ছোটকাগজের ক্রান্তিকাল নেই । হেনরী স্বপন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ মার্চ ২০১৫, ৪:৫৩ পূর্বাহ্ণ, | ৩৩৭৬ বার পঠিত
ক্রান্তিকালেই ছোটকাগজের জন্ম। অতএব…
মৃত্যুর সময় যায় জন্ম-তার মৃত্যু নেই। পাঠ ও পাঠক চিন্তা করে ছোটকাগজ তৈরি হয়নি কখনো। ছোটকাগজের জন্ম মূলত : লেখকের পেইন! নিরীক্ষা প্রবণতায় জারিত নতুন কিছু করার আকাক্সক্ষা থেকে। সৃজন-এই কর্মকাণ্ডের গ্ল্যামার’স উদ্দেশ্য এতোটাই ক্ষীণ! যা-যত্রতত্র অতোটা বিলবোর্ড সর্বস্ব নয় যে দেখতে চাইলেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখতে পাওয়া যাবে। ছোটকাগজের পুঁজি-পুঁজ, ক্ষোভ-বিক্ষোভ, ক্ষত-বিক্ষত, যন্ত্রণার অবশে অবশে এতোটাই-পক্ষাঘাত লুকানো থাকে।
সাম্প্রতিক সাহিত্যের গতি-প্রকৃতি, লেখকের নিজস্ব ও নতুন ধরণের চিন্তা প্রকাশের বিভিন্ন মাধ্যম এখন-যতই প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠুক না কেনো গ্লোবালি এটি একটি প্রক্রিয়াগত চিন্তার প্রকাশ। এর সমস্ত পদ্ধতিই আমাদের ছোটকাগজের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাকে থামিয়ে দিতে পারবে না। সে কারণে ছোটকাগজের চিন্তাকে কখনো ক্রান্তিকাল ছোঁবে না। হয়তো পদ্ধতি পাল্টে যেতে পারে। বরং এই বলা যায়, ছোটকাগজ তার ব্রেক-থ্রু প্রকাশের জন্য ব্লগ অথবা ওয়েব সাইট ব্যবহার করবে-হয়তো।
তার মানে এই নয় যে, এখনকার এই বিভিন্ন পদ্ধতিই ছোটকাগজের চিন্তাকে ক্রান্তিকালে ঠেলে দেবে। যদি তাই হয়, তবে সমাজ-মানুষ-সভ্যতা-ক্লাসিক কোন কিছুই থাকবে না। বিকাশ লাভ করবে না তেমন কোনো প্যারাডাইমে। যদি না অভিশপ্ত হয়ে আবার বর্বরতা থেকে শুরু করে পৌঁছতে হবে এখানে। কেননা, ছোটকাগজ বলতে আমি বিশেষ ভঙ্গি ও সাইজের পত্রিকাকে মনে করি না। যা মূলত কাঠামোর বাইরে এসে, বিশেষ কোনো চিন্তা-ভঙ্গি হয়ে উঠছে বলেই মনে করি।
এ-ও মনে করি, ছোটকাগজের ক্যানভাস মোটেই ছোট কিছু নয়। ছোটকাগজই পাঠক তৈরি করছে। সেইসব প্রকৃত পাঠক ও লেখক। এবং যেসব পাঠক ও লেখক সত্তায় প্রতিনিয়ত যাওয়া-আসার সেতু তৈরি করেছে। যদি এরকম ভাবি! যারা পাঠক-তারাই লেখক-তবে কিন্তু গ্রাফটা অন্যরকম হবে। ছোটকাগজ যদি অসংখ্য লেখক তৈরি করে থাকে, তবে পাঠকও তৈরি করেছে সমপরিমাণ। পিছনে ফিরে দেখলেই এর সত্যতা মিলবে। আমি বরং এভাবে ভাবতে ভালোবাসি যে, আমাদের দৃষ্টিতে যেহেতু কিছু বড় কাগজের ঔদ্ধত্য আছে-এর পাঠক কিন্তু তৈরি করছে মূলত এই ছোট কাগজ-ই।
যদি এটাকে একটি পাইপ লাইন মনে করি; তবে দেখা যাবে ঝাঁকে ঝাঁকে নতুন লেখক-পাঠক আসছে-আবার বেরিয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্ম-নতুন লেখক-নতুন সম্পাদকের চাপেই। পাঠকের মান কিংবা লেখকের মান-স্তরের পরিমাপ-এটা রাষ্ট্র-সমাজ ও তার স্বাস্থ্য যেমন…অনেক উপাদানের সাথে যুক্ত-এক্ষেত্রে ছোটকাগজের করার কিছু নেই। যে লিখবে-যে পড়বে-তার কমিটমেন্টের উপর নির্ভর করে।
হারিয়ে ফেলা! কোনো হতাশা বা নিয়ম নয়। বরং অর্থ-সামাজিক কাঠামো, রাষ্ট্রের আচরণ, শাসন-শোষণের মাত্রা, সামগ্রিক আকাক্সক্ষা, সাময়িক সুস্থতা ও অসুস্থতা সময়ের সাথে সাথে বাড়ে অথবা কমে। লেখক পাঠকের গ্রাফ লাইন-এরকম-ই।
ছোট কাগজের প্রয়োজনীয়তা-উপযোগিতা নেই? যুগের মেরুকরণে ব্যর্থতাই কী এর নিয়তি?-এই প্রশ্ন হাস্যকর! তবু আজকেও আমাদের এইসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে কেনো? যদিও বা আমাদের চিন্তায়, নিয়তি-এই শব্দের বিশ্লেষণ একেবারেই বেমানান। প্রয়োজন-উপযোগীতা এসব দিয়ে তো ছোটকাগজকে বিশ্লেষণ করা আরো মূর্খতা। তবে হ্যাঁ-যতোটুকু বুঝি, ছোটকাগজের উপযোগীতা-প্রয়োজন কখনো ফুরায় না। কারণ সে নিজেই-স্বয়ম্ভু।
ছোটকাগজের ব্যর্থতা বলেও কিছু নেই। যুগের মেরুকরণ-যে ভাবেই হোক না কেন? সে টিকে থাকবে চিন্তা-পদ্ধতি-অঙ্গীকার-অহং ও এর দর্শনের কারণেই।
বুঝতে হবে কাঠামো ছোটকাগজের একটি মুখোশ মাত্র। যদিও অবস্থানে বিশাল-মাধ্যমেও।
প্রশ্ন হলো, মানুষ কী যন্ত্র হয়ে বর্বর হবে-হচ্ছে। চিন্তা শূন্য বস্তু? যদি এই বিমানবীকরণ সত্যি হয়। ছোটকাগজ তখন আরো বেশি সফল হয়ে উঠবে। ব্যর্থতা ফুটে উঠবে এই যুগ মেরুকরণের নির্দিষ্টতায়-বিদ্ধ মানুষের আত্মায়।
ব্যর্থতার নিয়তি থেকে বরং ছোটকাগজই পারে তাকে বের করে আনতে। এ রকম আপোষ-আত্মসমর্পণ…নির্ঘণ্ট অপ্রয়োজনীয় করে তুলবে।
ফলে, ছোট কাগজের জন্য সবুজ প্রান্তর গড়ে উঠবে চিরকাল। এর বিপরীত কিছু অন্ততঃ আমার ভাবনায় নেই। যে রকম-প্রাতিষ্ঠানিক আলু মার্কা চিন্তা-ছোটকাগজের জন্য একেবারেই অর্থহীন। সে রকম-প্রান্তর যদি তৈরি হয় তখন ছোটকাগজ আর ছোট কাগজ থাকবে না। তা মূলত মূর্খদের মুখপত্র হয়ে উঠবে। সংকট ও সংগ্রামের মধ্যেই ছোটকাগজ প্রাণ ফিরে পায়। পথ দেখায়-তথাকথিত বড় কাগজ এবং বড় লেখক ও পাঠককেও।
তাহলে একবার, ভেবে দেখুন তো;-ওরকম একটি ল্যান্ডস্কেপে ছোটকাগজ দাঁড়িয়ে আছে। আর কিছু মূর্খ স্যালুট দিচ্ছে। তোপধ্বনি-সামরিক কায়দায়! যা মূলত বুটপরা হাঁটুতে মস্তিস্ক চলে যাওয়ার নিয়ম পদ্ধতির মতোই।