সর্বাঙ্গে লেপটে থাকা কয়েকটি অন্ধকার । জিনাত জাহান খান
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১২:০৭ অপরাহ্ণ, | ১৮০৩ বার পঠিত
বোধ
শীতের সকাল জুড়ে কুয়াশায় থাকবে তুমুল তুলোঝড়…
উড়ে যাবে শাদা শাদা বকুল, নরম রোদ,
হেঁটে যাবে একজন পথিক— পথভোলা?
নাকি ঈশ্বর সন্ধানী অথবা যেকোনো মানুষ!
সব দৃশ্যের অদৃশ্য কানামাছি রহস্যাবৃত।
বিশাল মাঠের সিঁথিতে পা রেখে চমকে উঠবে!
রোদের আলোর ঝলক, সবুজ ঘাসের ডগায় দানায় দানায়…
শীতল-আত্মায় ডুব দেয়,
তপ্ত আবেগের কাছে গত জন্মের বোধ
সময়
চিত্রকল্প আসলে আমাদের মুগ্ধতা!
কেননা বোধচিত্র জানে,
চোখে চোখ— বৃষ্টি হয়
হাতে হাত— ছায়া দোলে
জিভে জিভ— ময়ূর উড়ে
আর ভবিষ্যৎকালে সমস্ত শেষ ফ্লাপে দেখা যাবে,
রঙমাখা কিছু মুখমণ্ডলের ছবি…
স্টেশন পেরুলেই লবণটিলা
নীলঘোড়া উড়ে যাও ঘুম থেকে,
আর আমি পড়ে থাকি হলুদ পাতার সাথে—
হাতে ছিলো দুরবিন… আলোছায়া ভুলে,
দেখি বনের ভেতরে বন উঠেছিলো দুলে।
তৃষিত হৃদয় ছুটে যায় পানপাত্র হাতে,
লোকালয় ফেলে— ঘুরে ফেরে বনপথে যারা…
অরণ্য কাঁপানো হাসি ধরে, ঢেলে দেয় তারা
এক আঁজল উদগ্র চাঁদ, পান করি ক্রমাগত—
মীনের আহার কিন্তু নুনজল নয়!
পার্থক্য
কাঁপছে বাতাস
আকাশে বাজছে ড্রাম,
উল্টে পাল্টে নদীপুকুর…
ঘুম এলে, তারপর যখন
একান্ত রাজহাঁস, সাঁতার শিখিয়ে
অভিপ্রায় নিয়ে আলো শুষে নেয়,
সর্বাঙ্গে লেপটে থাকা অন্ধকারে—
জন্মকেন্দ্রে বসে থেকে থেকে
সমতলে আসা যত জলরাশি দেখি,
দেখি বেড়াল-চিতার পার্থক্য
নির্জনতা
ব্যঞ্জনা থেকে দূরে ঐ ধ্বনি, উৎসব শেষের, আদিম, পরলোকের আলোয় মৃত রক্তকণার মতো জেগে আছে অভিলাষে।
সে কি চোখ? মায়াবী আয়না? ভেঙে পড়ছে ঢেউ, নীল, নীল, নদী কি হ্রদয় তবে? ভেঙে যাচ্ছে কূল, রাত্রি ও তরল… দ্বিধার চৌকাঠ পার হলো কি পারদ?
তৃষ্ণার আগুন জ্বলে, জেগে থাকে আয়না জুড়ে, রক্ত ঝরে, মৃত কণা…
বস্তুত তাকে বলি, নির্জনতা
ঝরাপাতার গান
যখন দাঁড়িয়েছিলাম জলপ্রপাতের সামনে, কেঁপেছিলাম… ভেতরে ভেতরে পাঠ চলেছিল মহাপুরাণের ! উত্তরীয় জড়ানো কাঁধ কতোটাই বা লুকাতে পারে কবিতা ভাষাভাষীর ভাঁজ? কোনোএক দ্বিপদ বৃক্ষের নিচে আশ্রয় খুঁজে খুঁজে— আলোর ঘূর্ণিপাকে ঘোর লাগা কথার মুখরতায়… কাঁধে হাত, মুখে হাসি ক্ষতহীন অদ্ভুত মুখ! ভয় থাকে সন্দেহ নয়… ইচ্ছে করে নামতা শোনাই, অসহায়ের
তখন প্রায় শেষ আমাদের লোকজ উৎসব। বৃক্ষতলে অবশিষ্ট পাতাদের শরীরে জল দেখে মনে হলো— যেন নাম লেখা আছে সুখী সব মানুষের, আর মান-অভিমানের লুকানো এক বাক্স
সেখানে ফেলে রাখা হারমোনিয়ামের রীডে লেগে ছিলো নখের আঁচড়! ভুল সুরে গাওয়া গান— স্মৃতি থেকে বিস্মৃতিকে আলাদা করে রাখে… শরীর থেকে উঠে আসা সুরের পতিত যত সুর
আমাদের ছেড়ে চলে গেছে, সেইসব সুসজ্জিত ঝরাপাতা সমূহ…
বৈচিত্র্যময় কিছুটা রঙিনও হয়
সন্ধিহীন পথে জল নেই, পথের ধূলোকে শিল্প ভেবে লুটোপুটি খায় ছায়া। রোদ থেকে ছায়ার বাস চলছে কায়ায়— জন্মাবধি, আর যেন উপহাস করে শূন্য হয়ে ফেলে রাখা সাপের খোলসের শূন্যতাকে….
তবে যে ফুল ফোটে সহজেই, সে কেন জটিলতা চায়? অপার্থিব ভঙ্গিমা বেছে নেয় কেন ফুটে ওঠার জন্যে?
সে কি তবে ঘুর্ণি?
যেন কেন্দ্রে অবস্থান করে কেন্দ্রেই বেড়ে চলা,আলো-আঁধারের মাঝেই খুঁজে পায় শিবির— কাঙ্ক্ষিত সভ্যতার ইশারায় আবিষ্কৃত হয় গুহা। তবে কী ঘুর্ণি থেকেই গুহা?— প্রতিধ্বনি ভাঙছে রোজ অজস্র শ্বেতকণিকা…
জন্ম থেকেই তুলে নেয়া আচ্ছাদন, ঠিক কিসের উপলব্ধিতে?
যে ধ্যানী, হয়ত আশ্রয় নেবে দু’একটা পাথর খসে পড়া এমন পাহাড়ের পিঠে— সেখানে যেকোনো ভুলে লুকিয়ে পড়া যেতে পারে সংকেতময় উপাখ্যানের পৃষ্ঠতলে। কেননা গ্রন্থ কোনো পাপক্ষয় করে না…
ভালোবাসা আছে তাই বলেই কী মুখোমুখি পোশাকহীন সত্যের?
আর সেই সব জেগে ওঠা বাতাস, পাহাড় ডিঙাইতে গিয়ে গড়িয়ে পড়েছিলো— আর জিরিয়ে ছিলো বানভাসি দেশে। ছায়ার সাথে যখন আলোর সন্ধি করবে কোনো বীজাণু, তা হতে পারে রঙ-বৈচিত্র্যহীন… তবু সংকুচিত পেশীর শিথিল হবার শিৎকারে যে জোনাক নেচেছিলো, তাকে ঠিক কী বলা যায়?
পথ জানেনা… পাঠ করতে, ধূলোর সঠিক নন্দনতত্ত্ব
ঋতুমতী ঋতুকাল
যেকোনো বৃক্ষের চূড়ায় উঠে যাওয়া, আর ধ্যানী পাহাড়ের মনোযোগে থাকা এক কথা নয়। কেউ যদি ভুল করে ঝর্ণাজলে দু’পা ডুবিয়ে তৃষিত চোখে— অন্ধকারের নিতম্ব খোঁজে… ভেবেছি, তাকে ডেকে, আকীর্ণ সাপের শীত চলাচল নিয়ে বলে ফেলবো একদিন। কেননা নিষ্ক্রিয় শুক্রাণু আঁকড়ে যে দার্শনিক, প্রতিদিন মৌলিক সুর তোলে… সে জানে না
কেন ঋতুমতী কিশোরীরা— হেমন্ত এলেই কামার্ত হয়ে পড়ে!
রংহীন জলরং
সুর তোলে ঘুমন্ত পাখিরা ডেকে যাওয়া ডাক নাম ধরে, শুরু হয় গার্হস্থ-স্নান, আলোকিত জলশোভায়। রংহীন জলের নিজস্ব বিবর্ণতাই একদিন রং হয়ে ওঠে। আর জন্ম থেকে মৃত্যুর সময়টুকুর মাঝে থাকে অসংখ্য হসন্ত চিহ্ন
শ্রুতিহীন অন্ধকারকে পাশ কাটিয়ে অপেক্ষা মনে করিয়ে দেয়, আলোর পাশের নির্জনতাকে… যাকিনা সত্যিই বেমানান।
জখম তারাদের গান
গলে যায় যুবতী-জ্যোৎস্না হাতে আসা হাতের বাঁধনে।
সুগভীর বনাঞ্চল কিংবা সবুজ মৃত্তিকা পৌঁছে যেতে চায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে, যা কিছু স্পর্শের অতীত।
অন্ধকারের মতো কুটিল তৃষ্ণা লাফায় গলে পড়া যুবতী-জ্যোৎস্নায়।
আবর্তনে তীব্র আলোর বন্যায় স্নিগ্ধ হয় মাটি।
মৃত্যু মৃত্যু খেলা শেষে, হাতের বাঁধন খুলে উঠে আসে জখম তারারা।
জ্যোৎস্নায় দুলে ওঠা নীলনদী আর বৌ-মাছি- দেখো, একা উড়ে যায়!