মায়াপারাবার । পাপড়ি রহমান
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জানুয়ারি ২০১৬, ৬:০৪ অপরাহ্ণ, | ২১৪২ বার পঠিত
আবেদা খানম বালিকা বিদ্যালয় (১৬)
আমাদের গ্রামে বিদ্যা শিক্ষার হার যতোটা মন্দ হওয়ার কথা, ততোটা কিন্তু নয়। কারণ করটিয়ার জমিদাররা নিজেদের শান-শওকতের দিকে অত বেশি খেয়াল না দিয়ে, সাধারণ মানুষকে শিক্ষিত করে তোলার দিকে অধিক মনোযোগি ছিলেন বলে। জমিদার চানমিয়া নিজেই প্রচণ্ড শিক্ষানুরাগি ছিলেন। তাঁর এই অনুরাগের ফলে গ্রামে তিন-চারটা ইশকুল-কলেজ বিদ্যমান ছিল। চানমিয়া সাহেবের বাবার নামে ছেলেদের ইশকুল ‘হাফিজ মোঃ আলি উচ্চ বালক বিদ্যালয়’। চানমিয়া সাহেবের দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে ‘রোকেয়া ফাজেল মাদ্রাসা’। চানমিয়া সাহেবের ছেলে নওয়াব আলির স্ত্রীর নামে ‘আবেদা খানম বালিকা বিদ্যালয়’। আর ছিল উপমহাদেশের প্রথম মুসলিম কলেজ-‘ছাদৎ কলেজ’। এ কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল ছিলেন —ইব্রাহীম খাঁ। এই হলো আমাদের গ্রামের তখনকার ইশকুল-কলেজের অবস্থা।
একদিন পৌষ বা মাঘের সকালে উষে(শিশির)সিক্ত হয়ে আছে ঘাস-মনে হয় খানিক আগে ঝিরঝিরিয়ে বৃষ্টি হয়েছে! আমি অই বৃষ্টির মতো উষে ভেজা ঘাসে পা ভিজিয়ে চলেছি আবেদা খানম বালিকা বিদ্যালয়ের উদ্দেশে। দাদাজান আমাকে নিয়ে চলেছেন এই ইশকুলে ভর্তি করিয়ে দেবেন বলে। কারণ ততদিনে দাদাজানের কিনে দেওয়া ‘শিশুশিক্ষার’ প্রথম থেকে শেষ পাতা আমার মুখস্থ-ঠোঁটস্থ হয়ে গেছে। ধারাপাতের এ মাথা থেকে সে মাথা আমি ঝড়বরাসন(না ঠেকে)বলতে পারি। আর আমার এতসব বিদ্যা-শিক্ষা দেখে বড়চাচিমা বলেছেন—
হঠাৎ করেই যেন ইশকুলের দেখা পেলাম। একটা বিশাল আঙিনা টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। আর তার ভেতরে হলুদ রঙের বিল্ডিং।এতটাই হেঁটেছি আমি যে আমার পা দুটো ভেঙে পড়তে চাইছে।
‘এইবার তোর ইশকুলে ভর্তি হওন লাগবো’ ফলে আমি যাচ্ছি আমার গৃহ শিক্ষকের নির্দেশ পালন করতে।
কিন্তু দাদাজানের সাথে আমি কি হেঁটে পারি?
দাদাজান বেঁটে-খাঁটো ছোট গড়নের মানুষ, কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে আমার চাইতে বিশ কদম এগিয়ে যান। আর আমি তো দাদাজানের চাইতে আরো ছোট। আমি কিভাবে তার সাথে হেঁটে পারবো? ফলে আমাকে প্রায় দৌড়িয়ে চলতে হচ্ছে। জমিদারবাড়ি ছাড়িয়ে, মসজিদ পেরিয়ে, ব্রিজ ফেলে বিশাল এক মাঠের উপর দিয়ে হাঁটছি আমরা। হাঁটছি তো হাঁটছি। কিন্তু ইশকুলের দেখা আর মেলে না! এদিকে উষে ভেজা ঘাস আমার দুই পা একেবারে ছেয়ে ফেলেছে। আর পা দুটো সামান্য চুলকাতে শুরু করেছে। এখন কি করি আমি? আমার পায়ের স্যাণ্ডেল উষে ভিজে চপচপা হয়ে গেছে।
হঠাৎ করেই যেন ইশকুলের দেখা পেলাম। একটা বিশাল আঙিনা টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। আর তার ভেতরে হলুদ রঙের বিল্ডিং।এতটাই হেঁটেছি আমি যে আমার পা দুটো ভেঙে পড়তে চাইছে।
দাদাজান এইবার আমার হাত ধরলেন এবং নিয়ে গেলেন হেডমিস্ট্রেসের রুমে। আমি রুমে ঢুকেই সামনে রাখা একটা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লাম।(আসলে এটা টিচারদের চেয়ার। কোনো ছাত্রীর বসার নিয়ম নাই। বড় হয়ে শুনেছি আমার আব্বাও নাকি ইশকুলে ভর্তি হতে গিয়ে প্রথম দিনই বসে পড়েছিল টিচারদের চেয়ারে)
দাদাজানকে দেখলাম হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে উঠলেন এবং আমাকে হাত ইশারা করে বললেন—
‘এইখানে আইস্যা বসো’
তাকিয়ে দেখি দাদাজান একটা হাতলওয়ালা চওড়া কাঠের বেঞ্চিতে বসে আছেন। ফলে আমকেও চেয়ার ছেড়ে উঠে দাদাজানের কাছে গিয়ে বসতে হলো।
চওড়া কালোপাড় ও সাদারঙের শাড়ি পড়ে একজন বড়চাচীমা গোছের মহিলা বেশ বড়সড় একটা চেয়ারে বসে আছেন। তিনি যেন দাদাজানকে কি কি জিজ্ঞেস করলেন আর দাদজানও উত্তর দিয়ে গেলেন।
দাদাজান তার টাকা পয়সা রাখেন একটা বটুয়ায়। বটুয়ার ফিতা দিয়ে সেটা ভালো করে কোমরে বেধে রাখেন। দাদাজানকে দেখলাম বটুয়া খুলে টাকা-পয়সা বের করতে। তারপর একটা কাগজে কি কি যেন লিখে দিলেন। বড়চাচীমা গোছের মহিলাকে বেশ সন্তুষ্ট মনে হলো। এবার তিনি আমার দিকে ফিরলেন—
‘দুইয়ের ঘরের নামতা বলো তো খুকি?’
আমি প্রথমে সামান্য ভয় পেলাম। তারপর নিচু স্বরে গড়গড় করে বলে গেলাম।
তিনি দাদাজানের দিকে ফিরে বললেন ‘নাতনীর মাথা তো বেশ পরিস্কার’ ‘মাথা পরিস্কার!’ এ কথার মানে কি?
গতকাল অবশ্য বড়চাচীমা আমাকে দলাই-মলাই করে গোসল করিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে আমি বাড়িতে যাওয়ার জন্য উছপিছ করছি। আমার ইশকুলের গল্পটা কত তাড়াতাড়ি সবাইকে বলতে পারবো? কিন্তু দাদাজান অই আপার সাথে এমন গল্প জুড়েছেন যে উঠতেই চাচ্ছেন না! দাদাজানকে আমি লুকিয়ে বেশ কয়েকবার টানাটানি করলেও তিনি উঠলেন না। দীর্ঘ গল্প শেষ করেই তিনি উঠলেন।
দাদাজানের সংগে আমি যখন বাড়ি ফিরছি তখন ঘাসের উষ আর আগের মতো আর্দ্র নাই। ফলে হাঁটতে হাঁটতেও পা আর ভিজে উঠছে না। কিন্তু জমিদার বাড়ির সামনে আসতেই ফের ফাঁপড়ে পড়লাম। দাদাজান আর আমাকে দেখে একপাল রাজহাঁস ক্ব ক্ব করে তেড়ে এলো। আমি দাদাজানের হাত ছাড়িয়ে দিলাম এক দৌড়। দৌড়ে গিয়ে পড়লাম ল্যাণ্টেনা ফুলের ঝোঁপের উপর। এই ঝোঁপ কাঁটায় ভরা। ফলে মুহূর্তে একেবারে আমার হাত-পা ছড়ে গেল। দাদাজানও কি রাজহাঁসদের কামড়কে ভয় পায়?
নইলে সে কেন নিরাপদ দূরত্ত্বে দাঁড়িয়ে আছে? আর ‘হেইট’ ‘হেইট’ করে হাঁসের দলকে তাড়ানোর চেষ্টা করছে।
কিন্তু বেয়াদব হাঁসের দল দাদাজানকে একেবারেই পাত্তা দিল না।
ইশকুলে ভর্তি হওয়ার প্রথম দিনেই এই উপদ্রব।
আমি স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড ভয় পেলাম। দাদাজানের তো কিচ্ছুই হয় নাই। হাত-পায়ে কাঁটার খোঁচা আমিই খেয়েছি। তবে এটুকু বুঝতে পারলাম ইশকুলে যাওয়া-আসার পথে এই হাঁসের দঙ্গল আমাকে প্রায়ই বিপদাপন্ন করবে।
সামান্য পরে রাজহাঁসের দল লেজ নাড়িয়ে পুকুরে নেমে যেতেই আমার মন খুশিতে ভরে গেল! জমিদারদের সমস্ত জায়গা জুড়েই নানান ফুল-ফলের গাছ। সারিসারি নানা রঙের পাতাবাহার। সেসবের পাশে ঘন্টাফুল। বান্দরলাঠি। কৃষ্ণচূঁড়া। স্থলপদ্ম। রক্তজবা। ঝুমকাজবা। এই রকম নানান ফুল একেবারে খিলখিলিয়ে হেসে আছে।
দাদাজানের হাত ধরে ফের বাড়ির পথ ধরলাম।
ছায়াচ্ছন্ন পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে রাজহাঁসের দাবড়ানি খাওয়ার কথা আমি বেমালুম ভুলে গেলাম…
আমার চান্দেরবুড়ি (১৮)
বড়চাচাজানকে আমি ডাকতাম ‘চান্দেরবুড়ি’! এমন অদ্ভুত নামে চাচাকে কেন ডাকতাম জানিনা।চাঁদের গায়ে যে ছায়া দেখা যায়, তার সাথে চাচাজানের ঝাঁকড়া চুলের মিল খুঁজে পেয়ে হয়তো এমন ডাকতাম। অথবা চাচাজানের দোহারা স্বস্থের জন্য। আমি আসলে মনে করতে পারি না, এমন অদ্ভুত নাম কেন তাকে আমি দিয়েছিলাম। তবে এ নাম আমাকে কেউ শিখিয়ে দেয় নাই— এ কথা সত্য।
ছুটিতে চাচাজান বাড়ি এলে আমি আমার খেলার সাথীদের ধারে-কাছেও ভিড়তাম না। তখন চাচাজান হয়ে উঠতো আমার সারাদিনের খেলার সাথী। পাখিদের মতো সারাক্ষণ চাচাজানের কানের কাছে কিচিরকিচির করতাম আমি—হয়তো এ কারণে চাচাজান আমাকে ডাকতো ‘কটাশাশুড়ি’।
আমি অনবরত কটকট করে কথা বলে চাচাজানের কান ঝালাপালা করে দেই বিধায় কটা এবং শাশুড়ি বিধায় শাশুড়ি(খুব সম্ভবতঃ)।
প্রায় দিনভরই চাচাজানের পিঠের উপর পড়ে থাকতাম আমি। আমার আলাদা বিছানার দরকার হতো না। কখনো উঠে গিয়ে চাচাজানের জন্য নানান পদ রান্না করতাম। যেমন ইটের টুকরা দিয়ে গোশত। মোরগগাছ দিয়ে পাটিসাপটাপিঠা আর মোরব্বা। কচুরিপানা তুলে এনে সন্দেশ। ধুলাবালি যত ঢাকুনের ভাঙা মাথায় ঢুকিয়ে ভাঁপাপিঠা। আমার এতসব নানান পদ চাচাজান ভারি যত্ন নিয়ে খেত! জিব আর নিচের ঠোঁট দিয়ে টকাস-টকাস শব্দ তুলে খেত।
আমি চাচাজানের চুল বেঁধে দিতাম লাল-গোলাপি ফিতা দিয়ে। তার একমাথা কালো-কোঁকড়া-চুলে আমার করে দেয়া ফিতার বেণী। এই ফিতা মাথায় দিয়েই চাচাজানের দিন ঢলে পড়তো রাতের পিঠে।
চুল বেঁধে দেওয়া ছাড়াও পাউডার মেখে দিতাম সারামুখে। চোখের উপরের পাতায় কাজল। আমার করে দেয়া সাজসজ্জা নিয়েই সে সারা বাড়িময় ঘুরে বেড়াতো। আর আমার নাইনুহুরি গল্প তো ছিলই তার সাথে।
নিঘঘুম বাদশার শাস্তর শোনাতে বললে নিজেই ঘুমিয়ে পড়তো। ঘুমঘোরেই বলতো ‘চুপ করে ঘুমিয়ে থাকাই নিঘঘুম বাদশার শাস্তর।‘ বলেই ইচ্ছা করে করে গরগরিয়ে নাক ডাকতো।
চাচাজানের জন্য আমার আয়োজনেরও শেষ ছিলনা। আমি তার জন্য কত পদের মাটিরপিঠা যে বানাতাম! সেসব যত্ন করে রোদে শুকিয়ে কটকটা করে তাকে খেতে দিতাম। চাচাজান সেগুলো টুকুসটুকুস শব্দ করে খেত।(আসলে মিছামিছি খাওয়া) এমন কোনো ঈদ ছিলনা যে ঈদে চাচাজানের দেয়া নতুন জামা আমি পরিনি। যেখানেই সে থাকতো, যতদূরেই— ঈদের ঠিক আগেভাগেই এসে যেত আমার নতুন জামা। অথবা জামার কাপড়। চাচাজানের দেয়া সেইসব জামা-কাপড় কিন্তু যেইসেই কাপড় নয়। খুব ভাল মানের ও দামী ছিল সেসব। চাচাজানের দেয়া জামাগুলোকে আমি বিভিন্ন নামে ডাকতাম। যেমনঃ
১. টেলিভিশনের জামা
২. সাদা নেটের জামা
৩. গোলাপ চিকেনের জামা
জামার নাম কেন এমন অদ্ভুত তাও ছিল সবার কাছে বেশ রহস্যের। ‘চান্দেরবুড়ির’ মতো ‘টেলিভিশনের জামার’ রহস্য আমিও ভেদ করতে পারিনি।
আমার চান্দের বুড়ি বেজায় সৌখিনও ছিল। আর ছিল আমার দিদির চোখের মনি। দিদিকের সবাই ডাকতো ‘বুদ্ধর মা’।বড় চাচাজানের ডাকনাম-‘বুদ্ধ’।
চাচাজান আর আমি মাটিতে দাগ কেটে ঘর বানিয়ে চারা দিয়ে খেলতাম ছিঃ কুতকুত। জোলামাতি বা জোলাভাতও (চড়ুইভাতি) খেলতাম তার সাথে। তখন দিদি এসেও খেলতো আমাদের সাথে। একপোয়া চাল দিত দিদি। সাথে ২টা ডিম। তিনটা বেগুন। বেগুন আর ডিম দিয়ে ‘বেগুনখাসি’ রান্না হতো। এ রান্না করে দিত আমাদের অন্দরমহলের কেউ। চাচাজান কলাপাতা পেতে খেতে বসতো আমাদের সাথে। কোনো কোনো দিন জোলামাতিতে খিঁচুড়ি রান্না হতো। তখন দুই-চারজন দাদীগোছের বড় মানুষ যুক্ত হতো আমাদের সাথে। তারাও আমাদের সাথে খেলতো। আসলে তারা আমাদের রান্না করে দিত, যাতে আমরা আগুনে হাত-পা পুড়িয়ে না ফেলি। খাওয়ার সময় তারাও কলাপাতা করে আমাদের সাথে খেতে বসতো।
আমার লেখা শেখার জন্য চাচাজান সীতাকুণ্ড থেকে শ্লেট কিনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।কত চকলেট আর জামা-কাপড় যে পাঠাতেন তার কোনো ইয়ত্তা নাই।
কোথাও তালিম না নিয়েও চাচাজানের গানের গলা ছিল ভারি সুরেলা-সুন্দর! প্রায়ই গলা খুলেই গাইতেন মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেব খোঁপায় তারার ফুল… অথবা
আমায় নহে গো
ভালবাস শুধু, ভালবাস মোর গান…
তখন বুঝতে পারতাম না। কিন্তু এখন পারি-চাচাজান ছিলেন জন্মগত সূত্রেই সত্যিকারের শিল্পী। নইলে আবৃত্তিও এতো ভাল করতেন কিভাবে? নজরুল যেন তার গলায় নতুন মাত্রা পেত। কতদিন শুনেছি তাকে আবৃত্তি করতে—
ভিখারি ফিরিয়া চলে
চলিতে চলিতে বলে
আশিটি বছরে কেতে গেছে মোর
তোমায় ডাকিনি প্রভু
আমার ক্ষুধার অন্য তা বলে বন্ধ করনি কভু!
ভরাট কণ্ঠে উচ্চারণ করতেন
বল বীর
চিত উন্নত মম শীর। এমনই ছিল আমার ‘চান্দের বুড়ি’।একেবারে নানান গুণের আকর!
টকটকে গৌরবর্ণ। মাঝারি উচ্চতার এক অদ্ভূত মানুষ।গান পাগল। কবিতা পাগল।না্টক পাগল। আর কি যে অবাক কাণ্ড।চাচাজানের পাগলামিগুলা ধীরে ধীরে আমার মাঝেও সংক্রমিত হলো।হয়তো এইসব কারণেই আমি নারী হয়ে জন্মেও ঠিক নারী হিসাবে বেড়ে উঠতে পারলাম না।নারীর শ্রীতে থেকেও মনে মনে বড় হতে লাগলাম মানুষ হিসাবে।
আমার চান্দের বুড়ি বেজায় সৌখিনও ছিল। আর ছিল আমার দিদির চোখের মনি। দিদিকের সবাই ডাকতো ‘বুদ্ধর মা’।বড় চাচাজানের ডাকনাম-‘বুদ্ধ’।
কী যে অপরূপ হস্তাক্ষর ছিল আমার চান্দের বুড়ির। কী অসাধারণ গানের গলা।আবৃত্তির স্টাইল।আমার চান্দের বুড়ির সমকক্ষ কেউ-ই ছিল না।এত বেশি ব্যাক্তিত্ত্ব ছিল যে, কেউ সচরাচর কথা বলতেও ভয় পেত।অথচ আমার সাথে অতুল্য এক সখ্য ছিল তার।এসব কারণেই হয়তো আমি পরবর্তী জীবনে নির্ভীক হতে পেরেছি। আমি অকারণেই ডাকতাম, সারাদিনই ডাকতাম ও চান্দের বুড়ি, আমার চান্দের বুড়ি? চাচাজান দ্বিধাহীন তড়িৎ জবাব দিতেন— কি বলো আমার কটা শাশুড়ি?