বিশ্বম্বরপুর । জাহেদ আহমদ
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫, ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ, | ৩৫০৯ বার পঠিত
এই বৃষ্টির দেশে ফিরে এসেছি আবার
অপরূপ অবিরল এই বর্ষাপাহাড়ের দেশে
.
এখানে কোথাও কোনো আত্মীয় নেই
আততায়ী আত্মীয়তা নেই
কোথাও এথায় নেই ছদ্মবন্ধুতা
রয়েছে সাজানো সারি আত্মাপাহাড়ের
দিবাযাম-দুলিয়ে-দেয়া বায়ান্ন হাওয়া
.
আর আছে একাকিত্বে-আন্তরিক জ্যোৎস্না অনিমিখ
আছে নিভে-যেতে-থাকা নৃত্যরতা রাত্রিপুষ্প এক
অমেয় অরণ্যে আছে অন্তঃশীলা নদীর নির্জন
.
এই বৃষ্টির দেশে ফিরে এসেছি আবার
এই মর্মমেঘালয়ে এই হিরণ্য হরীতকীর বনে
অপরূপা অবিরলা এই বৃষ্টিহিমাদ্রির দেশে
বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন বৈভবে বেতের চেয়ারে এসে বসেছি আবার
মোম জ্বেলে জনমনিষ্যি থেকে সন্তর্পণ দূরে
.
(প্রবেশ)
————————————————————————————————————————————————————–
যেন চিরবরষার স্যাঁতসেঁতে শান্তি ব্যাপ্ত এইখানে
একধারা ঝরঝর আমে-জামে আতা আর জামরুল গাছে
দুরন্ত দিগন্তে ধু ধু দৃশ্যের দুলে-ওঠা আলোকাভা আছে
সারাক্ষণ যেন লক্ষ দেয়ালিপোকার গানে গ্রস্ত এই গ্রাম
অজ কিছু ভূত যেন জমিয়ে নিয়েছে এসে খালনালাবিল
রেবেকা নামের নদী এইখানে এসে আরও অধিক সর্পিল
উড়ন্ত বল্লম যেন এইখানে অবতীর্ণ অতিকায় বৃষ্টির পাতগুলো
অথবা অন্তরীক্ষ থেকে আসা তুঁহু-মম-শ্যামসম কদমের রেণু
আনন্দবিহ্বল কোনো রাখালের হাতে যেন ফিরে-পাওয়া বেণু
এইখানে বৃষ্টি দিনমান যেন বীজ-থেকে-ফেটে-যাওয়া তুলো
***
নিদ্রানক্ষত্রের ভারে নুয়ে-পড়া রাত্রিনিসর্গের নিস্তব্ধতা
অতি প্রেরণাপ্রদায়ী এ-অন্ধকারে অন্তরতম গান খুঁড়ে আনা
একেলা এখানে আমি বাজিয়ে চলেছি এই বাজনাবিষাদ
এথা বেদনাবাহক হয়ে হেমবর্ণ জাগরণে জন্ম-উদযাপন
অচেনা উদ্ভিদগাত্র থেকে উঠে-আসা যেন এই আকুল অর্কেস্ট্রা —
বৃন্দবৃত্তমধ্যে বসে ব্যাটন-ঘুরিয়ে-যাওয়া ব্যান্ডমাস্টার বলে কেউ থাকে যদি
খুঁজে নেব তাকে তাই এহেন প্রস্তুতি
সবথেকে কাছাকাছি নিদ্রাতারাটিকে অন্ধবিন্দুজুড়ে টেনে নিতে নিতে
অগণন দায়হীন দর্শকের মুখে আমি খুঁজি সেই মুখ
যেইখানে পলকেই পড়ে নেয়া যায় বেদনানুকূল মম দায়মর্ম কিছু
***
পৃথিবীর সবথেকে সাবলীল সুস্থিরতা রয়েছে এখানে
সবথেকে সুবিমল সর্বাঙ্গকুশল থিত জল-জলাশয়
সুউচ্চ সান্ত্বনাপাহাড়গুলো পৃথিবীর এইপ্রান্তে আছে
সুলভ এখানে যত জামদানি বরনের ধানের জমিন
রাত্রিগাঢ় গানের শ্রোতারা এসে এইখানে হয়ে যায় প্লুত
আপনাআপনি এথা ঘটে যেতে পারে কারো সহজ বোধন
সন্ত-সন্নিধানে যেয়ে যেমতি লোকের হয় যাতনাপ্রশম
তদ্রুপ এখানে অতি নিরুপম আনন্দউদ্বেলা কাটে ক্ষণ
কলাবনে এইখানে বারোমাস ঝিঁঝিদের জলসার ঋতু
এইখানে এলে তুমি টের পাবে প্রকৃতিচিকিৎসা কারে বলে
***
অনাড়ম্বর অন্ধকারে অতি স্বস্তিকর স্রেফ বসে থাকা এই
অনেক অঢেল ভোগ্য রত-থাকা অন্তরার্দ্র গান রচনায়
এইখানে এসে ঢের মিলে যায় অনসূয় দিবা-অবসর
লুকিয়ে রয়েছে ওই বেতঝোপে আকাঙ্ক্ষা আমার
কাঠগোলাপের গাছে সকল-কাঁটা-ধন্য-করা প্রেম
রভসে রজনী যায় এই প্রেমে এই আকাঙ্ক্ষায়
তুষারের মতো ঝরা তুলোগুচ্ছ চৈত্রজ্যোৎস্নায়
এইখানে অজস্র হরিণ উড্ডয়িত হংসকল্পনায়
আসে তারা খেয়ে যেতে জল ও জলতলাকার কচমচা ঘাস
প্রভাতভ্রমণে যেয়ে কেউ কেউ পেয়ে যায় সেইসব হাঁস
কল্পনাকরুণ সেইসব হরিণের খুরছাপ পায় তারা
পায় পরিব্যাপ্ত জীবনের শ্রীযুক্ত স্পন্দন-আশ্বাস
***
জীবন এখানে খুব সহজিয়া লাউলতার মতন ইন্দ্রিয়নন্দন
তৃণাকৃতি উদ্ভিদের শরীর এখানে পায় সুষমার গভীর শিখর
পত্তরে-পত্তরে এথা জমে রয় বহুবর্ষব্যাপী বিকিরিত লাবণ্যের স্তর
মেঘের মাঠের নিচে মর্মরিত গাভির ওলানে এথা আস্থাপ্রদ ওম
গগন গরজি নামে এইখানে আকস্মিক শান্তিবারিধারা
প্রকৃতিপ্রেরণা পেয়ে ফোটে ফুল বনগুল্মে, মেলে মুখ তরমুজচারা
বরষাবিধুর দিনে কলাথোড়ে দোল খায় মদ্যমৌতাত
ঊষর উদ্যানে আসে সোঁদাস্নিগ্ধ পলিস্রোত জলশয্যা ফেলে
ছয়টি ঋতুর ঘ্রাণে পরিত্রাণ পাবে তুমি এইখানে এলে
***
চায়ের কেতলি থেকে ওড়া ধোঁয়াবাষ্প অবিকল ভোরের মুহূর্ত
তুমি উঠে যেয়ে তাতে ইন্দ্রিয় ডুবালে বাস্তবার্থে দিবসের শুরু —
এহেন প্রত্যয় নিয়ে এইখানে থাকা যায় অনাবিল ভালো
অনন্ত আড়াল থেকে এইখানে ভেসে আসে পাখিনৃত্য, মোরগের বাঙ্
পাতালির কিনারায়, বৃক্ষপ্রশাখায়, খেলে স্নিগ্ধ সবুজায়িত আলো
রোদ এসে আস্তে বসে কারেন্টের-তারে-ঝোলা মরা বাদুড়ের গায়
জলশব্দে সচকিত বকপাল মুখ তুলে তাকিয়ে খোঁজে শিকারিট্রিগার
অথচ এখানে কোনো নিষ্ঠুরতা নেই, নীল নকশা লাল চোখ নেই
নিঃসন্ত্রাস রাজহাঁস আর তিতিরের চঞ্চু এইখানে ডুবে রয় তৃণসরোবরে
এখানে এসেই তুমি পেয়ে যাবে পয়মন্ত প্রকৃতির দেখা ও দর্শন
এ-ই সেই বহুশ্রুত স্যাংচ্যুয়্যরি — অভয়ারণ্য বলিয়া যা বিদিত বাংলায়
***
পাতো কান এই রাতে — বৃংহতি শুনতে পাও?
রাখো চোখ তাক করে সুদূরস্থ সমুখের সীমান্তপ্রান্তিকে —
দেখা যায় দশাসই দৈত্য ঐরাবত?
মেলো দেখি হাতখানি খিড়কি গলিয়ে —
টের পাবে দ্যাখো শুভ্রা চাঁদের ক্রন্দন
শীতাশ্রু টের পাবে নৈশচর শোকার্ত পেঁচার
টানো শ্বাস বুক ভরে দীর্ঘ গভীর
তখন তক্ষুণি তুমি পেয়ে যাবে প্রবাহিতা প্রেমের পবন
পাবে পাহাড়ের পাদদেশে একান্ত পরমহংসদেশ
প্রশান্তিনিদ্রার থেকে ঢের বেশি সুষুপ্তিনিবিড়
সেই দেশে সারারাত চুপে জেগে-থাকা
***
সারাদিন এইখানে রোদভরা হাওরপ্রান্তরে অনিঃশেষ বাতাসের চলাফেরা
বাতাস তোমাকে এথা দিতে পারে এনে বেদনাবিস্মরণের ভিন্নব্যঞ্জনা
হাওয়ায় হাওয়ায় তুমি হুটোপুটি হয়রান হয়ে
দণ্ডদুই জিরিয়েও নিতে পারো জলতীরে হিজলছায়ে
বাতাসডানায় চেপে দিব্যি দেখে আসা যায় ওই হোথা দূরের পাহাড়
যেইখানে ভালুকেরা একা-মগ্ন ঘুরেফেরে আফিমের ক্ষেতে
আফিমক্ষেতের ধারে তুলে ফ্যালো ঝটাপট গেহ একখানি
গৃহপ্রাঙ্গণে মত্ত ভালুকদম্পতি সেজে নেচে নাও কয়পাক আফিমে-মাতাল
তাতানো রোদের দিনে সারাবেলা থম বসে এ-ই শুধু কল্পনার কাজ
কমরেড, নবযুগ আনবে না! দিন-বর্ষ-মাস এথা বৃথা যাবে আজ!
এইখানে এলে তুমি — হ্যাঁ, তুমিও, কমরেড! — ভুলে যাবে আলবৎ প্রহৃত সমাজ
***
জলগন্ধে এইখানে অবাক শুশ্রূষা
পাহাড়ে উড়ন্ত পাখিদের দৃশ্যে মন-ভালো-করা মধু
হেন যুগলবন্ধন সখা পাবে না কোথাও তুমি আর —
হরিহরাত্মা হয়ে বিরাজিছে এইখানে পাহাড়-পাথার
শ্যাওলাগাত্রে এথা মাছেদের মনোদুঃখ মিশে আছে যেন
নৌকাভাসা উজানী গাঁয়ের তীরে গাছেদের হাতছানি
এইখানে এসে তুমি নিঃশঙ্ক চলে যেয়ো মাছ-মাঝি-মেছোদের মাঝে
যেন ব্যথাহর গান এথা ছড়ায়ে রয়েছে এই সবুজ সমাজে
***
বিষাদবর্ণ যত লহমায় উবে যায় এইখানে এলে এই রৌদ্রসমারোহে
একলা দুপুরবেলা বাজাতে বাজাতে ভেঁপু ঘাটে এসে ভেড়ে যেন অলীক জাহাজ
অথবা কোলাহলহীন এর বিপুল রজনী যেন অকস্মাৎ-জেগে-ওঠা অতিকায় তিমি
প্রত্যুষপ্রাক্কালে একে মনে হয় অবিকল দূর কোনো অতীতের ব্যস্ত পোতাশ্রয়
যেন অন্য আঙ্গিকে এথা যামিনীদিবস ব্যেপে জলে ও বাতায়
লেপ্টানো রয়েছে এক অরূপ বিষাদ, এক অন্য বিভ্রম
***
একটি মাছের ঘাই লক্ষ করে কেটে যাবে একখানা আস্ত বিকেল
তৃণফড়িঙের পিছু অপলক ব্যয় হবে পুরোটা দুপুর
নৌকোর গলুই ঘেঁষে ছুটে-চলা পানিসাপের পথরেখা দেখে
এইখানে মনে হয় অতটা জটিল নয় জীবনযাপন
পাবে না পাবে না করেও এইখানে এসে তুমি পেয়ে যাবে বহু
তাকিয়ে দেখার স্বাদ — তৃণপত্রে ফড়িঙের অবতরণদৃশ্য মুহুর্মুহু
***
জ্যামিতিক বিভিন্ন জাল পাতায়ে রেখে এখানে মীনমহাল
এইখানে পাবে তুমি পাখিদের আবাহনগানে আনন্দসকাল
জলের গতরে রোদ অঝোরে পতিত
কেটে-আনা শ্যাওড়াগাছের ডাল রোদে পুঁতে-রাখা
ডালে-উপডালে বসা জটলাকার কালোঝাঁক ফিঙে
ফিঙেদের ঝগড়া বুঝে বয়ে যাবে বিদগ্ধ দুপুর
বিনত বিকেল যাবে দেখে দেখে মৎস্যধ্যানী মীনবর্ণা পাখি
***
অথবা বিকেল নেই এখানে কোথাও
দুপুরবোধক যতিচিহ্ন নেই উল্লেখযোগ্য
আছে কেবল যতিরিক্ত অনন্ত-অথই জিভে-চাখা-যায়-তেন চিত্রখণ্ড কিছু
এই যেমন শস্যসত্র তৃণক্ষেত্র পাখিপত্র প্রভৃতি
আছে রোদের পাশে পাল্লা-দিয়ে-নেমে-আসা হুটহাট ছায়ামেঘমালা
আর আছে জ্যোৎস্নার সঙ্গে জলের শঙ্খলাগা রাত্রিনির্জনতা
***
সঙ্গ ও নৈসঙ্গ নিয়ে নিরর্থ ন্যাকামি নাই এখানে কোথাও
বস্তুত এই জলডাঙা আবহমান স্বয়ম্ভু ও প্রকৃতিশিক্ষিত
তরুগুল্মগাছপাখিপোকাপ্রাণিপশু পরস্পর জড়ানো-যোজানো
পুনশ্চ সবাই সবার থেকে স্বতন্ত্র ও সুনির্দিষ্ট দূরত্বে অঙ্কিত
এইখানে এলেই কেবল বোঝা যায় নৈকট্য কতটা নন্দিত
দূরদৃশ্য কতখানি দৃষ্টিধন্য জানা যায় এইখানে এলে
***
কে বলেছে আঁধার অনঙ্গ এ-ভ্রান্তবাক্যখানি!
ভ্রমবশে বয়ে যায় এতটা বয়স
মিথ্যেমিথ্যি অন্ধকারের অনঙ্গ রূপ ভেবে
ভেবে ভেবে অন্ধকারের অঙ্গভাঙা আলো
এইখানে গাছপত্রে গৃহগাত্রে শান্তসুপ্ত অন্ধকারের গান
জলে ও জঙ্গলে এথা লেপ্টালেপ্টি ঝোপা-ঝোপা অতুল আঁধার
এইখানে এসে অবাক অন্ধকারও ভাষা পায়, অঙ্গ পেয়ে যায়
***
যেন হাতে পেয়ে গেছ দিব্যি দূরজন্মে দেখা কোনো মুখ
প্রসাধনচর্চিত চোখের কোণে একটুখানি আনমন বিষাদাভাস
আর তাই দেখে তুমি খুব ধ্যানমনস্ক হয়েছ আজ এই সাঁঝবেলা
এইখানে সন্ধ্যাদেহে-লেগে-থাকা জলকচুরির গন্ধে বিধুর মন
খুঁজে ফেরে কেবলি কারো ব্যথাকাৎরানো প্রস্থানের শেষপট
তার মেঘে-বুনে-রাখা মুখ, তার রোদে-রেঙে-থাকা আঁখি
আসে রাত্রি ধীরে, আসে অনির্ণেয় আয়নায় দাঁড়াবার পালা
অসহায়ব্যকুলা আমি আবিষ্কার করি তার আদিম আদল
দেখি গৃহমুখো গমনের কালে ঝটকায় গুহাপ্রাণি দেখে নেয় সব
এমন সন্ধ্যার কাছে আমি অতি অবোধ ও অতিরিক্ত গণ্য হই যেন!
***
কোথাও পরিমার্জনা নাই
কোথাও নাই কোনোরকমের ত্রুটি-মেরামতির তোড়জোড়
লতানো ঘাসের কাছে এইখানে দাঁড়িয়ে দিব্যি দীঘল পাহাড়
পতঙ্গপাখায় ঝাপ্টে সন্তর্পণে এখানে পড়ে সন্ধ্যার নোঙর
স্ফীতশরীরের জল আলগোছে ছুঁয়ে আসে হিজলের চুল
কোথাও সংশোধন নেই, কাটাকুটি নেই
নেই সংশুদ্ধি-সংস্ক্রিয়ার অহেতু আড়ম্বর
এইখানে ভোলা যায় জীবনের যাবতীয় তুরুটিবিচ্যুতি
***
মেঘে-মুদে-থাকা মন, দ্যাখো এইবেলা রৌদ্র উঠিয়াছে
গিয়া তার সেবা নাও — বারান্দা-অনতিদূর ফালি উঠানের পারে
যেখানে নানান তৃণের ভিড়ে এক-দুই অতিচেনা তৃণ রহিয়াছে
এরূপ ঘাসের নিসর্গে এসে মনুষ্যজনম নিয়ে জেগে ওঠে রামপ্রসাদী আফসোসবোধ
অনামা তৃণের নামে হৃদিকামাঝারে ফোটে তিরিতিরি সুর
যেনবা সে-সুর শুনে তৃণপত্রে দোল খায় হাওয়াই ফড়িং
এবেলা উদ্ভাসিছে দূরলগ্ন লুকোচুরিপ্রিয় সীমান্তপাহাড়
শিখরে যেন মরমি মন্দির — বাতাসে তার পুরাণগন্ধ ভাসে
বিষণ্ণ কাঁসর ঘণ্টা, গড়প্রণামের মগ্ন দৃশ্য, জপশব্দ আসে
বুঁদ হয়ে যেতে যেতে তুমি তাতে পেয়ে যাবে প্রকৃত ভেষজ
বাক ও বসন্তহারা এথা এসে ফিরে পাবে লুপ্ত যত ভাষা ও বাসনা
এসব এসেন্স নিয়ে, এইসব বোধোদয়ে, বয়ে যাবে অস্তাচলে দিন
***
মেঘ দেখে মাপা যায় না বৃষ্টিপাতমাত্রা এইখানে
রোদেরও হৃদয়ে এথা বুনে-রাখা-আছে ঢের ব্রহ্মবৃষ্টিবীজ
ফলে বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে যেন মিসমার হয়ে যাই দিকচক্রবালে
আচমকা এখানে যেন রোদের উদর ফুঁড়ে বের হয়ে আসে বৃষ্টি ফোয়ারা-আকারে
আর ওই দূর লোকউক্ত মেঘালৈ পাহাড় — পড়ে পড়ে বেচারিটি বৃষ্টিতে ভেজে
পাহাড়গতর থেকে ভাপ লয়ে গায়ে মেখে বাতাস এখানে এসে অরণ্য ভেজায়
এইখানে সমস্তই পূর্বাভাসহীন, ধারণা ও দৃষ্টান্তবিহীন
এমনকি শীতের সমতল এথা অবাক প্লাবিয়া যায় পার্বত্য ঢলে
***
এইখানে বাদামের ক্ষেত, এইখানে তরমুজবীথি
রবিশস্য-ফুটে-থাকা মাইল মাইল শুধু সবুজ জ্যামিতি
এইখানে জলের শাসন, এইখানে নৌকোযোগাযোগ
হেথাকার গাছেপথেপাখিপত্রে ছয়খানি ঋতুর উদ্যোগ
দুপুরে ডাহুক এথা এলো করে দিয়া যায় মন
অন্তস্রোতা অনুপ্রাণনার পাবে দেখা এইখানে আসবে যখন
***
পাখির অনেক ডাকে তোমার দুপুরগুলো লীলায়িত ভারি
জানালা-যোজন দূরে ফুটে আছে শোভাময়ী তৃণতরকারি
ধানের ক্ষেতের ’পরে ডানাছায়া ফেলে ফেলে পাখিরা যখন
কোথা যেন উড়ে যায় সাথে বেঁধে নিয়ে কিছু দুরাদৃত মন
তেমতি দুপুরে তুমি একাকী নিটাল বসে হেলেঞ্চার ছায়
দেখে যাও বকধ্যান, তাতারোদে ঝিম জল, বেলা পড়ে যায়
***
নানারকমের প্রেমে এথা সারাবেলা মজে আছি আমি
মধ্যাহ্নের দেশে খুব ফড়িঙের হাওয়ায়-মেশা ওড়াউড়ি দেখি
দেখি ধান ও অন্য-অন্য শস্যের ধমনী ঘিরে জলের প্রবাহ
কড়ই গাছের গায়ে হেলান দিয়েছে দেখি পড়ন্ত বিকেল
শূন্যঘূর্ণিচক্রে নামে নিচের নরম ঘাসে খড়ের টুকরোটি
কানে পশে চিরিক-চিরিক চড়ুইগুচ্ছের রিক্তচঞ্চু প্রস্থানউড়াল
হাঁসের দঙ্গল দেখি হেলিদুলি পার হয় গ্রামচেরা গঞ্জের পথ
গেরস্তঘরের দিকে ফিরিতেছে ত্রস্তপদে শিঙহীন গাইগোরুগুলো
ধুপ ও ধুনোর গন্ধে চরাচর ভরে ওঠে ক্রমে এই লগন সন্ধ্যায়
সারাটাবেলার সঙ্গে এইভাবে এবং আরো নানা-রকমের ভাবে বাঁধা পড়ে আছি
***
কেমন মন্থর আর এলো-করা বইছে হাওয়া
পাতাস্নাত পরিস্কার প্রভাত এসে দুপুরে থেমেছে
বেলা এত হয়েছে তবু পাহাড়ের ঘুম ভাঙছে না!
বরই গাছের ডালে চড়ুইয়ের পুচ্ছনাচা প্রীতি-খুনসুটি
একটি-দুইটি লোক সদরের পথ ধরে ফিরিতেছে ধীর
দূরের বসত্ থেকে খুব মিহি ভেসে আসে সংসারের স্বর
ছুটির দুপুরে এথা মনখারাপের মতো মেঘ চরে ঘাসে
পাহাড় নিদ্রিত রেখে স্নানাহার সারা যায় এই পরবাসে
***
গোধূলিগগনে এথা গান গেয়ে ঘরে ফেরে শতকণ্ঠ পাখি
নিধুয়া প্রান্তরে জাগে গোধূলিগরিমাজাত আচানক বর্ণসঙ্করতা
ধীরে ধীরে চারিধার-চরাচর অপরূপা শান্ত হয়ে আসে
নতস্নিগ্ধ নৃত্যে যেন নিরজনে কথা কয় নদী ও জলাশয়
অরণ্য-উপান্তে সুধী গুল্মবৃন্দ, গাছ, ফিরি-ফিরি গেয়ে চলে চান্দ্র ধ্রুবপদ
সন্ধ্যা নাম্নী পরী এক কোমল নামিয়া আসে মহানিসর্গের পাশে
***
যেন শৈশব জাগাতে অকস্মাৎ শান্ত রাত্রির কোল জুড়ে নামে বৃষ্টির ঝাঁপতাল
সারারাত ভিজে চলে গ্রামদেশ গাছপালা কার্নিশের একটুখানি চড়ুইশরীর
উন্নিদ্র লোকটা তার বারান্দাগ্রিলের খোপে চোখ রেখে ঠাওরায় দূরবৃষ্টিধার
***
শ্যামল তোমায় এইখানে দেবে একান্ত শুশ্রূষা
পুরানাপ্রাচীন দিনের মতন শ্যাওলাশোভন ছায়া
দেবে পূর্ণকালীন প্রেম এবং অপরিমেয় ঘাসখড় আর গাছগাছালির গান
পাবে চিরপরিচিত পুকুরের ঘাটে স্তূপাকারে-রাখা বাসনমাজার ছাই
অতিলোকায়ত নিমফুলগুলো মৃদু প্রবাহিত জলের উপরস্তরে
দোলপূর্ণিমারাতের আদল আচমকাই দেখা যায় হেথা বিকেলবেলার মেঘে
এই সমুদয় দৃশ্যে কেবল সুবর্ণ ঝরে সুবচন ঝরে সুশান্তিসুখ ঝরে
শ্যামলে-শ্যামল নীলিমায়-নীল এই অলীক অতুল বিশ্বের অম্বরে
শতবছরের-বেদনা-ভোলানো শুশ্রূষাঋতু রহিয়া রহিয়া ঝরে
***
মুগ্ধমনে যারা খুব শুনে যায় ইমন-কল্যাণ আর আহির-ভৈরব
এই স্থলে এসে তারা পেয়ে যাবে অন্য রাগ, অন্য অনুরাগ
এ-ডাঙায় এই জলে এ-বায়ুবসন্তের বনহংসী বিলোল ভুবনে
গতিক্ষিপ্র খরগোশেরও শরীর ক্রমান্বয়ে মন্থর হয়ে আসে
প্রকৃতি বিবশ করে এইখানে বেজে চলে পাহাড়-কল্যাণ
বাতাস-উথালি-ওঠা এইখানে সারাবেলা হাওর-ভৈরব
***
মেঘান্ধকার আবহভূমির পেট চিরে ভেসে ফেরে বকের সারিকা
তারা যেন আত্মহারা বকফুলদল, নক্ষত্রপত্রালি যেন, যেন ঢেউধারা
সুর্মাবর্ণ সমুদ্রের সুদূর শিয়রে যেন শাদা শাদা শঙ্খজ সংগীত
আগেভাগে-নেমে-আসা সাঁঝঘোর অপরাহ্ন প্রচারিয়া যায় হেথা আশঙ্কা ঝড়ের
বকের ভঙ্গিমা দেখে এইখানে ঝড়ঝুঁকি গিলে ফেলা যায়
***
এইখানে, এই বিশ্বের অম্বরে এসে, পাখার বিরাম পায় চিন্তাপাখিগুলো
ডানাঝাপ্টানি থেকে পাখিদের ফুর্তিমাত্রা, ভুলে-থাকা ফাঁদ, ভালো বোঝা যায়
এই এক নিকেতন, চির-আরোগ্যের, বিশল্যকরণীর মতো বন ও বাদাড়
অবিরল আদর পায় এইখানে এসে আর্দ্র বস্তুদুনিয়াতাড়িতা আস্থাহারা পাখি
***
থমকাও তুমি — ওহে! — এইখানে এসে, যে-কিনা দীর্ঘক্রোশ দূর যেতে চাও
দাঁড়াও দৌড়বিদ! ক্ষণেক বুঝিয়া যাও হরিণমন্থর দিনে ছুটভোলা বাতাসের বাও
এসেই পড়েছ যদি, গোধূলিগানের দেশে, ধানের সমুদ্রে নেত্র যথাসাধ্য প্রসারিয়া তাকাও
***
হিসাবনিঃশেষে এসে এইখানে বেহিসাবের বরমালা পাবে
তুরন্ত্ রাতের কেশে কিমাশ্চর্যা কারুখচা জ্যোৎস্নাঝুঁটি আছে
পাবে তার গাঢ় গন্ধ চূর্ণকুন্তলের, গানস্পর্শা গগনের চাঁদ
আনগ্ন নদী-গিরি, গৈরিক ধুলার দেশ, এইখানে অন্তর্গত প্রশান্তিবিস্ময়
ঘুরিয়া বেড়ায় মেঘে গাভির আর্দ্র আঁখি, জলভারী বরিষনাভাস
গোচারণপ্রান্তর ভেঙে বাড়ি ফিরিতেছে দেখবে বেশুমার বাস্তবের হাঁস
***
সমস্ত স্তব্ধতা যেন চাক বেঁধে রয়েছে এখানে এই নিগূঢ় গুল্মজলদেশে
জগৎ এখানে যেন জুড়ায়ে নিতেছে তার ডানাপৃষ্ঠা আরণ্য অভ্র-অবসরে
সহসা শস্য ও বাতাসে সৃষ্ট সুর যেন মৌচাকে মাছি
***
শস্যের সায়রে এথা ফাঁকে-ও-ফোকরে চরে হংসদঙ্গল
মাছের পোনারা খুব খলবল করে ফেরে উথলিয়া জল
হাতে লয়ে উড়োজাল ছিপনৌকোর মুখে তিরদৃষ্টি জেলে
দেখা পাবে ইহাদের জলে-জালে ঘেরা এই মৎস্যদেশে এলে
***
ভরিয়া গিয়াছে জলে লোকালয়, পায়ে-মাড়া পথচিহ্ন, ধানগোলা
তার আগে যথাসাধ্য ইরি-আঠাশের ক্ষেত হয়ে গেছে তোলা
ঘরে-ঘরান্তরে আজ আকাল-না-আসে তাই কীর্তনিয়া গান
গেয়ে প্রার্থনা সারে একসঙ্গে গ্রামজন, মেছো ও কিষান
***
বর্ণনাসরল এই দেশ — পৃথিবীর প্রাণায়াম যেন
জল এসে শাদা করে দ্যায় এর রঙিনতা যত
ঝাকি আর খেয়া জালে অধিকারে আসে এথা রহস্যআশয়
উদাম শিশুর দল উড্ডয়নে ডানা পায় ফড়িঙের ন্যায়
চকিতে বকের ঝাঁক এইখানে রেখে যায় স্নিগ্ধগতি গান
একলা বাড়িটি ওই ভেসে আছে মধ্যদরিয়ার জলে জাহাজের মতো
এইসব দৃশ্যে তুমি অপার আলস্যে শুধু ডুবে থাকো চুপ
হাওরের চরাচরে সন্ধ্যা নামিয়া এলে কাচপোকা ঘুরে ঘুরে নেভে আর জ্বলে
***
ওই উঁচু মহাভারতের থেকে মেঘ যেন তেড়ে আসে ধেয়ে
এইখানে ঝরে তারা ঝরঝর জমিনের ’পরে যেন মুগ্ধরূপা মেয়ে
মেয়েদের থোকা-থোকা মুখ যেন মায়াসান্দ্র ভোরার্দ্র বেলা
এহেন দিব্যঘোরে দিবাখানি যাবে কেটে একেলা একেলা
***
নৌকাজানালার ধার ধরে আলতো চুঁইয়ে-পড়া ফোঁটা পানিধারা
টুপটুপ সৌন্দর্যপারদ যেন মহাকালকার্নিশে ঝুলে আছে চুপ
কখন ঝরবে তারা — এই বুঝি ঝরে যায় — প্লুত ওই বর্ষাবালিকারা
আবহ-অবশ-করা বৃষ্টির বিভোর দৃশ্যে অবিরলা ঝরিতেছে রূপ
***
হাজার বছরের বাঙালি বর্ষা শিরোনামায় এই পদ্যধারাখানি
ছাপা হলে পরে ওগো মহাকাল দিও মোরে স্নানের সম্মানী
তব নবধারাজলে তব নির্মিত নীপবনে ছায়াগাছতলে
ছিল সাধ ভিজিবার আনগ্ন আমার আদি আষাঢ়ের জলে
***
আঁধার ঘনায়ে আসে ওই, গ্রামরেখা দূরে দেখা যায়
সন্ধ্যা ও ধুনোর গন্ধে হরিনাম জেগে ওঠে কৈবর্ত্যপাড়ায়
হাঁসদল পার হয় ঘাসমাঠ, হাটফের্তা লোক কুঁজো হাঁটে
জীবনের যাবৎ রসদ পাবে এসে পরা এই ভুবনের বাটে
***
কোনোদিন এথা যদি ফিরিয়া আসিতে পারি ফের
শুনিব শঙ্খধ্বনি — উৎপাদিত গানগুলো দূরপাহাড়ের
গাছের পাতার ফাঁকে চিরিক-চিরিক কারা করে চরাফেরা
খুঁজে নেব অন্ধকারে সাপের ঘুমের দৃশ্য, পোকাদের ডেরা
কিছুটা সময় তবু থাকে যদি দেখিবার, দেখিব তারপর
কোথাও রয়েছে বাঁধা বনের কিনারে পড়ে বাগদি ক-ঘর
***
একাকী একটি হাঁস গুগলি খুঁটছে মগ্ন লতাতন্তুজলে
ক্ষেত-কেটে-নেয়া মাঠ। অদূরে জিরাইছে গাভি শ্যাওড়াগাছতলে
হাঁসের হাসির মতো, গাভির গানের মতো, অশ্রুত দুপুর আছে এতদঞ্চলে
***
সাধনা করেছ যত ঘুম এ-জীবনে সাধ্যের অতীত
বুনে গেছ বাসনায় বিলুপ্ত যত পাখিদের প্রত্নডানাপ্রেম
আর অব্দব্যাপী অন্ধকারে গোপনে পুষেছ যত আলোকাভিলাষ
এখানে জুড়াবে এসে যত সাধ ঘুমাবার, ডানাবাসনার নাদ, আলো-অনুরাগ
***
পানিতে দাঁড়ানো গাছ। প্রবাহিত জলপিপিগুলো। গুবাকতরুর বনে মেঘলা দুপুর
পানিতে ঘুমন্ত গাছ। তন্দ্রাশান্ত পাখসাট। জলডুবো রজনীর সুর
***
হিজলের কাণ্ডে বাঁধা নৌকাখানা কার?
পারাপারে ব্রতী যারা নিতিদিন নিতিরাত এ হাওর-পাথার —
এখানে কিছুর নাই মিছা মালিকানা। অর্থাৎ, নৌকাটা আমার
***
পাতায়-ঝাকড়া-মাথা সারি সারি করচের গাছ —
মৌনী ঋষির ন্যায় চুপচাপ খাড়া রয় জলে
আর তাদের ফোকরে-ফাঁকে পথ করে বাড়ি ফেরে নৌকাচালকেরা
বাতাস ঘন ও নম্র। স্বস্থ জল। অধিকৃত গ্রামগেরস্তালি অধিক শান্ত চিত্রার্পিত
ডুবেছে শ্মশান, দ্যাখো, ওই তার ত্রিশূলসূচিত অবস্থিতিচিহ্ন
সর্বজনের শারদীয় দুর্গাগৃহখানা আধেক ডুবেছে জলে, আধেক আঁধারে
সন্ধ্যার সর নামিছে এতই ধীরে এইখানে ইতস্তত জলে ও জংলায়
এমন মুহূর্তে অতি আচানক একা লাগে — বিষাদে, বর্ষায়
***
নেমে আসে এরপর নগ্ন ও নিরিবিলি পাৎলা পরীর মতো অপরিমেয় রাত
তার বর্ণ নাই শব্দ নাই দৃশ্য ও স্পর্শ নাই শুধু তারে গন্ধে টের পাই
জলগন্ধ। গাছগন্ধ। বনের বিধুর গন্ধ। হিয়াতুর হিজলের গন্ধে তারে পাই
***
বিমূর্ত মোটেও নয়, রীতিমতো মূর্ত আমার রাত্রি এথাকার
ফুটে রয়েছে মূর্তি এথা অন্ধকারে, আম-আতা-জামঝোপে শটিফুলগাছে
সুতোবোনা মুখগুলো, মৌন ও মদিরতাময়, মনে ডুবে যায় ফের মনে ভেসে ওঠে
উদযাপনের জায়গা পাবে যোগ্য এইখানে — রাত্রি স্মৃতিচিত্রিতা, স্বাতীনক্ষত্রমুখর
***
তারামুখরিত রাত। আসমানে অবিকল সূক্ষ্মখোপা জালের বিন্যাস।
তাকালেই উঠে আসে স্মৃতিঝাঁক এক-লহমায়। অতীতের নক্ষত্রমণ্ডলী
একে একে ধরা দ্যায় হাতে এসে। আঙুলের অসীমিত অগ্রে
ঝেঁপে নামে মুখ। মাছের মতন মৃদু মুখগুলো। ডগা মেলে দেখি —
***
সর্বত্র জলের শব্দ সন্ত্রাসহীন।
সারারাত জল এথা জব্দপ্রায় রেখে দেবে উন্নিদ্র তন্দ্রায়।
সর্বত্র জলের আওয়াজ অত্রস্ত হুড়োহুড়িহীন, সারাদিন।
এই আমি সঁপে দিনু তনুমন এথা এই জলের হাওলায়।
জল থেকে, সম্ভবত, এসেছি উঠিয়া আমি, যেন জলে হই লীন।
***
পুরে এল বৃত্ত এইবেলা। বৃত্ত পুরো হয়ে এল।
জলঘূর্ণি। গ্রহচঙ্ক্রমন। দৃশ্যসব বৃত্তের প্রকার।
জীবনচক্র। গোল্লা। চাকা। চাকতি। গোলক-প্রগতি।
আর এই ঋতুবৃত্ত। এল পুরে অম্বরে-অম্বরে এই বিশ্বচরাচর।
সময়ফ্রেমের কাচে ঘোলা কিছু ক্লাউড-সার্কল —
পরিধিপ্রদেশে তারা ইতিউতি কিঞ্চিৎ চাপা।
শেষমেশ ঝরিবেই তারা, এথা না-হোক হোথা না-হোক
অন্য কোথা অন্য অন্ধকারে, অপর অম্বরে।
আমি না-হোক কোনো-না-কোনো আমারই অন্তরে …
দিগন্ত ছাপিয়া মির্যাক্যল বৃষ্টি পড়ে ঝরে