মুখোশ ও অন্যান্য কবিতা । ফাহমিদা ফাম্মী
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, ৬:২৯ অপরাহ্ণ, | ৪১১৩ বার পঠিত
ছায়াসঙ্গী…
পায়ের তলে অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যৎ
পিষে বেড়াই অবিরত , এখন আর ভাবনায় আসে না
প্রেম আলিঙ্গন অথবা চুম্বন। জীবন চলেছে জীবনের গতিতে
কারো ভালো চাওয়ায় যেমন কিছুই আসে যায় না,
ঠিক তেমনি কে কি ভাবল তারও তোয়াক্কা করি না !!
নিজেকে রাখি নিজের কাছে সবার থেকে উপরে।
ভুলে ভ্রমে কাটিয়ে দেওয়া সময় গুলো শুধরে নেবার
অপ্রাণ প্রচেষ্টাও করি না , ক্রমশ বাড়তে থাকা
বয়স আটকে রাখার ইচ্ছা পোষণ করি না ,
কারো কাছে নেই কোন মিনতি ।
যে যেতে চায় তাকে আটকে রাখি না, যেতে দেই অনায়েশেই !
কারো কাছে কোন আবদার করে না পেলে
ঠোট ফুলিয়ে কাঁদতেও বসি না
স্বনির্বাসনের একাকিত্ব অনুভব করি
নিজের মত করে , নিজ জায়গায় দাড়িয়ে
পৃথিবী অন্ধকারে নিজেকে খুজে হাতড়ে বেড়াই ।
অন্ধকারে হটাত চোখে পড়ে ,
ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ছায়া সঙ্গী দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হয়…।
মুখোশ
শহরটা নিস্তব্দ ! হই হুল্লোড় নেই কোথাও !
এক্কেবারে যাকে বলে পিন ড্রপ সাইলেন্স !
চায়ের স্টলে চলে না রাজনৈতিক আলোচনা ,
এ দল সে দল করে কেউ আর
কথা কাটাকাটি করে না ,
এসট্রে ভর্তি হয়ে পরে থাকে ব্যবহৃত সিগারেট ,
এ হাত ও হাত করে ঘুরে বেড়ায় না হাত থেকে হাতে ।
টগবগ করে ফুটতে থাকা চা ঠাণ্ডা হয় কেটলিতেই !
ইট পাথরের দালান থেকে ভেসে আসে চাপা কান্না ।
জোছনাও পরিনত হয় বর্ণহীন আলোক রশ্মিতে !
রাস্তার মোড়ের গাছগুলো দাড়িয়ে রয় নিরব ভঙ্গিতে ,
চেনা মুখ গুলো অচেনায় পরিনত হয় ধীরে ধীরে ,
শহুরে বাস্তবতায় মানুষগুলোর পড়া মুখোশে
মানুষরাই বড্ড বিরক্ত আজ !!!
হুইসেল
একটা স্টেশনে থেমে আছে ট্রেন
চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার
দু একটা জোনাক জ্বলছে মিটমিট করে ।
বুকের মধ্যে টিকটিক করে
বেজে চলছে জীবন ঘড়ি ,
জানান দিচ্ছে জীবনের অস্তিত্ব ।
অমাবস্যার আকাশে অদৃশ্য চাঁদ ।
তবু তাকিয়ে থাকা আকাশে শূন্য দৃষ্টিতে ,
অন্তিম অপেক্ষার শেষে
দূরে শোনা যায় ট্রেনের হুইসেল…।
মিনিটে বাহাত্তর বার করে
তোমার খুব কাছের মানিব্যাগের খুচরো পয়সা হতে চাই নি ,
একটু নিচু হলেই ঝনঝন করে মাটিতে গড়িয়ে পড়া ।
তোমার হাতের ঘড়ির কাটা হতে চাইনি ,
বার বার পরিবর্তন হওয়া
কিংবা তোমার বুক পকেটের ছোট্ট রুমাল অথবা টিস্যু
কাজ শেষে ফেলে দেওয়া ।
তোমার রুক্ষ এলোমেলো বাবড়ী চুলের
চিরুনি হতে চাই নি,
আঁচড়াতে গিয়ে ভেঙে যাওয়া,,
তোমার শরীরে মিশে থাকা পারফিউমের সুগন্ধ হতে চাই নি,
সময়ের সাথে সাথে বাতাসে বিলীন হয়ে যাওয়া ।
আমি কি চাই জানো ?
তোমার বুকের বাম পাশটায় হাত রাখো
দেখবে কিছু একটা ধুঁক ধুঁক করে বেজে চলেছে ,
যার নাম হৃদপিণ্ড ,
চাই ঐ হৃদপিণ্ডের ধুঁক পুক শব্দ হতে,
যা মিনিটে বাজবে বাহাত্তর বার করে !!
পাগলীর সব কথায় জবাব দিতে নেই
এই শোন না !!!
আমার মৃত্যু হবে তোমারও হবে ,
তারপর যদি শুরু হয় আরেক জীবন ,
সে জীবনে তুমি আমার হয়েই থাকবে কেমন ?
বর্ষার রোদে ভিজবো ,
গ্রীষ্মের বৃষ্টিতে শুকাবো !
প্রচণ্ড গরমে শীত পোহাবো আর
কুয়াশা আচ্ছন্ন রাতে ফ্যানের বাতাস খাবো কেমন ?
অথবা
কোন এক আলোক উজ্জ্বল জোছনা দিনে
জোনাকি ছুবো ! ঝকঝকে রোদেলা রাতের
তারা হয়ে আমরা বিনিদ্র রাত কাটাবো কেমন ?
এক একটা দিন যাবে,বসন্তের পর বসন্ত আসবে !
যাবে বৎসরের পর বৎসর !!!
এভাবেই ইতিহাসের পাতায়
আমাদের নাম লেখা হবে ,
জনে জনে স্কুল কলেজে আমাদের কথা
পাঠ্য বইয়ের পাতায় পাতায় থাকবে ।
কখনো কোথাও প্রেমিক জুগলের
নাম নেওয়া হলে প্রথমেই উঠে আসবে
তোমার আমার নাম !!
এমন কথাই রইলো কেমন ??
কি হল কথা বলছ না কেন ?
কথা বলছি না কারন পাগলীর
সব কথায় জবাব দিতে নেই !!!!!