এ জার্নি বাই বুক । কাউসার সাকী
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ৮:১৮ অপরাহ্ণ, | ২১৫২ বার পঠিত
তখন সপ্তম কি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। ‘পূর্ণিমা’ নামক একটা ম্যাগাজিন বাসায় আসত। ম্যাগাজিনটা থেকে গল্প আর বিভিন্ন দৈনিকের সাহিত্য পাতা থেকে মাঝেমধ্যে কবিতা পড়া হত। সেসব কবিতার কিছুই বুঝতাম না। তাও পড়তাম। ম্যাগাজিনটার ঈদসংখ্যায় বেশ কয়েকটা উপন্যাস ছাপা হত। পড়া শুরু করলেও ধৈর্যে কুলত না বলে সেসব উপন্যাসের কোনোটাই শেষতক পড়া হয়ে উঠেনি। আর কিশোর বয়সের মুগ্ধতার মধ্যে চির পরিচিত কমিকস, তিন গোয়েন্দা, ওয়েস্টার্ন, হরর ও রহস্যপত্রিকা তো ছিলই।
মাধ্যমিকের পরে উপন্যাস পড়া শুরু করি। মনে আছে এক বই-পোকা বন্ধুর সাথে পরিচিত হওয়ার সুবাদে রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’ এবং বঙ্কিমের ‘দেবী চৌধুরাণী’; হস্তগত হয়। বঙ্কিমের এই উপন্যাসটি ভীষণ ভালো লেগে যায়। তখন সাহিত্যের এ শাখার প্রতি আগ্রহ আরো প্রবল হয়।
একটা সময়ে এসে হুমায়ূন আহমেদ আমাকে মোহাচ্ছন্ন করে ফেলে। টানা কয়েক বছর কেবল তার বই পড়ি। লেখকের প্রথম দিককার পড়া বই ‘শুভ্র’। তবে তার প্রায় পঞ্চাশটা পঠিত বইয়ের মধ্যে ‘শঙ্খনীল কারাগার’। বইটার কথা আলাদা করে মনে আছে। নির্দ্বিধায় বলতে পারি, হুমায়ূন আহমেদ আমার এবং আমার মত অসংখ্য পাঠকের পাঠাভ্যাস সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।
হুমায়ূন মোহ পুরোপুরি কেটে গেলে সঙ্গী হন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। আরো পরে মাহমুদুল হক, রশীদ করিম ও শওকত আলী। উপন্যাসের মধ্যে তারাশঙ্করের ‘কবি’, মানিকের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’, বঙ্কিমের ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’, শওকত আলীর ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ ও রশীদ করিমের ‘উত্তম পুরুষ’ আমার বিশেষ পছন্দের। ‘উত্তম পুরুষ’ পড়তে পড়তে বারবার মনে হয়েছে বইটার বর্ণনাকারী আমি নিজে।
ছোটগল্পের সম্পূর্ণ একটা বই যদি প্রথম পড়া হয় সেটা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘দোজখের ওম’। বইয়ের গল্পগুলো বিশেষ করে ‘কীটনাশকের কীর্তি’ ও ‘অপঘাত’ পড়ে বেশ একটা ঝাঁকুনির মত খাই। প্রথম গল্পের রমিজ যখন বোনের আত্মহত্যার সাথে দারিদ্র ও সাহেবের মেয়ের উপর চড়াও হওয়াকে গুলিয়ে চিন্তা করে তখন একটা ঘোরের ভেতর দিয়ে যাই। পরে লেখকের অন্যান্য গল্পগ্রন্থগুলো পড়তে গিয়ে মাথার ভেতর সেই একই ধাক্কাটা টের পাই। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘প্রাগৈতিহাসিক’ আমার প্রিয় একটা গল্পের বই। বইতে বইটার নামে একটা গল্প আর ‘চোর’ গল্পটার কথা মনে আছে। আল মাহমুদের ‘পানকৌড়ির রক্ত’ গল্পগ্রন্থের ‘জলবেশ্যা’-র কথাও আলাদাভাবে বলতে পারি।
কবিতার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো বইয়ের নাম বলাটা দুষ্কর। তার কারণ অনেক বইয়ের নাম জানি না, কবিতা জানি। আর প্রিয় কবিতার তালিকাটা এত দীর্ঘ যে এদিকে প্রসঙ্গ না টানাটাই যুক্তিযুক্ত।
পাঠরুচি ও পাঠাভ্যাস পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রিয় বইয়ের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে পারে। আবার উল্টোটাও হয়। তাই অসংখ্য পছন্দের বই থেকে কোনো কোনো বইকে একদম আলাদা করা এক প্রকার দু:সাধ্য। তাও মনে হয় উল্লিখিত বইগুলোকে আমি আমার জন্য আলাদা করতে পারব। লেখাটা শেষ করার আগ পর্যন্ত অন্তত তাই মনে হচ্ছে।