মার্ভেল ইউনিভার্স To অ্যাভেঞ্জারস অ্যাসেম্বল–পর্ব ১ / অনিক-উজ্জামান বাপ্পি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ, | ৪০২৮ বার পঠিত
আয়রন ম্যান (২০০৮)
সাল ২০০৮… মার্ভেল ইউনিভার্সের সূচনা ঘটে ২ মে তে এক বিশাল ধামাকার মাধ্যমে আর সেটা হল “আয়রন ম্যান”। “আয়রন ম্যান” মুভি তৈরীর কথা ছিল আরো অনেক আগেই, কিন্তু বিভিন্ন প্রোডাকশন এটা নিয়ে টাল-বাহানা করায় অনিশ্চয়তার মাঝে পড়ে যায় এ মুভির ভবিষ্যত। অবশেষে এগিয়ে আসে “মার্ভেল” নিজেই, নিজেদের সুপার হিরোকে কমিক বুক থেকে রঙ্গিন পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে নিজেরাই কাজ শুরু করে। এই “আয়রন ম্যান চরিত্রটা এতটাই লোভনীয় ছিল যে “নিকোলাজ কেজ”, “টম ক্রুজ” পর্যন্ত চেয়েছিল এই চরিত্রে অভিনয় করতে, কিন্তু মেকাররা চেয়েছিল নতুন বা অখ্যাত কাউকে দিয়ে এই রোলটা শুরু করতে, অবশেষে আগমন “রবার্ট ডাউনি জুনিয়র” ও “গোয়েনেথ প্যালট্রো” প্রধান দুই চরিত্রে। তারপর বাকিটা ইতিহাস। ২০০৮ সালের প্রথম ডমিস্টিক বক্স অফিসে ৩১৮ মিলিয়ন আয় করে এই মুভিটি এবং তান্ডব সৃষ্টিকারী “ইন্ডিয়ানা জোন্স 4” এবং “দ্য ডার্ক নাইট” এর সাথে পাল্লা দিয়ে ১৪০ মিলিয়ন বাজেটের “আয়রন ম্যান” সারা বিশ্বে আয় করে ৫৮৫ মিলিয়ন।
প্রথমে কিন্তু জানতাম না যে এই মুভি দিয়ে “মার্ভেল ইউনিভার্স” শুরু হল। মার্ভেল মুভি গুলোর প্রধান আকর্ষণ কিন্তু গোটা মুভিটা না বরং মুভি শেষের পোস্ট ক্রেডিট সিন। এই মুভির শেষের পোস্ট ক্রেডিট সিন উন্মেচন করে এক রহস্যময় চরিত্রকে যাকে আমরা পরবর্তিতে “নিক ফিউরি” নামে চিনি। কিন্তু কে এই “নিক ফিউরি” ? কি চায় সে “টনি স্টার্ক” এর কাছ থেকে ? এদিকে আবার “টনি স্টার্ক” গোটা দুনিয়ার সামনে বুক ফুলিয়ে স্বীকার করে নিয়েছে যে সেই “আয়রন ম্যান”। এত গুলো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমাদের ধোঁয়ার মধ্যে রেখেই মুভিটি শেষ হয়ে যায়…
“হাল্ক” কে আমরা কম বেশী সবাই চিনি। ২০০৩ সালে “এরিক বানা” অভিনীত “হাল্ক” মুভিটি খুব জনপ্রিয় হয় ও আমাদের সাথে “হাল্ক” কে রঙ্গিন পর্দায় পরিচয় করিয়ে দেয়। যদিও ১৩৭ মিলিয়ন বাজেটের ওই মুভি ডমেস্টিক বক্স অফিসে আয় করে মাত্র ১৩২ মিলিয়ন ও সারা বিশ্বে ২৪৫ মিলিয়ন যা মোটেও আশানুরূপ ছিল না। এর পর একটি লম্বা বিরতি। তত দিনে আমরা “হাল্ক” কে ভুলে গেছি। অতঃপর ২০০৮ সালেই নতুন রুপে, নতুন গল্প ও ধুন্ধুমার হার্ডকোর অ্যাকশন নিয়ে পুনরায় রঙ্গিন পর্দায় আগমন “দ্য ইনক্রেডিবল হাল্ক” এর। এ মুভির গল্পটা একটু ঘোলাটে হোলেও যারা ২০০৩ সালের “হাল্ক” এর অ্যাকশন দেখে হা-হুতাশ করেছেন, তাদের জন্য রয়েছে মন ভরা অ্যাকশন। “হাল্ক” চরিত্রে প্রথমে “দ্য আভেঞ্জারস” এর “মার্ক রুফালো” কে নেবার কথা থাকলেও “মার্ক” এর কাছ থেকে রোলটি ছিনিয়ে নেয় “এডওয়াট নরটন”। ১৫০ মিলিয়ন বাজেটের এই মুভিটি রিলিজ পায় “আয়রন ম্যান” এর ঠিক এক মাস পর ১৩ জুন এবং ডমেস্টিক বক্স অফিসে আয় করে মাত্র ১৩৪ মিলিয়ন ও সারা বিশ্বে ২৬৩ মিলিয়ন যা পূর্বের “হাল্ক” (২০০৩) থেকে কিঞ্চিত বেশী কিন্তু আবারো অপ্রত্যাশিত ও হতাশাজনক।
অতঃপর, এ মুভির পোস্ট ক্রেডিট সিনে অপ্রত্যাশিত ভাবে “টনি স্টাক” এর আগমন ও “জেনারেল রস” এর নিকট “টনি”র রহস্যময় প্রস্তাব দেখে একটু নড়েচড়ে বসতেই হয়। এখানেই একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে ভবিষ্যতে খুব বড় কিছু ঘটতে চলেছে…
মাঝখানে এক বছর বিরতি। এই এক বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে, বদলে গেছে “আয়রন ম্যান”ও। অনেক নতুন চরিত্রের আগমন ঘটেছে এই পর্বে। প্রথম পর্বে “টনি স্টার্ক” এর বেস্ট ফ্রেন্ড “ল্যাফটেন্যান্ট কর্নেল জেমস রোডস” এর চরিত্রে ছিল “টেরেন্স হাওয়ার্ড”, কিন্তু তার সাথে প্রোডাকশনের জটিলতা হবার কারণে এই রোলটি চলে যায় “ডন চেডল” এর কাছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, “ডন চেডল” এর কাছে মাত্র কয়েক ঘন্টা ছিল রোলটি গ্রহণ করার জন্য, এমনকি তার জানাও ছিল না যে তার চরিত্রটি মুভিতে কি করতে যাচ্ছে। এ পর্বের গল্পটি সিরিজের সব থেকে দুর্বল গল্প হলেও, অ্যাকশন ও সুট ডেভেলপমেন্ট গুলো খুব মন কাড়া ছিল। আর এই পর্বেই আমাদের সামনে উন্মেচিত হল “নিক ফিউরি” এর পরিচয়, “S.H.I.E.L.D” (শিল্ড) নামক এক গোপন সংস্থার ডিরেক্টর যার ভূমিকায় অভিনয় করেছে শক্তিমান অভিনেতা “স্যামুয়েল এল জ্যাকসন”। “স্যামুয়েল এল জ্যাকসন” এর সাথে মূলত “মার্ভেল” এর ৯টি মুভির চুক্তি হয়েছে, এবং “আয়রন ম্যান ২” তে অল্প কিছু দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য তাকে চড়া পারিশ্রমিক দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এ মুভির মাধ্যমে “ব্ল্যাক উইডো/নাতাশা রোমানফ” নামক এক নতুন চরিত্রের যাত্রা শুরু হয়, যার ভূমিকায় অভিনয় করেছে “স্কারলেট জোহান্সন”। ২০০ মিলিয়ন বাজেটের এই মুভি ডমেস্টিক বক্স অফিসে আয় করে ৩১২ মিলিয়ন এবং সারা বিশ্বে ৬২৩ মিলিয়ন যা এক বিশাল সাফল্য।
এবার আসা যাক বহুল প্রতিক্ষিত পোস্ট ক্রেডিট সিনে যেখানে দেখানো হয় এক বিরান ভূমির মাঝে আকাশ থেকে নিক্ষিপ্ত এক হাতুড়ী পড়ে আছে ও “শিল্ড” এর সদস্য “ফিল কলসন” তা দেখে “নিক ফিউরি” কে ফোনে জানায় যে তারা এটা খুজে পেযেছে। এই সিনটা এই পর্যন্ত সব থেকে ঘোলাটে ও রহস্যময় ছিল। ওই হাতুড়ীটা আসলে কি ছিল ? কোথা থেকে এটা এসেছে ? “আয়রন ম্যান” এর সাথে এর কি সম্পর্ক ? এটা কি ৩য় পর্বের কোন ভিলেনের অস্ত্র হতে যাচ্ছে ? (এটা ছিল আমার ধারণা)। এই সব প্রশ্নের উত্তর ঝুলিয়ে রেখে মুভিটি শেষ হয়ে গেল…
“আয়রন ম্যান ২” যে প্রশ্নগুলোর জন্ম দিয়ে শেষ হয়ে গেল, ঠিক এক বছর পর এই সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ৬ মে তে সেই মহান হাতুড়ী হাতে হাজির হল এক গ্রিক বিজলীর দেবতা “থর”। মূলত “থর” মুভি তৈরীর পরিকল্পনা সর্ব প্রথম ১৯৯১ সালে “ইভিল ডেড” ও “স্পাইডারম্যান ট্রিলোজী” খ্যাত “স্যাম রাইমি” এর মাথায় আসে। কিন্তু পরবর্তিতে সে এই পরিকল্পনা বাতিল করে দেয়, তারপর বিভিন্ন প্রোডাকশন ঘুরে অবশেষে “মার্ভেল” এর কাছে আসে “থর” এর কনসেপ্ট। আর এই সুযোগে “মার্ভেল” “থর”কে জুড়ে দেয় “অ্যাভেঞ্জারস অ্যাসেম্বল” এর সাথে। মুভির ট্রেলার দেখে আমি বুঝতে পারছিলাম না যে যেখানে “আয়রন ম্যান” পুরোপুরি বাস্তবভিত্তিক মুভি, সেখানে “থর” এর মত কাল্পনিক পৌরানিক চরিত্র কিভাবে এক সাথে ম্যাচ করে ? তখনো আমার “অ্যাভঞ্জারস অ্যাসেম্বল” এর ব্যাপারে কোন ধারণা ছিল না আর “হাল্ক” কে তত দিনে ভুলেই গেছি। তবে “মার্ভেল” যখন পথে নেমেছে তখন আট-ঘাট বেধেই নেমেছে। আর সেটা “থর” দেখলেই বোঝা যায়। অসাধারণ গল্প, বাস্তব ও কাল্পনিক জগতের সফল কম্বিনেশন আর সীমিত কিন্তু মন কাড়া অ্যাকশন এর দ্বারা নির্মিত “থর” অনেক অংশে “দ্য ইনক্রেডিবল হাল্ক” ও “আয়রন ম্যান ২” থেকেও বেশী এন্টারটেইনিং। “থর” ও “লোকি” চরিত্রে “ক্রিস হেমসওর্থ” এবং “টম হিডেলস্টন” একদম মানিয়ে গেছে ও অসাধারণ অভিনয় করেছে। এ মুভির মাধ্যমে “হকআই” নামক আরো এক নতুন চরিত্রের যাত্রা শুরু হয় যে কিনা “অ্যাভেঞ্জারস” টিমের এর গুরুত্তপূর্ণ সদস্য। এ চরিত্রে অভিনয় করেছে “দ্য হার্ট লকার”, “এম.আই ফোর” ও “দ্য বর্ন লিগ্যাসি” খ্যাত “জেরেমি রেনার”। এ মুভির সব থেকে বড় প্লাস পয়েন্ট হল এর গল্প বলার স্টাইল। এখানে সাইন্সের দোহাই দিয়ে অ্যাসগার্ডিয়ানদের দেবতা হিসেবে না দেখিয়ে অ্যালিয়েন হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর হলিউডে অ্যালিয়েন হল এমন একটা ইশু যার নাম দিয়ে সব কিছুই চালিয়ে দেয়া যায়। আমাদের বস “স্পিলবার্গ”কেও দেখেছি তার অধিকাংশ মুভিতে এই থিউরী ব্যবহার করতে। যাই হোক, ১৫০ মিলিয়ন বাজেটের “থর” ডমেস্টিক বক্স অফিসে আয় করে ১৮১ মিলিয়ন ও সারা বিশ্বে ৪৪৯ মিলিয়ন এবং পরিনত হয় ব্লকবাস্টারে।
মুভির শেষে যদিও মনে হয় যে “লোকি” মারা যায়, কিন্তু পোস্ট ক্রেডিট সিনে দেখা যায় যে সে পৃথিবীতে ফিরে গেছে ও এখানে আবার আগমণ ঘটে “নিক ফিউরি”এর, সাথে রহস্যময় ও অসীম শক্তির আধার এক কিউব নিয়ে, যার নাম “টেসেরাক্ট”। এখন প্রশ্ন হল, এই “টেসেরাক্ট” জিনিসটা আসলে কি ? এটার কাজ কি ? “নিক ফিউরী” এটা পেলো কোথায় ? এবং “লোকি” কেন এটার প্রতি আগ্রহ দেখালো ?
ক্যাপ্টেন আমেরিকা-দ্য ফার্স্ট অ্যাভেঞ্জারস (২০১১)
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে যে ইনিই হলেন “অ্যাভেঞ্জারস” টিমের সব থেকে প্রথম ও গুরুত্তপূর্ণ সদস্য। কিন্তু এই “অ্যাভেঞ্জারস” যে কোন “অ্যাভেঞ্জারস” সেটার রহস্যও এই মুভির পোস্ট ক্রেডিট সিনেই উন্মেচন করা হয়েছে। আপাতত, এ মুভি রিলিজের আগে সব ধরণের খবর পড়ে ও ট্রেলার দেখে জাস্ট একটা আইডিয়া হয়েছিল যে আরো একটি “মার্ভেল” এর কমিক সুপার হিরোর রঙ্গিন পর্দায় সফল অভিষেক হতে চলেছে যে হল ১৯৪২ এর পটভূমীর ২য় বিশ্ব যুদ্ধের নায়ক ও তার ভিলেন হল হিটলার। তাই এ মুভি নিয়ে তেমন কোন আগ্রহ ছিল না, আর যখন দেখলাম যে “ক্যাপ্টেন আমেরিকা/স্টিভ রজারস” চরিত্রে অভিনয় করছে “ফ্যান্টাস্টিক ফোর” খ্যাত “ক্রিস ইভান্স”, যাকে আমি এর আগে কোন মুভিতে সিরিয়াস চরিত্রে অভিনয় করতে দেখিনি, আর সে কিনা করবে এই সিরিয়াস সুপার হিরো রোল… এ মুভির প্রতি আমি আমার সব আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। অতঃপর, “থর” এর ঠিক দুই মাস পর ২২ জুলাই রিলিজ হল “ক্যাপ্টেন আমেরিকা-দ্য ফার্স্ট অ্যাভেঞ্জারস”। কোন এক দিন হাতের কাছে অন্য কোন মুভি না থাকায় হেলাফেলা করেই দেখতে বসলাম মুভিটা, দেখতে দেখতে ভালোই লাগলো এবং ভাল লাগতে লাগতে শেষ পর্যায়ে অসম্ভব রকম ভাল লাগা শুরু হল। “ক্রিস ইভান্স” কে দেখে আমি পুরাই মুগ্ধ। একজন সৎ ও নীতিবান যোদ্ধার ভূমিকায় সে যা অভিনয় করেছে, তার স্থানে এখন এই চরিত্রে অন্য কাউকেই বসানো যাবে না। এ মুভি দেখে আমি “ক্রিস ইভান্স” এর চরম ভক্ত হয়ে গেলাম। মুভিতে “ক্যাপ্টেন আমেরিকা”র বেস্ট ফ্রেন্ড “সার্জেন্ট জেমস বার্ন্স” এর চরিত্রে “সেবাস্টিন স্টান” ও খুব ভাল অভিনয় করেছে, কিন্তু দুঃখের বিষয় যে মুভির এক পর্যায় সে দুর্ঘটনায় বরফের মধ্যে পড়ে মারা যায়। যাই হোক, ১৪০ মিলিয়ন বাজেটের এই মুভি ডমেস্টিক বক্স অফিসে ১৭৬ মিলিয়ন এবং সারা বিশ্বে ৩৭০ মিলিয়ন আয় করে খুব ভাল মতই সাফল্য লাভ করেছে।
তবে আসল চমক ছিল মুভির শেষে। মুভি প্রায় শেষ, “ক্যাপ্টেন আমেরিকা” মারা গেছে, ২য় বিশ্ব যুদ্ধ শেষ এদিকে আমারও মন খারাপ, অতঃপর শেষ দৃশ্যে “ক্যাপ্টেন আমেরিকা”কে বর্তমান সময়ে এবং তার থেকেও বড় বিষয় “নিক ফিউরি”কে দেখে আমিতো পুরাই লাফ দিয়ে উঠলাম। আমি কল্পনাও করতে পারিনি যে “হাল্ক”, “আয়রন ম্যান” ও “থর” এর সাথে “ক্যাপ্টেন আমেরিকা”র কানেকশন যোগ হবে। আর এদিকে “টেসেরাক্ট” এর রহস্যও উন্মেচন হয়ে গেছে। অতঃপর পোস্ট ক্রেডিট সিন দেখেই আমারতো পুরাই মাথা নষ্ট, “দ্য অ্যাভেঞ্জারস” এর ট্রেলার। আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না। সব কিছু পানির থেকেও পরিষ্কার হয়ে গেল।
To Be Continued…