শ্মশান এবং অন্যান্য । হাসান শাহরিয়ার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জানুয়ারি ২০১৪, ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ, | ২৫২৮ বার পঠিত
শ্মশান
জ্যোতির্ময়ী, এ বিষণ্ণ ভোরে-
এখনো তোমার স্নান করা বাকি।
এখনো যাও নাই তুমি দেবতার ঘরে।
মনে হয়- সরায়ে দিতেছ মোরে – দূরে;
আর আমিও ছুটতেছি ভর-দশা খুলি; তোমার
ভরকেন্দ্র ছাড়ি- অন্তরীক্ষের শূন্যস্থানে
ব্যথার সড়ক গড়ি।
যতটা যাইতেছি দূরে- ততটা পাইতেছি তোমার
স্পর্শক্ষেত্রের নিরাকার টান; আমারে বাকরুদ্ধ করি
টানতেছে প্রলয়-সমান।
অন্তরীক্ষে তুমি চাইয়া দেখ জ্যোতির্ময়ী-
গড়াইতেছে এক ভুখা নৃপতির ছায়া।
দেখতেছি- তুমিও জ্বলতেছ জ্যোতির্ময়ী
ধূপ-কাষ্ঠ ছাড়া; হইয়া দমবন্ধ বিষাদ-পরাণ।
তোমার ভাঙ্গা ঘর, দেবতার শূন্য থালা
পুড়তেছে তখতের রোষে।
এই তুলসী-পোড়া ভোরে- তোমার অবল বিলাপে
কাঁইপা কাঁইপা উঠে ইসরাফিলের হাত। আর
ভুখা নৃপতি আমি – বিলাপের অতল কূপের জল
শেষ হইলে পরে-
বক্ষে লইয়া তোমার শেষকৃত্যের ছাই
বন্ধ করি মম জখমি দুয়ার!
উৎসর্গঃ জ্যোতির্ময়ী জ্যোতি
(জানুয়ারি ২০১৪)
হাড়
শুকাতে শুকাতে ফসিল হচ্ছে নদী- তোমার ছায়া পড়ে;
তুমি আস্তিনের ভিতর লুকায়ে রাখো কবরের
বিহরণ আর পাঁচিলের শিরে বসে জোছনার
হাড়ে মাংস লাগাও!
মাংস লাগাও; আর আমারে জিগাও- পুষ্ট গাভীর
কথা; কই তার দ্যাশ? টিয়ার ডানার নিচে আর
আকাশের তলে গুমগুম করে খুলি-কঙ্কাল; কত-
ধানের মত হাড়!
এ ব্যথার কথা জানে ডাউকি নদীর খলবলি বুড়ি;
তার কোঁচকানো চামড়ার নিচে ঝরে ফড়িংয়ের তিল।
পরাণ, এ হাড় নদীরে কাঁদায়, শুকায় জ্যোৎস্নারে।
এই হাড় তোমার আমার ধমনী ছিঁড়ে বানায়
সুড়ঙ্গ; গর্তের বিভীষিকা। এ হাড় বড় বেঈমান!
(এপ্রিল ২০১৩)
গৃহহীন
দেখ, সমুদ্র-পথে নিদ্রাহীন রশ্মি-বহর ছেড়ে
ক্রমশ এগিয়ে আসছে ক্ষেপনাস্ত্রের দূরতম পাল্লার মুখ। আর
ধীরে ধীরে বিমর্ষ তীরে পাথরের উৎকণ্ঠাহীন নৈঃশব্দ্যে উঠে যাচ্ছে
কম্পনরত নগরীর ইতিবৃত্ত।
এই নৈঃশব্দ্য- যেন তোমার জানালায় ঝুলন্ত দৃশ্যের লুপ্ত-বর্ণ ধ্বনি;
মৃত শিশুর করুণ অমাময়ী অবয়ব। শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন ছায়াদের
বিলাপের মত অসহায়, অসহায়। মনে হয়-
বিষন্ন বনস্পতি জানে, এতোটাকাল তুমি বন্দি-ই আছো –
ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর মত; আর হেঁটে যাচ্ছো নিজের কক্ষপথে
বিছিয়ে সড়ক শবের মতন।
প্রেমিকা, তোমার কোন গৃহ নাই;
শুধুই দীর্ঘ সড়ক- পাড়ি দিতে দিতে তুমি আজ মলিন জেসমিন।
কবরের প্রহরীর পাশে ছোরা হাতে বসে আছে গুপ্ত-আততায়ী।
(আগস্ট ২০১৩)