মুজিব ইরম প্রণীত শ্রীহট্টকীর্তন
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ২:৫৮ অপরাহ্ণ, | ২৬০৭ বার পঠিত
মিনতি রাখো গো তুমি, আমারেও নিও তোমার কীর্তনিয়ার দলে…তুমি ছাড়া কে আর বুঝবে বলো অধমের মন…ভাঙ্গাচুরা তাল, ভাঙ্গা গলা, ভাঙ্গা গীতি, সুরকানার কদর…তোমার বাজুতে শুধু দিনমান রেখো তুমি…বিবাগী মন্দিরা হয়ে তোমার দেহেতে আমি মিশে যেতে চাই গো অধম ভেকের ফকির…শুধু তোমার দলের গুণে যদি মায়া পাই…যদি লোকে বলে আমিও সুরের লোক, কীর্তনিয়া, তোমার ছায়ায়…এই ভাবে তোমার চরণ পাশে, দেহতলে, মাটিতে লুটাবো মন ঘরকানা এই ছদ্ম কবিয়াল…আমাকে রাখো গো তুমি সুরের দয়ায়।— ইরমের কবিতা পড়ে পাঠক কী নেয় জানি না, আমি না হয় আমারটাই বলি। ইরমের বন্দনায় কতো-কতো দিন দেখেছি নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আছে, তারও আগে বন্ধ হয়ে গেছে চোখের পাতা, কেনো যে এতো দীর্ঘশ্বাস নিতে হয়রে ইরম বুঝি না। ভেতরের চিৎকার গুলো এতো নিঃশব্দে কান্নায় জড়িয়ে যায়…এতো এতো কুলাহয় অথচ তার কোনো খবরই রাখে না। ‘মা’ এর আঁচলের গন্ধ নিতে ইরমকে পড়া যায়।—রাশপ্রিন্ট
বন্দনা
প্রথমে বন্দনা করি গ্রাম নালিহুরী। ছাড়িয়াছি তার মায়া যেন কাটাঘুড়ি ॥ পরেতে বন্দনা করি আকাশ পাতাল। পিতামাতা দেশ ছাড়া হয়েছি মাতাল ॥ পুবেতে বন্দনা করি নাম তার মনু। এমনি নদীর রূপ উছলে ওঠা তনু ॥ উত্তরে বন্দনা করি শ্রীহট্ট নগর। সে তো থাকে মন মাঝে অনন্ত অনড় ॥ পশ্চিমে বন্দনা করি লেখাবিল নাম। এ-জীবন তার তরে তুলেছি নিলাম ॥ দক্ষিণে বন্দনা করি নাম শ্রীমঙ্গল। দেখিয়াছি টিলারূপ কুহকী জঙ্গল ॥ মৌলভীবাজার-কথা কী কহিবো আর। সে তো জানি প্রাণসখা বন্দনা অপার ॥ চারদিক বন্দি শেষে মন করি স্থির। ধরিয়াছে এই দেহ দেশের জিকির ॥ বন্দনা করিয়া সারা মধ্যে করি ভর। আসো গো কবির সখা বৈদেশ নগর ॥ ভিনবাসে ঘুরিফিরি তিষ্ঠ ক্ষণকাল। পয়ারে মজেছে মন বাসনা বেহাল ॥ পদ্য বাঁধি গদ্য বাঁধি সুরকানা আমি। ইরম হয়েছে ফানা জানে অন্তর্যামী ॥
জাতক
কতো না ঘুরেছি পথ ছদ্মবেশে, দেশে দেশে, নগরে নগরে…এই ভেক, এই মিছা আবরণ খুলে ফেলো…এই নামে ডাকো তুমি ডাকিবার ইচ্ছা যদি হয়…তুমি তো ডেকেছো কতো মায়াময় নামে…কতো রূপে হয়েছি হাজির…কতো নামে সাড়া দিতে হয়েছি অধীর…আমাকেও ডাকো তুমি নকলী অভিধায়…মনে লজ্জা পাই…আমাকেও দেখে কেউ বাস করি বৈদেশ নগর…আমাকেও দেয় খোঁটা—সোনা ছেড়ে খাদ বাছি, ছেড়ে আসি বাস্তুভিটা, ছেড়ে আসি ঘর…এত এত ডাকনাম, এত এত রূপে ডাকাডাকি…ইতা আমি লিখে রাখি তেমনি আবার—আর কোনো নাম নাই লেখা এই বুকে, আমিও সিলট্যা লোক জানে সর্বলোকে!
কীর্তনিয়া
মিনতি রাখো গো তুমি, আমারেও নিও তোমার কীর্তনিয়ার দলে…তুমি ছাড়া কে আর বুঝবে বলো অধমের মন…ভাঙ্গাচুরা তাল, ভাঙ্গা গলা, ভাঙ্গা গীতি, সুরকানার কদর…তোমার বাজুতে শুধু দিনমান রেখো তুমি…বিবাগী মন্দিরা হয়ে তোমার দেহেতে আমি মিশে যেতে চাই গো অধম ভেকের ফকির…শুধু তোমার দলের গুণে যদি মায়া পাই…যদি লোকে বলে আমিও সুরের লোক, কীর্তনিয়া, তোমার ছায়ায়…এই ভাবে তোমার চরণ পাশে, দেহতলে, মাটিতে লুটাবো মন ঘরকানা এই ছদ্ম কবিয়াল…আমাকে রাখো গো তুমি সুরের দয়ায়।
শ্রীহট্টগীতিকা
সুরমা ধলাই মনু কুশিয়ারা নদী, আমাকে ছাড়াই তারা বয় নিরবধী ॥ ফুটে ফুল হিজলের করচের ডালে, কলমি কদম ফুল বারিষার কালে ॥ দিন আসে দিন যায় হুহু করে বুক, কী যেন কী মায়ারূপ দেখেছিলো চোখ ॥ ঘুরিয়া অনেক পথ পন্থহীন হই, ধরিয়া অনেক ভান যেই-সেই রই ॥ বৈদেশ নগরে থাকি কাদাজলে লোক, আমাকে পেয়েছে দেখো শৈশব অসুখ ॥ প্রবাসে দৈবের বশে গীত নিয়া বাঁচি, আমি তো শীতের দেশে শীত হয়ে আছি ॥ আমাকে রাখিও তুমি রেখেছো যেমন, বৈদেশ বসিয়া গায় মুজিব ইরম ॥