হাইব্রিড মুরগি / ওমর শামস
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ, | ২৮৯৪ বার পঠিত
বইমেলা ২০১৪ তে বের হবে ওমর শামস এর কাব্যগ্রন্থ ‘হাইব্রিড মুরগি’ । ঐ বই থেকে কয়েকটি কবিতা আমরা রাশপ্রিন্টের পাঠকদের জন্য তুলে-দিচ্ছি…
হাইব্রিড মুরগি
সাইফ ইবনে রফিক-কে
১.
গভীর ষড়যন্ত্রে মুরগিটা হাইব্রিড হয়ে গ্যালো।
মাইনাস টু হবো-হবো করতেই
একটা খাকি ব্যাটালিয়ান বিয়োগ হয়ে গ্যালা।
যাবার আগে ওদের জেনেটিক্যালি-ইঞ্জিনিয়ারড, বিশাল পিঁপড়েগুলো
চিনি-সিরিয়াল, রিয়াল-মার্ক, দামি-দামি সোনামুগগুলো সার বেঁধে নিয়ে গ্যালো।
কন্যাঃ তোমার কয় ডিভিশন?
ভাবীঃ তোমার কয় ডিভিশন? নদীর ওপারে আম্রকাননে ক্যামোফ্লাজে?
– আদার ব্যাপারি আমি, বুঝি না! আমি বাঁচি না!
– থামো, এই বাহাসের ফলাফল কাউন্ট করো –
১. গুড়ুম্ —– স্ —— স্—— স্ ——- ট্যা ——– ট্যা ——— ট্যা
পীলখানার অন্ধকার থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বেরিয়ে বল্লেন, “কিছুই দ্যাখা যায় না!”
– গভীর ষড়যন্ত্রে মুরগিটা হাইব্রিড হয়ে গ্যালো।
২. “পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয়! — আয়! — আয়!” পদ্মা দিয়ে ছল্কে-ছল্কে
বয়ে যাচ্ছে ইলিশ-ডলার। কই রে! ছিপ, জাল, পোলো ধর্ — ধর্ —
– গভীর ষড়যন্ত্রে মুরগিটা হাইব্রিড হয়ে গ্যালো।
৩. “শেয়ার মার্কেটের কলকব্জা, আমি কিছুই বুঝি না!” “৪০০ হাজার কোটি টাকা
তেমন কিস্সু না!” ইঞ্জিনিয়ারিং বোঝ না? প্রোগ্রেস! জিডিপি -মানে বঙ্গোপসাগরে তেলের
খনি, বিল খুঁড়ে এয়ারপোর্ট, সুন্দরবনে পাওয়ার – আসলেই তো আমাদের পাবার! তোরা কে?
– গভীর ষড়যন্ত্রে মুরগিটা হাইব্রিড হয়ে গ্যালো।
৪. ইন্সোমনিয়া, মানে ঘুম হয় না! ডাক্তার বললেন, “জিভ দ্যাখাও! কোষ্ঠ-কাঠিন্য? রক্ত
পরীক্ষা!” অবশেষে, এক্স-রে দেখে বিচারঃ “তোমার ঘুমের ওপর দিয়ে ট্রাক যায়!
মানে বুকে ঠ্যাকে না, দেয়াল ফুঁড়ে যায় – টাটার ১৬ চাকাঅলাঃ মেঘদূত এক্সপ্রেস, টু লাকসাম-
আখাউড়া-বিয়ন্ড – তুমি zআন্তি পারো না!”
– গভীর ষড়যন্ত্রে মুরগিটা হাইব্রিড হয়ে গ্যালো।
৫. মাকাল! মাকাল! সংসদের বাইরে ফোয়ারা, ভিতরে বিস্তীর্ণ বালির বরজ – মরুভূমি,
ঠা-ঠা হাওয়া আর বালিয়াড়ির পাশ দিয়ে রোজ-রোজ উজ্বুক উটেরা আসে আর যায়।
“প্রতিবাদ!প্রতিবাদ! আমরা আসবো না, আসবো না – না! না! না!” “দ্যাখাচ্ছি, কাঁচি-ক্ষুর,
নিয়ে আয় – শাসন নীতিমালাটাকে সাইজ করা যাক! –
গণতন্ত্র!গণতন্ত্র! বিশুদ্ধ গণতন্ত্রের জয়!”
– গভীর ষড়যন্ত্রে মুরগিটা হাইব্রিড হয়ে গ্যালো।
২.
সেই কবে থেকে অপেক্ষা! আহ্, বসন্ত আসছে – পান্তা, ইলিশ আর উদ্যত পলাশ! আর তখুনি, ফাঁসি চাই!ফাঁসি চাই! মিছিলে বুড়িগঙ্গা ঠেলে আসে। আর অন্য পাড়ার চৌরাস্তায়, ছেলেরা জড়ো হয়ে তখন জাতীয়তাবাদের ভলিবল খেলা শুরু করেছে – ভোর থেকে আরেক ভোর, গোধূলি থেকে আরেক গোধূলি। সূর্য আর নক্ষত্ররা ঘুরতে-ঘুরতে দেখছেঃ পুরোনো ক্ষত’র থেকে ঝরছে রক্ত – কালচে এবং সঙ্গে পুঁজ। আহা! কেউ ব্যান্ডেজ করে নি কেন এতোদিন? খোকারা তখনও খেলছে, আর ঘুমোবে না। ঘুমোবে কি ক’রে? ওদের মগজের মধ্যে মুক্তি-চেতনার রেডিয়েশন। কাকে বলে মুক্তি? কিসের থেকে? কার জন্য? দু-হাজার বছরে আমরা কোথায় এগোলাম!
আহা! আজি এ বসন্তে কত ফুল ফোটে?
বসন্তোৎসব! রক্তাক্ত শিমুল আর কপালের টিপের সঙ্গে কি সুন্দর মানিয়েছে কক্টেল!
নিবি, বড়ো-বড়ো তারাবাতি নিবি?
এই দ্যাখ, জ্বালিয়ে দিলাম দুটো বাস, তিন টে টেম্পু, ডেল কম্পিউটারের শো’কেসের কাচ –
দ ম্ দ ম্, ঝরররর্
সরকার পতন! সরকার পতন!
কে পড়লো? পালা! পালা! শোঁ শোঁ , ফটাস্!
দুড়ুম, গুম্, ট্যা ট্যা ট্যা –
ইতিমধ্যে খেলায় নাকি রেফারিও জুটে গেছে। বাঁশী বাজছে। দেখিব খেলায় কে হারে, কে জেতে?
আহা! আজি এ বসন্তে কত পাখি গাহে?
কু! কু! ঐ শোন কোকিল – বুঝবে না কোথায় – কাচে-লোহায়-কাঠে, নাকি পত্রপুষ্পিত ডালে!
পঞ্চমে ডাকে, মানেই অন্যের বাসায় কোকিলের ছাওয়া। ধন্য! ধন্য! তুমিই জাতীয় পাখি, কোকিল কে নয়?
এখন আমাদের ডি-এন-এ’র মধ্যেই কোকিল – কূ! কূ!
আর শালিখের দল, ওরা সবাই আবাবিল হয়ে গেছে। বাবুইগুলো তালগাছ থেকে খড়-বাসা খশিয়ে মাথায় পাগড়ি বেঁধে ঘোরে! স্বপ্নের মধ্যে রেডিয়াম, ওদের খোয়াবের অন্ধকারের ঘড়ির ডায়ালগুলো কাউন্টারক্লকে – ক্লিক-ক্লিক – উল্টে-উল্টে ঘোরে ভবিষ্যত থেকে অতীতে। এখন মানকচু, আমলকী আর আশ-শ্যাওড়ার মধ্যেও মাজেজার গান! চঞ্চুডাকে আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে ওরা?
৩.
এর মধ্যেই ভেঙে পড়লো এক আকাশ মৃত্যুঃ ছাদ-পিলার-দেয়াল-কড়ি-বিম-কংক্রিটের তলেঃ
– হাত কেটে হলেও, আমাকে উদ্ধার করো!
– আমি শ্বাস নিতে পারছি না, বাঁচাও!
– আমার শিশু দুধ খায়নি তিন দিন!
– আমার বৃদ্ধা মা-র আর কেউ নেই!
– আমি বেঁচেছি কিন্তু আমার ভাই?
আটখানা ছাদ, কি আর্তনাদ -”আমাকে বাঁচাও”।
মন্ত্রীদের বক্তৃতা, মিডিয়ার টক-শো, সম্পাদকের কলম, দলীয় বিবৃতি – সমস্ত কুয়াশা-কয়লা-ক্বাথ-বাথরুমের সর আর স্তূপাকার বর্জ্য – বিয়াল্লিশ বছর ধুয়ে খুব স্পষ্ট হয়ে গ্যালো, গ্যালো নাকি! কে লুটে খায়? কার নামে? কি ভাবে খায়? আর কেন নিরানব্বুই শতাংশ বারে-বারে নিগৃহ-নিষ্পিষ্ট-নির্যাতিত হয়?
* * * * *
আজান হবে। ভোর এখনো হয় নি। ক্রৌঞ্চ-কাদম্ব-কুলাল-শ্যামা-শিখী-পিক-পাপিয়া – সম্ভ্রান্ত বিহঙ্গকুল তো ঘুম ভাঙাবে না। কুক্কুট, মানে মুরগিকেই গায়ত্রীর উচ্চারণ করতে হবেঃ মাভৈ! মাভৈ! কিন্তু হাইব্রিড কই? গভীর ষড়যন্ত্রের গিনিপিগ কিম্বা লাভের-লোলুপতার কিম্বা সম্বিৎহীন নিদ্রাকাতরতার সংকর, হাইব্রিড কই? এই নগর, কেন্দ্র, ক্ষমতা, রাজনীতি, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, ব্যাংক, গ্লোবালাইজেশন ছেড়ে সে চলে যাচ্ছে; কাঠ-কাচ-বিম-বর্গা-পীচ-সিমেন্ট-ধুলো-ধোঁয়া, কোকিলের কূ-আর্ত সম্রাজ্য ত্যাগ ক’রে সে ফিরে যাচ্ছে তার আদি নিবাস নিলফামারি-ঝিনাইদহ-নড়াইলের সবুজ-হলুদ প্রান্তর-শোভিত কোন জবা-লাউ-পেয়ারা তলার প্রশান্তির নীড়ে।
৪/৩০- ৫/৩/২০১৩
সহজ কল্পনা
এই যে দেখেছিস দাগ, দরোজার বাইরে –
দুঃখ পারবি-নে তুই ঢুকতে , বাইরে যা –
নরকে যা, পাতালে যা, নষ্ট নক্ষত্রের অন্ধ বিবরে যা!
এই দ্যাখ হাতা! আমি চালনা-বরিশাল-সন্দীপ-হাতিয়া-র তলা দিয়ে – চরের ধান, মাঝির জাল, সুন্দরী- গড়ান-হেঁতাল এড়িয়ে, সবগুলো হরিণ-বাঘ-চন্দ্রবোড়া বাঁচিয়ে – চট্টগ্রাম, পার্বত্য-চট্টগ্রামের বাইরে দিয়ে দাগ দিলাম। পারবি-নে! পারবি-নে! দুঃখ, তুই আসতে! ঝড়-সিডর, সব সমুদ্রোচ্ছ্বাস – বলে দিলাম – তোকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যেতে হবে।
দুঃখ, তুই নিপাত যা
অমাবস্যার মুন্ডু খা! – পারবি-নে
কেননা কাঠঠোকরা-মাছরাঙা-বাজ আর চিলের শপথঃ
কোন কিশোরীর দিকে এসিড ছুঁড়ে মারলেই তা নির্মল গোলাপজল হয়ে বেরোবে।
আসবি-নে দুঃখ, আসবি-নে –
আশুলিয়ার ফ্যাক্টরিতে আর আগুন জ্বালাতে পারবি-নে, কেননা
কেরোসিন, আগুন, অক্সিজেন আর বিদ্যুতের শপথ!
গাজীপুর রোডে বিভ্রান্ত–অবিশ্রান্ত ট্রাক, পথ হারালেই
ট্রাফিক-পথিক-উল্টো বাস মুহূর্তে এড়িয়ে-বাড়িয়ে আমার অলৌকিক কম্পাসে
সোজা হয়ে যাবে।
দুঃখ, পারবি-নে,
পদ্মা–যমুনা-মেঘনা-সুরমার ঢেউয়ের শপথ,
আদিগন্ত সোনালি ধান আর হলুদ সর্ষের শপথ, – ম’রে যা!
শিমুল কি ফোটে নি? মেঘ কি বৃষ্টি নিয়ে আসে নি?
দুঃখ, তুই স’রে যা! নির্ঘাত ম’রে যা!
এই দ্যাখ শাবল, বেনাপোল–যশোর–কুষ্টিয়া-পদ্মা-তিস্তা সব বাঁচিয়ে আমি দাগ কেটে দিলাম – ব্রহ্মপুত্রর বেড়ি দিয়ে, গারো-পাহাড় থেকে সুরমার বেলেপাথরগুলোর বাইরে নকশা কেটে-এঁকে। দুঃখ , তুই পারবি-নে ! যেখানে খুশী সেখানে যা। ঐ যে, এক কবি দালানে-দরোজায়-কড়িকাঠে, চায়ের পেয়ালায় দুঃখ সাজিয়ে রাখতো – তার কাছেই যা। যেখানে খুশী সেখানে যা –
শিশিতে, বোতলে, বগিতে, বার্জে, ছালায়, পিপেতে
ভ’রে যা! স’রে যা! দুঃখ, তুই নিপাত যা!
জ্যাজ
১.
ল্যাম্পস্টের নিচে নিগ্রো –
কি উত্তুঙ্গু গান – তার কন্ঠে !
কি নীল বেদনার নক্ষত্র – ফুটে-ছুটে চলেছে !
নি নি ধা পা নি নি নি …
হ্রস্ব ই-কার দীর্ঘ ঈ-কার-এ কি গভীর ইন্ডিগো নীল …
সঙ্গে-সঙ্গে স্যাক্সোফোন নি-প্রবণ কাৎরায় …
২.
নিয়তি – তার জীবনের, তার ইতিহাসের নিরবলম্বতা …
তপ্ত তুলো ক্ষেত দক্ষিণের, ট্রেনে-ট্রেনে শিকাগো,
লং মার্চ – তরুণ-করুণ সন্ত-র১ পর্বতারোহণ এবং গন্তব্য-নগর দর্শন,
অতঃপর মৃত্যু।
আর তার নিজের জীবনে – নিজস্ব নির্বেদ, গ্যাসহীন চুলো, তাপহীন কুঠুরী,
পুলিশের অত্যাচার – বার-বার
নি নি ধা পা ধা পা নি নি – তে লাফিয়ে ওঠে,
লাফিয়ে ওঠে ল্যাম্পে, মেপল্ পাতায়, দোতলায়, ন’তলায়, আকাশে –
কিন্তু আকাশের চাঁদ চোখই খোলে না!
নিগ্রোর এক মাত্র সাধ –
নাচাবে সে নাচাবেই সুরে
জ্যোৎস্নার নীলার্ত চাঁদ।
৩.
এবার সে আত্মজীবনীর সুর তোলে –
তার প্রেম, সাধ, রমণী, শিশু, সংগ্রাম ;
আর সেই রক্তাক্ত সন্ধ্যা – যখন শিশু কাঁখে – লাল আভার আকাশ
দ্বিখণ্ডিত ক’রে হেঁটে চ’লে গিয়েছিলো বেলিন্ডা ;
খরজের খাদে তার ব্যর্থতা আরো বেশি খয়েরি।
ইতিমধ্যে যখন গোলাকৃতিকে ভেদ ক’রে চলে এক সারি বন-হংস,
চাঁদও তাকিয়ে বোঝে হাঁসের ডানায়ও নি নি ধা পা নি নি …
তবু নিচে তাকায় না ।
নিগ্রোর এক মাত্র সাধ –
নাচাবে সে নাচাবেই সুরে
জ্যোৎস্নার নীলার্ত চাঁদ।
৪.
এবার রক্ত ও কলিজার কেন্দ্র থেকে, নিগ্রো ,
বার করে তার পিঠের চাবুকের ক্ষত,
নিলামের ডকে তার শিকল বন্ধকতা,
সমুদ্রের উদ্ভ্রান্ত জাহাজের খোলে তার অজ্ঞানতা –
নি থেকে সা-তে উঠে সে বলে :
“ না, না শুধু দুঃখই নয়, আমি নিরক্ষীয় সবুজের স্মৃতি এবং
প্রগতির আলোকেও চাই – চাই শান্তি”।
এবার চাঁদ তাকায় তার দিকে, ফুটপাথে নামে,
তার হাতে হাত ধরে, বলে – “চলো নাচি”।
১০/২০১৩ … ১১/৫/২০১৩
১ Martin Luther King, তাঁর শেষ বক্তৃতা – “I’ve been to the mountaintop… I just want to do God’s will. And He’s allowed me to go up to the mountain. And I’ve looked over. And I’ve seen the Promised Land. I may not get there with you. But I want you to know tonight, that we, as a people, will get to the Promised Land.”
হাওয়ার রাত
ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী-কে
চলেন, মঘা নক্ষত্রর থেকে ই-মেইল এসেছে,
আজকে হাওয়ার রাত হবে – জীবনানন্দকে টেনে বললাম ।
অন্যান্য দিন তো উনি পালিয়ে-হারিয়েই যান, কিন্তু আজ অন্য
দিনের মতো নয়। একটা মাদুর বিছিয়ে, জীবনানন্দ আর আমি
বিস্তীর্ণ ঘাসের ওপরে বসলাম, আমার কোলে কিছু চিনে বাদাম।
শালিখ, ইঁদুর, প্যাঁচা, নাড়া, ধুন্দুল, নদী, কুয়াশা, কবির
এই সব চিহ্ন তো ছড়িয়েই ছিলো – আকাশে, আকাশে –
নীল চিতার শালে নক্ষত্র, নিচে বাঁশ বনে জোনাকি।
তখুনি হর্সহেড নেবুলা অনন্ত থেকে একটু নীচে নেমে কেশর নেড়ে
হোমর-এর অডিসি থেকে পড়া শুরু করলেন … আকাশে …
নীল-মঞ্চে তারপর এলেন লাল-সুপারজায়েন্ট আন্তারেস,
স্বরবর্ণ টেনে-টেনে তিনি শোনালেন, মৌলানা রুমির মসনবী …
যে তারা-টা সেই চার বিজ্ঞ-রাজার মাথার উপরে নাজারেথে এসেছিলো
যিশুর জন্মের কালে, সে প’ড়ে শোনালো দান্তের কম্মেডিয়া …
সেক্সপীয়ার পড়তে এলেন জ্যোতিসমতুল্য ভেগা-চক্রের ৩সি-২৭৩,
নিউট্রন স্টারের মতো জ্বলজ্বল ক’রে উঠলো ঘনসন্নিবদ্ধ সনেট …
বাশো আর লি-পো শুনিয়ে গ্যালো মৃদুভাষী শেফালি বিষম তারা …
মৃগশিরা, মঘা, শতভিষা উচ্চারণ করলো র্যাঁবো, রিলকে, নেরুদা …
সারাটা আকাশ ভ’রে উঠলো β , 西, A , ت অক্ষরে-অক্ষরে।
জীবনানন্দের দিকে একটু তাকিয়ে, নম্র ইশারা দিলাম দিগন্তেঃ
ধীরে-ধীরে কীর্তিনাশার উপরে কার্তিকের চাঁদ জেগে উঠে
কেঁপে-কেঁপে পড়তে শুরু করলো, “কি গভীর হাওয়ার রাত ছিলো …
মশারিটা ফুলে উঠেছিলো মৌসুমি সমুদ্রের পেটের মতো”। আর
সমস্ত আকাশ ভ’রে উঠলো অ, আ, ট, ল, দন্ত্য-স অক্ষরে।
৫/৭-১০/২০১৩
বয়তুনের আকাশ
ঋভু অনিকেত-কে
তার মা, ছেঁড়া আঁচল দিয়ে দেহ ঢাকে
আর বয়তুন, ছিদ্রগুলোকে জানালা মনে ক’রে সারা পৃথিবী দ্যাখে।
বাবাকে মনে নেই, লোকে বলে ম’রেছিলো বিলে মাছ ধরতে গিয়ে।
এখন সে তার মা-র আঁচলের তল থেকে দ্যাখে –
উঠনে ধান, বড়ুই গাছে টোনা, আমের বউল, বৈশাখে বিদ্যুৎ –
রাত্রির বৃষ্টির পরে সকালে কমলা–হলুদ কুমড়োর ফুল ফুটেছে।
গিঁটের নিচের অন্ধকার থেকে সে শুধু আলোর দিকেই তাকায়,
নিচে নয় – তার চিল শুধু উঁচু আর উঁচুতেই উড়তে পারে,
তার বিদ্যুৎ মাটির থেকে আসমানে ওঠে, ওপর থেকে নিচে নয়,
তার গাছ শুধু আকাশে, আকাশে আরো আকাশে পাতা নাড়ায়।
“তুনি, বালটি নিয়ে আয় – মা”। বয়তুন বড়ো হয়ে উঠছে।
কুপির আলোর থেকে হারিকেনের হলদে আলোয় ক, খ, মূর্ধন্য নাচে।
আবার পাখির ডাকেই যুক্তাক্ষর, শব্দ, বাক্য, সংখ্যা, শোলোক, পৃষ্ঠা
মনের মধ্যে পলির মতো জ’মে-জ’মে চর বাঁধে, আবার সহসাই
দুলিয়ে-ঝ’রিয়ে কাশ, পান কৌড়ির ঝাঁক হয়ে আকাশে উড়ে যায়।
সে এখন ওড়না পরে। ইশ্কুলে যায় … পায়ে চলার পথে,
ঐ লাইনটাই ঘুরে-ঘুরে পা-র সঙ্গে পা ফ্যালে – “ ক্যামন ক’রে
ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে, ঘূর্ণিপাকে” … বাঁকে পা ঘোরে।
অথচ দিগন্তের পথটা দিনে-দিনে কাঁটা–কাচ–শ্যাওলা-কাঁকরে-পাথরে
দুর্গম হয়ে উঠছে – ভূগোলের মাস্টার সেদিন অযথাই স্কুল শেষের
পর ব’সিয়ে রাখলো – রাবেয়া, ভাগ্যিস সঙ্গে ছিলো। মোকামতলির
দোকানগুলোর সামনে এখন বখাটেদের গালাজ-গোল-হট্টগোল,
উড়ন্ত-জ্বলন্ত সিগারেটের বাঁট :
“তোকে তুলে নিয়ে যাবো রে,
উড়িয়ে নিয়ে যাবো, কে ঠ্যাকাবে”?
ফেন্সিডিলের দুর্গন্ধ আর কালো নিকোটিন কুন্ডলী পাকায় …
হাঁস আর মুরগিগুলোকে আদাড় দ্যায় বয়তুন, উঠোনে; শুপুরি গাছে
একটা কাঠ-ঠোকরা, মেঘ ঠিক্রে রোদঃ
“তুনি, মা, কাপড়গুলো নেড়ে শুকোতে দে” …
দড়ির উপর কাপড় মেলতে থাকে বয়তুনঃ শাড়ী, শায়া, গামছা, চাদর
নিজের কামিজ, তারপর বালিশের অড় …
কোত্থেকে হাওয়া উঠে দড়ি দুলতে থাকে –
“কাপড় গুলো কি উড়ে যাবে না কি”?
বালিশের অড়ের সঙ্গে দুলতে থাকে বয়তুন – আরও, আরও …
“ছোটবেলার কাঁঠাল গাছের দোলনা যেন”? দোলে …বালিশের অড়ের
দুই কোনা স্নায়ুস্ফিত আঙুল-তালু–হাড়-শক্তি সদ্যজাত কব্জি হয়ে
বয়তুনের হাত ধ’রে দোলায় … দুল্তে-দুল্তে-দুল্তে উড়িয়ে নেয়
আকাশে … শুপুরি, নারকেল, তেঁতুল, বট … ওপরে আরও ওপরে …
একবার ঘাড় ফিরিয়ে বয়তুন দ্যাখে, গর্ত থেকে ছুটে দুটো শিয়াল
দৌড়চ্ছে ক্ষেতের আল দিয়ে …
উপরে, নীল, নীল, নীল – কি নীল আকাশ …
৫/৫-১২/২০১৩
Never before in the history of Man has there existed so wide a gulf between
the progress of the scientific-technical realm and the barbarity of the moral-political realm.
Does the the twenty-first century promise something better?
— Carlos Fuentes
[জুন, ১৯১৫]
চলো তবে, তুমি আর আমি – যাই :
যেন, অ্যানেস্থিসিয়াগ্রস্থ শোথসান্দ্র রুগী,
ব্যাপৃত হয়ে আছে সন্ধ্যার স্কাই।
[১৯৩৭]
স্কাইলাইট মাথার উপর,
‘জন্মেছে জ্যোস্নার ডিম” – বুনোহংসী বলে –
“নীলাকাশে, দেহেরও ভিতর”;
সাঁই-সাঁই দুই পাখি ওড়ে – পিস্টন, পাখার গতর।
[অনন্তকাল]
“আজি এ নিবিড়তিমির যামিনী বিদ্যুতসচকিতা
বাদল বাতাস ব্যোপে” হৃদয় উঠেছে কেঁপে
সেকি জানো তুমি জানো, … জানো?
[ফেব্রুয়ারি ১৩-১৫, ১৯৪৫]
গোঁ গোঁ ডাকে ব্যোম,
মহাকাশ – বোমারুতে আচ্ছন্ন দিগ্ –
সাইরেন …
ড্রেসডেনে বোমা পড়ে, আকাশ অন্ধ ক’রে –
হেল্মেটে ফ্রন্টে সৈনিক,
এখানে মিনার পড়ে, কারখানা, ক্যাথিড্রাল, স্তম্ভ পড়ে –
করিন্থিন, ডোরিয়ান – ছাদ-তলা-অট্টালিকা – সিঁড়ি ভেঙে-ভেঙে পড়ে –
মর্মর সিংহ ঝরে, এখানে আগুন জ্বলে:
কড়ি, বর্গা, ছাদ, থাম, দরোজা, জানালা জ্বলে – দাউ-দাউ রাস্তা জ্বলে –
বই, বাক্স, পালং, তোষক – দাউ-দাউ বৃক্ষ জ্বলে –
ঘাস, পাতা, ওক, বার্চ, সাইপ্রাস …
ফ্যাক্টরি, লরি, ট্রাক, তেল ডিপো, এরোড্রাম – দাউ-দাউ জল জ্বলে –
আকাশ অন্ধ ক’রে ড্রেসডেনে বোমা পড়ে – আকাশে আকাশ জ্বলে –
[অক্টোবর ৪, ১৯৫৭ – জুলাই ২০, ১৯৬৯]
আমি ইউরি গ্যাগারিন, অক্টোবর ৪, ১৯৫৭, আকাশে উঠছি –
সমুদ্র, তুন্দ্রা, পর্বত, বনভূমি, সমতল, মরুভূমি, নগর,
কি সুন্দর দ্যাখাচ্ছে পৃথিবী ।
গ্যালিলিও, তুমি তো মহাকাশের দিকে তাকিয়েছিলে
টেলিস্কোপে চোখ দিয়ে – অসাধারণ, তোমার কল্পনা
অদৃশ্য বাস্তবতা কে চাক্ষুষ ক’রেছিলো।
তবু দেখে যাও, দেখে যাও …
আমি উঠছি ; সঙ্গে-সঙ্গে হে ভূ-পৃষ্ঠের মানুষ –
একজন, শ’-জন, অনন্ত জন হাতে হাত ধ’রে তোমাদেরও
উড়িয়ে নিয়ে চলেছি মহাকাশে, মহাকাশে, বিস্ময়ে।
আমি নিল-আর্মস্ট্রং, জুলাই ২০, ১৯৬৯, চাঁদে লাফাচ্ছি।
এসো হে মানুষ, অনুভব করো স্পন্দন,
সৃষ্টির ভর-ভরহীনতার সূত্র –
কি ক’রে জন্ম নিলো স্থান-কাল-ব্রহ্মাণ্ড!
একজন, শ’-জন, অনন্ত জন হাতে হাত ধ’রে তোমারাও –
এসো এই চাঁদে, অন্য চাঁদে, আরো-আরো চাঁদে নাচি।
[১৯৬৫ – ১৯৭৫]
জোছনার রাত, বোমা পড়ছে,
হো চি মিন শহরে, সড়কে বোমা পড়ছে –
উড়ছে B-52, B-57, Sky-Hawk, Dragon-Fly, F-105, F-111
এবং পড়ছে BLU-3, BOLT, Daisy Cutter, CBU-100 Cluster Bomb –
কিন্তু আমাদের মাথার মাথাল ভ্রূক্ষেপ করে না।
ছেলেরা যুদ্ধে, শিশুরা ঘুমিয়ে;
কাল বৃষ্টি হয়েছিলো আর আমরা ধান রুয়ে যাই।
[সেপ্টেম্বর ৫, ১৯৭৭ -]
সৌর-জগত ও তা ছাড়িয়ে ঘননীল মহাশূন্যের উদ্ভাসনে ছুটলো ভয়্যেজার – এখনও ছুটছে …
সৌর–বায়ুর শেষ স্পর্শ ত্যাগ ক’রে ২০১৩ তে পৌঁছলো হেলিওপজ …
৩০,০০০ বছরে পেরোবে উর্ট মেঘতন্ত্র … জানাবে কি?
[অক্টোবর, ২০১৩]
তোরাবোরা, বাগদাদ, ত্রিপোলির উপরে ছুটলো টমাহক …
ওয়াজিরস্তানের উপর এখনও ড়্রোন;
কিন্তু মহাশূন্যও ধাবমান।
মানুষ, মানুষ কবে পাল্টাবে তোমার যুদ্ধের দর্শন ?
কন্টিকি-র রূপকথা
জ্যোতির্ময় ও মীনাক্ষী দত্ত-কে
– কবিতা পড়তে হবে, জ্যোতি-দা ফোনে বল্লেন।
– আমি?
– হ্যাঁ, তুমি।
অন্ধকারের মধ্যে নিজের মাথা চুল্কোলাম।
গঙ্গায় গোয়ালিয়র মনুমেন্টের তলায়
২৭ আর ২৮ বোয়া-র মধ্যে কন্টিকি –
জ্যোতির্ময় দত্ত-র আড়াই হাজার মণ জল-নিকাশী ভর নৌকো ।
নৌকো নয় – বর্মি সেগুনের সিঁড়ি, পিতলের রেলিং, সনাতন
নরওয়ের জাহাজ-ভাঙ্গা বাতিদান, তামার পাতা-কুন্ডলীঅলা
শ্যান্ডেলিয়ার, ডেক-এ মন্ডপ, বাঁধানো যামিনী রায়ের প্রিন্ট,
পাশে কাঙরা-বাশুলি আবার তার মধ্যে মিরো, শাগাল; রেস্তোরাঁয়
রেজালা, কচুরি; বইয়ের দোকানের থাকে পেঙ্গুইনের সদ্য প্রকাশিত
গাব্রিয়েলা গার্সিয়া মার্কেজের “শত বছরের নিঃসঙ্গতা” –
সব মিলিয়ে তিনতলা এক রংমহল ও রহস্যপুরী, যেখানে
সিন্দাবাদ, মার্কোপলো থেকে শুরু ক’রে আপলিনেয়ার, কনর্যাড,
হেমিংওয়ে সকলেই আরাম ও সহজানুবর্তিতায় মিশে যেতে পারে।
আর এখানেই জ্যোস্নার নিচে, ডেক-এ কলকাতার দামী কবিরা
কবিতা পড়েন – পঞ্চাশ, ষাট, সত্তর দশক, গঙ্গার অনুচ্চকিত ঢেউ,
কখনও অমাবস্যার কোটাল ভেসে-ভেসে যায়।
নির্ধারিত সন্ধ্যায় গেলাম। কি প’ড়েছিলাম মনে নেই।
অনেক তরুণকে দেখলাম – মহীনের ঘোড়ার গায়ক, চালক, প্রযোজক;
প্রবীণদের মধ্যে শিবনারায়ণ রায় এক কোণায় একটি পেঙ্গুইনের বইয়ের
মধ্যে তাঁর প্রিয় রেনেসাঁর জগতেই বিচরণ করছিলেন; তারাপদ রায়,
প্রাণবেন্দু দাসগুপ্ত, রুদ্রেন্দু সরকার-কে দেখলাম। শঙ্খ ঘোষ? মনে নেই।
নতুন ঝাউপাতা দাড়ি মুখে তরুণ জয় গোস্বামী ছিলো বাঁ কোণায়।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ভোরবেলা-রোদের হাসি দিয়ে বললেন, “তুমি কিন্তু
এখনো ঝংকার থেকে মুক্তি পাও নি। একালের কবিতার কাজ সংগীত
থেকে আপাদ মুক্ত হওয়া – কথ্য ভাষা, কথ্য ভাষা, কথ্য ভাষা।”
– “আল মাহমুদ কেমন আছেন”? কেউ জিজ্ঞেস করলেন,
“আহা! সোনালি কাবিন-এ কি চমৎকার কবিতা!”
শক্তি চট্টোপাধ্যায় সামনেই বসেছিলেন, হাতে হাল্কা হলুদ পানীয় ভরা
শাদা গ্লাশ। পিঠে সশব্দ থাবা দিয়ে বললেন, “কবিতার মধ্যে মাল কই?
বিদ্দ্যুচ্ছটা? বকযন্ত্রে ঊর্ধ্বপাতন আমি বিশ্বাস করি নে।”
ভীড় কমতে লাগলো ।
– “চলো, ওপরে যাই”, জ্যোতি-দা বললেন, যখন পাটাতন ফাঁকা।
ওঁর কাপ্তানের কামরায় গিয়ে বসলাম। জানলা দিয়ে নদীর ওপরে ভাঙা
চাঁদ আর কালো গঙ্গার কিয়ার্সোকুরো।
– “সুধীন্দ্রনাথ দত্ত কবিতা লিখতেন সেরিব্রাম থেকে, নজরুল
লিখেছিলেন বুকের রোম আর রক্ত থেকে, জীবনানন্দ লিখেছিলেন ঘ্রাণ,
রক্তের অন্তর্গত অন্ধকার আর চোখের ঘড়ির থেকে। তোমাকে ঠিক করতে
হবে, তুমি নখ আর তালু থেকে লিখবে না অন্ত্রনালীর থেকে লিখবে?”
গ্লাশে রোজা-রাম ঢালতেই, আমি দুটো নক্ষত্র পেড়ে ছুঁড়ে দিলাম।
ঠোকাঠুকি ক’রে জ্যোতি-দা বললেন, “চিয়ার্স”!
ভালবাসার টাস্ক ম্যানেজার
আমার ভালবাসার টাস্ক ম্যানেজারটা কাজ করছে না,
Control+Alt+Delete : নিশ্চল।
তাহলে, নীরাকে নিয়ে আজ কি ক’রে ঢাকায় বেরবো?
হাল্কা বেগুনী শাড়িতে বেশ মানিয়েছে; হলদে একটা চাঁপা ফুল,
পায়ে ম্যাজিক স্যান্ডেল। বাহ্।
মিউজিয়মের উল্টো দিকে, ডান কোণায় – যে বটগাছ-টা –
সামরিক সরকারগুলো কেটে-কুটে কি করেছে!
শাহবাগের সমাগম-টা ডিলিট না করলে, কি ক’রে
যাবো, বসবো, দেখবো? উদ্যোগ–টা শুরুতে নির্মল ছিলো,
এখন ভাইরাস ঢুকেছে!
বট গাছের পাতাগুলো এখনও সরস, সবুজ –
পাখিও আছে – ফুটপাথে লাল ফল।
ওখানে বেঞ্চিতে ব’সে, আমি আর নীরা
মিউজিয়মের আর্টগুলো দেখবো।
জয়নুল আবেদীনঃ
১. মাথায় মাথাল দেয়া সাঁওতাল আর তার মহুয়া –
প্রেম, সাহস, পরিশ্রম – অথচ সারল্যে সবুজ।
২. কাদার থেকে গরুর গাড়ির চাকা ঠেলে তোলা,
আমাদের প্রতীক। কিন্তু ১৯৫২, ১৯৫৮, ১৯৬৯, ১৯৭৫, …
বারবার কেন আমাদের চাকা আটকায়!
৩. টেরাকোটার কি সুন্দর ফ্রেম, আর তার মধ্যে নৌকোর
গুণটানা – ঢেউয়ের সঙ্গে ঢেউ, কি ভাবে মেলে!
কামরুল হাসানঃ
১ তিন কন্যাঃ বাঙালী নারীর লাল-নীল-সবুজ মমতা
ও অপরাজেয় সংকল্প ।
রশীদ চৌধুরীর “বাংলার মিছিল”-টা কেন নেই? আহা!
শিশু নারী যুবক বৃদ্ধ বাঘ সাপ মাছ প্রজাপতি সবাই
বেরোয় নিকি সত্তরের মিছিলে?
মতিঝিলে গিয়ে দিলকুশায় বেড়াবো: প্রাণ শান্তির বাগান।
শাপলা চত্বরের মিছিল ডিলিট না করলে, কি ক’রে সম্ভব?
সেই কবেকার ঝাউ গাছ, শান্ত ঝিল – বেরিয়ে এলো দুটো
শাদা ফুটি হরিণ। কাল পাল্টেছে, এখন উঁচু উঁচু শার্সির দালান,
এসক্যালেটরে ব্যাংক, কাউন্টারে কমার্স, লেটার অব ক্রেডিট …
তোমরা নেই, তাই আমি, নীরা আর হরিণ – হাঁটলাম
ঝক্ঝকে অ্যাভিন্যু। পূর্বানীর সামনে ছোট ফোয়ারা, কতোগুলো
পাতাবাহার। নিরবতার মধ্যেই বুঝলাম – প্রগতি আছে,
প্রগতি সম্ভব যদি নাগরিক অধিকার থাকে, ব্যাক্তি স্বাধীনতা থাকে,
প্রতিকার থাকে – মানুষের জন্য মমত্ব থাকে।
আবার হরতাল! ফার্ম গেট, মহাখালি, নারিন্দায়। কোনদিকে যাবো?
– বাকহরণ চলবে না! গণতন্ত্র! গণতন্ত্র!
আমরা মেডিকেল, শহীদ মিনার দিয়ে ঘুরে ব্রিটিশ কাউন্সিলের দিকে …
হঠাত চেকপোস্ট, ব্যারিকেড। একটা জীপ থেমে, দু-জন সান্ত্রী নামলো।
– আপনারা নামুন, রিমান্ডে যেতে হবে।
– কেন? কেন?
– নতুন আইন অনুযায়ী, প্রেম নিষিদ্ধ।
আমাকে ততোক্ষণে ঘিরে ধ’রেছে কয়েকজন।
– নীরা! নীরা!
ইতিমধ্যে, কয়েকবার ম্যাজিক স্যান্ডেল ঠুকে ফেলেছে নীরা। আর অকস্মাৎ
হাওয়ায় লাফিয়ে উঠেছে ও ঝাউ গাছগুলোর মাঝামাঝি, সকল হাত আর
শিকলের ঊর্ধ্বে। “দ্যাখা হবে …”, আমি নিচের থেকে ছুঁড়লাম,
বট, দেওদার সব ছাড়িয়ে নীরা উড়ে গ্যালো অনন্তের অকূলে।
৫/২৭-২৯/২০১৩
পরিবেশক – সাহস পালিকেশন্স, বি ২৯, কনকর্ড এম্পোরিয়ম , ঢাকা ১২০৫ // গতি প্রকাশনী, বি ২০, কনকর্ড এম্পোরিয়ম , ঢাকা ১২০৫
লেখকের অন্য লেখা… http://rashprint.wordpress.com/2014/01/05/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A7%A7%E0%A7%AF%E0%A7%A8%E0%A7%AD-%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%AC%E0%A6%BF-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%8D/