কয়েকটি অহেতুক কবিতা । ফাহমিদা ফাম্মী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ ডিসেম্বর ২০১৩, ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ, | ৪৩৩২ বার পঠিত
হৃদয়াধিকার
আমার অধিকার। শুধু চেয়েছি একটু হেসে তাকাও আমার দিকে,
আমি তো তেমন কিছু চাইনি, চাইনি হতে তোমার গল্পের
নায়িকা কিংবা চাইনি তোমার এলোমেলো কবিতাগুলো লিখা
হোক আমার জন্য,
শুধুই চেয়েছি একটিবার আমাকে শোনাও
ঐ মুগ্ধ করা কবিতার দুটি লাইন,
আমি তো তেমন কিছুই চাইনি, চাইনি ভোরে তোমার ঘুমভাঙানি
পাখির গান হতে, চাইনি অঝোর বরষায় বৃষ্টির পানি
হয়ে তোমায় ছুঁয়ে যেতে, শুধুই চেয়েছি বৃষ্টির দিনে এক
কাপ কড়া লিকারে চা বানিয়ে তোমাকে বলতে, চা খাবে?
আমি চাইনি তোমার শাসন অথবা আদর,
চাইনি কখনো আমার হাতটি ধরে বল, বালিকা তোমায় ভালোবাসি!
শুধু চেয়েছি একবার শুধু একবার এই চোখের দিকে তাকিয়ে বল
ভালবাসিনা তবু কোথায় যেন অনুভূত হয় একটু মায়া…
আমি তো তেমন কিছু চাইনি
চাইনি তোমার রাত জেগে কবিতা লেখার ফাঁকে তোমাকে
বিরক্ত করতে… শুধু চেয়েছি আমার ভালবাসা
দিয়ে দূর থেকে তোমায়… ছুঁয়ে যেতে…।
অহেতুক
খুব করে চাই তা কিন্তু না
তবে চাই না এমন কিন্তু না
শুধু এত টুকু জানি তোমার প্রত্যেকটা পদক্ষেপ
করি পর্যবেক্ষণ, কখন কি কর আর
কখন কি কর না সব, কিভাবে তুমি চায়ে চুমুক দাও
চায়ের মধ্যে গলে যাওয়া বিস্কুট
তুলে খাও, কিভাবে বন্ধুদের, সিগারেটের বিচ্ছিরী গন্ধে
নাক ছিটকাও, কিভাবে ফুচকা চটপটি খাও
অমৃত স্বাদ নিয়ে, সব দেখি সব…
জানি তুমি আহামরি কিছু নও, নও কোন সেলিব্রেটি
তোমার হাসি তোমার কথা, তোমার গলায় গাওয়া
যেকোনো গান, সবই সাধারণ; কিন্তু আমার কাছে
অসাধারণ ঠিক যেন তোমার
খাওয়া অমৃত ফুচকার মতন, তোমার সব কিছু খেয়াল করি
কিন্তু জানি, তেমন কেউ নেই তোমার জন্য।
তোমার প্রেমে পাগল হওয়া, অন্য দশটা মেয়ের মতই
তবু কেন জানি বলতে ইচ্ছে হয়…
শোনেন সাহেব অন্য দশটা মেয়ের
চেয়ে তোমায় বেশি ভালোবাসি…।
পাগলী
খুব ইচ্ছে করে পাগলামি করতে
ইচ্ছে করে কারো মধ্যরাতের
ঘুম ভাঙ্গিয়ে বলি, এই যে সাহেব আপনি কি ঘুমে ?
কারো গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসে বারবার ফোন দিয়ে
বিরক্ত করি…ইচ্ছে হয় এসএমএস দিয়ে
জানাই,এই ছেলে বের হও ঘুরতে যাব ।
কারো উদাস করা বিকেলে
চুপ করে বসে থাকতে চাওয়াটাকে
তুচ্ছ করে বলি-আমি থাকতে একা কেন ?
খুব ইচ্ছে করে কোন চায়ের টঙে
বসে কারো হাতের চা কেড়ে নিয়ে
বলি অনেক খেয়েছ বাকিটা আমার।
কারো মন খারাপের দিনে, এক মুঠো হাসি উপহার দিয়ে বলি…
তুমি মন খারাপ করে আছো? ইচ্ছে হয় কাউকে
হঠাৎ ফোন দিয়ে বলি– আমার জন্য এক রাশ গোলাপ-পাপড়ি
নিয়ে উপস্থিত হও আমারই বাসার গলিতে
এখন, ঠিক এখনই; ইচ্ছে হয় কারো শার্টের কলার ধরে বলি,
ভালো না বেসে যাবে কোথায়?
এমন স্বৈরাচারী প্রেমিকা আর, পাবে কোথায় ?
তবু সে মিষ্টি হেসে বলুক পাগলী…!
সময়ের ব্যবধান
পুরানো কিছু জঞ্জাল ঘাটাঘাটি করে পেলাম কিছু
অতি প্রয়োজনীয় মূল্যবান জিনিস,
যার সম্পূর্ণ আবরণ কিছু মাকড়শার জালের আস্তরণ,
কোমল হাতে স্পর্শ করলাম, যেন কোন ক্ষতি না হয়
প্রথম পাতাটা পড়তেই ভুলে যেতে চাওয়া সব স্মৃতি
ভেসে উঠলো চোখের সামনে তীব্র কষ্টে জর্জরিত হৃদয়কুল
করে উঠলো হাহাকার, যতই পাতা বাড়তে থাকল
কষ্টের পরিমাণ, তাও বাড়ল; সমানুপাতিক হারে
ভীষণ ভাবে আমার অষ্টরে পৃষ্টরে
আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিলাম চিঠিগুলোকে
যেভাবে আলিঙ্গনে জড়াতাম তোমাকে
ঠিক সেই ভাবে… বড্ড বদলে গেছো তুমি
হয়ত আমিও বদলে গেছি সময়ের ব্যবধানে…
তারপর
শুধু একবার স্পর্শ করবো তোমায়
তারপর এক পলকে কেটে যাবে, হাজার বছর
শুধু একবার তোমাকে ছোঁব হৃদয় দিয়ে
তারপর কেটে যাবে শত সহস্র কাল
শুধু একবার তোমার ঐ শক্ত হাতে রাখবো
আমার হাত, তারপর প্রেম ছুঁয়ে যাবে ঐ সুনীল আকাশ
যেখানে থাকবে না কোন অভিযোগের অবকাশ
তারপর আমরা গড়ব, অলিখিত ইতিহাস
শুধু ঐ অস্পর্শ-ইতো প্রেম, তোমাকে যাবে ছুঁয়ে
যেভাবে আমি তোমায়, ছুঁয়েছিলাম আমার হৃদয় দিয়ে…।
নাম বিহীন কবিতা
কোন এক আষাঢ়ে মন উৎফুল্ল ছিল
বয়েছিল আনন্দ ধারা চারিদিকে
যেদিন প্রথম ভালবেসেছিল হৃদয়
বলেছিল ভালবাসি…। আজ এত দিন পর
আবার সেই পুরনো দিন মনে পরে গেলো
আবার আনন্দে আত্মহারা হল হৃদয়
আবার জেগে উঠলো চিত্ত
আবার সে যোগ দিবে ভালবাসার মিছিলে…।