অনুবাদ করা, না-করা / আনিকা শাহ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ নভেম্বর ২০১৩, ১২:১৩ অপরাহ্ণ, | ২২১০ বার পঠিত
হুট করে, একদম হুট করেই আপনার মাথায় অনুবাদের ভূত চাপবে। কিংবা, হয়তো চাপানো হবে। কিন্তু কারণ যা-ই হোক না কেন, আপনি অনুবাদ করা শুরু করবেন। প্রথম প্রথম আপনি যখন অনুবাদ করা শুরু করবেন, খুব ভালো লাগবে আপনার। পছন্দের কোনো লেখকের লেখা নিজের ভাষায় নিয়ে আসছেন, ভালো তো লাগবারই কথা। আপনার তখন এ-কাজে আগ্রহ তুমুল, এবং আগ্রহ উত্তরোত্তর বাড়বে যখন কপালে কিছু প্রশংসাও জুটবে। পত্রিকা, লিটল ম্যাগ কি ওয়েবজিনে আপনার অনূদিত কিছু লেখা ছাপা হবে। সব মিলিয়ে, একটা সময় আপনি অনুবাদক হিসেবে বেশ নাম করে ফেলবেন। কেউ কেউ হয়তো বলবে, ‘অনুবাদ, এ আর এমন কী…’, কিন্তু আপনি তাদের পাত্তা দেবেন না। কারণ অনুবাদ কেমন বা কী সে সম্বন্ধে আপনার ধারণা যথেষ্ট পরিষ্কার। তাছাড়া তখন আপনার উৎসাহ প্রবল, ফলে এসব কথায় কান দেবার মতো মানসিকতাও আপনার থাকবে না। একটা সময় লোকে বলতে শুরু করবে, ‘অনুবাদ আর কত, মৌলিক লেখা-টেখাও লেখো কিছু…।’ একথা নিয়ে অবশ্য আপনি ভাববেন। কিন্তু ভাবনা-চিন্তা খুব বেশিদূর অগ্রসর হবার আগেই তাতে ভাটা পড়বে। ছোট-খাটো কিছু লেখা যে আপনি লেখেন নি তা নয়, কিন্তু গল্প-উপন্যাস লেখার কথা আপনি সেভাবে ভাবেনও তো নি। ফলে আপনি আবার অনুবাদেই ফিরে যাবেন।কিন্তু বিপত্তি বাধবে তখনই যখন আপনি খুব উৎসাহ নিয়ে আপনার কোনো অনুবাদ সম্পর্কে আপনার কাছের কাউকে বলতে যাবেন, আর সে আপনাকে থামিয়ে দিয়ে বেরসিকের মতো বলে বসবে, ‘দেখো, অনুবাদক হিসেবে আমি আর তোমাকে দেখতে চাই না। অনুবাদ নিয়ে আর কত পড়ে থাকবে তুমি?’ আপনি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। উৎসাহের আতিশয্যে ফুটে ওঠা আপনার দন্ত-বিকশিত হাসি ততক্ষণে উবে গিয়ে মুখ ফ্যাকাশে। আপনি কিছুই বলবেন না, ঝিম মেরে যাবেন, কিন্তু রাগ ঝাড়বেন পরে, একা একা — ‘অনুবাদক হিসেবে দেখতে চাই না। ক্যান, অনুবাদ করা কি কিছুই না নাকি? এতই সোজা…’। তারপর আপনি জেদের বশে অকস্মাৎ গল্প লেখার সংকল্প করবেন। এবং খারাপও হবে না। বলি, এতদিন এত পড়ে-লিখে হাতটা তো আর একদম কাঁচা নেই! আপনি চেষ্টা করে যেতে থাকবেন, এবং চেষ্টার ফলাফল সাহস করে দু’-একটা প্রকাশও করে ফেলবেন। তৎক্ষণাৎ প্রশংসার বন্যায় ভেসে না গেলেও আপনাকে নিন্দা শুনতে হবে না। একসময় প্রশংসাও একটা-দু’টা শোনা যাবে এবং প্রশংসার পরিমাণ জ্যামিতিক হারে বাড়তে দেখা যাবে, অন্তত আপনার সম্মুখে তো বটেই। গল্পকার হিসেবে আপনার বেশ একটা পরিচিতি দাঁড়িয়ে যাবে। আপনি গল্পেই নিমজ্জিত থাকবেন, মাথায় উপন্যাস লেখার সম্ভাব্যতা নিয়ে চিন্তা, অনুবাদে বিরতি। এমন সময়, যখন গল্পকার হিসেবে আপনার খ্যাতি তুঙ্গে এবং অনুবাদক-পরিচিতি প্রায় বিস্মৃত, তখন প্রথম প্রথম যাঁরা আপনাকে অনুবাদে খুব উৎসাহ দিতেন তন্মধ্যে একজনের সাথে আপনার হঠাৎ দেখা হয়ে যাবে। হয়তো শাহবাগে, হয়তো বা চারুকলায়। তারপর তিনি কথাপ্রসঙ্গে বলে বসবেন, ‘সেদিন বেশ একটা লেখা পড়লাম হে। ওটার একটা অনুবাদ হলে ভাল হয়। তা তোমার অনুবাদ তো ম্যালাদিন দেখি না, ওটা করবে নাকি?’ এই প্রশ্নের মুখোমুখি অনেকদিন পর হলেও উত্তরটা ভেবে বের করতে আপনার খুব একটা বেগ পেতে হবে না। আপনি তখন একটু তেলতেলে হাসি হাসবেন, তারপর ইতস্তত ভঙ্গিতে বলবেন, ‘ইয়ে, দাদা,অনুবাদ তো এখন আর ঠিক করি না…’