কাক সিরিজ — অরণ্য
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩, ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ, | ২৩২৯ বার পঠিত
বার বার তুলার সংকটে
ফলহীন আমার শীর্ণগাছে
সুদৃশ্য ঝুলে ঝুলে থাকে
কোকুন সংসার
এই মথেরা যে শরীর চেনে
সেখানে কাকের শব্দে জাগে
মৃত সব গাছ
অযথা দিন ক্ষয়ে গেলে
মিথ্যে রাতের ডামাডোলে
তোমাকে খুঁজতে গিয়ে দেখি
হাঁসের পৃথিবী জুড়ে
শত শত কাক
শাদা যে আকাশ ছুঁয়ে ছুঁয়ে
নেমে আসো বিপন্ন ঘরের চালে
তোমাকে বলতে গিয়ে তুলার স্বপ্ন-গাঁথা
কৃষক হয়ে যায় ভূমিহীন দাস
একেকটি পায়রা হত্যা করে
অভূক্ত তোমার শরীরের পাশে
ভরপেট শকুন-আহ্লাদে
ভুলে যাই শিমুল ফুলের গান
এত সুন্দর পাখি ও ঋতু দিনে
তোমার ওখানে হালকা তুলারা উড়ে
আমার এখানে গাছের ডালে ডালে
কোকুন হয়ে ওঠে কাকের সংসার
কাক সিরিজ-২১
বলেছিলে একবার আবার আষাঢ়ে
যখন ভিজবে কাক প্রেমের বারিতে
তুমিও ছড়াবে জল আমাদের গৃহে
এলোমেলো চুল আর সিক্ত শাড়ীতে
আমি তো হয়েছি পর আমার-ই কারণে
অনেক দূর আজ ভিতর-বাহিরে
এভাবে মুছলে বলো খোদার নিশান
আযান কি পারে আর পথ দেখাতে
অনেক জমেছে ডিম সন্তান লোভে
পাথর সদৃশ যেন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে
পালাতে গিয়ে দেখি নিজের মতন
কাকের মায়াও শুধু পিছু পিছু ছোটে
বলছি গোপনে তাই আমার কন্যাকে
যখন ভিজবে কাক জানালার পাশে
উঠে এসে বসো তুমি নিজেরই সাথে
বৃষ্টি ভেজানো কোনো হৃদয় সমুখে
কাক সিরিজ – ২৩
কেউ-ই হত্যা করেনি আমাদের কাক
পাখি-বিদ্যা আর কৃষি সমাচার
ধান-লোভী কৃষকের ঘরে পৌঁছালে রোদ
আমাদের বৃক্ষ-চাষ
বাতাসে বয়ে নিয়ে আসে ঘুমের পূর্বাভাস
এমন তো হতেই পারে কুয়াশায়
কাছের মানুষটিও হারিয়ে ফেলেছে রূপ
দিগন্ত অজুহাত
মুখোশ ফিরে আসে, মুখ মিলিয়ে যায়
ইঁদুরের উৎপাতে শুন্য হয় গোলা
মাটির হাড়িতে রাঁধা হয়
সামান্য ভাত
আহা, শীতকাল
বসন্তপ্রেমিদের জিজ্ঞেস করো না
ঘর ও ঘোর
বস্তুত, গুপ্ত-বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠলে নারী
পাখি-ভক্ষক আমিও এক
অদৃশ্য কাক
কাক সিরিজ -২৪
সাপের আহার ফুরালো
এখন নিশ্চিন্তে ফেরা যাবে কুটিরে
আহা, পায়ে পায়ে ফিরে আসা ভয়
নিজেরই ঘরে পোষ্য যেন একটি নির্দয় কাক
স্বপ্নে তুমি কোন হাতে খাও
এমন তুচ্ছ প্রশ্নও আজ হয়ে উঠে শিকারী
ঐ তো হরিণের দেশ
ঘাসে ও রোদে ভরে উঠল মন
বৃক্ষ-সংগীত এইবার তুমি ফিরে যাও তীরে
ধরা পড়া মাছেদের বলো; চোখ বন্ধ করো
শোনো, জেলে ও জালের শব্দে মুখর পৃথিবী
আর ভাষাহীন ত্বক
বস্তুত, সমস্ত শর্তই আজ জলীয়
ভুল বাসনার কলসে পাথর নিক্ষেপ করো না কেউ
পাখি,পাখি করে যে নারী খাঁচার দুয়ারে নামাল হাত
আহা, পোষা কাক পরম উল্লাসে ঈশ্বর ঈশ্বর বলে
বাড়াল সাপের আহার
কাক সিরিজ-২৫
(কেউ না কেউ জানে,
কোন কেশবিন্যাসে আমি হয়ে উঠি বিষধর সাপ)
লাল, এমন শব্দ থেকেও মুছে গেল রং
এত যে রোদ শাখায়, শাখায়
প্রিয় কাক, আজ তবে মাংসের দিন
ঠোঁটে ও ত্বকে মেখে নাও আমিষের রস
ঐ চুল হাওয়ায় উড়িয়ো না আর
ফিরে এলে বিষন্ন কাক
কে থামাবে বলো প্রখর মাংসের স্বাদ
আরও ঋতুবতী হও
আরও ডুবে যাক ত্বক রক্ত ও নেশায়
কৃষ্ণপক্ষ এলে আমিও ডাকব নেশাতুর চাঁদ
যদি ভুল ভাবে জেগে যায়ক্ ষুধার্ত কাক
প্রিয় তুমি রেখে যেয়ো ফসলের দাগ
বিভা, বিভা বলে চমকে উঠে ঘুম
উষ্ণ-পক্ষ থেকে ধেয়ে আসে মাতাল প্রলাপ
এত যে বাজছে সুর নেশা ও মায়ার
ক্ষণিক ঝলছে উঠা কামনার দাঁত
হায়, শরীর ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা কাকেদের রব
‘ছিল, ছিল,
পরকালেও ছিল, এই কেশবিন্যাস’
কাক সিরিজ-২৭
ভুল-বাসনা ফিরে ফিরে এলে
মৃত হৃদয়ের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে বিছানা, চাদরে
আহা, শরীর শুদ্ধ জেনে
এতকাল ছড়িয়েছি বীজ উষর জমিনে
খরতাপে শুকিয়ে যাওয়া ত্বক, রক্তের নদী
এ আমি কোন গৃহকোণে
আঁধার-বন্দি নারী যেন শিকারী কাকের ছদ্মবেশে
এভাবে ধুলো জমে জমে
ঢেকে গ্যাছে আকাশ পথ ভিন্ন কোনো রঙে
যতবার নুয়ে আসি শরীরের ভারে
অচেনা পাখি চিৎকার করে করে বলে
‘পাখির শরীরে আটকে পড়া মানুষের হৃদয়
জেনেছে কি কাক নিজের আদলে
কতটা সে পাখির অধিক ইহকাল, পরকালে’
কাক সিরিজ-২৮
নরক থেকে ফিরে আসার পর
আমি নতুন করে এঁকেছি তোমার মুখ
রক্ত ঝরতে থাকা গাছের নিচে
পড়ে থাকা মানুষের আধখাওয়া লাশ
আহা সুখ, কাকের সুখ
ফিরে পাওয়া নতুন পৃথিবী, দানবীয় সংসার
সারাদিন বাজে বাদ্যযন্ত্র, কাকের চিৎকার
ভয় পেয়ে আমি যতবার বলি
‘উড়ে যা তুই নির্মম, কদাকার’
ততবার দেখি ছায়ার শরীরে
জীবন্ত মানুষের হাড়
নিশানা থেকে সরে সরে যায় শুভ্র পাখি-দল
অসহায় আমি, কাকের বাসায়
আধ-খাওয়া পিশাচ
কাক সিরিজ-৩০
পুরোনো সেই অসুখের ভয়ে
সারাদিন খুঁজেছি রূপ ফুলের বাজারে
রোজ রোজ তোমার কথা ভেবে
দোকানি গড়েছে সংসার আমারই ঘুমে
বিছানার একপাশ রোগমুক্ত হলে
ভুলে যাই অন্যপাশ মহামারি অসুখে
তুমিও উড়িয়েছ কাক সীমানা ছাড়িয়ে
আচমকা এই প্রশ্ন ছুঁড়ে
শহরের সব ফুল ঝরে যায় ফুলের গভীরে
কাক-কে বলেছি আরেক জন্ম পেলে
তোমাকে ফিরিয়ে দেব হাত শিশুর আদলে
অতঃপর বাজারে বাজারে
যখন ফিরবে কেউ রূপের অসুখে
বলব তাকে দোকানির বেশে
অযথা এইসব পথ্য ভেবে
কেন আর বাড়াবে পাপড়ি হৃদয়ের মৃত ফুলে
মানুষ সুস্থ হয় কেবল কাকের মাংস খেলে
কাক সিরিজ-৩১
এতকাল কাক সত্য জেনে
করেছি বেলুন ফেরি শরীর সুতায় বেঁধে
উড়ে গেলে মায়া শূন্য কোঠরে
এ কেমন নিরেট পাথর নড়ে-চড়ে উঠে
যে কোনো দেয়াল থেকে পেছনে তাকালে
চারিদিকে গোলার স্বপ্ন এমন চমকে উঠে
যেনবা কৃষাণী দেখছে মৃত
শুয়ে আছে বিশাল ইঁদুর ছায়ার প্রান্ত ছুঁয়ে
সব রোদ অন্ধ আলো নিয়ে
বুনছে অলীক ফসল শহরে, শহরে
এ যেন আরেক পৃথিবী থেকে
দেখছি অনেক কাক সমবেত ভোজে
কেমন জুড়েছে তর্ক খাদ্যরুচি নিয়ে
সরাসরি উপরে তাকালে
বিশুদ্ধ ফানুশ থেমে যায় আকাশের বুকে
চিরকাল জেনেছি কি ভুল তবে
চোখের অসুখ হলে
মানুষ গন্ধ পায় মাটির বুকের গভীরে
কাক সিরিজ-৩২
বৃদ্ধ মাটির পুতুল পথ হারিয়ে
পুনরায় ফিরে এলে মাংস-বাজারে
দোকানি বলে তাকে ভিন্ন হাসিতে
এখানে ঘুমাও তুমি নষ্ট-রাতের শোকে
সব ভোর পারে না দিতে শুদ্ধ আযান
শরীরকে দিয়ে দোষ এ কোন বয়ান
মুছতে মুছতে মুছে গেলে হৃদয়ের চোখ
দু’মুখো জানোয়ার ফিরে এসে ঘরে
সারাদিন গেয়ে যায় কাকেদের গান
অতীত স্বপ্ন আর ঝরে যাওয়া ফুল
নষ্ট মেরুতে বাঁচে মাটির পুতুল
চির-অন্ধ তার দারুণ দু’চোখে
অনেক বৃষ্টি নামে মেঘের অসুখে
আহা, এমন কি নেই মুখ কাকের ভুবনে
যা দেখলে ফোটে ফুল হৃদয় গভীরে
বিষাক্ত ঋতু আর মাংস-প্রদীপ
কতকাল পুরুষ ঘুমাবে আর
বেশ্যার কোলে কোলে
# # …………………………
- অরণ্য # জন্ম ১৯৮১, রাজশাহী, বাংলাদেশ
mail.aronno@gmail.com
প্রকাশিত গ্রন্থঃ
এখন আমি নিরাপদ (২০১২)
যে বেলুনগুলো রংহীন (২০১৩)