The Tell-Tale Heart । Edgar Allan Poe
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জানুয়ারি ২০১৪, ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ, | ১৭১৮ বার পঠিত
দি টেল-টেইল হার্ট / এডগার এল্যান পো অনুবাদঃ রৌশান ইকবাল
আমি সত্যি ভীষন নার্ভাস, আগেও ছিলাম এবং এখনো আছি। কিন্তু তাই বলে তুমি আমাকে পাগল বলবে কেন? রোগটা আমার অনুভুতি শক্তিকে শুধুমাত্র ধারাল করেছে, মোটেও মলিন বা ধ্বংস করেনি। সবচেয়ে বড়কথা আমার শ্রবনশক্তি, এটা এখন অনেক বেশি ধারাল। পৃথিবীর সব শব্দ শুনেছি আমি, সাথে স্বর্গের’ও। নরকের অনেক শব্দও আমার শোনা। তারপরেও তোমরা বল আমি পাগল? তাহলে শোন, মন দিয়ে শোন, দেখ কত শান্তভাবে আমি তোমাদের গল্পটা বলি।
চিন্তাটা আমার মাথায় কেমন করে এলো তা বলা অসম্ভব। কিন্তু যখন থেকে এটা আমার মাথায় ঢুকেছে, আমাকে দিন রাত তারা করে ফিরছে। সেখানে উদ্দেশ্য বা আবেগ- কিছুই ছিলো না। বৃদ্ধ মানুষটাকে আমি যথেষ্ট ভালবাসতাম। আমার সঙ্গে কখনও খারাপ ব্যবহার করেনি সে। বকাও দেয়নি কখনো। তার স্বর্ণের প্রতিও আমার কোন আকর্ষন ছিলো না। আমার যেটা মনে হয়, ওর চোখ। আসলেই তাই। ওর একটা চোখ ছিলো ফ্যাকাসে নীল, ঝাপসা পর্দাতে ঢাকা – ঠিক যেন শকুনের চোখ। সে যখন’ই ওই চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকাতো, আমার রক্ত জমাট বেধে যেত। শুধু ওই চোখ থেকে বাঁচতে আমি ধীরে ধীরে মনস্থির করলাম – বৃদ্ধকে খুন করব।
এটাই আসল কথা। আর তুমি পাগলের মত ভাবছ আমি পাগল!! আরে বোকা তুমি কিছুই জানো না। তোমার আসলে দেখা উচিৎ ছিলো কত বুদ্ধির সাথে আমি এগিয়েছি। কত সাবধানে, কতখানি দূরদর্শিতার সাথে আমি কাজটা সেরেছি।
আমি কখনোই অতটা মমতাবান ছিলাম না যতটা বুড়োকে খুন করার পূর্বের এক সপ্তাহ যাবৎ ছিলাম। আমি প্রত্যেকদিন গভীররাতে তার ঘরের ছিটকিনি খুলতাম। খুউব আস্তে এবং নিঃশব্দে। যখন দরজাটা আমার মাথা ঢোকানোর মত যথেষ্ট ফাকা হত, আমি সম্পুর্ণ কাপড়ে ঢাকা একটি লন্ঠন ঢোকাতাম যাতে একফোটা আলো’ও বাইরে না যায়। তুমি দেখলে হয়ত হাসতে কত সাবধানতার সাথে আমি আমার মাথা ঢোকাতাম। প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লেগে যেত আমার – কোন পাগল কি কখনও এত সতর্ক হ’তে পারে? মাথা ঢোকানোর পরে আস্তে আস্তে লণ্ঠনের ঢাকনাটা সরিয়েছি এই একটুখানি, যা’তে খুব সরু একটা আলোর রেখা বুড়োর শকুন-চোখের উপর পড়ে। এই কাজটা আমি সাতদিন, মানে সাত রাত করেছি। ঠিক মধ্যরাতে। কিন্তু প্রতিবার তার চোখ বন্ধ পেয়েছি। আর এই কারনেই ওই সাতদিন আমার কাজটা করা হয়নি, কারন বুড়ো মানুষটার সাথে আমার কোন শত্রুতা ছিলো না। এরপর ভোর হবার সাথে সাথে আমি তার ঘরে গটগটিয়ে ঢুকতাম। আন্তরিকতার সাথে তার কুশল জিজ্ঞেস করতাম। তার রাত কেমন কেটেছে জানতে চাইতাম। তাহলে দেখতেই পারছো বুড়ো খুব বেশি চিন্তাশীল ছিলোনা। অন্তঃত এটা সন্দেহ করার মত নিশ্চই না যে এই মানুষটা তার ঘুমন্ত মুখের দিকে সারারাত চেয়ে থাকে।
অষ্টম রাতে আমি আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্ক, অনেক বেশি সাবধানী ছিলাম দরজা খোলাতে। এমনকি ঘড়ির মিনিটের কাটা’র ঘূর্ণনের চেয়েও আমি অনেক ধীর ছিলাম। সেই রাতের আগে আমার নিজের ক্ষমতা আর শক্তি সম্পর্কে আমার নিজের বিন্দুমাত্র ধারনা ছিলো না। উল্লাসে ফেটে পরছিলাম ভিতরে ভিতরে। ওটাকে বাগ মানাতে যথেষ্ট কষ্ট হচ্ছিল। এমন হাসি পাচ্ছিল এটা ভেবে যে আমি তার দরজা ধীরে ধীরে খুলছি, কিন্তু সে স্বপ্নেও আমার গোপন ইচ্ছার কথা ভাবতে পারছে না। হয়ত হেসেও ফেলেছিলাম খানিক এবং সে হয়ত এটা শুনেও ফেলেছিল, কারন সে একটু নড়ে উঠল বলে মনে হল। তুমি হয়ত ভাবছ পিছিয়ে এসেছি তখন। কিন্তু মোটেও না। তার ঘর ছিল আলকাত্রার মতই ঘন অন্ধকার। বৃদ্ধ চোরের ভয়ে ঘরের দরজা-জানালা সব বন্ধ করে রাখত। সুতরাং আমি জানতাম যে বুড়ো আমাকে দেখতে পাচ্ছে না, যেমন দেখতে পাচ্ছে না তার দরজার নিঃশব্দে, একটু একটু ক’রে খুলে যাওয়া!
আমি মাথা ঢুকিয়ে কেবলমাত্র সরু আলো ফেলতে গিয়েছি বুড়োর মুখে, আমার আঙ্গুল লন্ঠনের টিনের ঢাকনিতে পিছলে গেলো। মৃদু শব্দ হয়েছে কি হয় নাই, লাফিয়ে উঠে বসলো বুড়ো। চেঁচিয়ে উঠলো, “কে? কে ওখানে?”
আমি বরফের মত জমে গেলাম ! নিশ্চল। নিঃশব্দ। প্রায় একঘন্টা আমি আমার শরীরের একটি পেশিও নড়াইনি, কিন্তু বুড়ো’র শুয়ে পরার শব্দও আমি পাই নি। সে কান পেতে বসে রইল বিছানার উপরে, ঠিক যেমন রাতের পর রাত আমি থেকেছি আর শুনে গিয়েছি কাঠের দেয়ালে ঘূণপোকার শব্দ।
খানিক পরে বুড়োকে গুঙিয়ে উঠতে শুনলাম। শুনেই বুঝলাম এটা ব্যথা কি কষ্টের গোজ্ঙ্গানো নয়, মৃত্যু-আতঙ্কের গোঙানি। ঐ চাপা আর্তনাদ কেবল মাত্র মহা-আতঙ্কে স্থবির আত্মার গহীন ভিতর থেকেই উঠে আসতে পারে। আমি ওই ভয়ানক শব্দ খুব ভালোভাবেই চিনি। কত রাতে, পুরো পৃথিবী যখন ঘুমিয়ে, এই শব্দ আমার আত্মার গভীর থেকে উঠে আসত। ক্রমে ক্রমে গভীরতর হ’য়েছে তা’, বিভৎস প্রতিধ্বনিতে অনুরণিত হ’য়েছে – আর সীমাহীন আতঙ্কে দিশেহারা হ’য়েছি আমি! আমি চিনি এই শব্দ আর ভালভাবেই বুঝতে পারছি বুড়োর কেমন লাগছে। তার প্রতি একটু মায়াও হচ্ছিল। আবার পরক্ষনেই হেসে কুটি কুটি হয়ে যাচ্ছিলাম। আমি জানি বুড়ো তার দু’চোখের পাতা এক করতে পারে নি। তার ভয় আস্তে আস্তে বেড়েছে। কত ব্যাখা সে দাড়ঁ করিয়েছে মনে মনে। প্রথমে ভাবতে চেয়েছে মনের ভূল, কিচ্ছু শোনেনি সে। কাজ হয় নি। পরে ভাবতে চেয়েছে এটা চিমনির ভিতরে বাতাসের শব্দ। অথবা, মেঝের উপর ইঁদুরের ছোটার শব্দ, আর কিছু না! আবার ভেবেছে, “ঝিঁঝিঁ! একটা ঝিঁঝিঁ পোকা একবার ডেকেই থেমে গেছে হয়তো! হ্যা, সে নিজেকে শান্তনা দিতে এ’সব ভেবেছে। কিন্তু সব মিথ্যা। কারণ মৃত্যু তার কালো চাদরে ঢেকে ফেলেছে বুড়োর অপাদমস্তক। যেন তার স্পর্শাতীত ছায়ার কারসাজিতেই কিছু না দেখেও, কিছু না শুনেও বুড়ো আমার উপস্থিতি টের পেয়ে গেল।
যখন অনেক অপেক্ষার পড়েও বুড়োর শোবার কোন লক্ষন দেখলাম না, তখন আমি আলো-ছায়ার কারসাজির জন্য প্রস্তুত হলাম। তুমি চিন্তাও করতে পারবে না কত ধীরে, কত সতর্কতার সাথে আমি লন্ঠনের ঢাকনাটা সরালাম। মাকড়সার জালের মত সরু আলো গিয়ে পরল বুড়োর শকুন চোখে।
ওটা খোলা ছিল। একদম খোলা এবং নিস্পলক। ঐ চোখে চোখ পড়তেই রাগে উন্মাদ হ’য়ে গেলাম! সেই ভোঁতা নীল, তার উপরে বিভৎস এক পর্দা। অসহ্য! আমার হাড়ের মজ্জাও জমিয়ে দিলো সেই চোখ! চোখ ছাড়া আর সব কিছুই ছিলো আঁধারে ঢাকা। আমার লন্ঠনের আলো পড়েছে শুধুমাত্র সেই পোড়া চোখেই।
তাহলে? আমি কি তোমাকে বলি নাই যে যেটাকে তুমি পাগলামি ভাবছ, সেটা মাত্রারিক্ত অনুভূতি ছাড়া আর কিছুই না? তো এমন সময় আমার কানে এল একটা মৃদু, ভোঁতা আওয়াজ। একটা ঘড়ি যদি কেউ তুলোয় ঢেকে রাখে তা’হলে যেমন শব্দ হবে, ঠিক তেমন।ওই শব্দ’ও আমার চেনা। এটা বুড়োর হৃদয়ের শব্দ! দামামার শব্দ যেমন সৈনিকের রক্তে উত্তেজনা আনে, তেমনি ভাবে ঐ শব্দে আমার হিংস্র ক্রোধ সীমা ছাড়িয়ে গেলো!
আমি তখনো নড়াচড়া করিনি। নিঃশ্বাস নিচ্ছি কি নিচ্ছি না! হাতের লন্ঠন স্থির। আমি চেষ্টা করছি কতটা স্থিরভাবে আলোর রশ্মিটা তার শকুন চোখে রাখা যায়। ওদিকে বেড়েই চ’লেছে হৃদপিণ্ডের সেই নারকীয় বাজনা! বাড়ছে সেটা, দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে! তুমি কি এখন ভালমত বুঝতে পারছ যে আমি কতটা নার্ভাস? সেই নিশুতি রাতে, ঐ বাড়ীর বিভৎস নৈঃশব্দের ভিতর ঐ একটানা আওয়াজ যেন একটা অবর্ণনীয় আতঙ্কের স্রোত ছড়িয়ে দিলো আমার শিরায় শিরায়! তবু আমি স্থির ছিলাম, আরও কয়েকটা মিনিট একটুও নড়িনি! হঠাৎ একটা নতুন ভয় আমাকে গ্রাস করল। কি হবে যদি প্রতিবেশীরা এই ভয়ানক শব্দ শুনে ফেলে!! বুড়োর শেষ সময় চলে এসেছে। বিকট একটা চিৎকার দিয়ে লণ্ঠনটা পুরো খুলে দিলাম আর লাফ দিয়ে ঢুকে পড়লাম ঘরের ভিতর! চোখের পলকে বুড়োকে মাটিতে পেরে ফেললাম এবং ভারি বিছানাটা তার উপরে চাপিয়ে দিলাম। নিজের হাতের কাজ দেখে গাল ভ’রে হাসলাম আমি! বুড়োর হৃদপিণ্ড তারপরও অনেকক্ষণ তার শব্দ করে গেলো, যদিও কমে আসছিল ক্রমেই। আর দুশ্চিন্তা করছিলাম না, বাইরের কারও কানে যাবার মতো জোরালো আর ছিলো না ওটা। অবশেষে, এক সময় থামলো সে আওয়াজ। বিছানাটা সরিয়ে পরীক্ষা ক’রে দেখলাম – মরেছে বুড়ো। মরে পাথরের মত শক্ত হয়ে গেছে। আমি আমার হাতটা তার বুকের উপরে রাখলাম, অনেকক্ষন রেখেদিলাম। নাহ, সত্যিই মরেছে! আর কোনদিন জ্বালাবে না আমাকে বুড়োর শকুন-চোখ!
তুমি যদি এখনো আমাকে পাগল ভাব তাহলে আস তোমাকে বলি বুড়োর লাশ লুকানোর জন্য আমি কি পরিকল্পনা করেছিলাম, তাহলেই তুমি বুঝবে আমি পাগল না। রাত শেষ হয়ে আসছিল। তাই আমাকেও দ্রুত কিন্তু নিঃশব্দে কাজ সারতে হচ্ছিল। প্রথমেই আমি লাশটাকে টুকরো টুকরো করে ফেললাম। মাথা, দুই হাত আর দুই পা- সম্পূর্ন আলাদা আলাদা।
তারপর ঘরের মেঝে থেকে তিনটে তক্তা তুলে তার মধ্যে রেখেদিলাম সব। উপরে আবার তক্তাগুলো এত গুছিয়ে বিছিয়ে দিলাম যে বাজী ধ’রে বলতে পারি, কারও চোখেই কিছু ধরা পরবে না। সেখানে ধোয়া-মোছার মত কিচ্ছু ছিলো না। না রক্ত, না কোন দাগ। যাই হোক আমি এ ব্যাপারে খুব সতর্ক ছিলাম তাই গোছলের টাব ব্যাবহার পর্যন্ত করেছি- হা হা!
যখন আমি সব কাজ শেষ করলাম তখন প্রায় ৪টা বেজে গিয়েছে। অন্ধকার মধ্যরাত। ঘড়িতে ঢংঢং ক’রে চারটে বাজার আওয়াজ না মিলাতেই সদর দরজায় শুনি কে যেন কড়া নাড়ছে। নেমে গিয়ে খুললাম। হাল্কা মনে খুলতে গেলাম, আমি এখন নিশ্চিন্ত। তিনজন ভদ্রলোক, বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে নিজেদের পুলিশ বলে পরিচয় দিলেন। কোন প্রতিবেশী এক চিৎকার শুনে খবর দিয়েছে, তাই আসা। বাড়িটাও নাকি সার্চ করবে।
আমি হাসলাম – কারন আমার এখন কিসের ভয়!! আমি তাদের আন্তরিকতার সাথে অ্যভ্যার্থনা জানালাম। তাদের জানালাম যে হ্যা, চিৎকার একটা হয়েছে বটে, তবে সেই চিৎকারটা দিয়েছি আমিই, দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পেয়ে! আর বুড়োও বাসায় নাই, বেড়াতে গিয়েছে। আমি তাদের সার্চ করতে ন্দিলাম, নিজেই ঘুরিয়ে দেখালাম সব। বুড়োর ঘরে নিয়ে গেলাম, তার সব জিনিসপত্র দেখালাম – সবই আছে নিশ্চিন্ত নিরাপদে, ঠিক যেখানে যা থাকার কথা। আমার আত্মবিশ্বাস তখন এতোই তুঙ্গে যে, চেয়ার আনিয়ে ওদের ঐ ঘরেই বসালাম। নিজে বসলাম ঠিক যেখানটাতে বুড়োকে পুঁতেছি, সেই খানটায়!
পুলিশরা যথেষ্ট সন্তষ্ট ছিলো। আমার অভিনয় তাদের সন্তষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। হাসিমুখে তাদের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলাম আমি। এক সময় দেখি ওরা এটা সেটা হাবিজাবি বিষয় নিয়ে আলাপ জুড়ে দিয়েছে। ঠিক এইসময় মনে হল আমি যেন একটু হলুদ বর্ণের হয়ে যাচ্ছি। মনে মনে ভাবছি তারা যায় না কেন! কানের মধ্যে কেমন একটা ভোঁ ভোঁ আওয়াজ পেতে থাকলাম। তারা কথপোকথন চালিয়ে যেতে থাকল। কি ব্যাপার? কানের ভিতর ঐ গুঞ্জনটা কি আরও জোরালো হচ্ছে নাকি? আমি হালকা চালে কথা চালিয়ে যাই, কিন্তু কানের ভিতরে ওটা বেড়েই চলে, বাড়তেই থাকে! হঠাৎ, বুঝে গেলাম শব্দটা তো আমার কানের ভিতর নয়!
কোন সন্দেহ নাই যে এইবার আমি সত্যি ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছি। আমার গলা চরতে লাগল। আর ঐ গুঞ্জন! ওটা দেখি বেড়েই যেতে থাকলো! কি করি! ভোঁতা, মৃদু অথচ দ্রুতলয়ের শব্দটা – একটা ঘড়িকে তুলোয় মুড়ে রাখলে যেমন শব্দ হবে, ঠিক তেমন! আঁতকে উঠলাম, গলায় শ্বাস আটকে গেলো আমার! তারাও কি শুনতে পাচ্ছে!! পুলিশগুলোর সামনে দিয়েই ভারী পায়ে পায়চারি শুরু করলাম। কিন্তু ঐ শব্দ! কমছে তো না-ই, বরং বাড়ছেই, বেড়েই যাচ্ছে! ঘামতে লাগলাম। হঠাৎ চিল্লাতে শুরু করলাম, গলা ফাটিয়ে চ্যাঁচালাম। ! আমার চেয়ারখানা তুলে আছাড় দিয়ে ভাংলাম ঠিক লাশ পোঁতা জায়গাটার উপর! কিন্তু শব্দটা বাড়তেই লাগল। জোরে- আরো জোরে হতে লাগলো। কিন্তু তারা শোনেনি এটা কিভাবে সম্ভব!! ইয়া আল্লা! নাঃ! না, না, শুনেছে! শুনেছে! এরাও শুনতে পেয়েছে! এরা ঠিকই সন্দেহ ক’রেছিলো! জানতো এরা সবই! সব জানতো! আমি মুক্তি চাই এই দুর্বিষহ যন্ত্রণার হাত থেকে! এর চেয়ে খারাপ আর কি আছে? এই পরিহাসের চেয়ে খারাপ কিছু হয়? কিছু হয়? এর চেয়ে বেশি দুঃসহ? মনে হচ্ছে চিৎকার না করতে পারলে বুঝি মারাই যাবো! – ঐ যে! ঐ! শুনতে পাচ্ছে? ঐ শব্দ? কি জোরে!
“শয়তানের দল”! ভনীতার আর কোন দরকার নেই। স্বীকার করছি! আমিই।হ্যাঁ, আমিই করেছি! এই যে, এখানে। উহ! শুনছো? শুনতে পাচ্ছো তোমরা? কদাকার বুড়োর হৃদয়ের শব্দ?
রৌশান ইকবাল