একগুচ্ছ কবিতা / সালাহ্উদ্দিন মুক্তি
প্রকাশিত হয়েছে : 23 December 2013, 8:30 am, | ১৭২৬ বার পঠিত
একসাথে পথ হাটবো বলে ভোরের রক্তিম আলোর কুয়াশার পর্দা ঠেলতে ঠেলতে আমরা জ্বালিয়ে রেখেছি আমাদের চেতনার স্ফুলিঙ্গ। রক্তের ভেতর মৃত্যুর শীতলতা উপেক্ষা করে নির্মাণ করেছি অযুত জীবনের উষ্ণতা। জন্মেই দেখেছি আমরা জীবনের উপকূলে দৈত্য দানবের হুঙ্কার। তাই জীবন এখানে মুখ লুকালো সমুদ্রের ফুসে উঠা জলরাশির নিচে। অনেক বিষাদময় সময়ে সমতলের একঘেয়ে নীরবতার ভেতর উপকূলও কথা বলে উঠে তার আপন নিয়মে। আমরা দ্রোহের চাঁদরের নিচে একি নিঃশ্বাসে বাঁচি সময়ের প্রয়োজনে। কারণ সময় ঠিকই জ্বালিয়ে দেবে আমাদের যৌথ স্বপ্নের দীপাবলী।
ইচ্ছের জন্য কবিতা
জানি তুই এখনো ঘুমিয়ে
তোর খামখেয়ালী অভিলাষের রাজত্বে।
ঐ যে আকাশ থেকে গড়িয়ে পড়ছে
ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টি- তাদের মতোই
তোর কোন পিছুটান নেই। তুই মৌন
রাতের জঠর যন্ত্রণা যেন-সহসা
তুই ডুবিয়ে দিস অনির্ণেয় ব্যথায়।
তুই বললেই–
ক্রুশকাঠে বিদ্ধ করি নিজেকে আর হয়ে যাই যিশু।
আবার বললেই বরফ ছোঁয়া রোদের সম্মোহনে
ভরে যায় হৃদয়ের অলিগলি। কবিতার ছত্রে
ছত্রে হাটু গেড়ে বসি তুই ছুঁয়ে দিবি বলে। আমি–
সহস্রাব্দ ধরে তোর ভেতরে প্রবেশ করবো বলে
প্রতীক্ষায় আছি আরণ্যক হৃদয় নিয়ে। তাহলে
আজ তোর ডানা মেলে ধর মেঘডম্বরে; আর চোখ
ছেড়ে- কবিকে দ্বীপান্তর কর একান্ত রাজ্যপাটে।।
নৈঃশব্দ ও প্রেম
হাওয়ারা বেয়াড়া বড়ো, নানা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বিব্রত করছে আমায়! বলছে স্মৃতিরা অপেক্ষমান আমার দুয়ারে অথচ আমি চলেছি রাতের ট্রেনে চেপে কোলাহলের শহরে।
ও নগরের ভুলে থাকা নৈঃশব্দ, তুমি কি আমার প্রেমিকার মতোই ডাঙ্গর হয়েছো? তার মতোই কি ঘনকালো কোমর ছোঁয়া চুল তোমার? আঁধারের দ্রাঘিমায় একে দেয়া গাঢ় চুম্বনে তুমিও কি অস্থির হও তার মতো?
জানার ইচ্ছেটুকু ভোর অবধি নীল ডাউন হয়ে রবে যদি অভিমান পুষো! আমি ফিরে আসবো বলে ছুড়ে ফেলে দাও সমস্ত অভিমান, দেখো আমি তোমার চিরায়ত প্রেমিকের হৃদয় নিয়ে হাত বাড়িয়েছি, ধরা দাও দু’বাহুডোরে। ধরা দাও নস্টালজিক রাতে।।
আলাপন
ধরো এখানটাতে শুরু হলো আমাদের যাত্রা!
এইযে কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষ-
ওটাই সূচনা ফলক হলো না হয়।
কোনদিকে যাবে কিছু ঠিক করেছ ?
না , ওসবতো ঠিক করা হয়নি!
আমিতো বিশ্বাস করি গন্তব্যের চেয়ে যাত্রাপথ অনেক সুন্দর!
আর এ যে বিষম-অন্ধকার! তাতে কি? ভয় করে ভীষণ, আমি যে
কোনকালেই সাহসী নই ! না থাক সাহস, এখনো তুমি বিশ্বাস
করো পথের উপর, পথচলতি সাথীর উপর ! এখনোতো উদ্ভিন্ন
যৌবনা তুমি! এখনো জেগে থাকা স্নায়ুরা সাড়া দেয় দূর বনের
ছাতিম ফুলের গন্ধে । এখনো যে তুমি- তুমি হয়ে উঠার প্রতীক্ষা।।
বৃষ্টি ও পুরুষের গল্প
বৃষ্টি, তোমার ভেতর এক বুক ভিজে গিয়েও-
আমি আজো তেমন পুরুষ হয়ে উঠিনি; যে
অনায়াসে বলে ফেলবে এক অমাবস্যা রাতে
তোমাকে সাথে করে দ্বিধাহীন ঘর ছাড়ার
গল্প। এমন পুরুষ হলে বেঁচেই যেতাম।
কাঁদাজল ডিঙ্গিয়ে অচেনা গায়ের অচেনা
দুয়ারে প্রাণের ঘ্রাণ নিতাম বুক-পাঁজর
ভরে। দূরের পাহাড় কেটে কাঁধে কাঁধ দিয়ে
চাষবাস করে ফলানো যেতো এক আটি ধান।
যাতে বিষ নেই , যেখানে মুনাফার পাগল
ঘোড়া নাগাল পাবেনা এই প্রকৃতির।
ঘাসফুল রবে, প্রজাপতিও। আর রবে সুবহে
সাদিকে বন মোরগের ডাক । বৃষ্টি, আজিকে
একটানা ভিজিয়ে যাচ্ছো বলে –
খুব করে তেমন পুরুষ হতে চাই ।।
শুয়োরবৃত্তান্ত
একপাল শুয়োর সাংবাদিকতা শেখাচ্ছে আজ;
এক্সক্লুসিভ রিপোর্টের নামে, মৃতপ্রায় মানুষের
মুখে মাইক্রোফোন ধরে শুধোচ্ছে আপনার
মরতে কেমন লাগছে ?
একপাল শুয়োর মৃতদেহ গুনে ক্ষতিপূরণের টাকার অংক মেলাচ্ছে ,
কতো হাজারে চাপা দেয়া যায় বাতাসে লাশের গন্ধ কিংবা কতোটা
লাশ গুম করা যায়?
একপাল শুয়োর তদন্ত কমিটিতে নাম লিখিয়েছে;, তদন্ত করে
দেখা হবে এটা কোন নাশকতা কিংবা সরকারী ভাবমূর্তি
নষ্টের গভীর ষড়যন্ত্র কিনা?
একপাল শুয়োর এখন অর্থনীতির কত ক্ষতি হলো তার
পরিসংখ্যান মেলাচ্ছে ! একপাল শুয়োর শ্রমিকের রক্তে
চুমুক দিয়ে চিয়ার্স , চিয়ার্স বলে গলা ফাটাচ্ছে!
একপাল শুয়োর ! হ্যা , ঈশ্বর একপাল শুয়োরই হবে !
একপাল শুউউউউউউউউউউঅঅঅঅঅঅঅঅঅঅর!
তুমি প্রাকাশ্য হও
তোমার কন্ঠ রুদ্ধ আজ, তোমার
কেবলা আজ দিকভ্রান্ত, তোমার
মুক্তির জায়নামাজ দখল করে
নিয়েছে বেনিয়া।
তোমাকে গোলাম বানিয়ে যারা ধর্ম শেখায়–
তাদের বিরুদ্ধে তুমি প্রাকাশ্য হও; তোমার–
দ্রোহের সমস্ত ব্যঞ্জনা নিয়ে। তোমার
মৃত্যু হোক বিরান প্রান্তরে কিংবা
তোমার জানাজা লোকশুন্য হোক!
তুমি অবিরত তেলোয়াত করো সত্য।
সত্যের চেয়ে প্রিয় আর কি আছে দুনিয়ায়?
সত্য এত নির্মূলন- জালিমের বুক
টলে উঠে সত্যের আঘাতে। তাই তুমি-
প্রকাশ্য হও তোমার দ্রোহ আর
সত্যের অতল গহীন ব্যঞ্জনা নিয়ে।।
সালাহউদ্দিন মুক্তি জন্ম ১৯৮৫ চট্রগ্রামের পটিয়ায়। পেশায় ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একজন সংগঠক হিসেবে কাজ করছেন দীর্ঘদিন। কৈশোরে জীবনানন্দের হাত ধরে কবিতার পাঠক হিসেবে নিজেকে আবিস্কার এবং তারুণ্যের বেহাত স্বপ্নগুলো খুঁজতে খুঁজতেই একদিন কবি হয়ে উঠা। তার মতে কবিতা আমাদের অবরুদ্ধ স্বপ্নগুলোকে শব্দের বুলেটের ঘায়ে মুক্ত করে বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে লড়াই করতে শেখায়। প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থ : মানুষ, তুমি সামনে এসে দাঁড়াও; যে তুমি দূরে আছো; প্রণয় কাব্য। salah.ctg09@gmail.com