সিলেটের সর্বত্র ভূমিকম্পভয় দিনভর
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জানুয়ারি ২০১৬, ৫:৩০ অপরাহ্ণ, | ১৯৪৯ বার পঠিত
সুবর্ণ বাগচী : বিভাগীয় নগরী সিলেটের সর্বত্র গত ভোররাতে সংঘটিত ভূমিকম্প নিয়ে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছিল সারাদিন। সর্বস্তরের পেশাজীবীদের মধ্যে একটাই ছিল আলাপের বিষয়বস্তু, ভূমিকম্প ও কম্পনোত্তর ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ক খোঁজখবর। অফিস-আদালতে স্বজন ও সহকর্মীরা সারাদিন পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন, দূরভাষে কুশল জিজ্ঞাসায় দিন কাটিয়েছেন সবাই নিজেদের বন্ধুবান্ধব ও স্বজন-পরিজনের, প্রবাসীরা বাড়িতে ফোন করে খবর নিয়েছেন সকাল থেকে সারাদিন।
পঞ্চান্ন থেকে সত্তরোর্ধ্ব বয়সসীমার এগারোজন নারী ও পুরুষের সঙ্গে এই প্রতিবেদক আলাপ করার সুবাদে সদ্য সংঘটিত ভূমিকম্পের তুলনামূলক একটি চিত্র উঠে এসেছে তাদের জীবনাভিজ্ঞতায় আগের ভূমিকম্পগুলোর সঙ্গে এর পার্থক্য ও তীব্রতা বিষয়ে। এগারোজনের প্রত্যেকেই একটা ব্যাপারে অভিন্ন অভিমত প্রকাশ করেছেন যে এহেন বড় ধাক্কার ভূকম্পন তারা আগে কোনোদিন টের পান নাই। যদিও ভূগোলবৈশিষ্ট্যগত কারণে সিলেট অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ ভূকম্পপ্রবণ অঞ্চলের অধিভুক্ত, তৎসত্ত্বেও অঞ্চলবাসী বর্ষীয়ান সবার মতে এখন গত দুই দশক ধরে নির্বিচারে টিলানিধন ও পাহাড়কর্তন ইত্যাদি কারণে এবং জলাশয় ভরাটকরণ ও খনিজ জ্বালানী ও ভূগর্ভস্থ পাথর উত্তোলন এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের জের হিশেবে এতদঞ্চলে পরিবেশঝুঁকি বিভীষিকাবহ হয়ে উঠছে।
দেশের সর্বত্র অনুভূত গত ভোররাতের দিককার ভূমিকম্পে সিলেটের জনমনে আতঙ্ক অধিক হবার আরেকটা কারণ, সংঘটিত কম্পনটির উৎপত্তিস্থল মণিপুর এবং মণিপুর রাজ্যটা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী সিলেট জেলার সংলগ্ন। উৎপত্তিস্থল ভারতের মণিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্ফল থেকে সিলেটের অবস্থান অতি নিকটে। এটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকা। সিলেটের ব্যাপকাংশ জুড়ে ছড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের মণিপুরী জনগোষ্ঠী, যাদের আত্মীয়বর্গ রয়েছেন ভারতের মণিপুরে, এবং তারাও তাদের স্বজনদের খোঁজতল্লাশ নিয়েছেন সারাদিন।
অ্যামেরিক্যান্ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী উৎপত্তিস্থলের কাছাকাছি রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পতীব্রতা ছিল ৬ দশমিক ৭। ভারতের স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে চারটার দিকে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে এবং বাংলাদেশের স্থানীয় সময় অনুযায়ী ঠিক আধাঘণ্টা বাদে অর্থাৎ ভোর পাঁচটায় এর আঘাত অনুভব করেন দেশবাসী। বাংলাদেশের জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে যে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ৩৫৩ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। ভূমিকম্প চলাকালীন বাংলাদেশের রিখটার স্কেলে রাজধানী ও নিকটবর্তী এলাকার কম্পনতীব্রতা ধরা পড়েছে চারের অধিক।