সিল্কস্ক্রিনে আঁকা গল্প ও অন্যান্য কবিতা / রহিমা আফরোজ মুন্নী ,
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুলাই ২০১৪, ৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ, | ২১৩৮ বার পঠিত
____ ক্রমশ হয়ে ওঠা
মধ্যযামের তারাটি সশব্দে আছড়ে পড়ল চালে । সত্যিকারের সতীত্বের মুহূর্ত তখন । নিজেকে দুমড়ে-মুচড়ে তৈরি করছ স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য । অথবা বিঘ্নহীন করছ সৃষ্টির সুযোগ । এক-আধটু শব্দ ছলকে, গড়িয়ে, ধীরে তোমার মানবীয় আত্মা হারিয়ে যাচ্ছে অভিমানী শরীরে । বেশ, পালাও তবে, এখন তুমি ভারহীন ।
সমস্ত দিনের ক্লান্তির হলদেটে ছোপ ছোপ দাগ রাত্রিতে গুটিয়ে নিয়েছিলে । জানি, ঠিক উদাসীন তো নও । শরীরের দাবি বুঝতে শিখেছ, স্বাদও । ঘর-সংসার করতে চাও মন দিয়ে । ইঙ্গিত বুঝতে শিখেছ, শব্দও ।
আর এই সমস্ত প্রস্ততির প্রহর অধিকার করে রাখে সব ।
সুন্দর স্তনে শিশুর খাদ্য পর্যন্ত…
____ যৌথ সম্পাদনা
সুখহীন কিছু আবদার আমাদের, ব্যবহৃত ঠোঙার মতো এদিক ওদিক ওড়াওড়ি করে, গোত্তা খায় । তালমেলহীন কতক আলাপচারিতায় গড়ানো সময়, হঠাৎ থমকে যায়–এই ক্লান্তি আমাদেরই বেঁচে থাকার । কণ্ঠার হাড় ফুটে হঠাৎ বের হতে চাওয়া চাবুক, গর্জাবার আগেই নামিয়ে দেওয়ার দক্ষতা, তাও আমাদেরই । নিয়মিত বোধচর্চার ক্লাসে প্রাগৈতিহাসিক পায়ের ছাপ, ফসিল আর গুপ্ত ইতিহাসের খোঁজে ‘আমাদের সমৃদ্ধ করো’ আর্তনাদ রাত বাড়তেই বালিশের ছেঁদো দিয়ে চুপচাপ পালায়–আমাদের পাহারায় । ভাবলেশহীন চাহনিতে কোনো রঙ, কোনো ইঙ্গিত, খুঁজে না পাওয়ার আলসেমি আমাদেরই । দেখার বাইরেও কিছু থেকে যাওয়া, না দেখতে পাওয়া,
এই সমস্তটাই আমাদের যৌথ সম্পাদনায় ।
____ আমার আঁকিয়ে
আমার আঁকিয়ে, অমরতা এতো ঘনিষ্ঠ হয়ে ছুঁতে দিতে চাইল বুকের কাছে বুক, ঘোরলাগা অভ্যস্ত আপনি ফিরে দেখেন নি । গোপনে যাকে জিইয়ে রেখেছেন, সে আমিত্ব, অস্ফুট ক্রোধে জীর্ণ আর বধির । তবুও হিংস্রতায় কেটে ফেলছে, উপড়ে ফেলছে আর সবের স্থিতি । ঝাপসা চোখ এতো ঝাপসা আর ভারী পা এতো ভারী ক্রমশ…ধাপে ধাপে চৌকাঠ পেরুনো শ্বাসকষ্ট, টান । তবুও চার-দেয়ালের নরক সুখময় ! হলুদ অসুখ গাঢ় হয়ে পাঁজরের হাড় পুড়ে খাক ।
আমার আঁকিয়ে, আপনার কাছে দীক্ষা নেব ইচ্ছে ছিল কত…
দাবী যদি তুলে নিই, ঋণমুক্ত চোখে তবুও কী অন্ধতা ঘোচে না ?
____ সিল্কস্ক্রিনে আঁকা গল্প
আমার আঁকিয়ে, পরিব্রাজক আপনি, তবুও বলছি, সাধ্যের দুরূহ এই খুঁড়িয়ে হেঁটে চলা কালহীন সময় । ক্ষুধার্ত পীচ ঠুকরে ঠুকরে খেয়েছে সমস্ত মসৃণতা । কোথায় যাবেন? কোন সেই অমাতীর্থ?
জীবনভর মার্জনা ভিক্ষা চাওয়া জলে ভেসে রইলেন অসুখী বৈঠা আঁকড়ে একপ্রকার মাঝিমাল্লাহীন । কী চাইছিলেন ফিরে পেতে ? ঊর্ধ্বাকাশ ?
স্বনির্বাসনের একাকিত্ব জনান্তিকে করেছে লীন, জানি । কিন্তু মহিমান্বিতও কী ? নৈঃশব্দ্যর কাছে খুঁজছেন প্রাণের উৎস, বিঘ্নহীন আঁকার সুযোগ, শুদ্ধ শোণিত । সম্ভব?
তপ্ত চোখের চাহনি স্বচ্ছ যদিবা, তাতে ক্রমশ-পাল্টে-যাওয়া-সন্দিহান আপনি । তবে আমি ভাবছি, আগুন ছাড়া কী করে সম্ভব এত উত্তাপ !
এই যে ভয়ানক স্বপ্নের হাত থেকে নিস্তার পেতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, অথবা ভরা সুখী, দুঃখী অতীতের অবশিষ্টাংশকে, ক্রমশ-ক্ষয়ে-যাওয়া হতে বাঁচানোর আকুলতায় ভুলে গেছেন সময়-ঘড়ি ; দেখুন কেমন নিশ্চিন্তে তারা আলো ছড়াচ্ছে সাজিয়ে ঘরের দেওয়াল, নিজ নিজ জায়গায় সমান বর্ণিল…
সিল্কস্ক্রিনে ছাপানো ল্যান্ডস্কেপ ।
____ স্বৈরাচারী
সন্দেহের ঊর্ধে উঠতে প্রথম বর্ষণই ধুয়ে দিয়ে গেছে পায়ে-পায়ে আঁকা নক্সা, বালিতে । কথা শোনে নি চিত্রকরের । অপ্রমাণিত, তবুও সত্য । নির্বিকারে অঝোর হিংসাপ্রপাতে ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্যে সূচনা করে নয়া ষড়যন্ত্রের । আর প্রমাণ লোপের জন্য বলে, রক্ত-তাতানো জ্যৈষ্ঠ মাসের ধুলায় নিশ্বাসের কষ্ট হচ্ছে কবিদের ! হায় অনুকম্পা !
ঝরে পড়ে একইরকম ফোঁটায়, আর
বিশ্বাসঘাতক হতে সাহস জোগায় সন্তর্পণে, উদাসীন ।
____ খেদ
মনে হয়েছে কখনও প্রয়োজন হবে তার
যদিও নাগরিক কমিটির পরিসংখ্যান বলছে
খোলা আকাশের নীচে ঘুমায় না সে আর
ভাঙ্গা বেড়া, মরচে-ধরা-টিন, বীর্য ধারণের মুহূর্ত
বেশ চলে যাবার কথা, তবুও
তার ছায়া ঘোরে, পাক খায়, হিংস্র দাপটে ।
সেদিন যানজটে দাঁড়িয়ে, বাসে
পার হচ্ছে লাল লাল ইস্তাহার
নতুন বাসস্থানের জন্য
আর তখন
অনেকখানি নীচে নেমে আসা রাগী চিল
ঠুকরে নিল ইস্তাহার ।