া জোড়া চোখ
রাস্তারে কাইত কইরা ঝুলতেছে একা।
আঁচলে লটকে আছে অপার নিঃসঙ্গতা।
আচমকা বেল দিয়া
যেই সাইকেলটা গেল
ঐটা কার?
ডাকপিয়নের?
মরার ডাকপিয়ন, তুমি মইরা রইলা কই!
ফিইরা আসো ডাকবাকসো
আমরা লিখতেছি চিঠি
তার কাছে, নিরলে; গোস্বা কিছু নিয়া।
তুমিও চিঠি লিখবা না?
একা একা, টিলার উপর বইসা
নাইলে ঘরের ছাদে
বিছানায় বাঁকা হইয়া
টেবিলে— কাত করে মাথা?
আর রাস্তায় রাস্তায় শুধু যানজট থাক।
লিখতেছ তবে
তোমার ছোটকালের প্রজাপতিটা কই?
(@টু তাসমিয়াহ আফরিন মৌ)
ভূপেন আসে
ভূপেন আসে
নিরপেক্ষ ভাঁড়দের দেশে
কুতুব-মিনারের কবুতর
বঙ্গাকাশের চুল ধইরা টানে
টানতেছে না?
সড়কের বিকাল ভেঙ্গে
আমি ফিরতেছি গ্রামে
পশ্চিমে? নাকি পূবে?
দোলনায় দুলতেছে মেয়েটি আমার
তার নাম ভুলতেছি মনে?
ভূপেন জানে!
ভূপেনআসে
নিরপেক্ষভাঁড়দেরদেশে
উড়েকুতুব—মিনারেরকবুতর
মোমবাতিমঞ্চেরবাজারে।
ইউসুফ–জুলেখা
গতকালের মত
আজকেও এই রাস্তায় নামছো তুমি
যেন এক রিফিউজি ঢল
কোথাও খুঁজতে খুঁজতে দিশা
দাঁড়াইয়া পড়লা নিজের ব্যালকনির নিচে।
আমিও ঠিক গতকালের মত
অপেক্ষা করতেছিলাম ল্যাম্পোস্টের কাছে।
আমরা নিজেরা নিজেরা বলতেছি না কোন কথা
এমনকি— তাকাইয়াও থাকতেছি না একের দিকে অন্যে
যেন এক দফা মীমাংশার ভিতর
আটকাইয়া রইছি দুইজনে—
এই দৃশ্য ছাইড়া আমরা আর কোথায় যাইতে পারি?
আমাদের আশপাশের লোকজন খুবই খারাপ
একে অন্যে সইরা যাইতেছে খালি— এইরকম গল্প করে তারা।
আমরা বরং এই দৃশ্যের ভিতর যার যার মত বইসা থাকতেছি একা
যেন এইসব খারাপ গল্প আমাদের কেউ শুনাইতে পারতেছে না আর।
সবুজ টিলার মাথা
আমরা আর কোথায় যাবো
পানের পিকের মত থকথকে দরিয়ায়
এমন আকাশের নিচে
থোকায় থোকায় লটকে থাকে খুন।
আমরা ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে
আ- মরা
আহত সাঁকোর কাছে
যাইতে যাইতে দিন
নুইয়া পড়তেছে সবুজ টিলার মাথা।
আমরা এমনি
বেঁচে যাওয়া আরেকটা সন্ধ্যায়
ভুলভাল্ সংলাপে রাস্তা করি জানালায়
চলতেছে ঝিঁঝিঁ’র উত্সব
ঈর্ষা জাগা নিশ্চয়তায়
ঘরে ফেরা পাখির ডানার নিচে
ঘরের পরে ঘরের আলো জ্বলে।
আমরা ভাল আছি
তোমার আর তোমার জিজ্ঞাসাতে
আমাদের চোখে স্বলজ্জ হাসি
তোমার আর তোমার আচমকা উদ্ভবে।
যেন আমরা থেকে যাবো
হালের দিনে
হেরে যাওয়া কৃষক-বউয়ের
আত্মহুতির জাদুঘরে
শুকনা কোন আইলের পিঠে
একজোড়া বলদের চিহ্ন হয়ে—
অনেক পরেরও এক জ্যৈষ্ঠের শেষে
বৃষ্টি নামার আগে।
নিঃসঙ্গতার দুই–চাইরটা বেলি ফুল
সকালবেলায়
রাস্তায় শুইয়া থাকা
দুই-চাইরটা বেলি ফুলের মত
আমার নিঃসঙ্গতা
একটা ‘জননী’ রিকশার টায়ারে
ডলা খাইবার আগে
আ-সকাল আ-দিন আমরণ
আকাশের দিকে মুখ কইরা থাকে।
তুমি কি আমারে একটা চকলেট দিবা?
চুষতে চুষতে—
যেন আমি ঝুঁটি বাঁধা কোন
খুকির মতন হাসি; আর নহে ত
রাবারের একটা লেজ বানাইয়া দাও
যেন টিকটিকির মত একা
এত একা— দেয়াল বাইতেছি কত।
আমি ত তোমার পাশেই বসা।
মানে বলতেছি—
এমনি একটা ছবির ভিতর
যাইতে চাইতেছি আমি
যেইটা কোথাও আমার ছিল না
অথবা যেইটা আমার বাস্তবতার বাইরে।
তুমি নাইলে আমারে আর কেউ বলুক
আমারে আমার থেইকা আলাদা করতেছে কে?