আমাদের মতো কাগজের নৌকা আর মাটির জাহাজ থাকে / জিনাত জাহান খান
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ আগস্ট ২০১৪, ৮:০২ অপরাহ্ণ, | ২৪৫৪ বার পঠিত
আমাদের মতো কাগজের নৌকা আর মাটির জাহাজ থাকে
সে ছিল এক ছদ্মবেশী পাখি। উড়ালবিদ্যার প্রলোভনে জেগে থাকে পাখিরোদে মূর্ছা-যাওয়া ঝরাপাতা
আমি বাইরে এলাম, কিছুটা এবং অনেক দূরে। একমুঠো যুবতী হাওয়া জর্জর সঙ্গম ভুলে, জেগে ওঠে জন্মদাগে মৃত্যুসমান অন্ধকার
সেখানে সেই ভুবনে তাকিয়ে থাকে সিংহের রোমশ উচ্ছ্বাস… ২
তারপর বিদায় দাঁড়ায় বিপরীতে!
আড়ালে যত আভাস উড়ে গেলে একবার, আসবে না, তবু চেনা-অচেনা খেলায় পরবাসী, দূর থেকে দূরে বহুদিন
হয়তো-বা এ-ই ভালো, আছে অমরতাহীন দুর্দিন, অথবা কিছুই নেই
৩
যেন প্রাচীন কোনো দৃশ্য দেখার আশায় ঝুলে আছি অনেক বছর ধরে সিলিং ফ্যানে
যদিও আমার ব্যক্তিগত আর্টগ্যালারির ক্যানভাসে কোনো জিরাফের ছবি নেই
কাল রাতে একটা কথা-বলা মাছ ছিল আমার সাথে
৪
আমাদের উঠোনে বেড়ে-ওঠা জলাশয়ে প্রতিদিন
নীল সারসের ঠোঁটে থাকে লেজ-কাঁপানো সোনালি মাছ
আর থাকে হিজলের ডালে মনোযোগী একটি তস্কর পাখি
৫
কোলাহল ঠেলে-ঠেলে তীরের হলাহলে উড়ে-আসা কিছু চৈত্রধুলো, আমার চিবুকে ভর করে প্রশ্ন করে —
ড্রয়িংরুম সমেত ঘর থাকতেও কেন রোজ আমি এক-কামরার ঘর খুঁজি, কেন?
হেসে উঠি, সহজ ভঙ্গিতে প্রশ্নকর্তাদের ঝেড়ে ফেলি চিবুক থেকে। হাসি আর ভাবি, ওরা কি জানে যে…
—জামরুলের গন্ধ কেমন?
—পৃথিবীর বয়স কত?
—এক-কামরার বন্দি কথা-বলা পাখির গান কতটা সুরেলা হয়?
হয়তো একটি হৃৎপিণ্ডের জন্য একটি পৃথিবী অথবা বয়স, উদ্ধার করেই চলছে নিজস্ব কোনো এক-কামরার ঘর, আমিই জানি না
৬
ঝরাপাতা উড়ে চলছে আয়ুপাহাড় ধরে
বন্ধ চোখমুখে বসে আছি দুপুুর মাথায় নিয়ে
বাসস্টপে বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষায়
দেখছি দূরে, জেগে-ওঠা চরে একটি বাঁশের খুঁটি
৭
আত্মা-ফাঁপানো বেলুন আর তারাদের দেশ থেকে ছুটে-আসা
জ্বলজ্বলে তারাগুচ্ছ দিয়ে সাজানো সে-গ্রহ
আদিম স্নিগ্ধ বিস্ফোরণ শোনা যায়
উজ্জ্বল তারাগুচ্ছ রং পাল্টে পাল্টে রঙিন হয়ে ওঠে
রঙচোর সুখপাখি, নীল গাছের দিকে…
৮
কিছু খসে-পড়া ডানা কুরে-কুরে খাচ্ছে পিঁপড়ের দল। মুগ্ধতায় দুলে ওঠে ভ্রু-কাঁপানো চোখের যুগল সম্মতি।
এই এ-রকম হুলুস্থুল এলোমেলো চলাফেরায় আমি দৃশ্যের দর্শক হয়ে কোথা থেকে কোথায় নেমে ঘুরে ফিরে আসি। লুকিয়ে রাখি আয়েশি ঘুম, ভাঁজ করে শেফালির ঝোপে। নিজের পোশাক বদলে নিজের মধ্যেই নিশ্চুপে অলি-গলি খুঁজি। থেকে থেকে জাগরণে আসে না উড়ে সামুদ্রিক পাখিদের জীবন-শূন্য-করা কোনো কারচুপি আত্মা। আর এভাবে স্থির কোনো কেন্দ্রে সমাহিত হারানো শোক নিয়ে দেবতাও হতে চাইনি। যেন মুক্তিহীন শোক সংগ্রহের কোনো মনোযোগ নেই।