শিল্পবেদী ও অন্যান্য কবিতা । জিনাত জাহান খান
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ, | ২৭৩১ বার পঠিত
এখানে, এই চিবুক গ্রামে বালিহাঁসের পালে আলোকরজ্জু দেখে নিপতিত বিন্দুবিসর্গও হেসে ওঠে।ছাপোষা সংসারে স্বজনহীন রোজকার হালখাতার পরিণতি।কিছু বনসাই ও পাথরকুচি স্বপ্ন সহ কমলার খোসার মত আত্মঘাতী জল নিয়ে বয়ে চলে এক বেহায়া নদী।রোজ, চোখে লাল কাপড় বেঁধে বাজির আসরে বিশ্বস্ত বন্দুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শিকারির আজ একহাতে আমলকীর ফুল, অন্যহাতে জারুল-গন্ধী বুলেটের খোসা, বলছে নন্দনতত্ত্বের গল্প।
তবু, কপোলের তিল তোলা উৎসবে, লাট্টু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মাটি বিদীর্ণ করা ফোঁকরে, জমে থাকা জলে নক্ষত্রদের পতন ঘটে।
এক স্তবক আকর
অতঃপর বনলতা সেন ও আমি, আমাদের জোনাকপাড়ার কলরোলে, সারি সারি বৃক্ষের ফাঁকে উড়ে যেত নক্ষত্র-পায়রা। দোলাচল, পথফুল, দৃশ্যে দৃশ্যে বন্দি, পাখির নীড়ের মতো দু’টি চোখ। মনকে স্পৃষ্ট করা একমুঠো বাউরি বাতাস। শ্রাবণভূমিতে, ব্যক্তিগত ধূসর পাণ্ডুলিপি জুড়ে যে চেতনাবিলাস, সেখানে থাকে এক হাল ভাঙা নাবিক, হয়তো অপেক্ষা শিশির শব্দের কিংবা শুধু অন্ধকারের। তবু বনলতা সেন ও আমি, আমরা, শিশির শিকার করা কোন সোনালি চিল হয়েই বাঁচি।অতঃপর বনলতা সেন ও আমি, আমাদের জোনাকপাড়ার কলরোলে, সারি সারি বৃক্ষের ফাঁকে উড়ে যেত নক্ষত্র-পায়রা। দোলাচল, পথফুল, দৃশ্যে দৃশ্যে বন্দি, পাখির নীড়ের মতো দু’টি চোখ। মনকে স্পৃষ্ট করা একমুঠো বাউরি বাতাস। শ্রাবণভূমিতে, ব্যক্তিগত ধূসর পাণ্ডুলিপি জুড়ে যে চেতনাবিলাস, সেখানে থাকে এক হাল ভাঙা নাবিক, হয়তো অপেক্ষা শিশির শব্দের কিংবা শুধু অন্ধকারের। তবু বনলতা সেন ও আমি, আমরা, শিশির শিকার করা কোন সোনালি চিল হয়েই বাঁচি।
শিল্পবেদী
চেয়ে দ্যাখো, শিল্পের ঊষায় মৌল-শরীরে জেগে যাবে, চাঁদহীন যুগল পূর্ণিমা। কালো মৃত্তিকায় জ্বলবে বৃক্ষের প্রদীপ। জ্যোৎস্না-স্নাত মগ্নতাগুলো, স্বপ্নের গভীরে আতর কৌটা খুলে রাখে। পরস্পরের নেশায় বুদ নীলমণিলতা আর কামিনীর ঝোপ। তাদের গ্রীবার গ্রামে, বাঁজে, মসলিন তাঁতীদের খটাখট তাঁতের শৈল্পিক সুর।
নিদ্রাহীন লেবুপাতার মতো, নির্জনতার নাভিমূলে, দুলে ওঠে শস্যবৃক্ষ।
লাল খনিজের অতিথিরা
ইটের নীচে লুকিয়ে থাকা ঘাস, শুকিয়ে বর্ণহীন। অথচ সবুজ ভুমি জুড়ে হলুদ নরম রোদ। ফুল ফোটার নৈ:শব্দে সজাগ ইন্দ্রিয়, ঝরে পড়া অসুখে পাতারা আমূল পাল্টায় যাপনের গূঢ় চাবি। তারপরও খোঁজে শুধুই ভ্রমণ, মনে হয় এক ঘর টপকিয়ে অন্য ঘরে যাওয়া। মৃত্যুই মহান বিচ্ছেদ।
নতুন করে দেখার সদিচ্ছায় সন্ধ্যাগুলোকে বেছে নেওয়া যায়। যেখানে বাতাসে ভাসে গোপন নেশার শ্রুতিহীন মধ্যরাত।
শীতঘুমে ঝরে পড়া ফুলেদের সাথে, অবিরাম কি এতো কথা অবুঝ পাতার!
দ্বিধার দেয়াল
রক্তের স্ফুটন আর ঘরের পরিধি স্মিত হয়ে আসে ছিন্ন সম্পর্কের টানা পোড়েনের ভুলে দেয়াল জুড়ে মাকড়সার বুনে যাওয়া জালে জড়িয়ে থাকে ঝরে পড়া স্মৃতি-
পোকাদের সামান্য পাপড়ি।
বড়ো ফাঁকা ফাঁকা লাগে, সত্যি, বড় ভুলভাবে ঝরে গেছে সমস্ত আবেগ, ভালোবাসা সব পারে। ইচ্ছে হলেই নিতে পারো আলতো স্মৃতির ভেজানো দরজা খুলে—
করতলে ধরা কোন নির্বাচিত ফুল !
দুপুর বিলাস
আমার সকাল থেকে রাত, উন্মাদ পিয়ানোর মত বাজে। তবু, কেবল দুপুরটুকু আমার কাছে বিস্ময়। বনসাই ছায়ারা এমন সারপ্রাইজ দেয়, যেন প্রাণটুকু ছোট হতে হতে আগুনরঙা ফুল ফোটায়। জন্ডিস-রোদ, শহরে কোন পাখি থাকে না। শুধু প্রচণ্ড তাপজ্বর নিয়ে জানালার পর্দা হয়ে যাই, আর গোপন করি যত ওপারের নদী।
দুপুরফুল, খোঁপায় গুঁজে, ডুব দেই লাল পুকুরে। জলের অতল থেকে, যমের অট্টহাসি আর দু’হাতে নরক নিয়ে, প্রাণপণে ডেকে চলে এক অচেনা পোয়াতি মাছ, যার মুখভর্তি থাকে ডিম। উড়ালসাঁতার উঠে আসি, পেছনে তাকাতেই দেখি শত শত রঙিন ম্যাজিক বল আমাকে ধেয়ে আসছে।
আহা জল, সন্ন্যাসী জটাধারী জল। একমাত্র সত্যই জল। ডুবো পথ, যেন ফুটে থাকা জাম্বুরা ফুল। আমার আগুনঝরা যত দুপুর, ছায়াদের লিগামেন্ট শিথিল করা আলোয় মেলে দেই, প্রচ্ছায়ার পেখম।
মানুষ মাত্রই মৌসুমী অসুখে ভোগে।