মৃত্যুর পরে এবং অন্যান্য কবিতা । হাসান শাহরিয়ার
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ আগস্ট ২০১৪, ৬:৫৮ অপরাহ্ণ, | ৩১৯২ বার পঠিত
জোনাকির আলোয় অন্ধকার দমে না
একঃ
মিছিলের আগে
স্লোগানে মেতে ওঠে বুকফাটা রাস্তা।
তাই দেখে
ভিজে ওঠে চায়ের দোকান।
তৃষ্ণা পেলে –
ঝুলে থাকা কাচের জান্লাগুলোয়
চিল্লায় শহুরে কাক।
তারা মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী টুথপেস্ট
আরাধনা করে চন্দ্রঘন রাতে!
দুইঃ
বুথের প্রহরী নিশ্চল শুকনো করোটি
প্রতিদিন দেখে রাস্তা জুড়ে অজস্র কঙ্কাল;
যেন সব ধুলা মাখা বেহাত বাঙ্কার!
তিনঃ
হাতুড়ির ঝনঝন নেই।
শুধু সুঁইয়ের আঁচে সুতোগুলো বুনে যায়
লতার বাহার।
আর টেবিলের নিচে
রক্ত-দরিয়া ছলছল করে!
চারঃ
কেঁদো না।
তোমার কান্নায়
ট্রাকের হেডলাইট আরো জ্বলে ওঠে।
পাঁচঃ
রাত্রি নামার আগেই তাকে টেনে ধরে
ঘরের দরজায়
তালার সাথে ঝুলে থাকা নাটাই।
সে জানে না
জোনাকির আলোয় অন্ধকার দমে না;
আগুন জ্বালাতে হয়!
মৃত্যুর পরে
কেউ আঁকছিলো– এইরকম
একটা স্লেটের ঘরে
তুমি বইসা থাকো দিনে
আর অবকাশে ইচ্ছা হইলে
জানালাটা খোলো।
বৃষ্টি নাই। হালকা রোদে
একটা রাস্তা উইঠা আসে
তোমার ঘরের নিকট–
একজন গোরখোদকের নামে
জিকির করতে করতে।
সেই রাস্তায় তুমি হাঁটো
তোমার পদচিহ্নের পাশে
জেগে ওঠে আরো একটা পদচিহ্ন–
মৃত্যুর পরে যে জাগছিলো আবারো
আর হাঁটছিলো বিষণ্ণ মনে
গোরখোদকের আড়ালে।
নগর ছেড়ে চলে যাচ্ছে যে জন
নগর ছেড়ে চলে যাচ্ছে যে জন
সে চিহ্ন রেখে যায়
বিকালবেলায় বৃষ্টির পরে
রিকশার হুডে
একজোড় চোখে।
নগর ছেড়ে চলে যাচ্ছে যে জন
সে চিহ্ন রেখে যায়
সাঁকোশূন্য টানে
সন্ধ্যা হলে ভিড়ের গায়ে।
পৃথিবী
তুমি অযথাই তোমারে নিয়া
এক দীর্ঘ পৃথিবী দাবি করতেছ।
যেখানে হাঁস-মুরগীর খামার থেইকা
কিন ব্রীজের একপাশে শ্রীহট্ট নগরের
সবচেয়ে বড় ঘড়িটাও আছে। সেই
বড় ঘড়িটা– নগরের বিলাপে যার
ডাক কেউ শুনে না ।
আবাদি কোন ফটোগ্রাফার না হলে–
যার দিকে কেউ ফিইরাও চায় না!
যেদিন–
প্রেমিকা আমারে ছাইড়া গেল;
দূর থেইকা– সে ঘড়িটারে আমার
মেয়রের গোঁফের মতনই খুব কুৎসিত
লাগছিল। তার সময় অযথাই
তারিখ বাড়াইয়া যায়। আর আজকেও
আমি–
পিছনদিকেই কেবল হাঁইটা
যাইতেছি।
তুমি ভাবতেছ–
আমি খালি আবোলতাবোল বলতেছি;
যুক্তিবিবর্জিত।
আর কৌশলে একটু একটু কইরা
ভাঙ্গতেছি তোমার একার পৃথিবীটা।
অথচ তোমারে আমি পারতেছি
না বলতে–
তোমার পৃথিবীর কাছে ভাইসা
উঠে আমারও একটা পৃথিবী। একা।
যেইখানে হয়ত এক ট্রাক টমেটো
চালান দিয়া –
মহাজন ভুইলা গেছে আবাল
কৃষকের কথা। আর ড্রিমল্যান্ডের পাশে-
কয়েক ঝুড়ি গুড়া মাছ নিয়া আড়ত
দিছে একজোড়া বুড়া কাতলা মাছ।
আমরা যখন দুইটা পৃথিবীরে
নিয়া আলাপ করতেছি –
তখন দেখা দিতেছে যুগপৎভাবে
তাদের সীমানাগুলাও। নিয়মমতই–
আমরা ব্যস্ত হইয়া পড়ি
আমাদের সীমানাগুলা নিয়া।
আর চেকপোস্টের বুলেটপ্রুফ সাসপিশন
আলো অন্ধকারে
খুঁইজা নিতেছে আমার শার্টের
মরচে পড়া আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার
নাইলে তোমার মুঠে
রঙ খইসা পড়া খিন্ন পতাকা।