আকাঙ্ক্ষা ও অন্যান্য কবিতা । রাওয়ান সায়েমা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ এপ্রিল ২০১৫, ৩:০৬ পূর্বাহ্ণ, | ৩১৫৯ বার পঠিত
সরলীকরণ
আজ রাজার হুকুম . .
বাক বন্ধ বাদ্য বন্ধ সূর বন্ধ
নৈশব্দে শুধু আঁখিতে আঁখিতে মিলন হবে
পলক মিলবে ,
আর আমি ভুলে যাবো ‘আমি কার কে আমার’ পদ্যটি
আজ চোখে চোখে পদ্য লেখা হবে
আঙ্গুলে আঙ্গুলে অনুভূতির সূর ঝরবে
কবিতা ছুঁবে তোর ওষ্ঠের কিনারা
আর তোর জন্য কোন এক বসন্তকালের গান রচিত
হবে ।
তারপর ?
তারপর
আকাশ আবার আকাশে দিবে পাড়ি আর
শব্দের বোবায়
তারা ভরা আলো আঁধারি জ্যোৎস্না রাতি ,
সবমিলিয়ে
তোর জন্যই কবিতাগুলো গাইবে সরল গান
পাখিগুলো সব তুই তুই বলে তুলবে স্বরতাল ,
আর আমি ?
আমি !
কবিতা সরলীকরণের দ্বায়ে কোন এক জেলে নাক
কাটা কয়েদী ।।
না বৃত্তান্ত
দুঃখিত জনাব ;
আর যায় বলেন আমাদের স্বপ্ন দেখতে বলবেন না ।।
পার্ক ও ডাস্টবিনের ব্যবহিত কনডমের মত আমাদের স্বপ্নগুলো ওলট-পালট খেয়েও আমাদের আশে পাশে উল্টে-পাল্টে আপনাদের মতে অযথায় গড়াগড়ি খায় ,
খেতে দিন জনাব ।
ডেমোক্রেটিক বাল হয়ে শূলের মোচনে উঠে আসা মাল হয়ে ;
স্বপ্ন নিয়ে বাড়াবাড়ি করা বোধহয় বাড়াবাড়ি রকমের ব্যায়াদবি বটে!
আমরা আর চাই না স্বপ্নের টুকরো জোড়া লাগাতে কোন হ্মুদ্র ঋণের এনজিও,
কোন লিমুজিনে চড়া বৃহতী ঋণ অথবা কোন ম্যাল্টিন্যাশনাল ভিক্ষা !
শুধু একটি অনুরোধ জনাব ,
আর আনবেন না আপনার মিশকালো জিহ্বাতে সেই কথা ,
আর করবেন না একটা ফুটফুটে শিশুর মত স্বপ্ন খোঁজার প্রয়াস ।
আমাদের লাল ফোলা চোখ মরে গেছে সেই কবেই
প্রসাধনী মেখে ,
বিপণনের যুগে
কবিতাতে পাউডার মাখিয়ে উপস্থাপন করায় যেখানে আমাদের অস্তিত্বের পোড়ন
সেখানে বলবেন না
একটা বকুল ফুলের মত স্বপ্ন দেখতে ,
অনুরোধ ;
রুমালে গাথা রইলো চিরতরে ।।
হাইপারমর্ডালিজম তথা ছ্যাড়াব্যাড়া কবিতা অথবা দেহহীন কবিতা
কোথায় ?
কেন নেই ?
নতুন কোন বোধ ?
চেতনা ?
কেন ?
আজকাল বুঝি উদ্বেলিত হও না ?
উত্তেজিত ?
অবদমন ?
নৈঃশব্দ্য ?
কষ্টও না ?
তবে সুখ ! আনন্দ ?
কেন ?
ঝর্ণা শুকিয়ে গেছে ?
ভার্জিনা ?
কবিতা ভ্রণ ?
ওমা কেন ?
নারিকেলজ ?
তাও না ! তবে ?
ধুর হালা বন্ধ্যা ! বোধে বোধ টক্করে সদ্যজাত
কোন
বোধ-রূপান্তরিত ভ্রণ জন্মহীন পীড়া দিয়ে যায় ,
তবু ? তবু ! আমি বন্ধ্যা ।।
আকাঙ্ক্ষা
জ্যোৎস্না ও চাঁদের আধিক্যের মাঝে আমরা চারজন লোকাল ট্রেনের যাত্রী
কুলাউড়া-লংলা এরপর আমি-তুমি পেরিয়ে আমরা
সময়-সীমার মাঝে থেকেও কেমন জানি সময় নিয়ে অসময়-অসময় খেলা
অতঃপর মরিচের মত আমাদের দু পায়ের মনটা জ্যোৎস্নাতে চার পায়ে নাচে
আর আমরা হেড়ে গলায় গেয়ে উঠি ‘যেতে যেতে পথে পূর্ণিমা রাতে চাঁদ উঠেছিলো গগনে’ . . .
শেষমেষ নাড়ি-ভুঁড়ির নষ্ট সমাজ থেকে উঠে বুঝি এবার আসা হলো বাস্তবে ।
কবিতার ভুরুতে রিং পরিয়ে কোন এক পোষ্টমর্ডাণ নামে চালিয়ে যাওয়া
অথবা বিড়ি-ছাই হয়ে অহেতুক গড়াগড়ি খেয়ে একবার এদিক একবার ওদিক চাওয়া
-শেষ বুঝি হলো আবার ।
নিঃশেষ হয়েও কিভাবে কিভাবে জানি সঞ্চালক হয়ে ওঠা
আর মৃতের ঠোঁটে চুমু খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা সব আজ উত্তরণের তুঙ্গে,
যা ভাগ !
আজ সময়ের ছুটি ঘুমের ছুটি আমার ছুটি
মাত্রা ছাড়িয়ে অমাত্রার ওড়না ধরে টানাটানি ছেড়ে আমরা এখন চন্দ্রাহত ,
চন্দ্র-চন্দ্র খেলি
জ্যোৎস্না-জ্যোৎস্না খেলি
বড় ইচ্ছে করে সিগারেটের ধুয়া হয়ে উড়ে যেতে
স্বপ্ন-লাটাই এর সুতো কেটে দিতে অথবা প্রিয়তার চোখে ছবি হতে. .
আর এভাবেই কিছুক্ষণ বাস্তবের লেজ ধরে টানাটানি করার পর অবাস্তবতার ছেঁড়া-স্বপ্নকে ভাঁজ করে বুকপকেটে রেখে দেই আর নীরবতা পালন করতে থাকি ।
প্রতীহ্মা
এক অশ্লীল নির্লজ্জ নীরবতাই হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছি
পথগুলো উল্টো হয়ে আমার দিকে পিটপিট করে চাইছে
যেন আমার প্রেমে পরেছে এমনভাব ।
ধূলি গুলি মৃত্যু প্রায় ,
না খেতে পেরে শুকিয়ে চাকচিক্য হারিয়েছে যেন,
তবে তার উল্টোটাও হতে পারে ।
ঘুমহীন চোখে গাছগুলোও চেয়ে আছে,
তামাশা দেখতে চায় যেন ।
আর রাত জেগে থাকার কারণে চোখের নিচে কালি পরা সেই বুদ্ধিদীপ্ত পেঁচাটাও যে একটু আগে বিশাল একটা হাই তুলল সেও যেন আমায় মুখ ভাঙ্গাচ্ছে ।
চারিদিকে নিষ্ঠুর অট্টহাসি আমার বুকে তালা লাগিয়ে দেই সেই তালা যেটা একটুতেই ভেঙ্গে যায় ।
আমি চমকে উঠে নিজেকে সামলে নিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে কেও দেখল কিনা পরখ করে আবার নির্লজ্জ নীরবতাই পিঠ ঠেকায় । আবার প্রতিহ্মা করতে শুরু করি তবে সেই দাঁতভাঙ্গা উপহাস এর না বরং নাজনা অস্তিত্বহীন বিমূর্ত কিছুর যেটা হয়ত পাশে থেকেও অস্তিত্বহীন ।
দ্রোহ
সৃষ্টির সেই প্রভাতে
অভিধানে তো প্রভেদ ছিলও না,
আমি-তুমি হাতে হাত রেখে
রচনা করতাম মর্ত্য নামক স্বর্গ ;
ফুল ফুটিয়ে দুজনেই উচ্ছ্বাসে চোখে চোখ রেখে জীবনটা উপভোগ করতাম ।
মধ্যাহ্নে ধরেছে তোমার ভীমরতি,
আমাকে করছও অস্বীকার !
আর একবার যদি মেয়েমানুষ ডেকেছ,
ভাতে নয় কামে মারব তোমাকে নপুংসক হবো আমি ।
তোমার ছটফটানি মৃত্যুকে অবলোকন করবো ,অতঃপর তা উপহাস থেকে কৌতুকে রূপান্তরিত করবো ।
ভুলো না আদমের ছেলে
এখনও মহাকাল হয়নি শেষ ,
এখনও চাঁদ ওঠে গগনে,
সূর্যের ছটা ঝড়ে মর্ত্যে ,
শেষ-বেলার কালসাপিনী আমি ,
দেখবে আমার নাচের খেলা ?
এ খেলা , খেলা নয় মৃত্যু নামক পরী ;
তোমার চরণ চুমিলে তবে
অতীত হবে তুমি . .
থাক না এসো
হাতে হাত রাখো ।
কি ! ভাবছ দুর্বলা ?
সাবধান ! সাবধান !
আদমের ছেলে ,
আমায় তুমি চিনবে কখন ?
মরণের পরে . . .?
একটি মৃত্যু
অদূরে অচেনা কোন এক মন্দিরে মৃত্যুঘন্টা বাজলো,আনন্দে উচ্ছ্বসিত বাড়িটা হঠাৎ ই ভেঙ্গে গেল
মানুষগুলোও কেমন জানি আঁধার হলো !
চারিদিকে অন্ধকার আর শিশির ভেজা নীরবতায় হঠাত্ এক
তীহ্ম কণ্ঠের চিৎকার আর অনুচ্চ ফিসফিসানি পবনে কি অদ্ভুত এক সূরের মূর্ছনা তুলছে
আমি হঠাত্ থমকে গেলাম
পেছন ফিরে ডাক দিলাম
অদূরে এক ফোটা জল বহুকষ্টে জবাব দিলো
আর বৃষ্টিটা তখন থেকেই ঝড়তে লাগলো ।।
আমি তাকে চিনতাম , ভাঙ্গাগালে খোজা দাড়ি, চোখ কোটরে ঢুকেছে সেই কবেই , স্মৃতিতে হাতড়ে খুঁজতে গিয়ে কিছু এলবাম পেয়ে গেলাম ,
সে হাসছে , অভিমান করছে , নাতনিকে লজেন্স কিনে দিচ্ছে,
লাল ফ্রক পড়ে শর্ষে ভিটেয় তার হাত ধরে হাঁটছি,এভাবেই কতগুলো জীবন্ত ছবি এলবামে জায়গা করে নিয়েছে ।
স্মৃতি ঘেঁটে নির্বাক নিশ্চুপ ; ব্যক্ত করার প্রয়োজন হারিয়েছি আমি , একটি মৃত্যু নিষ্ঠুর করেছে একটা সন্ধেকে
অসহায় করেছে কিছু মানুষকে আর নীরব করেছে আমাকে,
বহুকষ্টে আরেকফোঁটা জল কেঁদে উঠে ডাক ছেড়ে , পাশ থেকে কয়েকজোড়া কন্ঠস্বর আবার বলে উঠে ‘লোকটা ভালো ছিল’ ।।
প্রণয়ে একটি ঝর্ণা
চেনাশহর ছেড়ে দূর টিলাটার অঙ্গে জড়িয়ে ছিল এক বুনো ঝর্ণা
-সে যে বড় উচ্ছল উ-শৃঙ্খল ঝর্ণা সারাদিন চলত তার ক্রন্দনের বন্যা ।
মাতাল এক মৃণ্ময় সুরের পতনে আকৃষ্ট হয়ে একদা এক পথিক সদাই কাছে যেত, পতন তার কত্থ মধুর তা ঝর্ণাকে বোঝাত, তার স্বচ্ছতা আর তার প্রতিফলনের গল্প শুনাত । নিজের কথা নিজে শুনে অবাক ঝর্ণা ভালোবেসে ফেললো নিজেকে অতঃপর পথিক কে ।
সুখের তোরে ঝর্ণা বাড়ালও তার ক্রন্দন
সুখের বাড়ন তেজি বাড়ন বাড়ল তার স্পন্দন
ফলাফল স্বরূপ ঝর্ণা ফেলল ছুড়ে বাঁধন ।
অতঃপর এভাবেই তার ঝর্ণা জীবন এর গল্পটি শেষ হলো যদিও শুরু হলো নদী জীবন । আর পথিক তার তরী ভাসালও সেই কীর্তিনাশায় ।
আর গল্পটি শেষ হয়েও শুরু হলো ঠিক এভাবে….
<কবিতাটা এখানেই শেষ অতঃপর শুরুও বলা যায় । এ নারিকেলজকবিতা যে শেষ হওয়ার নই এর মাদকতা অবিনশ্বর যতদিন ঝর্ণার ঐ সুরটা থাকবে ততদিন । কবিতাটা বিশেষত্ব এই যে এটা ইবনে পঁচিশ বার পড়েছে যদিও তার কারণটা নাহি ঊহ্যই থাক । তাই কবিতাটা তার তরে উৎসর্গ করিলাম যদিও আমার অব্যক্ত কথা থেকে শুরু করে সবকিছুই যখন তার নামে তখন এই কবিতাটা আদিখ্যেতা তুল্য তবুও আজ রাতে এই কবিতা তার নামে চিয়ার্স ।