স্বার্থপর এবং অন্যান্য কবিতা | শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ, | ৪৯৪ বার পঠিত
প্রাক্তন
চলে যাবে জানি
তবু আর একটু থাকো
বসো স্থির হয়ে
আরো কিছুক্ষণ দেখি তোমায়।
মাটিতে কত চারা লাগিয়েছি দেখো
একটু ছুঁয়ে দিয়ে যাও।
এখন ফুল ফোটে,
জল দিতে আর ভুল হয় না আমার,
আগে হত
তখন ইস্তেহারে, তর্কে,
পরবর্তী কর্মসূচী ঠিক করতে করতে
কিছু ভুল হত।
চশমার পাওয়ার বেড়েছে তো বেশ
এখন বুঝি দেখাও নিয়মিত?
তখন চোখের জোর ছিল
পুরোনো হয়ে যাওয়া ঘষা কাচে
কবিতায় কেঁপে ওঠা ছিল অবিরত।
চোখ সয়ে নিত অনাদর
এখন বুঝি নালিশ করে?
আমি তো করিনি তখন
দিনরাত এক করে কাঁধে কাঁধ
শুধু মাঝে মাঝে ভুলে গেছি জল দিতে
আর আমাকে ভালবেসে
অভিমানে মরে গেছে ফুলগাছ।
আর একটু বসো
এই নাও এক মুঠো কাদামাটি
আর উদ্ভিন্ন সবুজ
জল দিও সভা ও মিছিলের আগে
ওরা বাঁচুক, বাঁচুক মুকুলিত আশা
অতিথি
আমি একজন অতিথির অপেক্ষায় থাকি
যাকে আমি জানি না
যার প্রতি আমার কোনো দায় নেই
যাকে আমি ভালবাসিনি
যাকে আমি ঈর্ষা করিনি
প্রেম,ঘৃণা, ঈর্ষা, উপেক্ষাহীন আমি,
এক আগন্তুক অতিথির সেবা করতে চাই
সে চলে গেলে আমার মনখারাপ হবে না
আমি তাকে পুনর্বার দেখার অভিলাষী নই
তবু কোনো কোনো দিন
স্নান করে নিকোনো হয়ে
প্রেম,ঘৃণা, ঈর্ষা, উপেক্ষাহীন আমি
একমুঠো অন্ন বেশি মেপে নেব
আমি অচেনা কোনো এক অতিথির
অপেক্ষায় থাকা উঠোনে
তুলসীর বেদীতে আলো জ্বেলে দেব।
স্বার্থপর
বড় স্বার্থ দেখে চলি আজকাল
বয়স যত বাড়ছে
বড় নিজের দিকে মন
পুরোনো স্মৃতিগুলো বের করে
আদর করে মুছি,
জানি উজ্জ্বল হলেই মূল্য হবে বেশি।
নিলামে হাঁক পেড়ে জিতে নিই
গোধূলির আলো আর
সূর্যাস্ত দেখার সময়টা
হয়েছি বেশ সুযোগসন্ধানী ।
বেশ বৈষয়িক হয়েছি
জমেছিল চাওয়া আর পাওয়ার হিসেব
অকাজের হয়ে গেছে সব।
ওগুলো বদলে, মাঝে মাঝেই এনে রাখি গান গাইবার ইচ্ছে।
এবার বসন্তে গেয়েছি অনেক।
ছিপ ফেলে বসে থাকি সময়ের স্রোতে,
জহুরীর চোখ নিয়ে অপলক
দিন যায়, মাস যায়, মুহূর্তরা খেলা করে
কোন মাহেন্দ্রক্ষণে জ্বলে দ্যুতি
আলতো হাতে তুলে নিই পরাগ কেশর মুহূর্ত
রেখে দিই মাথায় পরবো বলে।
অনেক অভিলাষ তাই
অনেক অন্বেষণ
বড় স্বার্থ দেখে চলি আজকাল
বয়স যত বাড়ছে
বড় নিজের দিকে মন।