রুবিনা অথবা একটি কোচিংয়ের গল্প । আবু উবায়দাহ তামিম
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ মার্চ ২০১৬, ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ, | ২৫৮৩ বার পঠিত
সখিপুর গ্রামটাকে এখন আর একদমই গাঁওগেরাম ভাবা যায়না। আগে অবশ্য এটা খুবই গ্রাম্য এলাকা ছিল। কিন্তু এই দু তিন বছরে তার রূপ, ছবি বদলে শহুরে শহুরে একটা ভাব চলে এসেছে। যেমন ক’বছর আগেও এপাড়ার লোকজন সন্ধ্যের পর আলো জালানোর জন্য মোমবাতি কিনতে হলেও সেই একমাইল আধামাইল হেঁটে গিয়ে বসুদিয়া বাজার থেকে আনতো। এটা একটু কষ্টকর হলেও তখন একাজে সবাই অভ্যাস্ত হয়ে পড়েছিল। তখন বাজার বলতে এ দুই গ্রামের লোকেরা বসুদিয়া বাজারটাই চিনতো। কারণ তাদের ধারে কাছে এরচে নিকটে আর কোন বাজারঘাট নেই। ঈদ হোক আর পুজো হোক —সব উৎসবেই লোকেরা বসুদিয়া বাজারমুখো হতো। অথচ মাত্র এই দু তিন বছরের ব্যবধান, এর ভেতরেই সব দরকারি কাজের দোকানপাট গুলো হু হু করে লতাপাতার মতো মাথা গজিয়ে উঠেছে সখিপুর গ্রামের পরে। সবাই দিনের প্রয়োজনীয় কাজকর্মগুলো এখন এখান থেকেই সারতে পারে। বাইরে যাওয়ার তেমন দরকার পড়েনা। সবার মুখে মুখেও এখন এটাকে সখিপুর বাজার বলতে শোনা যায়।
এছাড়াও সখিপুরের মানুষ গুলো এ গ্রামটিকে বেশি করে শহুরে শহুরে ভাব উপলব্ধি করতে পারে তখনই —যখন বাজারের দোকানপাট গুলোর ভেতরে জ্বলতে থাকা শাদা শাদা এনার্জি বাল্ব, আলো এসে পুরো বাজারটাকে ফকফকা করে দেয়।
অন্যদিকে এই গ্রামটাকে শহুরে ভাব আনার ক্ষেত্রে গ্রামের স্কুলটার কথা কিন্তু একদমই ফেলানো যায় না।
—সখিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় –বড়-বড় অক্ষর দিয়ে লেখা ছিল স্কুল ভবনের সিমেন্ট বালু খসে পড়া দেয়ালে। এখন সেটা হালকা হালকা মুছে গেছে। আর এটা নতুন করে করাও তেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেনি। কারণ সেই প্রাইমারির সাথে এখন হাইস্কুল যুক্ত হয়েছে। আগে সখিপুরের ছেলেরা এখান থেকেই প্রাইমারি শেষ করতো। কিন্তু এই এক বছর হলো, সখিপুর ইউনিয়নের চেয়াম্যান ভোটে নির্বাচিত হয়েছিল গ্রামের সাবেক মাছ ব্যবসায়ী মোসলেমুদ্দিন। সেই সাথে নিজ গ্রামের স্কুলটার সাথে আরো দুটি ভবন বাড়িয়ে হাইস্কুল জুড়ে দিলো। এতে করে সখিপুরবাসীর স্বস্তির সাথে সাথে চেয়ারম্যান হিসাবে মোসলেমুদ্দিনের সুনামটাও বেড়ে গেলো। এখন আর ছেলে পেলে পড়াতে অন্য গ্রামে পাঠাতে হয়না। তাছাড়া মাজেদ মাস্টারের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে এ স্কুলটার পড়াশোনারও মান অনেক ভালো হয়েছে। যার উপস্থিত প্রমাণটা গ্রামের লোকেরা স্বচক্ষে দেখতে পায়। মাজেদ মাস্টারের বাবা আব্দুল করিম সখিপুর গ্রামে সর্বপ্রথম এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রথমে বড় কাঠালগাছ তলায় গ্রামের ছেলেপলে পড়াতেন। তারপর ধীরে ধীরে তা থেকে একটা ছোটঘর, অতঃপর তা থেকে একদিন বড়স্কুল হয়ে উঠলো। হঠাৎ এক বাদলা দিনে আব্দুল করিমের বুকে প্রচন্ড মাত্রায় ব্যথা উঠেছিল, শহরের দিকে নিতে নিতেই তিনি অচেনা জগতে পাড়ি জমালেন। তারপর আব্দুল করিম সাবের ছেলে মাজেদ তার আব্বার স্বপ্ন পূরণ করতে নামলো। —এখন সেসব কথা গ্রামের মুরব্বি রা ছাড়া তেমন কেউ মনে রাখেনি।
সখিপুরের সবাই সেই মাজেদ কে বয়স আর শরীরের ভারে এখন মাজেদ মাস্টার বলে ডাকে। তাকে খুব শ্রদ্ধার চোখে দেখে, এবং ভালোবাসে। এই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসাটুকু মাজেদ মাষ্টার দুটো কারণে পায়, একটা হলো —তার আব্বা আব্দুল করিমের ভালো মানুষির জন্য। আরেকটা হলো, সখিপুরের স্কুলটার পেছনে চরম খাটুনির জন্য। তাছাড়া মাজেদ মাষ্টার গ্রামের অন্যান্য কাজগুলোর সাথেও জড়িয়ে আছে। যেমন সেদিন জুম্মার নামাযের পরে মসজিদের নতুন সভাপতি বানানো নিয়ে কথা উঠলো, কে হবে সভাপতি! কে হবে সভাপতি! ইমাম সাহেব হুজুর একবার যেই মাজেদ মাস্টারের নাম বললেন, ওমনি সবাই ইমাম সাহেবের সাথে গলা মেলাল। এবং মাষ্টার সাবই শেষ পর্যন্ত মসজিদের সভাপতি নিযুক্ত হল। এরাকম আরো ভালো কাজের দায়িত্বগুলো মাজেদ মাষ্টারের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়। তিনি এসব দায়িত্ব নিতে প্রথমে একটু ঘাড় কাচু মাচু করলেও খুব মন প্রাণ দিয়ে কাজের সমাপ্তি করে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে তার সব কাজের আগে নজর থাকে গ্রামের স্কুলটার দিকে। রাত দিন নাওয়া খাওয়া ভুলে শুধু স্কুলটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
দুই
—আব্বা, আমি এবার মিজান কচিঙি পড়তি চাচ্চি, আমারে ভত্তি করায়ে দিও।
আচমকা মেয়ের আহ্লাদি কথায় ধ্যানভঙ্গ হলো মাজেদ মাষ্টার। তিনি এই কড়মড়া শীতের দুপুরে বারান্দায় মাদুর পেতে একটা বই পড়ছিলেন, —শরৎচন্দ্রের ষোড়শী। চোখ আর দিল পাল্লা দিয়ে খাচ্ছিল বইয়ের পাতা। তিনি পৃষ্ঠার মাঝে দুখান আঙ্গুল রেখে বিরক্তি নিয়ে ঘুরে তাকালেন রুবিনার দিকে।
—তুমার মাকে বলিছো? আগে তুমার মাকে বলো, সে কী মত দ্যায় সেটা আমারে জানায়ো। রুবিনা আহ্লাদির সুরে আবার বললো,
—মা বলচে তুমার কতা আর তুমি বলচো মার কতা। তালি… মাজেদ মাষ্টার এবার একটু দৃড় গলায় বললেন,
—তালি এখন যাও। কী কত্তি হয় আমি পরে কবানে। রুবিনা মন খারাপ করে উঠে গেল। মাজেদ মাস্টার আবারো বইয়ের পাতায় ধ্যান ঢুকালেন। ঠিক এই আজকের দিনের মতো গত দশ বারো দিন ধরে একই ঘ্যানর ঘ্যানর শুনে যেতে হচ্ছে মাজেদ মাষ্টারের। আর এতে করে তিনি ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠছেন।
—তার মেয়ে রুবিনা এবার ক্লাস এইটে উঠেছে। যদি এইটে ভালো রেজাল্ট দাড় করাতে হয়, তাহলে বছরের শুরু থেকেই সিরিয়াস ভাবে পড়াশোনা করতে হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তে মনস্থির করতে পারছেন না, বা কারো সাথে এই সামান্য বিষয় নিয়ে কথাও বলতে মন চাচ্ছে না। সামান্য ব্যাপার বললে ভুল হবে। এটা সবার কাছে সামান্য ব্যাপার হলেও তার কাছে অনেক বিরাট কিছু।
রুবিনা সেই ছোটকাল থেকে একজন গৃহশিক্ষিকা আর মায়ের কাছেই স্কুলের পড়া শেষ করেছে। অন্যান্য ছেলেপেলের মতো স্কুলের স্যার ম্যাডামের কাছে পড়েনি। আর পড়বেই বা কী! ঘরে যদি থাকে রহিমা বেগমের মতো শিক্ষিত মা।, —সেই আগেকার আমলে হাইস্কুল পর্যন্ত উঠেছিল। যার তাড়ায় মাজেদ মাষ্টার ‘মাষ্টার’ হয়েও স্থির থাকতে পারে না এখনো। তবে মাজেদ মাষ্টারের এক্ষেত্রে একটা গুণ হলো -সে বৌয়ের কথায় পাল্টা জবাব না দিয়ে নিরবে কথা মানার চেষ্টা করে যান।
এদিকে রুবিনা এখন যথেষ্ট বড় হয়েছে, শরীরটা বেঢপ মাংশে ভারি হয়ে উঠছে। যৌবনের শুঁয়োপোকা টা পাখনা গজিয়ে প্রজাপতির রূপ ধরেছে। এখন কি আর ঘরের কোণে পড়ে থাকতে মন চায় তার! তাছাড়া ওদের ক্লাসের আরো কিছু মেয়ে এবছর মিজান কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছে। তাতে রুবিনার ভেতরে এই ধারণা আরো মজবুতভাবে গেড়ে বসেছে যে —পরিক্ষায় ভালো রিজাল্ট কত্তি হলি মিজান কচিঙিই পড়তি হবি, এছাড়া উপায় নি। আর এই ধারণা থেকেই বাবার কাছে যত আহ্লাদ আবদার। এদিকে মেয়ের ব্যপারে রহিমা বেগমের ভাষ্য হলো, —মেয়ে আমাততো কম বড় হোয়নি। ওর ভালো মোন্দো তো ঐ বোজবে ভালো। আমরা তো অতকুছু বোজবো না। মিজান কচিঙ যদি ভালোই হয়, তালি ওকানে পড়াতি ক্ষতি কীসির?
তবে রহিমা বেগমের একথার সাথে কখনোই একমত হতে পারে না মাজেদ মাষ্টার। তার সমস্যা হলো, মিজান কোচিংয়ে বর্তমানে যে পড়ায় সে সখিপুর হাইস্কুলের সদ্য সংযুক্ত হওয়া একজন তরুণ শিক্ষক, সাগর। সাগর মাষ্টার বলেও পরিচিত। সে গ্রামের ছেলে হলেও লেখাপড়া সমাপ্তি শহরে। বয়স কেবল ছাব্বিস কিংবা সাতাশের কাঁটায় পড়েছে। মাজেদ মাষ্টারের সাথেই সখিপুর স্কুলে চাকরি করে। তবে মাজেদ মাষ্টার স্কুলের হেড, আর সাগর মাষ্টার স্কুলের সাধারণ শিক্ষক। মাজেদ মাষ্টার তাকে ডান চোখে দেখলেও মেয়েকে তার কোচিঙয়ে পড়াতে রাজি নয়, প্রথম হেতুই হলো সে তাগড়া জোয়ান।
তাছাড়া তার এই রাজি না-থাকার পেছনে আরো একটা শঙ্কা আশঙ্কার জাল বিছানো আছে— মাজেদ মাস্টার শিক্ষিত মানুষ, নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস খবরের কাগজ কী জিনিস বুঝতে শেখা থেকে। এখনো তিনি সেই নিয়মে পত্রিকা পড়ে যান প্রতিদিন। সমাজ, রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সব বিষয়ের গুলো তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েন। সেসব নিয়ে আবার কিছুক্ষণ বসে ভাবেন। তিনি সব খবরের ভেতরে কিছু ভিন্নতা পেলেও এক ধরণের খবরের ভেতর তিনি কোন ভিন্নতা খুঁজে পান না। এই প্রায় প্রতিদিনই কাগজের এমাথা থেকে ওমাথা খুঁজলেই একটা করে ধর্ষণের খবর পাওয়া যাবে নিশ্চিত। আবার তাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটার সীমাবদ্ধতা থাকবে স্কুল কলেজের ভেতরে। মাজেদ মাষ্টার নিজেকে তখন অনেক অপরাধী অপরাধী বলে মনে করে একটা মেয়ের বাবা হিসাবে।
এইতো সেদিন কোন দৈনিকে যেন একটা বড় করে খবর ছেপেছে। ৭ম শ্রেণীর ছাত্রীকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করেছে তার গণিত শিক্ষক। এবং খবর ফাস হয়ে যাওয়ার ভয়ে ছাত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা। খবরটা পড়ে তেলে পানি পড়ার মতো আতকে ওঠে মাজেদ মাষ্টরের জান। খবরের লেখাটুকু বারবার লাল হয়ে ওঠে তার হৃদয়ে। চোখ বেয়ে পানি পড়ে সামান্য ভিজে ওঠে তার নীল শার্ট। এতকিছু জেনেশুনেও কার বুকে সাহস থাকে এমন কাজ করার? তাছাড়া মিজান কোচিংয়ের সাগর মাষ্টারকে এমনি ভাল লাগলেও তার শহুরে মনমানসিকতা চরম অপছন্দ করেন মাজেদ মাষ্টার।
অথচ এই সামান্য বিষয়টা সমাজ মানতে চায় না। পরিবার মানতে চায়না। এইমুহূর্তে মাজেদ মাষ্টার ভেবে পায় না কী করতে হবে? কী করবে?
তিন
স্কুল ভবনের গা ঘেসে উঠেেছ মাঝারি ধরণের তিন রুম বিশিষ্ট মিজান কেচিং। পাকা ইটের দেয়াল। উপরে টিনের ছাদ। প্রায় পঁচিশ ত্রিশ জন ছেলে মেয়ে হাত পা খুলে বসতে পারে সেখানে। জানালা দরজায় চিকচিকে পর্দা টানানো, খুব ঝকঝকা পরিবেশ। এখানে সাগর মাষ্টার ছাড়াও আরো দুজন বয়স্ক শিক্ষক পড়ায়। তারা অনিয়মিত। কোনদিন পড়াতে আসে কোনদিন আসে না। তবে এ কোচিংয়ের পুরো ভারটা সাগর মাষ্টার একাই বহন করে। যেমন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি নেওয়া, পড়াশোনা, টাকা-পয়সার লেনদেন সব সাগর মাষ্টারই করেন। আর কচিংয়ের মূল্যটা মানুষের কাছে একমাত্র সাগর মাষ্টারকে কেন্দ্র করে। তাদের ধারণা, সাগর মাষ্টার ঢাকা থেকে পড়াশুনা করে এসেছে। সে নিশ্চয় ভালো পড়ায়। বিশেষ করে সাইন্সের সাবজেক্টগুলোর উপর কতটুকু দক্ষতা তার, সাগর মাষ্টার ইতিমধ্যে তা আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখিয়েছে। এ কারণে ছেলে মেয়েদের ভালো ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে একবার না হলেও ঐ কোচিংয়ের কথা ভাবে সবাই। তবে মাজেদ মাষ্টারের চিন্তাধারা কিন্তু এখানে পুরো উল্টো। সব গার্জিয়ানরা সন্তানের ভালো লেখাপড়ার জন্য ঐ কচিংয়ে দিচ্ছে। আর মাজেদ মাষ্টার সন্তানের ভালো ভবিষ্যতের জন্য ঐ কোচিংয়ে দিতে নারাজ হচ্ছে। কিন্তু তার রাজি নারাজির কথা শুনছে কে? হয়ত যদি সে যে জিনিসটার ভয় করছে, সেই জিনিসটা সামনে এনে দেখাতে পারতো, তাহলে হয়তো তার কথার এক ফোটা দাম হত। শেষ পর্যন্ত মাজেদ মাষ্টারের অনুমতির তোয়াক্কা না করেই রুহিমা বেগমের সাথে রুবিনা ভর্তি হয়ে এলো। মাজেদ মাষ্টার এসব শুনে বৌটার পরে একটু কষ্ট পেলো, এমন রাগ শুধু বুকের মধ্যেই পুষে রাখে। তার টাকায় সব চলছে অথচ তার বৌটা তাকে এসবের কিচ্ছু জানালোনা। তখন শুধু করুণ ভাগ্য বলে শান্তনা দিয়েই মাস্টার সাব কোন কথা বাড়ালো না আর।
চার
রুবিনা এখন মিজান কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছে। তার এতদিনের ঘ্যানর ঘ্যানর টা কাজে লেগেছে বলে মনটাও খুব ফুরফুরে। সন্ধার পরে তার পড়ার টেবিলটা আবার নতুন করে সাজাল সে। পড়াশোনার জন্য নতুন করে একটা কাগজে রুটিন বানিয়ে টেবিলের উপর সেটে দিল। পড়ার জন্য তৈরী হয়ে গেল এক সুনসান ঠান্ডা পরিবেশ। এমন সময় মাজেদ মাষ্টার রুবিনার ঘরে ঢুকলো।
—মা! কী কত্তিছো তুমি?
—এইতো আব্বা, টেবিলটা গুছালাম। কিরাম হইলো দ্যাখোদিন। রুবিনা হাফ ছেড়ে খাটের উপর বসলো।
—ভালো ছাড়া কি খারাপ হয়েছে? আইচ্ছা মা অবসর পালি তুমি আমাস সাতে ইট্টু কতা কইয়েনে তো।
—ঠিকাছ আব্বা। তুমি যাওগে। আমি আসপানে।
মাজেদ মাষ্টার কথাটুকু বলে হড়হড় করে বেরিয়ে আসলো। কেউ উপদেশ বাণী দেওয়ার আগে যেমন তার মুখচ্ছবিতে একটা গাম্ভীর্য ভাব বিরাজ করে, মাজেদ মাষ্টারের মুখ থেকেও তেমন একটা ভাব ফুটে উঠছিল। হয়তো সে রাতে মেয়েকে কোন উপদেশবাণী শুনাবে। আর তাও সেটা হবে কোচিংয়ের ব্যাপারে সতর্কতামূলক কোন উপদেশ।
মাজেদ মাষ্টার প্রতিদিন রাতে ডায়রী লেখেন। এটা তার সেই ছোটকাল থেকে অভ্যাস। তার বউ মাঝেমাঝে খুবই অবাক হয়ে যায়, মানুষটা কি জীবনে একবার ভুলেও ভোলে না। সে যত ব্যস্ততায় থাকুক আর প্রেশানী থাকুক। আর সে যত রাতই হোকনা কেন। তার ডায়রী লেখা মিস হবে না কোনদিন। আজকেও আধশোয়া অবস্থায় ডায়রী লিখছিলেন, আজ মনের দিক থেকে বেশ ক্লান্ত তিনি। ডায়রীটা লিখেই তিনি ঘুমিয়ে পড়বেন। এমন সময় রুবিনা নিরব পদশব্দে তার কাছে আসলো, ক্ষীণস্বরে বললো,’আব্বা আমারে ডাকিলে ক্যান? বলো তো কী হয়েছে?’
তিনি ডায়রীটা বন্ধ করতে করতে মেয়েকে কী বলবেন তাই ভাবতে লাগলেন। আর কথাগুলো মুখের ভেতরে সাজিয়ে উঠে বসলেন। আর রুবিনাও কথা শোনার জন্য অপেক্ষিত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো।
মাজেদ মাষ্টার রুবিনাকে বলতে শুরু করলেন -মা! তুমিতো জানো বাইরির লোকজনের সবার মন সাদা হয়না। তাছাড়া তুমি যে মাষ্টারের কাছে পড়তি যাবা। আমার কিন্তু ইট্টুও পছন্দ হয়না ওদের মন মানষিকতা। কারণ ওদের মনমানসিকতা অনেক পঁচা। ওরা শহরেত তে এসেছে। শহরে যারা থাকে এরা সাধারণত নোংরা চরিত্রের হয়। তুমি ওখানে পড়তি যাবা খুব সাবধানে।
রুবিনা খুব খেয়াল করে বাবার কথাগুলো শুনে স্বাভাবিক ভাবে বললো, আব্বা, তুমি কি এখন ভাব আমি ছোট? তুমার মনেই অয়না আমি বড় হয়েছি।
—মাজেদ মাষ্টার কড়া গলায় বললেন, না তুমি বড় হউনি, একনো ছোট আছো।
রুবিনা ওর আব্বার কথায় একটু রাগ হলেও মনে মনে স্মিত হাসি দিয়ে বলল, —যত ইচ্ছা তুমি উপদেশ দিতি দিতি বন্যা বয়ে দ্যাও, ভত্তি হওয়ার কাজ ভত্তি তো আমি হয়েই গিছি।
পাঁচ
নভেম্বর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় চলেছে এখন। গরম পড়েছে তীব্র তাঁপ নিয়ে। এই সময়ে বাংলাদেশের সব স্কুল গুলোতে বার্ষিক পরিক্ষার প্রস্তুতি চলে। এখন মেধাবীরা তুমুলাকারে পড়াশোনা করে, আর যারা মধ্যম এরা কোচিং টোচিং করে পরিক্ষায় রেজাল্ট টা ভালো করার আশায় থাকে। রুবিনার অবশ্য ওইদিক দিয়ে শুবিধা -একেতো সে ভালো ছাত্রী। তারপর আবার সেই জানুয়ারি থেকেই সাগর মাষ্টারের কাছে কোচিং করে আসছে। রুবিনাকে নিয়ে যেমন তার আব্বা মার ভরসা, তেমনি সখিপুরের স্কুল কোচিংয়েরও।
রহিমা বেগম রান্নাঘরে বসে দুপুরের ভাতে জাল দিচ্ছিল। সখিপুর গ্রামের বড় মসজিদটায় জোহরের আজান দেয়া শেষ। রান্নাঘর থেকে সে তাকালে দেখতে পায় এ বাড়ি ও বাড়ি থেকে দু’একটা লোক নামাজের আগ মুহুর্তে অর্ধেক শার্ট পরে টুপি মাথায় দিতে দিতে ছোটে মসজিদের দিকে। রহিমা বেগমের রান্না শেষ হওয়ার আগেই আবার তারা বাড়ি ফিরে যায়। তার এখন ভাতের চালের প্রতি মন থাকলেও আরেকটা ইন্দ্রিয় কাজ করছে রুবিনা আসার অপেক্ষায়। এই দুপুরের সময়টাতে রুবিনার আব্বা মাজেদ মাষ্টার যদি বাড়ি থাকে, তাহলে সেও এমন ভাবে নামাজ পড়তে যায় মসজিদে। আজ সে বাড়িতে নেই। সকালে ষোলপাড়া থেকে লোক এসেিছল কয়েকজন। ওদের পাড়ায় একটা সামাজিক ঝগড়া ঝাটির বিচারের জন্য। সেখান থেকে এখনো ফেরেনি।
রহিমা বেগম হাড়ির ভেতর তাকিয়ে দেখল ভাতের চাল ফুটে গেছে। আগুনের প্রবল তেজে ভাতের ফেন টগবগ করে ফুটছে। রুবিনার মা খুন্তির এক কোণা ঢুকিয়ে দুটো ভাত উঠিয়ে টিপে দেখলো ভাত হয়ে গেছে। তারপর হাড়িধরা কালো ন্যাকড়া দিয়ে ফেন ঝরানোর জন্য একটা তোড়জোড় করতে লাগলো। এর মধ্যে চোখ পড়লো বাড়ির গেটের দিকে, রুবিনা খুব জ্বোর পায়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এসে ঘরে ঢুকলো। ঘাড় থেকে ভারি স্কুলব্যাগটা নামিয়ে এতজোরে নিক্ষেপ করল যে, আছাড়ের শব্দটা রুবিনার মার কান পর্যন্ত পৌছে গেল। শব্দটা কানে আসতেই ভাতের হাড়ি থুয়ে রহিমা বেগম হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো ঘরের দিকে। রুবিনার মন মেজাজ ভালো নেই, সেটা ওর মুখের চামড়া দেখেই বুঝে ফেললো সে। রহিমা বেগম এবার খাটের পরে বসে মেয়ের মাথায় নরম হাত বুলোতে বুলোতে বলল, কী হলরে মা তোর? এ্যাম্মা কচ্ছিস ক্যান? রুবিনা ওর মার কথায় কোন খেয়াল না করে ধুড়ুম করে খাটের পরে ভুট হয়ে শুয়ে পড়ল। রুবিনার মা একবার ভাবল হয়তো মেয়েটা প্রকৃতির নীতি তে অসুস্থ। যেহেতু মাসের এখন শেষ সময়। আর মেয়েরা মাসের প্রায় শেষের দিকে শারিরিক মানুষিক দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। রহিমা বেগম আবারো তার কানের কাছে এসে বললো- মা, আমি তোজ জন্যি ভাত খুলছি। উঠে খেয়ে নে। রুবিনা কোন কথা না বলে তেমনই শুয়ে থাকলো।
দুপুরবেলা সে মনমরা অবস্থায় অল্পখানিক ভাত খেয়ে উঠে পড়লো। মাজেদ মাষ্টার কয়েকবার জোর করেও খাওয়াতে পারলেন না মেয়েটাকে। রহিমা বেগম তখন কিছু বললো না। সে এই কিছুদিন ধরে একটা বিষয় বুঝে উঠতে পারছেনা। রুবিনা অন্যবারেও তো অসুস্থ হয়, কিন্তু এবার কেমন যেন আগের চে বেশি বেশি দুর্বল মনে হচ্ছে। সেই আগের মতো উচ্ছল প্রণবন্ত ভাবটা কেটে গেছে। কী হল রুবিনার? গতরাতেও ঘুমানোর আগে কথায় কথায় বলে ফেলল মাজেদ মাষ্টারের সাথে- মায়েডার যে কী হল; অসুক টসুক করছে কিনা। একেবারে কিছুতো মুকতে বের কচ্ছেনা। তুমি ইট্টু দ্যাখোদিন কী হলো।
মাজেদ মাষ্টার বেশি প্রেশানীর কথায় কোন কথা না-বলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে চোখ বুজে থাকেন। কোন বিষয় নিয়ে বেশী টেনশন করলে তার প্রেশার হাই হয়ে যায়। রুবিনার মাও আর কথা বাড়ালো না তখন। সে রাতে প্রেশানী নিয়েই ঘুম আসল তাদের চোখে। কিন্তু আজকে রহিমা বেগম একটু স্বস্তি পেল -তার তো এখন আর মাজেদ মাষ্টার কে আলাদা ভাবে রুবিনার বিষয়টা বলা লাগবেনা। কারণ সে দুপুরে খাওয়ার সময়েই কিছুটা বুঝে উঠতে পেরেছে রুবিনার মানসিক অবস্থার হাল হাকীকত।
দুপুরের পরে এলো রুবিনার বান্ধবী রূপসী। রুবিনার সাথে পড়ে। একই সাথে আবার মিজান কোচিংয়েও পড়ে। রুবিনাকে প্রায়দিনই এসে মিজান কোচিংয়ে যাওয়ার সময় ডেকে নিয়ে যায়। রুবিনার আজকে আর যেতে ভালো লাগছেনা। তারপরেও রূপসী এসেছে দেখে একটু যেতে মন চাচ্ছে। রূপসী এসেছে কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য। সাথে রুবিনাকে নিয়ে যাবে। পড়িমষি করতে করতে রূপসীর সাথে পা বাড়ালো কচিংয়ের দিকে। কিন্তু পরশু দিনের ঘটনাগুলো কিছুতেই মুছতে পারছেনা রুবিনা। ঘটনার চিত্রগুলো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে করে ভেসে উঠছে তার মনে। সেইসব কথাগুলো শুধুমাত্র রূপসীকেই বলেছিল। রূপসী ছাড়া আর তৃতীয় কোন ব্যক্তি জানেনা।
সেদিন ছিল গরমের দুপুর, সাগর মাষ্টার স্পেশাল ক্লাসের জন্য ডেকেছিল সবাইকে। রুবিনা আগেপরে কখনো ‘স্পেশাল’ নামের কোন ক্লাস করেনি। সাগর স্যারের কাছে রুবিনা স্পেশাল ক্লাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সে বলেছিল, -পরীক্ষার আগে সাধারণত স্পেশাল ক্লাস করানো হয়,যাতে স্টুডেন্টরা পরীক্ষায় ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে। কিন্তু রুবিনা এসে দেখলো সাগর মাষ্টার ছাড়া আর কেউ নেই। সাগর স্যার তখন ভাসা নিমগ্নে কোচিংয়ের পরীক্ষার কিছু খাতা দেখছিলো। রুবিনা কাউকে না দেখে সাগর স্যারকে বললো- স্যার, কারোত তো দেখছিনে। আমি চলে যাব? সাগর মাষ্টার তার সামনের চেয়ারটা ইশারা করে রুবিনাকে বসতে বললো। রুবিনা লোকশূন্য ঘরে বসতে কিছুটা সঙ্কোচবোধ করছিলো। যদিও সেটা মুখে বলেনি। সাগর স্যার আরেকবার বসতে বলার সাথে সাথে রুবিনা চেয়ারটাতে বসে পড়লো। সাগর স্যার খাতা-পত্তর গুলো একপাশে গুটিয়ে রাখতে রাখতে বললো,—ওরা চলে গিলি কী হবে! তোমার নিজের পড়াশোনা নিজের খেয়াল রাখতে হবে। আরো তুমার আব্বা হেড মাস্টার। পরিক্ষায় খারাপ রিজাল্ট কল্লি তুমার আব্বার মান-সন্মান ইট্টু থাকবে? বলো। রুবিনা না-সূচক মাথা নাড়ালো। এভাবে অনেক্ষণ ধরে না পড়িয়ে একেরপর এক কতরকম উপদেশ ঝেড়ে চলেছে সাগর মাস্টার। অথচ রুবিনার এসব আর মোটেই শুনতে ভাল্লাগছেনা। আর কথার ফাঁকে ফাঁকে মাষ্টারের চোখ দুটো রুবিনার টলমলে শরীরের উপর দিয়ে মাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কখনো আবার কালো মণিটা বেঢপ অংশগুলোতে মিষ্টির উপর মাছি পড়ার মতো স্থির হয়ে পড়ছে। রুবিনা মাস্টারের চোখ-চোরামি বুঝতে পেরে বুকের ঠিক থাকা ওড়না অভ্যাসমতো আরেকবার টেনেটুনে দিল। ভেতরে ভেতরে রুবিনা লজ্জায় এতো লাল হয়ে উঠলো যেন ঐটা ফাঁকা মাঠ হলে রুবিনা সামনে তাকিয়েই দৌড় দিত। কিন্তু ওটা তো তখন মাত্র দুজন অবস্থানের একটা বদ্ধ গুদাম। দৌড়াতে গেলেও নির্জীব চেয়ার টেবিলগুলো পা আটকে দেবে রুবিনার। রুবিনার অস্থির হয়ে ওঠা লক্ষ করে মাস্টার বলে উঠলো,
—রুবিনা, কিছু হয়েছে নাকি তুমার?
—না স্যার। সিরাম কিচু হোয়নি। স্যার আইসকে ইট্টু তাতাড়ি বাড়ি যা দক্কার, মাশ শরিল খারাব দেখিছিলাম। এই বলে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো রুবিনা। ব্যাগটা কাধে বাধিয়ে পেছনে ঘুরলো যাওয়ার জন্য। সাগর মাস্টার চেয়ারে হালকা গা এলিয়ে দিয়ে বলল, —তাহলি আইজ আর পড়বানা!
—কাইলকে পড়ে নেবো নে স্যার।
কোনরকম দায়সারা উত্তর দিয়ে বেরোতে গেল। দরজা অব্দি পৌছল আর তখনি পেছন থেকে রুবিনার ব্যাগ ধরে টান দিল মাস্টার। টানের জোর এতো গতিময় হলো যে দুপা ভেসকে যেয়ে চেয়ারের সাথে মাজা বাধলো। রুবিনা তখন শুধু কাঁপা কাঁপা গলায় বলছে স্যার আপনি এ্যাম্মা কচ্ছেন ক্যান আমাস সাতে? কে শোনে কার কথা। ক্ষুধার্ত সিংহের মতো লাফিয়ে পড়লো লকলকানো মাদী শরীরের উপর। রুবিনার দুর্বল হাত দিয়ে শুধু ক’বার প্রতিহত নড়াচড়া করে সিংহের কাছে তার শিকার বিলিয়ে দিল। কোন বিয়ে বাড়ির অবশিষ্ট ফেলে দেওয়া খাবার বেছে বেছে খাওয়া কুকুরের মতো করে সেও লুটেপুটে খেয়ে যাচ্ছে একটা মনুষ্য শরীর। রুবিনা তখন শুধু ভাবতে লাগল তাহলে এর মানেই কি স্পেশাল ক্লাস?
তারপর থেকে ভয় আর আতঙ্কে রুবিনার গায়ে জ্বর এসে গেল। চারদিন পর্যন্ত কোচিঙ এ গেলনা। কোচিঙয়ের বিষয়টা সম্পূর্ণ গোপন করে রেখেছিলো বাবা মার কাছে। ভেবেছিল বাবা মার কাছে বলবে না, কোচিঙেও যাবে না। শুধু কোচিঙয়ের সময়টা তে রুপসিদের বাড়ি লুডু খেলে কাটিয়ে দেবে। চারটে দিন আধমরা অবস্থায় কাটানোর পর আজ মন টা ফ্রেস ফ্রেস লাগছে বলে রুপসির সাথে কোচিঙয়ে আসা। বাড়ি থেকে আসার পথে অনেক কথাবার্তা বলতে বলতে আসলো দুজনে, রুপসি আর রুবিনার ভেতরে ঘনিষ্ঠতা এতই গভির যে, যেদিন রবিনার উরুসন্ধি থেকে অচেনা পানি গড়িয়েছিল, সেদিন বিব্রত অবস্থায় পড়ে সর্বপ্রথম রুপসিকেই বলেছিল সে। এমনিভাবে রুপসির বড় হওয়ার দিনগুলোর কথাও রুবিনা জানে। রুবিনা বুঝতে পারে এখন -রুপসির মতো একটা বান্ধবি জুটিয়ে তার এই দুর্দিনে খুব উপকার হচ্ছে। ঠিক কোচিংয়ের দরজা বরাবর এসেই রুবিনা মত পাল্টালো, ঢুকবেনা কোচিংয়ে। ঢুকতে ইচ্ছা করছেনা। রুপসি বললো, কী হোয়েচে তোর, রুবিনা গাল মুখে অসহ্যের ছাপ বহাল রেখে বললো,
—যাতি ইছ্ছা কচ্ছে না। বাড়ি যাবো চল। রুপসি আর কথা না বাড়িয়ে রুবিনার সাথে চলা শুরু করলো।
শেষ
ঘড়ির কাটা আর ক্যালেন্ডারের তারিখ বেয়ে তারপর কতদিন যে চলে গেল, ঠিক পাওয়া যায়নি। রুবিনা এখন নাইনে উঠেছে। নতুন বইগুলো নিয়ে ছোটদের মতো নাড়াচাড়া করতে থাকে সারাদিন। এখন আর সে কোচিংয়ে পড়েনা, —তার আব্বাকে বলে বাসায় একজন ম্যাডাম রেখেছে। তার কাছেই সব প্রাইভেট পড়ে। মাজেদ মাষ্টার মেয়ের এমন সিদ্ধান্তে খুব খুশি হয়েছেন। কিন্তু তিনি এ সিদ্ধান্তের নেপথ্য কথা আজও জানতে পারেনি।
মিজান কোচিংয়ে এখন অনেক ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। কোচিংয়ের শাখা প্রশাখাও বেড়েছে। কিন্তু কোচিংয়ের সেই সাগর স্যার নেই। কিছুদিন আগে একটা মেয়ের সাথে গোপণে গোপণে আদিম খেলায় মেতেছিল সে। এ খবর যখন সখিপুরবাসির কানে কানে বাতাসে পৌছে গেল। তখন এক গহীন রাতে তারা সখিপুর ছেড়ে অজ্ঞাত কোথাও নিরুদ্দেশ হল। কেউ কোন হদিস পেল না।
এখন প্রায় যখনই রুবিনা জানালার পাশে একা একা বসে থাকে, দেখে। —দলবেধে মেয়েরা কোচিংয়ে যায়। তখন সে ভাবে, তাদের বাবারাও কি কখনো কোচিংয়ে যেতে নিষেধ করেছে। যেমন মাজেদ মাষ্টার তাকে নিষেধ করেছিল। নাকি তাদেরও সামনে কোন নিঃশব্দ ধর্ষণের আভাস বিরাজ করছে!!!