কয়েদি এবং অন্যান্য কবিতা | হাসান শাহরিয়ার
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ নভেম্বর ২০১৩, ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ, | ২৫৩০ বার পঠিত
কয়েদি
বিষাদের লোকমাগুলো ক্ষুধার মত সতেজ
নাড়ায় শুকনো পাতায় আগুনের ছায়াচিত্র।
জানালার পাশে তোমাকে রোজ খোঁড়ে কবর;
টেবিলের নিচে পড়ে থাকে তোমার তিনখানা
চুড়ি।
‘উড়তে পারা’- শব্দজোড়া তোমাকে খুব ভাবায়।
মধ্যদুপুরে যখন তারা ছায়াহীন হয়–
হুইল চেয়ারটা টেনে চুপেচুপে রেলিঙে এসো।
তারপর–
খন্ডআকাশেনাকফুলটাকেউড়তেশেখাতেপারো!
আমার মেয়ের আঁকার খাতা
আমার মেয়ের আঁকার খাতায়
চলন্তিকার হুইসেল-
ব্রীজের কাছে এসে ঝাপ দেয় জলে।
মেহগনি রংয়ের বনমোরগটা অন্ধ;
তার ভিক্ষার থলিতে হুহু করে
পাথরের বস্তির চুন-সুরকি।
অপর পৃষ্ঠায় যাও।
খেলার মাঠ জুড়ে জানলার গ্রীল
জোড়া জোড়া চোখ টুকরো টুকরো বল।
আমার মেয়ের ছবির খাতায়
স্কুলের দপ্তরি বর্ডার গার্ড;
ক্লাসরুমে নামে চৌকিদারের ছায়া!
তার নাম রিনা
সমুদ্র-পাড়ে এক জোড়া খালি পা যার
তার নাম রিনা।
সে দাঁড়িয়ে থাকে; আমার গড়িয়ে পড়ে
চোখ। আর প্রতিদিন ভেসে থাকা কচ্ছপের
প্রাচীন প্রাচীর পিঠ তার চুলে মেখে
তরল কাজল-
অখল বাসর ঘরে প্রদীপ নেভায়।
তার মুখ-রেখার কোন অতলান্ত বাঁকে
এক দূরগামী তমস্বী ট্রেন পথ বুনে
বায় সন্ন্যাসী পাহাড়; আর মধ্যখানে
চিকচিক করে বেহুঁশ বেহাল সাঁকোর
রুক্ষ শুষ্ক
হাড়।
দূরে-
সমুদ্র-তলে যত মেঘ তলায়ে রয়,
তাদের ফেনায় ঢেকে যায় সে ষ্টেশন!
রেল করে যাত্রীরা কোথায় যে যায়?
রিনার কাছে আমি যেতে পারি না।
গোরস্থানের খুলির ভেতর
সুতোর শ্বেত-পাথরে এক মূর্দা ঘুমায়;
সে যেন রিনা!
তার কাছে আমি যেতে পারি নাই।
বার্তা
আমার হাতের রেখায় বেড়ে ওঠে শতেক রক্তশূন্য প্রাচীর
তোমার গর্ভাশয়ের দুর্বহ অন্ধকার বয়ে আনে হেথা
এক বিগলিত শস্যকণার নির্জিত বিষ্ঠা; এইখানে-
কোন সাড়া নেই, শব্দ নেই; শুধু চোখের শরীরে
দোল খায় অদূর ব্রীজের ছায়া; বহে হেরার
নিমগ্নতা। যেন আকাশ থেকে নামবে জিবরাইল।
কন্যা আমার! অন্ধকারে নামো, অদ্রব হও।
পঙ্কিল উদ্যানে যখন জোছনা নামে –
তুমি আহার হও একঘর নৈশ কিতাবের ভোজে।
তারপর সমুদ্র থেকে বেরিয়ে আসুক ঝরঝরে বাতি
আর তুমি আস্তানা ছাড়ো;
আর তুমি যেন প্রাচীন ডাকপিয়ন-
পালকের বুথে বার্তা ভরে প্রান্তর থেকে প্রান্তরে বিলাও।