একগুচ্ছ কবিতা । আলী আফজাল খান
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ আগস্ট ২০১৪, ৫:৪৬ অপরাহ্ণ, | ২৩১৯ বার পঠিত
টোপাপানা
হয়তো কাছেই ডাঙ্গা
এই আশায় অনন্ত জল সাঁতার
হয়তো ঝরে যাবে এই সবুজ শরীর
—মেশার আগে মোহনায় অথবা সীমানার ওপার
জানি না কতদূর জন্ম
সেই মাহেন্দ্র ক্ষণের
কত দূর এই নদীপথ
ঢেউয়ের সাথে ভেসে ভেসে
ঢেউয়ের কোণায় সাঁতার কাটা ছোট্ট জীবন
উ্চ্চবাচ্চহীন – নিভৃত সাধনায় বয়ে চলা
জলের মুসাফির ঘাটে ঘাটে
লেবার রুমে রাধা
০১.
সবচেয়ে সুন্দর পদ্যটি লিখেছো তুমি
মৃত্যুর মুখে ছায়া রেখে
সবচেয়ে সুন্দর পদ্যটি লিখেছো তুমি
তোমার আগামীকে সামনে রেখে
ওটির লোহার বিছানায়
ক্লোরোফর্মের নেশায়
কোন গহীন পথে
ভেসে উঠলাম তোমার চোখে
—গভীরে ডুবে থাকা জলজীব
ঝড়ে পুড়া আলোর আয়নায় ?
মৃত্যু দোলনায় আপন সাথী
চেয়েছিলে ঠিক
মৃত্যুর মুখে ছায়ারেখে
সবচেয়ে সুন্দর পদ্যটি
০২.
এত রাতে কোন ভরে
জেগে উঠলে অপারেশন ঘরে
যে সড়ক দিগন্তে মিশে আছে
তার সীমানা ছায়ায়
দানে ভরা তোমার আমি
তুলেছি মাটি সিঁদুর করে
লিখেছো যে অপার কবিতা মৃদঙ্গ
বাতাসের সুর সুড়ঙ্গে
ঘুরাতে ঘুরাতে ডেকেছো
যখন আমারে তুমি
সৃষ্টি ধ্বনির মাংস কামড়ে
লুটায়ে নেমেছি
আমার স্বর্গে
বনবীথির মাটির জলের
একটি শান্তির নীড়
০৩.
কী আর বাক্য খুলি
অপার দরজা খুলেছো তোমার
মনের কারখানার
যে ঘর ভুলে থাকি ভুলের ছলে
আর কারও কথা পড়েনি মনে
মৃত্যুর কোণে নি:সঙ্গ তোমার
উঠানের এক চিলতে জায়গায়
যেন ফুটে থাকা শেষ ফুল
০৪.
খুঁজে আলোর কাপড়
জালের সীমানায় নৃত্য আগুন
কোলে তুলে অপার হেসে
ছিঁড়েছো লোহার দড়ি
শুয়ে শুয়ে অপারেশন ঘরে
মিথের উপদ্বীপ রাতের নেশায়
ডেকেছিলে কাল রাতে
ভুলিনি যে আপন
একান্ত ধ্যানে মিশে ছিলো
হূদয় মাংসে কালি জমা চোখ খুলে দেখলে কি
— আমি আছি ?
৩. মায়াবতী
দিগন্তের মরিচীকায় ঝাপসা মনে হয়
তবু দেখা যায় সবুজ শ্যামল ঘাঘড়া পরনে
লাউ ডগার গড়ন
সোনালী ধানের রাঙা বসনে অবগুন্ঠন
দৃষ্টিতে আসে শুধু চাঁদ বদনের জোছনা ঝরা রূপ
বটতলার ম্রিয়মান আলোয়
একজন মায়াবতী
লালিত স্বপ্নিল ফুল
বার বার উঁকি দেয়া
মধ্যাহ্নে ভ্রম দৃষ্টির ছায়াঘেরা
বহুদিন টেনে নেয়া – জীবন চাকা
প্রশান্তির সোনালী ইশারায়
৪. পরিচয়
লাল সবুজ শাড়ীর গর্ভে জন্মেছি
মাগো আমি তোমার আদম সন্তান
অনার্য ছিলাম লাল রক্তে, আজ শাহবাগী একই রক্তে
বায়োলজিক্যাল ফাদার কেউ হিন্দু
. কেউ খ্রিস্টান
. কেউ মুসলিম
. কেউ আদিবাসী
মানুষের ধর্মে শাহবাগের মোহনায় দাঁড়িয়েছি হাতে হাতে
আর্য করেছে হিন্দু
আরব করেছে মুসলিম
বেনিয়া করেছে খ্রিস্টান
কারও কাছে তো মাথা নত করিনি
তোমার ভাষার জন্য লড়েছি
তোমার মাটির জন্য লড়েছি
তোমার স্বপ্নের জন্য লড়ছি
বাংলা মায়ের সন্তান
সীমানা চিনিনি তাই ছড়িয়েছি গ্লোবাল ভিলেজে
অন্তর্জালে – শাহবাগে একই চেতনায়
তোমার ধর্ম তোমাকে দেখেই শিখেছি মাগো
মাটি, ভালোবাসা ও তোমার অন্নের ঋণ
এই আমার গৌরব তোমার গর্ভে হবো লীন
ওদের পরিচয় তো মুছে যায়নি
জানি ওদের পরিচয়
নি:শঙ্ক দাঁড়িয়েছি পতাকা হাতে
প্রজন্ম জেনো দুর্জয় জয় বাংলায়
৫. Untitle
খবর কি?
ইয়োলো !
আমার লাশের প্রতীক্ষা করে
সে কি জীবন না শকুন?
বিছানার পাশে দেখি
সাড়ে তিন হাত অন্ধকার
পুনশ্চ: কেউ যখন খবর বলে ইয়োলো, সেই শব্দ অনেক তথ্য ধারণ করে, এই শব্দ
নারীর শাড়ীর ভাঁজে ভাঁজে প্রত্ন নগর, অত:পর…