গ্লাস বিচ নামে পরিচিত এই সমুদ্র সৈকত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫, ৭:২২ অপরাহ্ণ, | ৩০৮৩ বার পঠিত
সুবর্ণ বাগচী : কতো রকমের সৌন্দর্য পৃথিবীর স্তরে-স্তরে, তা একজীবনে দেখা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। বালির ওপর রোদের আলো পড়ে চিক চিক করছে এমন দৃশ্য সাগর পাড়ে গেলে চোখে পড়ার মতো। কিন্তু বালির পরিবর্তে হাজার হাজার পাথর দেখেন, আর সেই পাথর যদি হয় কাঁচের তৈরি, তাহলে একটু অবাক হতেই পারেন। তবে কারো মন খারাপ থাকলে দ্রুত ভালো হয়ে যাবে এটাও বলা যায়।
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার ফোর্ট ব্র্যাগের কাছের ম্যাক্যারিচার স্টেট পার্কে রয়েছে এমনই একটি বিচ। গ্লাস বিচ নামে পরিচিত এই সমুদ্র সৈকত যে কোনো সময় যে কারো মন ভরিয়ে দিতে সক্ষম। দিনের শুরুতে যখন সাগর পাড়ের রঙিন কাঁচ-পাথরের ওপর সূর্যের আলো পড়ে তখন তা দেখার মতো এক অভাবনীয় দৃশ্য হয়।
এই কাঁচের টুকরোর সমুদ্র সৈকত একদিনে তৈরি হয়নি। এর শুরু ১৯০৬ সাল থেকে। ফোর্ট ব্রাগের বাসিন্দারা তাদের নিত্য ব্যবহার্য বাতিল জিনিস এই সৈকতে ফেলা শুরু করে। বাতিল জিনিসের বেশির ভাগই ছিলো অপ্রয়োজনীয় কাঁচের টুকরো ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। কিছুদিন পর বাতিল জিনিস খুব বেশি পরিমাণে জমে গেলে দাহ্য বাতিল জিনিসগুলো পুড়িয়ে ফেলা হতো।
১৯৪৩ সালের দিকে এসে সৈকতের একটি অংশ কাঁচের ভাঙ্গা টুকরো ও বর্জ্যে একেবারে ভরে ওঠে। ফলে সৈকতের অন্য পাশে তৈরি করা হয় আবর্জনা ফেলার স্থান। ১৯৪৯ সালের এসে এই সৈকতটিও আবর্জনায় ভরে গেলে বর্জ্য ফেলার স্থানটি আরো উত্তরে সরিয়ে নেয়া হয়। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত সেটি ব্যবহৃত হয়।
একটা সময় এসে সমুদ্র সৈকত কাঁচ এবং আবর্জনায় ভরে উঠলে ক্যালিফোর্নিয়ার ‘পানি সম্পদ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর’ ও শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সৈকতে আবর্জনা ফেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেয়। এরপর সৈকতটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়।
এ সময় পুনর্ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রাংশগুলো বিক্রি করা হয়। আর বাকি যা কিছু ছিলো তা বছরের পর বছর সৈকতে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের সঙ্গে ঘষা লেগে মসৃণ থেকে মসৃণতর এবং আরো বেশি দ্যুতিময় হয়। যেনো এক একটি মহামূল্যবান পাথর।
১৯৯৮ সালে গ্লাস বিচ জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এর আগে অবশ্য পাঁচ বছর ব্যাপী এক বিরাট সংস্কারকর্ম চালানো হয় বিচে। ২০০২ সালে এই সৈকতটিকে ম্যাক্যারিচার স্টেট পার্কের অধীনে নিয়ে আসা হয়। এখানে প্রতি বছর প্রায় ১০,০০০ দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।
তবে দর্শনার্থীরা সংগ্রহে রাখার জন্য কাঁচ তুলে নেয়ায় এবং ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে যাওয়ায় ক্রমাগত কমছে নয়নাভিরাম এই কাঁচ-পাথরের সংখ্যা। তাই দর্শনার্থীদের জন্য কাঁচ সংগ্রহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিবছর এই সমুদ্র সৈকতে গ্লাস ফেস্টিভালের আয়োজন করা হয়।
ঠিক একই রকম সৈকত ক্যালিফোর্নিয়ার বেনিসিয়া ও হাওয়াই -এর হানাপেপেতে রয়েছে।