ম্যাকগাইভার । জাহেদ আহমদ
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ অক্টোবর ২০১৫, ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ, | ৩৮৮৫ বার পঠিত
আজও বুধবার মানেই আমাদের কাছে ম্যাকগাইভার। বুধবার রাত নয়টা মানে ম্যাকগাইভারপ্রহর। আমাদের জীবনে ম্যাকগাইভারমুহূর্ত প্রভূত অবদান রেখেছে প্রায় কাকপক্ষীরও অগোচরে। এখনও যখন আমরা ধাঁধায় নিপতিত হই জীবনগোলকের অলিগলিপথে, এখনও যখন গভীর আঁতান্তরে লেজেগোবরে প্যাঁচ খাই বিড়ম্বিত ভোকাট্টা গুড্ডির ন্যায়, এখনও যখন মনে হয় মানিক্যচিপায় ফেঁসে গেছি নিরাশা-নিরুদ্ধার নিধুয়া পাথারে, ম্যাকগাইভার চকিতেই দিয়া যায় উঁকি হৃদিকোণে। র্যে অফ হোপ্ ঝিলিক দিয়া যায়। হিম্যানশিপ নয়, ম্যাচো ইমেইজে ম্যাকগাইভারকে দেখা যায় নাই ইহজন্মে, ক্যাশ্যুয়্যাল্ বেশভূষা আর ভাবভঙ্গি দিয়াও দুনিয়া জিনিতে শেখায়েছে ম্যাক আমাদিগেরে। ম্যাকের সঙ্গে অসম্ভব কত অভিযানে পেশী কিংবা আরও গুচ্ছগাদার দুনিয়াখ্যাত অস্ত্রশস্ত্র-পরাশক্তির বদলে একদম সোজাসাপ্টা কাণ্ডজ্ঞান ও সরল-সাধারণ সায়েন্স ব্যবহার করে প্যাশেন্স বজায় রেখে রেস্কিয়্যু করে এনেছি নিজেরে এবং নিজেরই ন্যায় চারপাশটারে, সেই গল্পের যেহেতু কোনো পরিধিরেখা নাই কাজেই নিঃশেষে সেইটা ব্যক্ত ও বোধের-অন্তর্ভূত বলিয়া গণ্য করা হইলে পরে ম্যাকগাইভার তথা আমাদের শৈশব ও প্রাকতারুণ্য ফড়িংকৈশোরের বিকাশের ইতিবৃত্ত যথাসাধ্য সংক্ষেপে পেশ করা যাবে নেক্সট প্যারাগুলোতে।
এই আমরা কারা, লাইনে লাইনে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে এখন রচনা লেখার বয়সে চলে এসেছি যেন, কোন ফোকরে এহেন অঘটনা ঘটিল, টের নাহি পাইনু। লোকে এখন জিগায়, কে হে তুমি! পৃথিবীটা কি তোমার! ওয়েল, ওয়ান্স আপঅন অ্যা টাইম অন দিস্ আর্থ, এহেন সিচ্যুয়েশন ওয়্যজ ইনকন্সিভ্যাব্যল টু আস্। ইনডিড, পৃথিবী নামের এই ছোট্ট ফুয়েল-স্টেশনের আমরাই ছিলাম প্রোপ্রাইটর তখন, আমরাই ছিলাম স্বত্বাধিকারী পৃথিবীর। আমরা ছিলাম প্রত্যেকে একেকটা জমজমাট শহরের শেরিফ, একেকটা ধুন্দুমার দিনের দিওয়ানা ফানাফিল্লা প্রেমিক, ছিলাম রাত্রির রাখাল। দুনিয়া পাহারা দিয়া রাখতাম আমরা রাত্তিরের জলসাজাত হট্টগোলে। টিলাগড় থেকে জিন্দাবাজার, উপশহরের উঠতি বিল্ডিংগুলোর গায়ে ডাঁই-করে-রাখা ভাঙা ও পরিত্যক্ত প্লাস্টারের সিমেন্ট-পাথরকণা মাড়ায়ে হেঁটে হেঁটে সুরমা এস্পার-ওস্পার অলমোস্ট খোদার তিরিশ দিনমাসবর্ষ, জল্লারপার টু কদমতলি, গোটা দুনিয়া টহল দিয়ে বেড়াতাম আমরা রাত্রিকুকুরের সঙ্গমদৃশ্যের নন্দন নিয়া দার্শনিক আলাপ করতে করতে এবং অপরূপ অন্ধকারের নৈঃশব্দ্য ফুঁকতে ফুঁকতে। এবং ছিল পথিমধ্যে থেমে থেমে ঝাঁপ-গোটানো দোকানগুলোতে পাত্তিমারা চায়ের নৌটঙ্কি। মিনহোয়াইল, চলে গেছে একের-পর-এক কয়েক দশক। কতকিছু যোগ হয়েছে জীবনে, বিয়োগ হয়েছে কতকিছু দুনিয়া থেকে, এরই মধ্যে। এসে গেছে ফেসবুকে রাজা-উজির মারা। নব্বই গিয়েছে, শূন্যও ভোকাট্টা, এসেছেন মজলিশে মহামহিম দ্বিতীয় দশকের কবিবৃন্দ। দুনিয়া এখন তাহাদেরি কৃপাপ্রার্থী। তারাই এখন রঙ দেবেন দুনিয়ার দেয়ালে দেয়ালে, ফেলবেন আলো ঝুপড়ি-এলাকাগুলোতে। এ-ই তো দুনিয়ার হার্ডল্স ইনফিনিটি, সিলসিলা জৈবনিক, অর্কেস্ট্রা অফ লাইফ। দ্য শ্যো মাস্ট গ্য অন্, লেট্’স্ রক্-ন্-রল্, লেট্’স্ স্টিয়্যার ইট আপ্ …!
শুধু তো ম্যাকগাইভার নয়, সেইসময় একাধারে দেখতাম বিটিভি-রিলেকৃত ইংরেজি সিরিয়ালগুলো। কম পানিশমেন্ট নয় কিন্তু, সত্যি সত্যি হাত-পা বেঁধে পেটানো হয়েছে আমাকে এবং আমাদেরকে স্রেফ বিটিভির ইংরেজি সিরিজগুলো দেখার নেশা নিষেধ সত্ত্বেও ছাড়তে না-পারার কারণে! এরশাদের আমলে এই এক জিনিশ ছিল যা আজও মিস্ করি, বিটিভির ইংরেজি সিরিয়ালগুলো ও হপ্তান্তের ম্যুভি অফ দ্য উইক। প্রচুর সিরিয়াল দেখিয়েছে ওই সময়ে বিটিভি, একটানা দশবছরের জবরদস্তিমূলক এরশাদসোহাগকালে, বড় হয়ে দেখতে পেয়েছি যে সেসবের সব-কয়টি সিরিয়ালই ছিল গ্রেইট অফ দ্যাট টাইম। কয়েকটা নাম উল্লেখ করা যাক : ডালাস্, ডাইন্যাস্টি, মিয়ামি ভাইস্, সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান্, বায়োনিক উওম্যান্, ইনক্রেডিবল হাল্ক, স্টারট্র্যাক্, দ্য অ্যা টিম্, দ্য ফলগাই, অ্যা লিটল হাউজ অন দ্য প্রেইরি, দ্য ফ্যামিলি টাইজ্, নর্দার্ন এক্সপোজার, ইএনজি (এর ইল্যাবোরেশন ছিল ‘ইলেক্ট্রোনিক নিউজ গ্যাদারিং’), রিক্যুয়্যেম ফর গ্র্যানাদা, অ্যাল.অ্যা. কনফিডেনশিয়্যাল্ (পূর্ণনামে লস্অ্যাঞ্জেলিস্ কনফিডেনশিয়্যাল্), দ্য উইজার্ড, দ্য ক্রনিকল্স অফ নার্নিয়া, গার্ল ফ্রম্ টুমরো … ও আরও অনেক-অনেক ধারাবাহিক। কোনোটাই বাদ দেই নাই, নিদেন বেতবুনিয়া বা তালিবাবাদ ভূ-উপগ্রহকেন্দ্র থেকে সম্প্রচারজনিত অনিবার্য বিঘ্ন অথবা বৈদ্যুতিক গোলযোগ না-ঘটিলে, নিপীড়ন-জেলজুলুম সয়েছি কিন্তু আপোস করি নাই সিরিয়ালকিলার কাকার সঙ্গে। পেটানোর কাজটা করতেন যিনি, নিষ্ঠা ও নিষ্ঠুরতার সঙ্গে, তিনি আমাদের ছোটচাচা, যাকে আমরা কাকা বলে ডাকি। কিন্তু চুক্তি একটা হয়েছিল পরিস্থিতি সামাল দিতে, একটা শান্তি-প্রতিষ্ঠাপক সন্ধি, ম্যাকগাইভার দেখা যাবে কেবল। ম্যাকগাইভার দেখলে কোনো মাইরধইর নাই, আপিল-হাইকোর্ট নাই, ম্যাকগাইভার দেখলে বুদ্ধি বৃদ্ধি পাবে নির্বোধ আমার — এই-রকমই নিশ্চয় ধরে নেয়া হয়েছিল। সো, ম্যাকগাইভার দেখতাম আমরা সপরিবার। সবারই বেড়েছে বুদ্ধি, নিশ্চয়ই, কেবল গুবলেট পাকিয়ে গেছে এই বান্দার। বেশি বেশি সিরিয়াল দেখার কুফল, তা কী-আর করা, তখন তো বুঝবার পারি নাই। দিন গিয়াছে ঢের দূরদিগন্তে চলে, এখন বুদ্ধি দিয়া আর আমড়া কাম নাই, কাজেই ইংরেজি সিনেমা-সিরিয়ালে ইস্তফা দিবার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ তো দেখি না।
ম্যাকগাইভার আমাদের আর্থ-আভ্যন্তরীণ উন্নয়নেও যথেষ্ট সচেষ্ট হয়েছিলেন অবদান রাখতে, একটু একটু কন্ট্রিবিউশন রেখেও তো ছিলেন, ম্যাকের মুখচ্ছবি সম্বলিত ভিয়্যুকার্ড আর এক্সার্সাইজ খাতা বিক্রি হইত বাজারে খুব, খরিদও করেছি বেশ, লোক্যাল মার্কেটে সেসবের একটা আর্থিক ইম্প্যাক্ট তো ছিল নিশ্চয়। কিন্তু সবচেয়ে বড় অবদান ম্যাকগাইভারের সম্ভবত অন্যত্র, সেইটা আমার পার্সোন্যাল জীবনে ঘটেছে, এইটা একটু বলি। মাধ্যমিক পরীক্ষা ফাইন্যালের ঘটনা এইটা, আমাদের দাদি বলতেন মিট্টিক আর আমরা বলতাম এসএসসি, তখন ম্যাকগাইভার তার পিক্ সিজন্ পার করছিল। তো, পরিবারসংশ্লিষ্ট কোনো-এক দুর্যোগবশত জেনার্যাল সায়েন্স পরীক্ষার আগের রাতে রিভিশন্ দিতে না-পারার কারণে এক্সামে যেতে চাইছিলাম না আমি। ডিসিশন্ ওয়্যজ্ টেইকেন্ এবং আমি ছিলাম ডেস্পারেইট টু ডু দ্যাট। সকালবেলা আমাদের স্কুলের শিক্ষক, সম্পর্কে যিনি আমার নিকটসৌত্রিক চাচা হন, বাড়িতে এসে একটু কাউন্সেলিং করেছিলেন টু মেইক মি রিথিঙ্ক অ্যাবাউট মাই ডিসিশন। কথাক্রমে তিনি বলেন, স্পষ্ট মনে রেখেছি আমি, পরীক্ষাগারে ম্যাকগাইভারের দৃষ্টান্ত স্মরণ ও অনুসরণকরতঃ উপস্থিতবুদ্ধি খাটিয়ে বের হয়ে আসতে। এবং স্রেফ এই কথাটার ওপর ভর করে আমি পরীক্ষাযুদ্ধে যাই এবং গাজি হয়ে ফেরৎ আসি এবং ঘটনার বৃক্ষতল থেকে একুশ বছর দূরে এসে এই ম্যাকগাইভারমেমোরি রিকালেক্ট করতে নেমেছি এখানে এই নিবন্ধে। সেই শিক্ষকের নাম মোহাম্মদ কাজিম উদ্দীন, তিনি ছিলেন আমাদের স্কুলের বাংলাশিক্ষক, কখনো-কখনো ধর্মশিক্ষাও পড়াইতেন।
ম্যাকগাইভারের প্রতিটি এপিসোডের আলাদা নাম ও আলাদা গল্প থাকত। প্রত্যেকটা পর্বে একেক বান্ধবী দেখা যাইত ম্যাকের, তবে সেইসব খুব ‘অশালীন’ কিছু ছিল না বটে, তবু স্থায়ী একজন প্রেমিকা না-থাকায় ম্যাকের জন্য ওই কিশোরকালে খারাপ লাগত খুব। ম্যাক অবশ্য ব্যাপারটা গা করত বলে মনে হয়নি কখনো। তবু ম্যাকের একজনের সঙ্গে ‘রিয়্যাল ল্যভ’ হয়েছিল ওয়ান্স, সেই নারীটি দুইপর্বের একটা কঠিন পরিস্থিতিতে শত্রুবেষ্টিত অবস্থায় ইন্তেকাল করেন হেলিক্যপ্টার ক্র্যাশপূর্বক। শোকাভিভূত ছিলাম বহুদিন। পর্বটার নাম ছিল ‘দ্য লস্ট ল্যভ’, সম্ভবত। অন্যান্য পর্বগুলোর নাম তো খুব বেশি ইয়াদ নাই আজ আর, তবে উইকিপিডিয়ায় নিশ্চয় লিস্টি মিলবে। সেসবে যেয়ে কাজ নাই। স্মৃতিনিষ্ঠ রই। ‘কাউন্টডাউন্’, ‘ট্র্যাইল্ টু ড্যুম্সডে’, ‘লস্ট ট্রেজার অফ অ্যাটল্যান্টিস্’ … পর্বনামগুলো শুরু হতো এই-রকমের উপনাম দিয়া। কাহিনিতে ম্যাকের ফ্যামিলি দেখানো হতো না। গ্র্যানপা আর বাপকে ফ্ল্যাশব্যাক এপিসোডে রেয়ার্লি দেখা গিয়েছে অবশ্য। অফিসের বস্, পিট্ থর্নটন, ম্যাকগাইভার যাকে পিট্ বলিয়াই ডাকত, যে-চরিত্রটিতে অভিনেতার নাম কার্ডে দেখতাম ডানা এল্কার, বেঁটেখাটো মুটকো বসের সঙ্গেই ছিল ম্যাকের যত শেয়ারিং, পিটই ম্যাকের অফিস্-বস্ এবং বেস্ট ফ্রেন্ড। পুরা ধারাবাহিকটার মধ্যে এই দুইজনের নাম ছাড়া, কাহিনিতে ব্যবহৃত নাম এবং রিয়্যাললাইফ নাম দুইটাই, আজও জ্বলজ্বলে মনে আছে। রিচ্যার্ড ডিন্ অ্যান্ডার্সন্ এবং ডানা এল্কার। তাছাড়া বান্ধবীরা পাল্টাতেন হররোজ হরপর্বে, কেউ অনেকদিন বা কিছুদিন বিরতিতে ফেরত আসতেন, ডেটিং হতো পুরনোর সঙ্গে একটু রসিয়ে রসিয়ে খুনসুটি সমেত, তবে সেসবে তেমন অবসিনিটি ছিল বলা যাবে না।
হ্যাঁ, ছিল, জঙ্গলে ট্যান্ট খাটিয়ে ক্যাম্পফায়ার করতে তো হামেশাই দেখা যাইত ম্যাক্ ময়নারে তার সদ্য-শাখায়-এসে-বসা শালিকটিরে নিয়া। ভাগ্যিস, এইগুলো বিটিভি কাটত, নইলে পারিবারিক নিপীড়ন সহ্য করতে না-পেরে টেলিভিশন সেট অথবা আমি দুইজনের একজনারে নির্ঘাৎ পটল তুলতে হইত। খুক-খুক পলকা কাশি কিংবা বেশ বড়সড় গলাখাকারির ব্যাপার বিটিভি দেখাইত বটে, সেসব অন্যান্য সিরিয়ালে, যেমন ‘হার্কিউলিস্’ বা ‘ডার্ক জাস্টিস্’ ইত্যাদি কিছু নাম মনে পড়ছে এখন। তো, এই না-দেখানোটা, আর তজ্জনিত আফসোস, এইটা ‘ম্যাকগাইভার’ সিরিয়ালটারে ঢের শিল্পসফল করে তুলেছিল কনফার্ম। অনেক পরে ‘এক্স ফাইল্স’ পর্যায়ে এই জিনিশটা আলাদা মাত্রা আর তাৎপর্যে এসেছিল উঠে, অ্যাইজেন্ট মোল্ডার আর অ্যাইজেন্ট স্কালির মধ্যে একটা ঢাকঢাক-গুড়গুড় স্পর্শসংবেদী সম্পর্ক দেখায়ে অ্যামেরিকা খুব সফল হয়েছিল খোদ তাদেরই ‘ফ্রি অ্যান্ড লিবারেইটেড’ বলিয়া খ্যাত সোসাইটিতে। এই নিয়া সেই তখনই ‘এক্স-ফাইল্স’ প্রশস্তিবাচক প্রতিবেদন পড়েছিলাম কোনো-এক অ্যামেরিক্যান ম্যুভিক্রিটিকের বরাতে। ইরানি সিনেমার সুবাদে, অনুমান করি, অ্যামেরিকা তখন সবকিছু-না-দেখিয়েও অনেককিছু-বেশিই-দেখানোর কৌশলটা নতুন করে শিখছিল। বড় হতে হতে এইসব ভেবেছি মনে পড়ে। এখন তো মনে হয়, এখনকার ইংরেজি ম্যুভির ট্রেন্ড ও টেন্ডেন্সিস্ দেখে, এমনকি জরুরি মিক্সিং অফ টু অপোজিট সেক্সের ব্যাপারটারেও ওরা মেইনস্ট্রিম ম্যুভিতে অ্যাভোয়েড করে যেতে চাইছে, সেসব দেখার জন্য তারা তাদের কনজ্যুম্যরদের জন্য পৃথক ইন্ডাস্ট্রিই নির্মাণ করে নিয়েছে সার্টেনলি, ইন্ডাস্ট্রি অফ হার্ডকোর পর্নোগ্র্যাফিয়া। আমরা আমাদের হালের দেখা যে-কোনো মূলধারা হলিউডি ম্যুভি থেকে এর উদাহরণ তুলে নিতে পারি, কিন্তু এইখানে সেইটা বাহুল্য মনে হয়। কেবল বলতে চাইব, টু অ্যান এক্সটেন্ট খুকখুক কাশ্য ও প্রয়োজনে গলাখাকারি ইস্তেমাল করা আবশ্যক, যদি জীবনোপাদান হিশেবে জীবনের শর্ত রেপ্রিজেন্ট করতে সেসব অনুরূপায়িত হয়। অ্যানিওয়ে। এই নিবন্ধের — ম্যাকগাইভার শীর্ষক মৎকৃত এই স্মৃতিনিবন্ধের — একটা নগদ মুনাফা এ-ই যে, এর মধ্য দিয়া ক্যালাইডোস্কোপিক্ একটা ট্র্যাভ্যেল্ হয়ে যাচ্ছে উইথ এক্সটেইসি।
কিন্তু জবর খবর বেরিয়েছে একেবারেই রিসেন্টলি, এই সদ্য ২০১৫-তে, ম্যাকগাইভার নতুন টেলিফিকশন্ সিরিজ্ হিশেবে ফের রিলোড করতে চলেছে! একদল স্পন্সর একজোট হয়ে এই কাজটা হাতে নিয়েছে ফেব্রুয়ারি থেকে। অ্যানাউন্স করা হয়েছে, নতুন আঙ্গিকে যুগোপযোগী ইনোভেইটিভ আইডিয়া আউটসোর্স করার, একটা ট্যালেন্ট-হান্ট কম্পিটিশন অর্গ্যানাইজ্ করা হয়েছে টেলিফিকশন্যাল নতুন প্রত্যাবর্তিতব্য ম্যাকগাইভার সিরিজের গল্প সংগ্রহের জন্য। নতুন সিরিজে ম্যাকগাইভার ক্যারেক্টার হবে উড়োযানচালক এবং অবশ্যই নারী, এইটুকু রিক্যোয়্যারমেন্ট সম্ভাব্য গল্পপ্রতিযোগীদের আগেভাগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ফ্যাসেন্ য়্যুর সিটবেল্ট, ইমিডিয়েইটলি, ডিয়্যার ভিয়্যুয়ার্স!
নতুন নয় যদিও খবরটা, আরেকবার নতুন করে এসেছে খবরে এ-বছর, ম্যাকগাইভারের ভার্ব ফর্ম বা ক্রিয়ারূপ অভিধানে স্বীকৃতি পেয়েছে। ম্যাকগাইভারিং। প্রযুক্ত হতে দেখা যায় অ্যাডজেক্টিভ হিশেবেও। ওয়েবস্টার অভিধানে এইটা গ্রাহ্য। অবশ্য বাংলায়ও আমরা এই-রকম করে থাকি, উদাহরণ এই-মুহূর্তে মুখে যোগাচ্ছে না, একটা মনে পড়ছে যেমন — ‘ফেলুদাগিরি’। ইত্যাদি। কিংবা বলি, অমুক আমার সঙ্গে বহুৎ বড় ‘মিরজাফরি’ করেছে, আমি এর বিহীত চাই। ইত্যাদি। বলি, আমাদের অমুক কিংবা তমুক তো দিনরাত ভাব ধরে ‘রবীন্দ্রনাথগিরি’ করে বেড়াচ্ছে। ‘ব্যাটা জীবনানন্দ কোথাকার!’ — ভুলোমনা জ্ঞাতিকে স্নেহকণ্ঠে বকে দিয়ে বিরক্তি প্রকাশও করি। ইত্যাদি ইত্যাদি। দৃষ্টান্ত/উদাহরণগুলোতে চেইঞ্জড পার্টস্ অফ স্পিচ্, ফিগার অফ স্পিচেস্, লক্ষ করব নিশ্চয়। বিশেষ্যের/নামবিশেষ্যের পদান্তরিত হওয়া আসলেই ইন্ট্রেস্টিং। ডিকশন্যারিতে, রেগ্যুলার ভোক্যাব্যুল্যারিতে, ম্যাকগাইভারের রিভিজিট দেখে ভালো লাগছে। এই তো সেদিনই কী-একটা বাংলাদেশী ইংরিজি দৈনিকে এই বিষয়ে একটা বাগার্থভিত্তিক ফিচার বেরিয়েছে। এই ফিচাররিপোর্ট হয়তো চোখেই পড়ত না আমার, আমি তো উদান নাই মাদান নাই সারাক্ষণ ‘শেইক্সপিয়্যরবাজি’ করিয়া বেড়াই(!), যদি-না আমার এক বন্ধু সুদূর খুলনা থেকে খবরক্লিপিংসের লিঙ্কটা পাঠাইতেন ফরোয়ার্ড করে ঠেলে এই নিরামিষ পাঠকের দিকে। অ্যানিওয়ে। যে-সময়ে ম্যাকগাইভার সিরিজটা চলত, যখন আমরা ইশকুলের নিচু বেঞ্চে বসে ডেস্কে বইব্যাগ রেখে যত-না পাঠে মন ততোধিক ফিসফিসানিতে, সেইকালে ম্যাকগাইভার শব্দটা বাংলা অ্যাকাডেমির অভিধানে দেখে নিয়েছিলাম। শব্দার্থ ‘ভোজবাজি’, লেখা ছিল, এবং আছে আজও, তখন ইংরেজির চেয়েও বাংলাটা আমাদেরে কনফিউজড করেছিল বেশি। ম্যাকগাইভার তো একটা মানুষের নাম, তো এর অর্থ ভোজবাজি হয় কেন? পরে বুঝেছি, নিজের নামের দিকে তাকিয়ে, পৃথিবীর হেন কোনো মনুষ্যনাম হেন কোনো শব্দ নাই যার অর্থ করা যায় না, মানুষের অভিজ্ঞতাভুক্ত কোনোকিছুই নিরর্থ অবস্থায় বেশিদিন পড়ে থাকে না, মানুষ একটা-না-একটাকিছু অর্থারোপ করে ফেলবেই। মনুষ্যসন্তানাদির নামগুলো চয়িত হয়ে থাকে তার অভিজ্ঞতাভুক্ত পরিমণ্ডলে ব্যাপ্ত অলিখিত অভিধানটা থেকেই। কাজেই যে-কোনো প্রোপার নাউনের একটা ভার্ব ফর্ম, বা অ্যাডজেক্টিভ, বা অ্যাডভার্ব ফর্ম থাকবেই। ঠিক এই দিক থেকে ম্যাকগাইভার, মানে ভোজবাজি, মানে এমন একটাকিছু যা তাক-লাগানো। ‘টু ডু ইম্পোসিব্যল্’ অর্থে ম্যাকগাইভারিং, ক্রিয়াব্যবহার; একইভাবে অ্যাডজেক্টিভ ‘ইম্পোসিব্যল্’; ‘অসম্ভবটা সম্ভব করে তোলা’, ভার্ব; ‘অসম্ভব’, বিশেষণ; অবশ্য ম্যাকগাইভারবাদ, ম্যাকগাইভারিজম্, এইটা আরেক বিশেষ্যও, গুণবাচক বিশেষণ যেমন।
নতুন দশকের কবি, চিত্রী, ক্রিটিক, সিনেম্যাটোগ্র্যাফার, ফেসব্যুকার যারা আজ ম্যাকগাইভারকে চেনেন না, তাদের জ্ঞাতার্থে এখানে একটা হ্যান্ডশ্যাক্ প্যারাগ্রাফ রাখা যাচ্ছে। একটা আইস্-ব্রেইকিং স্ট্যাঞ্জা। ম্যাকগাইভার একজন সিক্রেট অ্যাইজেন্ট, ফিনিক্স ফাউন্ডেশন নামের লস্-অ্যাঞ্জেলেস্ অবস্থানিক ইউএস্ গভার্নমেন্ট সিক্রেট অ্যাইজেন্সির এমপ্লোয়ি, ইন-শর্ট বলা যায় তার পদটা ট্রাব্যলশ্যুটারের, বোমাবিশারদ বলতেও পারেন বা বোমানিষ্ক্রিয়করণ এক্সপার্ট, লাইফ-অ্যান্ড-ডেথ সঙ্কটকালে ম্যাকগাইভার স্থির অচঞ্চল মাথা খাটিয়ে নাগালস্থ টুকিটাকি জিনিশ দিয়া হাতিয়ার বানাইয়া সঙ্কট মুকাবিলাকরণে এতই সিদ্ধহস্ত ছিল যে ম্যাকগাইভার ছাড়া এক্সটার্ন্যাল্ সার্ভিস্ অ্যাইজেন্সি ফিনিক্স ফাউন্ডেশন যাকে বলে অনাথ অচল একেবারে। এতদসত্ত্বেও অত্যন্ত সদালাপী, নিরহঙ্কার, হাসিখুশি ব্যক্তিত্বের অধিকারী আমাদের ম্যাকগাইভার। ‘মাই ডিয়্যার’ ব্যক্তিত্ব বলতে আপনি যা বোঝেন, মনে করেন সে তা-ই; ম্যাকের কোম্প্যানি বা সঙ্গ আপনার মন্দ লাগবে না প্রায় বলেই দেয়া যায় আগেভাগে। এবং ঠকবেনও না তার সঙ্গ লভিয়া, বিপদাপদে সে একটা ভালো ভরসাযোগ্য বন্ধু। অহিংস, নবকুমারের মতো পরোপকারী, অকুতোভয় এবং বুদ্ধিদীপ্ত।
তবে যা ভাবছেন তা না। ম্যাকগাইভার আর-দশটা সাধারণ মারদাঙ্গা অ্যাডভেঞ্চার ফিকশন না। বা ধরেন যে সিক্রেট অ্যাইজেন্ট বললেই যে-একটা আদল আপনার চোখে ভাসে, যেমন ধরেন ভুবনবিখ্যাত বন্ড, অ্যাইজেন্ট জেমস বন্ড জিরোজিরোসেভেন্, ওইটা না, ম্যাকগাইভার ওই ধারারই না, আপনি ম্যাকগাইভারের কিছুই তাইলে চেনেন না। ম্যাকের হাতে একটাবারের জন্যও আপনি পিস্তল-বন্দুক বা কোনোপ্রকার কোনো অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র দেখবেন না। ম্যাক মরে গেলেও পথমাস্তানের বন্দুকবাজি করবে না। তাজ্জুব না? হ্যাঁ, তা-ই, কিংবা ম্যাকগাইভার মানেই তো অসম্ভবের সম্ভাবন; সেই সম্ভাবন বুদ্ধি দিয়ে, পেশী কিংবা গা-জোয়ারি বিকট অ্যাকশন ফাইটিং দিয়ে নয়। বিস্তর বিজ্ঞানসূত্র এস্তেমাল করতে দেখবেন আপনি ম্যাকেরে, যেগুলো হরহামেশা সাধারণ বিজ্ঞান বইটিতে পেয়েছেন এবং সাপখেলানো সুরে এককালে মুখস্থও করেছেন কিন্তু প্রয়োগ দৈনন্দিনে দেখেন নাই, ম্যাকের কায়কারবার ওইগুলো নিয়েই। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, টেক্নোলোজি ইত্যাদি বিদ্যার টুকিটাকি জানাশোনা দিয়াই ম্যাকগাইভার মোস্ট-অফ-দি-কেইসেস্ মুশকিল আসান করে ফেলত। উচ্চতর বিজ্ঞানও প্রয়োগ করতে দেখা যায় তাকে, নেসেসারি হলে। একেকটা আপদে পড়ে সে নিজেই নিজের প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র বানিয়ে নিত, দর্শক হিশেবে আমরা সতর্কপ্রখর চোখে ম্যাকের হাত আর কিসের সঙ্গে কি জোড়া দিচ্ছে তা-ই নিরখিয়া যাইতাম অক্লান্ত মনোরম বছরের-পর-বছর ব্যাপিয়া, ম্যাক নিজের হাতে একটাও মানুষ মারে নাই বলা যায়, কিন্তু জব্দ করেছে বুদ্ধি দিয়ে একের-পর-এক ভিলেইনদিগেরে। একটা ছোট্ট ছুরিকা বা আর্মি নাইফ, আর একটা ডাক্ট-টেইপ্ বা আমরা যা স্কচটেপ্ বলে চিনি, এই দুই চিজ্ ম্যাকগাইভারের পকেটে থাকত সবসময়। বাকিটুকু যখন যেখানে যেমন। কিন্তু কক্ষণো খুন-করার কোনো অস্ত্র নয়, নেভার অ্যা গান্ অথবা ব্যালাস্টিক মিসাইল্ কি ড্রোন্ হেলিক্যপ্টার তো নয়ই। ম্যাকগাইভার কখনো কোনোদিন নায়কোচিত ক্রোধ জাহির করে নাই কারো সঙ্গে। দিস্ ইজ্ ম্যাকগাইভার। অ্যানিওয়ে। লেট্’স্ হ্যাভ অ্যা মার্টিনি নাও … চিয়্যার্স!
টুডে ইজ্ দি সিক্সটিফিফথ অথবা সিক্সটিসিক্সথ বার্থডে অফ ম্যাকগাইভার, ওর্ফে রিচ্যার্ড ডিন অ্যান্ডার্সন্, ওঁর অভিনয়জীবনের বাইরেকার আকিকা-করা বাস্তবিক নাম রিচ্যার্ড ডিন্ অ্যান্ডার্সন্, সিরিয়ালে ম্যাকের গোটা নামটা ছিল অ্যাঙ্গাস্ ম্যাকগাইভার। তবে ম্যাকগাইভারকে আমরা তার ডাকনামেই চিরদিন ডাকিয়াছি, পোশাকী নামটা ম্যাক ফর্ম্যাল্ এনকাউন্টার করত যখন কাউকে তখনই কেবল বলতে শুনেছি মাঝেমধ্যে, ম্যাকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা তো মনে করেন যে ঠিক ফর্ম্যাল্ ছিল না। কাজের সুবাদে সংস্পর্শে-আসা অনেকেই তাকে মিস্টার ম্যাক, মিস্টার গাইভার, ইত্যাদি সম্বোধিত বলিয়া আমরা জানি, আমাদের নিজের কানে শোনা। আজকে এতদূর এই এত স্পাইর্যাল্ অলিগলি পারায়ে এসে দেখতে পাই যে আমাদের ছেলেবেলা বুড়িয়ে চলেছে কেমন দ্রুততায় রোজ। অন্তর্ধানে চলে যাচ্ছে একে-একে আমাদেরে নাম ধরে ডাকবার মতো স্বজনমানুষেরা। আহা!
ম্যাকগাইভার তার ক্যারিয়ার গড়েছেন অভিনয়শিল্পী হিশেবেই, নানান সিরিয়ালে এবং সিনেমায় অভিনয় করেছেন, কিন্তু দুনিয়াজোড়া খ্যাতিটা তার ম্যাকগাইভার সিরিজের জন্যই। ম্যাকগাইভার সিরিজটা ১৯৮৫ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে একটানা সাতটি সিজনে সম্প্রচারিত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশে দেখতে পেয়েছি ৮৯ বা ৯০ থেকে, এখন মনে নাই ঠিকঠাক বিটিভি কর্তৃক ম্যাকগাইভার সিরিজের ডেব্যু অন-এয়ার তথ্যাবলি, অ্যামেরিকা যখন ধুমিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যেখানে-সেখানে বোমাবাজি করে বেড়াচ্ছে, সেই-সময় এই সিরিজটা দেখছি আমরা মা-চাচিমা বাপ-চাচা মামা-কাজিন্স মিলে একবৈঠকে, এইটুকু স্পষ্ট মনে না-থাকার কারণ নাই কোনো। তবে ম্যাকগাইভার শেষ হয়ে যাবার সময় আমরা স্কুলফাইন্যাল পেরিয়ে উচ্চমাধ্যমিকী দিয়ে ফেলেছি কিংবা যাচ্ছি দিতে এইরূপ পরিস্থিতি বিরাজ করছিল সম্ভবত। বছর-সাতেক বাদে ফের একবার বাংলা ডাবের ম্যাকগাইভার ফিরেছিল, সুযোগ পেলে ছাড়ি নাই দেখতে সেই মজাদার অনুবাদগন্ধী উদ্ভট অ্যাক্সেন্টের বাংলা ম্যাকভাষা শুনতে। ম্যাকগাইভার সিরিজের জন্মসাল ধরে এখন পাক্কা থার্টি ইয়ার্স অতিবাহিত হতেছে। বেঙ্গলে ম্যাকগাইভার ভিনি-ভিডি-ভিসি নব্বই/বিরানব্বই থেকে ক্যাল্কুলেইট করলে তেইশ/পঁচিশ হলো। যদিও মহাকালের দহলিজে এটুকু সময় এমন কিছুই না, তা-ও তো কমও না। আইজ্ঞা।
ব্যক্তিগত জীবনে বিয়াশাদি করেন নাই ভদ্রলোক, যদিও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কসম্ভূত কন্যাসন্তানের একমাত্র পিতা, জন্ম ১৯৫০ সালের ২৩ জানুয়ারি হিসাব করে এখন উনার উমর কত হয়েছে সেইটা আপনি বের করে ফেলবেন। বড় হয়ে উঠেছেন মিনেসোটায়। অ্যামেরিক্যান ম্যুভি এবং টিভি ইন্ড্রাস্টিতে পেশাগত প্রতিষ্ঠা প্রযোজক ও অন্যান্য নানান রূপে। একসময় জ্যাজ্ মিউজিশিয়্যান হতে চেষ্টা করেছেন প্রাণপণ, হয় নাই, পরে টেলিফিকশনগুলোতে বেশ অক্যাশন্যালি মিউজিক দিয়েছেন শখের বশে ব্যাকট্র্যাকে। ব্যক্তিগত জীবনে আমাদের ম্যাকগাইভার অত্যন্ত কন্যাবৎসল পিতা। আর ইন্-ফিকশন্ ম্যাকগাইভার তো অমায়িক, গোঁফদাড়িহীন মাকুন্দা, বান্ধবীভাগ্য ঈর্ষণীয়। গল্পের ম্যাকগাইভার তার সঙ্গিনীদের ব্যাপারে কেয়ারিং, সশ্রদ্ধ, বাস্তবে জানি না।
আমার এক কলিগ — ফিমেইল্ কলিগ এবং রিসেন্টলি লেফ্ট আস্ টুয়ার্ডস্ অ্যা বেটার ক্যারিয়ার — ম্যাকের মুখচ্ছবি ছাপিয়ে একটা বিউটিফ্যুল স্ট্যাটাস্ দিয়েছেন তার ফেবুপ্রাচীরগাত্রে সেলিব্রেইটিং হার চাইল্ডহুড। লিখেছেন তিনি, দ্বিধা-সঙ্কোচ ঝেড়েঝুড়েই, পিচ্চিবেলা ভাবতেন যে বড় হয়ে এই লোকটাকে বিয়ে-থা করে তার লগে জটিল-কূটিল এই দুনিয়াটা ঘুরে-ঘুরে চষে বেড়িয়ে সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাবেন। কিন্তু তিনি, আমার কলিগ, যখন বিয়েবয়স্ক হলেন, তদ্দিনে সেই শৈশবে-নির্বাচিত গ্রুম্ লোকটার তথা ম্যাকগাইভারের বয়স হয়ে গেল চৌষট্টি বছরের পার! ব্যাপারটা ভারি দুঃখের। তা, এই কায়দায় আমারও ডজন-কয়েক সম্ভাব্য পত্নীবিয়োগের বেদনা হজম করতে হয়েছে বলা বাহুল্য। পয়লাই লিজ্ টেইল্যরের নাম নিতে হয়, এরপরে স্যোফিয়া ল্যরেন্, এরপরবর্তী সিরিজ্ অফ বেদনাদের নামোচ্চারণ এই নিবন্ধে ক্লেশেকষ্টে দমিত হইল। তখন আমরা নিজেরাই ছিলাম মনে মনে ম্যাক, এবং কতকিছু অধিক, ওই ঝাকড়া চুল আর দীপ্ত চোখ আর ওই স্টাইলিস্ট সানগ্লাস আমরা একদিন পরিধান করে একচক্কর ঘুরে আসব কোথাও খুব তাফালিং মেরে, এমন ভাবতে ভাবতে ইন ওয়ান ফাইন মর্নিং দেখি বুড়ো হয়ে গেছি! অ্যানিওয়ে।
এবং মনে পড়ে গেল, তখনকার বাংলা গানেও ম্যাকগাইভার উঁকি দিয়েছিলেন। জনপ্রিয় গাইয়ে ডলি সায়ন্তনীর বোন পলি সায়ন্তনীর সেইকালে একটা অ্যালবাম খুব বাজার পেয়েছিল। সেই অ্যালবামে একটা গানের নায়ক ছিলেন মাসুদ রানা, আরেকটার নায়ক ম্যাকগাইভার। মাসুদ রানা নিয়া গানটার পয়লা লাইন ছিল এমন — “তুমি দাও-না আমার স্বপ্নে দেখা, মাসুদ রানা! / পাশে এসে ভালোবেসে বলো, হ্যালো সোহানা!” অন্যদিকে ম্যাকগাইভার নিয়া গানটার মুখ ছিল ‘হ্যালো ম্যাকগাইভার’ সম্বোধন জুড়িয়া দিয়া গাওয়া। আমরা খুব গাইতাম গান দুটো। ইংরেজিতেও আছে একটা গান, আজকাল তো ইউটিউবের সুবাদে শোনা যায় ইজিলি : ‘হ্যালো দ্যেয়ার ম্যাকগাইভার’ লিখে সার্চ দিলেই আসে। একটা নার্সারি রাইমের ধাঁচে মুখবাহিত ছড়া আমরা কাটতাম খুব : “আকাশের মেঘ, দুধের গাই, পাথরের ভার — ম্যাকগাইভার।” টেরিফিক! এইসব মনে পড়ছিল চৌষট্টিতম অথবা সাতষট্টিতম জন্মদিনে ম্যাকস্মরণে তথা ম্যাকের সম্মানে আমার কলিগের ফেবুস্ট্যাট্ দেখে। হ্যাপি বার্থডে, ম্যাক! শুভ জন্মদিন, প্রতিদিন আজীবন, প্রিয় শৈশব!
. # #