পাপড়ি রহমান এর ভাবের লণ্ঠন ভাবের বাতি ২
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৩, ১:২৮ পূর্বাহ্ণ, | ১৯৯৭ বার পঠিত
ভাবের লণ্ঠন ভাবের বাতি
৩.
তখনো তো পথ হতে ঢের কিছু বাকি ছিল ! এই যেমন ধর, আমার ছিল কিছু দূর্বাঘাসের ডানা, ছিল কিছু নয়নতারার ঝোঁপ আর এই যেমন শিয়ালমুতা আর কালাকেশরের-পাঁচালি।
তখনো ধর বিষ্টি ঝাঁপিয়ে আসতো গারো পাহাড় থেকে!আর মেঘভাসাদিন ঘুরে ঘুরে উড়ে যেত আর বলতো
নগর বাহিরে রে ডোম্বি তুহারি কুড়িয়া…তখন আমার এমন পথ হতে ঢের কিছু বাকি ছিল!
জগতের দুঃখি মানুষেরা নীড় ছেড়ে হাঁটতে লাগলো আর আমি হয়ে গেলাম পথ !এই পথ। ঠিক এমন। মাটিমাটিসাদাটে, ফ্যাকাশে যেনবা রক্তহীন !
তখনো ধর বিষ্টি ঝাঁপিয়ে আসতো গারো পাহাড় থেকে!আর মেঘভাসাদিন ঘুরে ঘুরে উড়ে যেত আর বলতো
নগর বাহিরে রে ডোম্বি তুহারি কুড়িয়া…তখন আমার এমন পথ হতে ঢের কিছু বাকি ছিল!
জগতের দুঃখি মানুষেরা নীড় ছেড়ে হাঁটতে লাগলো আর আমি হয়ে গেলাম পথ !এই পথ। ঠিক এমন। মাটিমাটিসাদাটে, ফ্যাকাশে যেনবা রক্তহীন !
আমার সবুজ ধুয়ে দুঃখি মানুষেরা হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতে লাগলো।
কিন্তু তাহাদের দুঃখ কিছুতেই গেলনা! তাহাদের দুঃখ গেলনা কারণ তাহারা মাড়িয়ে ছিল দূর্বাঘাসের ডানা,
কিছু নয়নতারার ঝোঁপ আর এই যেমন শিয়ালমুতা
আর কালাকেশরের-পাঁচালি।
তখনো ধর বিষ্টি ঝাঁপিয়ে আসতো গারো পাহাড় থেকে !
৪.
নদীই ছিলাম, হয়তো বয়েই যেতাম নিরবধি
জলের প্রপাত থামলো হঠাৎ
পাহাড় ধবসে জমলো বুকে মাটি
স্রোত শুকিয়ে শীর্ণ হলো যদি!
সেই থেকে ওই আকাশ হলো সুদূর
ধরা যায়না, ছোঁয়া যায়না তাকে!
আকাশ পেতে হাঁটতে হবে খানিক
চলতে হবে সাপের মতো বেঁকে
কষ্ট বুকে ঝাপসা হলো নদী
ফের যদি সে বইতো নিরবধি!
পদ্ম পাতায় দুলতো জলের ফোঁটা
পাখির নাচন থাকতো বুঝি ঢেউয়ে?
পাহাড় ধবসে জমলো বুকে মাটি
স্রোত শুকিয়ে শীর্ণ হলো নদী!
সেই থেকে তো বেঁচে আছে মরেও
এক্কেবারে ছোট্ট জলের ধারা
শাপলা পাতা মেলছে বুঝি আঁখি?
ফুটতে ফুটতেও ভয়ে আছে কারা?
ঝাউয়ের পাতা ডাকছে চুপিচুপি
নদীর ব্যথা জানে বুঝি তারা!
৫.
আমার গাঁয়েই এমন বরণ আছে
ধানের ক্ষেত ভরা মাগুর মাছে
সাথে কইও হাঁটে আকাবাঁকা জলে
সবুজগন্ধ তার গতরে খেলে
খলসে-পুটি নাচে পুচ্ছ নেড়ে
জালার ডগা তাতেই ওঠে বেড়ে
আকাশ দেখি সবুজ হয়ে হাসে
জলের আয়নায় সে ছবিটিও ভাসে!
পাশেই আমার নিজের ঘরখানি
দুপুর হলেই সবুজ আনে টানি
সবুজ সবুজ যত অবুঝ আছে
সবই আছে এমন গাঁয়ের কাছে
এমন বরণ তুমি কি ভালো বাসো?
তা নিতেই কি আমার কাছে আসো?
-
পাপড়ি রহমান
-
স্বল্পপ্রজ লেখক পাপড়ি রহমান সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই কম-বেশি বিচরণ করেছেন। তবে স্বাছন্দ্য বোধ করেন গদ্য লিখতে। তাঁর প্রকাশিত উপন্যাসগুলি একেবারের ভিন্নধারার রচনা বলে মনে করেন সমালোচকগণ। রচনাশৈলিরগুনে যা ইতোমধ্যেই তাঁকে সিরিয়াস লেখক হিসাবে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে । তাঁর রচিত ছোটগল্পগুলিতেও খুঁজে পাওয়া যায় স্বতন্ত্র টিপছাপ। করেছেন নানাবিধ উল্লেখযোগ্য সম্পাদনা। আছে গবেষনাগ্রন্থ ‘ভাষা শহীদ আবুল বরকত’। যা বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত। ইমেইল যোগাযোগ papree.rahman@gmail.com